প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

রাহমান মনি                                          

 

বিপর্যয় কাটিয়ে ওঠে ফুকুশিমা'তে বসতে যাচ্ছে টোকিও অলিম্পিক – প্যারা অলিম্পিক ২০২০ এর আসর

 

 

২০১১ সালের ১১ মার্চ জাপানে স্মরণকালের সবচেয়ে ভয়াবহ প্রাকৃতিক বিপর্যয়ে বিধ্বস্ত ( প্রলয়ঙ্করী ভুমিকম্প এবং এর ফলে সৃষ্ট সুনামির আঘাতে বহু হতাহত , নিখোঁজ এবং পারমানবিক চুল্লী ক্ষতিগ্রস্ত হয় ) কাটিয়ে ওঠা নবজাগরিত ফুকুশিমা প্রদেশে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে অলিম্পিকের মতো বড় আসরের দু'দুটি আয়োজন । বিপর্যয়ের মাত্র ৭ বছর ৯ মাসের মাথায় এমনটি ঘোষণা দিয়েছেন জাপানের পররাষ্ট্র মন্ত্রী কোনো তারো এবং ফুকুশিমা প্রদেশের গভর্নর মাসাও উচিবোরি ।

৭ ডিসেম্বর ২০১৮ শুক্রবার জাপান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের তত্বাবধানে ২০১৯ সালে অনুষ্ঠিতব্য বিশ্বকাপ রাগবী প্রতিযোগিতা এবং ২০২০ সালে টোকিওতে অনুষ্ঠিতব্য গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিক এবং প্যারা অলিম্পিক আসরকে সামনে রেখে স্থানীয় সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় জাপানে বহির্বিশ্বের পর্যটকদের দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য বিভিন্ন প্রিফেকচার (প্রশাসনিক কাজের সুবিধার্থে জাপানি প্রদেশ বা স্বনির্ভর সরকার)-এর পরিচিতি ক্যাম্পেইন এর অংশ হিসেবে "ফুকুশিমা নবজাগরন" বিষয়ক সেমিনারে আসন্ন ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য গ্রীষ্মকালীন টোকিও অলিম্পিক এবং প্যারা অলিম্পিক এর বেসবল এবং সফট বলের মতো আউটডোর এর খেলা গুলো ফুকুশিমা'র মুক্ত বাতাসে অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান দেন ফুকুশিমা প্রদেশের গভর্নর মাসাও উচিবোরি ।

টোকিওর সহযোগী হিসেবে বিভিন্ন শহরের মতো ফুকুশিমা ও অন্যতম একটি হিসেবে বেসবল এবং সফট বল আয়োজক শহরে – এর গৌরব অর্জন করবে ।

সেমিনারে ১১ মার্চ ২০১১ থেকে বর্তমান অবদি বিভিন্ন অবকাঠামো সংস্কার তুলে ধরে গভর্নর মাসাও উচিবোরি বলেন , বিপর্যয়ে মুল ভূখণ্ডের ১২% ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা থেকে বর্জ্য অপসারণ করে এখন ৩% এ নামাতে সক্ষম হয়েছি । ফুকুশিমার বিদ্যালয় গুলিতে স্থানীয়ভাবে উৎপন্ন কৃষিজাত পণ্য থেকে উন্নতমানের দুপুরের আহার পরিবেশন করানো হচ্ছে যা ২০১০ সালে দেয়া ৩৬.১% থেকে নেমে ২০১২ সালে ১৮.৩% হয়ে গিয়েছিল । বর্তমানে তা ৩৫.৬ % উন্নীত করা হয়েছে । ফুকুশিমাতে উৎপন্ন সাকে ( জাপানিজ মদ ) জাপানে একনাগারে ছয় বছরের মতো প্রথম স্থানটি ধরে রাখতে সক্ষম রয়েছে । ২০১২ সাল থেকে ২০১৭ পর্যন্ত প্রথম স্থানের গৌরব অর্জন করে । এর আগে ২০০৫ এবং ২০০৯ সালে প্রথম স্থান অর্জন করতে পেরেছিল । ফুকুশিমাতে উৎপন্ন এই মদ জাপানের সীমানা পেড়িয়ে বিশ্ব বাজারেও আসন গড়ে নিয়েছে ।

ফুকুশিমাতে উৎপন্ন পিচ ফল থাইল্যান্ড , মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়াতে রপ্তানী করে ২০১৬ এবং ২০১৭ সালে ফল রপ্তানী কারক হিসেবে জাপানের এক নাম্বারের আসনের গৌরব অর্জন করেছে । এছাড়াও গতবছর মালয়েশিয়া এবং ভিয়েতনামের সাথে ফুকুশিমার ফল ( জাপানীজ নাশি বা নাসপতি ) রপ্তানী চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে । এবছর মার্চে ফ্রান্স এবং ব্রিটেনে ফুকুশিমার চাল রপ্তানীর চুক্তি হয়েছে । আমার নিজের অংশগ্রহন এবং উপস্থিতিতেই সবগুলি চুক্তি সম্পন্ন হয়েছে ।

