|
রাহমান মনি
কোরিয়া স্বাধীনতার
শতবর্ষ পূর্তিতে "ওয়ান কোরিয়া" শ্লোগানে গ্লোবাল পিস কনভেনশন ২০১৯ অনুষ্ঠিত
কোরিয়া স্বাধীনতা'র শতবর্ষ পূর্তি পালন এবং
সম্পৃক্ত হয়ে নিজে অংশগ্রহণের এক পরম সৌভাগ্য এবং বিরল অভিজ্ঞতা। সেই
সৌভাগ্যের অধিকারী হতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে।
১ মার্চ ২০১৯ ছিল কোরিয়া স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি পালন। একই সাথে কোরিয়া
বিভক্তির ৭০তম বর্ষ পালন । শতবর্ষপূর্তি পালন কে স্মরণীয় করে রাখার জন্য
ঢেলে সাজানো হয়েছিলো পুরো কোরিয়াকে। বিশেষ করে রাজধানী সিউল'কে ।
একই সাথে আয়োজন করা হয় দুই কোরিয়া একত্রীকরন ক্যাম্পেইন "ওয়ান ড্রিম, ওয়ান
কোরিয়া, ওয়ান ওয়ার্ল্ড"। গ্লোবাল পিস ফাউন্ডেশন এই শ্লোগান এর জনক। আর
গ্লোবাল পিস ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকেই এর মূল শ্লোগান ছিল "ওয়ান
ফ্যামিলি আন্ডার গড"।
২০১৫ সাল থেকে মূল শ্লোগান এর সাথে যোগ হয় দুই কোরিয়া একত্রীকরন যা
আয়োজকদের ভাষায় পুনঃপ্রতিষ্ঠা ক্যাম্পেইন 'ওয়ান কোরিয়া' বা "ওয়ান কে"।
আর এই শ্লোগানকে সামনে রেখে "গ্লোবাল পিস কনভেনশন ২০১৯" এর আয়োজন ভেন্যু
হিসেবে বেছে নেয়া হয় কোরিয়ার সিউলকে। বিশেষ পাওয়া হিসেবে স্বাধীনতার শত
বর্ষপূর্তি ও কোরিয়া বিভক্তির ৭০তম বর্ষ পালন এর বিশেষ দিনটি অর্থাৎ ১
মার্চ ২০১৯ কে।
গ্লোবাল পিস ফাউন্ডেশন আয়োজিত আন্তর্জাতিক এই কনভেনশনে ৪০টি দেশের প্রায়
১,২০০ জন প্রতিনিধি অংশ গ্রহন করেছিলেন। গ্লোবাল পিস ফাউন্ডেশন জাপানের
প্রতিনিধি হয়ে অংশ নিয়েছিলেন সাপ্তাহিক জাপান প্রতিনিধি রাহমান মনি। ২০১২
সালে জাপান শাখা প্রতিষ্ঠা পেলে রাহমান মনি গ্লোবাল পিস ফাউন্ডেশন জাপান
ফেস্টিভ্যাল এর ভাইস চেয়ার এর পদে আসীন রয়েছেন অর্ধ যুগ ধরে। জাপান থেকে
অংশ নিলেও তিনি একজন বাংলাদেশী হিসেবেই নিজেকে তুলে ধরেন।
হোটেল লোটতে এবং হোটেল প্রেসিডেন্ট সিউল-এ ২৬ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি
৩ দিনব্যাপী আয়োজনের প্রথমদিন উদ্ভোধনী অনুষ্ঠান ছাড়াও ছিল বিশ্ব শান্তি
প্রতিষ্ঠায় যুব সমাজের ভুমিকা "গ্লোবাল ইয়থ ফোরাম"বিষয়ক আলোচনা। দ্বিতীয়
দিনটি ছিল বিশ্ব শান্তি প্রতিষ্ঠায় নারী নেতৃত্বের ভুমিকা "ওম্যান'স
লিডারশীপ ফোরাম" শীর্ষক আলোচনা এবং তৃতীয় দিন ছিল বিশ্বনেতৃবৃন্দের
অংশগ্রহনে "ইন্টারন্যাশনাল ফোরাম অন ওয়ান কোরিয়া"শীর্ষক আলোচনা এবং সবশেষে
বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদান রাখার স্বীকৃতি "গ্লোবাল পিস এ্যাওয়ার্ড ২০১৯"
প্রদান ।
আলোচনায় অংশ নেন চীনের রাজনৈতিক বিশ্লেষক হান ফাংমিন, উত্তর কোরিয়ায়
নিযুক্ত আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রদূত জন এভেরার্ড, মঙ্গোলিয়ার প্রাক্তন
প্রেসিডেন্ট পুনসালমা অচির্বাট , রাশিয়ান সায়েন্স সেক্টর কোরিয়ান স্টাডিজ
ডাইরেক্টর অ্যালেকজান্ডার ঝেবিন , ধর্ম স্বাধীনতা বিজনেস ফাউন্ডেশন
প্রেসিডেন্ট ব্রিয়ান গ্রিম এবং ইন্ডিয়াস ইন্সটিটিউট ফর ডিফেন্স স্টাডিজ
এন্ড এনালাইসিস পূর্ব এশিয়ার প্রধান সমন্বয়কারী জগন্নাথ পান্ডা এবং গ্লোবাল
পিস ফাউন্ডেশন এর প্রতিষ্ঠাতা চেয়ারম্যান ডঃ হিউয়ান জিন প্রিস্টন মুন।
এছাড়াও ভিডিও ক্লিপের মাধ্যমে বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধানদের ম্যাসেজ
