প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

(মতামতের জন্যে সম্পাদক দায়ী নয়।)

 

 

রাহমান মনি                                          

 

 

আমি যদি একদিনের জন্য ক্ষমতা পেতাম

 

 

 

বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে ছোট বেলায় শিশুদের যদি জিজ্ঞেস করা হয়, ‘বড় হয়ে তুমি কি হ’তে চাও ?’

প্রায় সব বাচ্চা-ই একই সুরে ভবিষ্যতে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার আকাংখ্যা ব্যক্ত করবে।

কারন, ছোটবেলা থেকেই তারা বাবা-মায়ের কাছ শুনে অভ্যস্থ যে , বড় হয়ে তোমাকে ডাক্তার কিংবা ইঞ্জিনিয়ার হতে হবে । তাই, অন্য কোন অপশন থাকে না ।

আর জাপানী শিশুরা ট্রেন চালক, সেবক-সেবিকা , শিক্ষক কিংবা যে যার মতো অন্য কোন পেশার কথা বলে থাকে।

তার কারন, বাবা-মা জাপানী শিশুদের ভবিষ্যতের উপর কোন কিছু চাপিয়ে দিতে চান না। তাই নিজের পছন্দের কথা-ই তারা বলে থাকে।

আমার কিন্তু ক্ষণে ক্ষণে পাল্টাতো। মিষ্টির দোকানের সামনে দিয়ে হাটলে একরকম , বেকারীর পাশ দিয়ে হাটলে আরেক রকম কিংবা খেলনা বা অন্য কোন প্রতিষ্ঠানের পাশ দিলে সেইসব প্রতিষ্ঠানের মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতাম।

যদিও আমি এখন প্রবাসে এসে কামলা দিয়ে বাংলাদেশ সরকারের খাতায় ‘ওয়েজ আর্নার’ হিসেবে লিপিবদ্ধ ।

সেই আমি কিনা একদিনের জন্য দেশ শাসনের ভার (কল্পনার জগত) নিয়ে কি করতাম তা নিয়ে লিখতে বসেছি !

শুরুতেই পাঠকদের বিনয়ের সাথে জানাতে চাই, “ব্যক্তিগতভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তো দূরের কথা, মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী, উপদেষ্টা, সংসদ সদস্য হওয়ারও কোনো যোগ্যতা নেই এবং সেই সম্ভাবনা ও ইচ্ছা কোনটাই আমার নেই। ‘

এমনকি আমার মনে হয় ইউনিয়ন পরিষদে সদস্য হওয়ার যোগ্যতাও আমার নেই। এখন সেই আমি কিনা দেশের প্রধানমন্ত্রী হতে চাচ্ছি! আমার লেখার এরকম শিরোনাম দিচ্ছি !

তার অন্যতম ভরসা হচ্ছে, আমি অবশ্য এ ব্যাপারে নিশ্চিত যে, আমার কিছুই হবে না। কারণ, আমি যা হতে পারব না তা নিয়ে কারো মাথাব্যথা থাকার কথা নয়। যেহেতু আমি রাজনীতির সাথে জড়িত নই। তাই, কারোর ক্ষমতা হারানোর ভয় ও নেই, শত্রুও নেই।

যাক, আসল কথায় আসি।

যেহেতু আমি রাজনীতিবিদ নই তাই, সস্তা বাংলা সিনেমা দর্শকের হাততালি পাওয়ার মতো কোনো কাজ করব না ।

দেশের দায়িত্ব পেলে ভুলেও দেশের বিশিষ্টজনদের কোন পরামর্শ নেয়ার ধারে কাছেও যাবো না। কারন দেশে বুদ্ধিজীবী মানেই শিক্ষিত পাপী এবং ধামা ধরা। এরা নিজেদের সেন্সর নিজেরাই করে থাকে এবং বুদ্ধি বিক্রি করে খায়।

আমি যদি একদিনের জন্যও দেশ শাসনের দায়িত্ব পাই তাহলে যে কয়েকটি পদক্ষেপ নিব। তার মধ্যে-