গত বছরের নভেম্বর মাস পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্ত পারমাণবিক চুল্লীর কাছে যেখানে হেলমেট , হ্যান্ডগ্লাভস , মাস্কসহ প্রয়োজন দ্রব্যাদি ব্যাবহার করে সতর্কতার সহিত কাজ করতে হতো এইবছর থেকে সেখানে আর কোন কিছুর ই ব্যাবহারের প্রয়োজন পড়ছে না । এগুলো সম্ভব হয়েছে জাপান সরকার এবং জনগনের কল্যানে । বিদেশী পর্যটকদের সংখ্যা অতীতের যে কোন সময়ের তুলনায় বৃদ্ধি পেয়েছে ।

তিনি আরো বলেন , আমরা যেমন অনেক কিছুই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি তেমনি আলোর পেছনে অন্ধকারের মতোই কিছু ব্যার্থতা এখনো রয়ে গেছে । তার মধ্যে এখনো ৪৩,২১৪ জনকে বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্র গুলিতে জীবন যাপন করতে হচ্ছে । আমরা এখনো তাদের কে তাদের স্বীয় বাসস্থানে ফিরে যাবার মতো পরিবেশ তৈরি করে দিতে সক্ষম হইনি । এমন একটি মহা বিপর্যয় সম্পূর্ণ ভাবে রিকভার করতে আরও কিছু সময় প্রয়োজন ।

গভর্নর মাসাও উচিবোরি আরো বলেন , ফুকুশিমা পুনর্গঠনে ১১ টি সেক্টরকে শনাক্ত করে সেই মোতাবেক কাজ করে যাচ্ছি । এই ব্যাপারে আমরা ফুকুশিমার কৃতি সন্তান ডঃ হিদেও নোগুচির থিউরিকে বেছে নিয়েছি । ডঃ নোগুচি বলতেন দুটি ব্রত নিয়ে কাজ করলে নিজেকে বদলাতে পারা যায় । তার একটি হচ্ছে নিজেকে চিনা বা জানা , এবং অপরটি নিজের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ করে সেই মোতাবেক অগ্রসর হওয়া। ডঃ নোগুচি হিদেও ( ১৮৭৬-১৯২৮) ছিলেন একজন বিজ্ঞানী । সিফিলিস রোগের আবিস্কারক এবং জাপান ব্যাংক প্রদত্ত ১,০০০ নোটে তাঁর ছবি রয়েছে ।

সেমিনার শেষে অভ্যর্থনা সভায় পররাষ্ট্র মন্ত্রী কোনো তারো জাপানে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিকবৃন্দ, বিশ্ব মিডিয়ার জাপান প্রতিনিধিগণ, সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিগণ, জাপান মিডিয়া এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণদের উপস্থিতিতে স্বাগতিক ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।

শুভেচ্ছা বক্তব্যে তিনি ফুকুশিমা পুনর্গঠনের প্রশংসা করে বলেন , ২০১১ সালে বিপর্যস্ত ফুকুশিমা এখন অলিম্পিক এর খেলা আয়োজনের যখন প্রস্তুত , এই জন্য আমাদের বিদেশী বন্ধুদের অবদান ও কম নয় ।

বিশ্ব আসরের আয়োজন সফল করার জন্য জাপানের প্রথম জাতীয় ফুটবল ট্রেনিং সেন্টার ব্যবহার উপযোগী করে পুনর্গঠন করা হয়েছে । ফুকুশিমাতে জাতীয় ট্রেনিং সেন্টার টি ১৯৯৭ সালের জুলাই মাসে প্রতিষ্ঠা পেলে ২০১১ সালের ১১ মার্চ ভূমিকম্পে ব্যবহার অনুপযোগী হয়ে যায় । এবছর ১৮ জুলাই তা পুনরায় ব্যবহারের জন্য খুলে দেয়া হয় ।

এখন এগুলো বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতে আপনাদের সহযোগিতা প্রয়োজন । কারন আপনাদের কথাগুলো আপনাদের দেশবাসী বিশ্বাস করবে বেশী । জাপানে বসবাসরত বিদেশি সাংবাদিক এবং জাপানে নিযুক্ত কূটনীতিকদের প্রতি আমাদের অনুরোধ আপনারা এলাকাগুলো সফর করুন এবং নিজ নিজ দেশে তা তুলে ধরুন।

সব শেষে ফুকুশিমাতে উৎপাদিত ফলজ ,জলজ এবং কৃষিজাত পণ্যে এবং পানীয়তে আপ্যায়ন করা হয় ।