প্রদর্শন করা হয়।
সমাপনী বক্তব্যে চেয়ারম্যান ডঃ হিউয়ান জিন প্রিস্টন মুন বলেন, ১০০ বছর আগে
এই উপদ্বীপেই কোরিয়া নামক দেশটি ঔপনিবেশকতা থেকে মুক্তি পেয়ে বিশ্বে স্থান
করে নিয়েছিল। তখন আমাদের পতাকা এবং ভাষা ছিল এক। ভাষা এক হওয়া সত্বেও
আমাদের কেন ভাগ হতে হলো , পতাকা ভিন্ন হয়ে গেলো, আমরা দু'টি দেশে বিভক্ত হয়ে
গেলাম! সেগুলো ছিল বিংশ শতাব্দীর ঘটনাবলী ।
বর্তমান একবিংশ শতাব্দীর শুরুতে অনেক কিছুরই পরিবর্তন শুরু হয়ে গেছে সময়ের
চাহিদার সাথে সাথে।
এই উপদ্বীপেই সুর উঠেছে দুই কোরিয়ার পুনঃ একত্রীকরনের। দুই মিলিয়ন কোরিয়ান
এই শ্লোগানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছিল সেইদিন। যা,কোরিয়ান মোট
জনসংখ্যার ১০%। দিন দিন এই সংখ্যা ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এর সাথে যুক্ত
হচ্ছে যুব সমাজ । এই যুব সমাজ ই একদিন নেতৃত্ব দিবে, হাল ধরবে কোরিয়া সহ
বিশ্বের ।
তিনি বলেন, যখন কেউ একজন একটি স্বপ্ন দেখেন তখন তা কেবল স্বপ্নই থেকে যায়।
সেই স্বপ্নটি-ই যদি সবাই শেয়ার করেন তখন তা আর কেবল স্বপ্নের মধ্যেই
সীমাবদ্ধ থাকেনা, হয়ে যায় ভিশন। আর ভিশন যদি সঠিক পথে পরিচালিত করা যায় তা
বাস্তবে রুপ পাবেই । এটাই সত্য। তাই, দুই কোরিয়া পুনরায় এক হবে এবং হতেই হবে।
কারন এটা এখন আর কেবল স্বপ্ন নয় , বাস্তব সম্মত ভিশন। অর্থাৎ ওয়ান কোরিয়া,
ওয়ান কোরিয়া এবং ওয়ান কোরিয়া বা 'ওয়ান কে'।
প্রিস্টল মুন বলেন, আমি দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই, ওয়ান ড্রিম, ওয়ান কোরি্যা,
ওয়ান ওয়ার্ল্ড , ওয়ান ফ্যামিলি ।
এ বছর গ্লোবাল পিস এ্যাওয়ার্ড ২০১৯ দেয়া হয় ডঃ ফ্লোরিডা লেবুগুয়েন (ফিলিপিন্স),
হিদেও কাওয়াবাতা (জাপান), রেভারেন্ড কেনেথ বাএ ( কোরিয়ান বংশোদ্ভূত
আমেরিকান), ডঃ আমিনা নামাদি সাম্বো (নাইজেরিয়া), এম্বাসেডর জারগালসাইখান
এঙ্খাসাইখান ( মঙ্গলিয়া) এবং কিম হিউয়ান সুক ( কোরিয়ান মিউজিসিয়ান) কে ।
তিনদিন ব্যাপী কনভেনশন শেষে কোরিয়ান জাতীয় সংসদের সম্মুখ প্লাজায় কোরিয়া
স্বাধীনতার শতবর্ষ পূর্তি পালন এবং দুই কোরিয়া একত্রীকরণ ক্যাম্পেইন "ওয়ান
কে" কনসার্ট অনুষ্ঠিত হয়। কোরিয়ার নতুন প্রজন্মের প্রতিষ্ঠিত শিল্পীরা অংশ
নিয়ে থাকেন এবং কোরিয়ার বেশ কয়েকটি টেলিভিশন চ্যানেলে সরাসরি সম্প্রচার করা
হয়।
২০০৯ সালে আমেরিকার ম্যারিল্যান্ড-এ "ওয়ান ফ্যামিলি আন্ডার গড" শ্লোগান নিয়ে
ডঃ হিউয়ান জিন প্রিস্টন মুন এর হাতে প্রতিষ্ঠিত হয় গ্লোবাল পিস ফাউন্ডেশন।
২০১৫ সাল থেকে 'ওয়ান কোরিয়া' অর্থাৎ ওয়ান কে ক্যাম্পেইন শুরু করে। আমেরিকা,
ইউরোপ, আফ্রিকা এবং এশিয়ার মোট ২২ টি দেশে রয়েছে এর কার্যক্রম। দিন দিন এর
পরিধি বেড়েই চলেছে। নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া এবং ইন্দোনেশিয়ার মতো মুসলিম
প্রধান দেশগুলোতেও এর শাখা রয়েছে। আমাদের পার্শ্ববর্তী ভারত এবং নেপালেও
শাখা রয়েছে।
২০০৯ সাল থেকে প্রতি দুই বছর অন্তর আন্তর্জাতিক কনভেনশন হয়ে আসছে । এবারের
আয়োজনটি ছিল ষষ্ঠবারের মত।
আমেরিকা, কেনিয়া, মালয়েশিয়া এবং প্যারাগুয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠা বছর
২০০৯ সালে প্রথম কনভেনশনটি অনুষ্ঠিত হয় ফিলিপিন্স এ ।
rahmanmoni@kym.biglobe.ne.jp
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
|