শপথ নামের আনুষ্ঠানিকতা শেষ করে প্রথমেই ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করার অর্ডিন্যান্স জারি করাবো ।

‘‘ছাত্র রাজনীতি হতে হবে স্বাধীন৷ তারা কোনো দলের লেজুড়বৃত্তি করবে না৷”। কিন্তু আমরা কি দেখছি ? ‘‘বর্তমান ট্রেন্ড হলো, যে দল ক্ষমতায় থাকে, তাদের ছাত্র সংগঠনই প্রভাব বিস্তার করে৷ ছাত্রসংগঠগুলো দলের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত থাকায় ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন প্রভাব বিস্তার করতে সব সহযোগিতা পায় এবং তারা নানা ধরনের সুবিধা পায়৷'' ছাত্রাবস্থায় তারা আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যায়। পড়াশুনা না করে তারা টাকার পেছনে ছুটে। আর এই ছুটতে গিয়ে তারা হাজার কোটি কামাতে বিভিন্ন অনৈতিক কাজে জড়িয়ে যায়। টেন্ডারবাজি, চাঁদাবাজি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার পরিবেশ নিয়ে অনেক অভিযোগ রয়েছে। চাঁদাবাজ, টেন্ডারবাজ ছাত্রদের কাজ হতে পারে না।তাদের অন্যতম প্রধান কাজ হচ্ছে পড়াশুনায় মন দেয়া। তাই এই ছাত্র রাজনীতি থেকে ছাত্রদের দূরে রাখাই জাতীর জন্য মঙ্গলজনক বিধায় এই ব্যবস্থা নেয়া।

আমার অর্ডিন্যান্স জারি হবে, জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রদত্ত অঙ্গীকার অনুযায়ী সকল মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের বার্ষিক আয়ের বিবরণী নিয়োগ প্রাপ্তের ১২ ঘন্টার মধ্যে গেজেট আকারে প্রকাশ করার নির্বাহী আদেশ জারী এবং প্রতি বছর যেন প্রকাশ করতে বাধ্য থাকেন সে ব্যাবস্থা নেয়া । যারা ব্যর্থ হবেন তাদের সংসদ সদস্যপদ/মন্ত্রীত্ব সাময়িকভাবে স্থগিত কিংবা খারিজ করে দিতে হবে। রাজনীতিবিদরা যদি সৎ না হন তাহলে দেশের স্বার্থ থেকে নিজেদের স্বার্থটাকেই বড় করে দেখাটাই স্বাভাবাবিক।

আমার তৃতীয় অর্ডিন্যান্স জারি হবে দেশের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী এবং প্রতিরক্ষাবাহিনী কে সম্পূর্ণ লেজুরভিত্তিক রাজনৈতিক প্রভাব মুক্ত করা এবং অবসর জীবনেও যেনো জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে আইন প্রণয়ন এর ব্যবস্থা নেয়া। একই সাথে সরকারী কর্মচারীদের রাজনৈতিক কর্মকান্ড থেকে দূরে রাখা।

আমার চতুর্থ এবং শেষ অর্ডিন্যান্স জারি হবে বিচার বিভাগ কে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে পূর্ণ স্বাধীনতা দেয়া।

অনেকেই হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন দেশের আর্থসামাজিক , অবকাঠামো উন্নয়নের কোন পরিকল্পনার কথা না বলে মাত্র হাতে গোনা এই কয়েকটা অর্ডিন্যান্স জারিই কি দেশের সার্বিক পরিস্থিতির পরিবর্তন বা উন্নয়ন সম্ভব ?