এছাড়াও জাপান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ২০২০ সালে অনুষ্ঠিতব্য টোকিও অলিম্পিক এবং প্যারা অলিম্পিক পূর্ব জাপানকে পরিচিতি করানোর উদ্দেশ্যে গ্রহন করা এক কর্মসূচীর অধীনে জাপানের বিভিন্ন অঞ্চল, সেখানকার জীবনযাত্রা, বিভিন্ন সংস্কৃতি, দর্শনীয় স্থান, শিল্প, সাহিত্য, ঐতিহ্য ও কৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত করে পর্যটক বাড়ানোই কর্মসূচির অংশ হিসেবে'দি সেকেন্ড রিজিওনাল প্রমোশন সেমিনার ইন ফিসক্যাল ২০১৮' নামে অভিহিত ধারাবাহিক সেমিনারে এবারে পরিচিত করানো হয় ইবারাকি , তোচিগি এবং কানাগাওয়া প্রদেশ ও শিযুওকা প্রদেশের পর্যটন শিল্প কে । বর্তমান বিশ্বের একমাত্র জীবন্ত আগ্নেয়গিরি সম্বলিত মাউন্ট ফুজি যা জাপানীদের কাছে পরম পূজনীয় তা এই শিযুওকা প্রদেশে অবস্থিত । যদিও এর দুটি পাদদেশ টোকিও এবং ইয়ামানাশি প্রদেশের কিছুটা অংশ জুড়ে রয়েছে ।

৫ ডিসেম্বর ২০১৮ বুধবার জাপানের অভিজাত হোটেল 'চিনজানসো'তে আয়োজিত সেমিনারে জাপানে নিযুক্ত বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রদূত, কূটনীতিকবৃন্দ, বিশ্ব মিডিয়ার জাপান প্রতিনিধিগণ, সংশ্লিষ্ট এলাকার জনপ্রতিনিধিগণ, জাপান মিডিয়া এবং সরকারের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়াও প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে জাপান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিনিস্টার সেক্রেটারিয়েটের ডেপুটি অ্যাসিস্ট্যান্ট মিনিস্টার ওকাদা কেনচো । মন্ত্রণালয়ের পক্ষে স্বাগতিক ও শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন।

বিদেশি মিডিয়া বন্ধুদের প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বিলেন, মিডিয়া বন্ধুদের কাছে আমাদের আহ্বান থাকবে আপনারা আপনাদের মিডিয়াসহ টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, ভাইভার, ফেসবুক সামাজিক মাধ্যমেও তা প্রচার করার ব্যবস্থা নেবেন দয়া করে।

এরপর ইবারাকি , তোচিগি এবং কানাগাওয়া ও শিযুওকা প্রদেশের স্ব স্ব প্রতিনিধিগন নিজ নিজ প্রেজেন্টেশন সেমিনারে উপস্থাপনা করেন ।

সব শেষে অভ্যর্থনা আয়োজনে প্রদেশ গুলির বিভিন্ন সংস্কৃতিকে তুলে ধরা হয় । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে বাঁশ দিয়ে তৎক্ষণাৎ তৈরি একমাত্র শিল্পকর্মটি র‍্যাফেল ড্র'র মাধমে জয় করে নেন বাংলাদেশী এডভোকেট হাসিনা বেগম রেখা ।

উভয় সেমিনার এবং অভ্যর্থনা আয়োজনে টোকিওস্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের প্রতিনিধিগণ অংশ নিয়ে থাকেন ।

উল্লেখ্য , ১১ মার্চ ২০১১ শুক্রবার বেলা ২.৪৬ মিনিটে প্রথম আঘাত হানে জাপানের তোহোকু অঞ্চলে ৯.০ মাত্রার ভূমিকম্প অনুভুত হয় । এতে অর্ধকোটি নাগরিক প্রত্যক্ষভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হন। ৪৭ লাখ বাসিন্দাকে গৃহহীন অবস্থায় স্থানাস্তর করতে হয়। ৩০ লাখ লোকের স্থান হয় বিভিন্ন আশ্রয় কেন্দ্রে। ২০১৩ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাত্র ৯৭ হাজার জনকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে দেয়া সম্ভব হয়। আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে অবস্থান সময়ে শুধু ফুকুশিমাতে ১৬শ' লোক হতাশায় ভুগে মৃত্যুবরণ করে। সুনামির আঘাতে ঢেউয়ের উচ্চতা ৩৪ ফুট ছাড়িয়ে যায়, যা একটি রেকর্ডও বটে। ফুকুশিমা দাইইচি পারমাণবিক চুল্লির ব্যাপক ক্ষতি হয়। ছড়িয়ে পড়ে তেজস্ক্রিয়তা, যা মোকাবেলায় কর্তৃপক্ষকে এখনও হিমশিম খেতে হচ্ছে।

২৬ এপ্রিল ১৯৮৬ রাশিয়ায় চেরনোবিল বিপর্যয়ের পর মানব জাতীর ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহতম দুর্যোগ জাপানের ভূমিকম্প-পরবর্তী সুনামি। যদিও চেরনোবিল বিপর্যয়ে বিভিন্ন স্তরে মৃতের মোট সংখ্যা ছিল ৪ হাজার। সেই হিসাবে মানব বিপর্যয়ের দিক থেকে চেরনোবিল থেকে জাপানের ফুকুশিমা অনেক বেশি এগিয়ে।


rahmanmoni@kym.biglobe.ne.jp


rahmanmoni@kym.biglobe.ne.jp 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]