উত্তরে বলবো হ্যা , অবশ্যই সম্ভব।

কারন, আমি জানি মাছের পচন শুরু হয় মাছের মাথা থেকে আর জাতীর অধঃপতন শুরু হয় অসৎ চরিত্রের রাজনীতিবিদ নামের রাজনীতিজীবিদের ব্যর্থতা থেকে। আইনশৃঙ্খলা ও দেশ রক্ষায় নিয়োজিত বিভিন্ন বাহিনী এবং সরকার গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপ বাস্তবায়ন করার দায়িত্ব সরকারী কর্মকর্তাদের উপর। তাই তাদেরও চেঞ্জ অফ কমান্ড মানাতে বাধ্য করাতে পারলে পচন রোধ করা কিছুতা হলেও সম্ভব।

রাজনীতিবিদরা অসৎ হলে সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়া যায়না । তাদেরকে শতকরা কমিশন হিসেবটি মাথায় রেখে একনেক’র প্রস্তাব উত্থ্যাপন, পাশ এবং কার্যকর করার কথা মাথায় রাখতে হয়।

আর , একনেক-এ পাশ করা প্রকল্প বাস্তবায়নের দায়িত্ব পড়ে সরকারী কর্মকর্তা মানে আমলাদের উপর। আমলারা যদি সৎ না হন তাহলে দুর্নীতির কতো প্রকার শাখা প্রশাখা থাকে তা জনগনের ভালো করে জানা।

এরপর, রাজনীতিবিদ এবং সরকারী কর্মকর্তারা যদি কোন অপকর্ম বা দুর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন তাহলে তাদের আইনের হাতে সোপর্দ করে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর দায়িত্ব পড়বে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর হাতে। এই খাতটি যদি রাজনৈতিক এবং আমলা তান্ত্রিক প্রভাব মুক্ত থাকতে না পারে তাহলে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আগেই অনেক কিছুই ঘটে যেতে পারে।

বাংলাদেশ সংবিধান মতাবেক দেশ পরিচালনার ভার নির্বাচিত সরকারের উপর বর্তায় । আর নির্বাচিত সরকার মানেই রাজনৈতিক দলের সরকার। তাই রাজনীতিবিদদের সততা না থাকলে এবং দুর্নীতির মূল উৎপাটন করতে না পারলে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এই রাজনীতিবিদরা এখানে দেশের মাথা , তাই পচন শুরু হওয়ার আগেই তার চিকিৎসা অর্থাৎ সোজা পথে চলতে বাধ্য করতে হবে।

আর সব যদির পর জনগনের শেষ ভরসা ( যদিও একমাত্র ভরসা আল্লাহ্‌ ) হচ্ছে বিচার বিভাগ । বিচার বিভাগ যদি স্বাধীনভাবে, স্বতন্ত্র হয়ে কাজ করতে না পারে তাহলে কোন ব্যবস্থা-ই কার্যকর হবে না। বিচার বিভাগ যদি নির্বাহী বিভাগ থেকে পৃথক না থাকে তাহলে যে কি হয় তার প্রমান আমরা ইতোমধ্যে দেখে অভ্যস্থ হয়ে দেখে আসছি। প্রধান বিচারপতির দেশত্যাগ এর পরও আর বিস্তারিত লিখতে হবে ?

আমি মনে করি একটি দেশের এই চারটি স্তর যদি তার স্বকীয়তা বজায় রেখে কাজ করে যেতে পারে তাহলেই কেবল দেশ থেকে শাসক শ্রেনীর অন্যায়, অবিচার, দুর্নীতি, অপশাসন, বিচারহীনতা বন্ধ করা সহ আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারলে বাকী খাতগুলো এমনিতেই ঠিক হয়ে যাবে।

তাই , রাজনীতিবিদ, আমলা, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী এবং বিচার বিভাগ এর স্বচ্ছতাই একটি দেশের উন্নতির চরম শিখরে পৌঁছে দিতে পারে।

আর তাই –

একদিনের জন্য রাষ্ট্র ক্ষমতা হাতে পেলে উপরোক্ত চারটি অর্ডিন্যান্স জারি করে এবং কার্যকর করে পরবর্তী উত্তরাধিকারীর কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করে চিরদিনের মতও স্বপ্নের সমাপ্তি টানবো ।


rahmanmoni@gmail.com

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]