[প্রথমপাতা]

 

 

 

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ হৃদয়ের এপিঠ-ওপিঠ (পর্ব-১৯)

  

- শাশ্বত স্বপন -

 

আমি মিসেস চৌধুরী ও বুয়ার দৃষ্টি আকর্ষণ করলাম। দেখলাম তারা বেশ হাসি-খুশি। আমাকে নিয়ে ন্যান্সি চলে এল সুইমিং পুলের ধারে। সে খুব আনন্দে সাঁতার কাঁটছে। মাঝে মাঝে আমাকে পানি ছিটিয়ে দিচ্ছে। জৈষ্ঠ্য-আষাঢ় মাসে ডোবার মাঝে নতুন পানি পেয়ে ব্যাঙ যেমন আনন্দ করে সেও তেমনি করছে। সে গোল টিউবে ভর দিয়ে সাঁতার কাটছে। সাঁতার জানে কিনা--আমি জানি না। এখন আমার পর্যবেক্ষণের সময়। পেছনে তাকিয়ে দেখলাম আমাদের দিকে কেউ তাকাচ্ছে কিনা। ন্যান্সি ফ্রক পরিহিতা ছিল। ওড়না ওর গায়ে কখনও দেখিনি। পাগল বলে কথা নয়--ধনী মেয়েরা কখনও ওড়না পরে না--পড়তে চায় না। ইউরোপীয় স্টাইলে তারা চলতে পছন্দ করে। ভেজা অবস্থায় তাকে খুবই সুন্দর লাগছিল। আমাকে সে পানিতে নামতে বলছে। আমি ইচ্ছে করেই নামছি না। একটা মাত্র ড্রেস পড়ে এসেছি। এটা ভিজালে কার পোষাক পড়ব? আমাকে সে ভিজাতে লাগল।
--প্লিজ, আসো।
--একটা ড্রেসই আমার। ভেজালে পড়ব কি?
--আমার সালোয়ার-কামিজ পড়বে।
--এগুলো মেয়েদের ড্রেস।
--না, তুমি পড়বে, আস, আস বলছি। আসবে না, আচ্ছা--

হঠাৎ করে সে টিউব ছেড়ে দিল। পানিতে তলিয়ে যেতে লাগল। চিৎকার করে বলতে লাগল,‘ হেলপ, হেলপ, হেলপ মী...।’ আমি আর দেরি না করে লাফ দিয়ে পানিতে ঝাঁপিয়ে পড়লাম। সে আমাকে জড়িয়ে ধরল। আমার দু’গালে দু’টা চুমো দিয়ে আমাকে ধরে পা ছুঁড়াছুঁড়ি করতে লাগল। টিউবটি আমি হাত দিয়ে ধরলাম। সে সরিয়ে দিল। তারপর সাঁতার কাটতে শুরু করল। তাহলে, সে সাঁতার কাটতে পারে? সুইমিং পুলের পাশে বসার সুন্দর একটা প্লেস আছে, কাপড়-চোপড় বদলানোর জন্য। আমি উপরে উঠে এলাম। সেও আসল। শরীরে অবিন্যস্ত ফ্রক। আমি রাগ করে অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। সে আমার মুখ ঘুরিয়ে তার দিকে আনল, হাসল। কত সুন্দর হাসি! আল্পনার হাসিও খুব সুন্দর ছিল। তবে দুটি হাসিই দু’রকম। পৃথিবীতে কোন কিছুর সাথে কোন কিছুর হুবহু মিল নেই। আমি তার লজ্জা পর্যবেক্ষণ করার জন্য বুকের দিকে তাকালাম। সে প্রথমে বুঝতে পারেনি। হঠাৎ বুঝতে পেরে ফ্রকের উপরের অংশটা বিণ্যস্ত করার জন্য সে নিজেই ঘুরে গেল। আমি আবার উৎসুক হতেই সে একটা কিল লাগিয়ে দিল আমার বুকে। অপরাধ তার বুকের দিকে তাকালাম কেন? লজ্জা তাহলে ঠিকই আছে। সে তার পিঠ আমার দিকে রেখে মাথা হেলিয়ে দিল আমার বুকে। বুঝলাম, ফ্রান্সিসের সাথে এসব ঘটত। সে চোখ বুজে রইল।
--ন্যান্সি, ঠাণ্ডা লাগবে। চল, ফ্রক বদলাবে না?
--না, যাব না। ওখানে ভালো লাগে না।
--আমার ঠাণ্ডা লাগবে তো।
--তোমার ঠাণ্ডা লাগবে, চল, হাত ধর--


আমি হাত ধরলাম। দোতলার সিঁড়িতে পা রাখতেই দেখি বুয়া একটা লুঙ্গি, একটা গেঞ্জি নিয়ে নিচে নামছে। অবাক কাণ্ড, সবই নতুন। বুঝলাম, সুইমিং পুলে যাওয়ার সাথে সাথে এগুলো কিনে আনতে লোক পাঠানো হয়েছে। আমাকে একটা রুম দেখানো হলো। ন্যান্সি ধমক দিয়ে আমাকে তার রুমেই নিয়ে গেল। একটা ছোট রুমে খুব সুন্দর তিনটি আলমারী। মনে হয়, সে এখানেই ড্রেস চেঞ্জ করে। ন্যান্সি একটা আলমারী খুলতে চেষ্টা করছে। আলমালী তালাবদ্ধ। বুয়া চাবি এনে খুলে দিল। বুয়া আমাকে জানাল, এই তিন আলমারীতে কাপড়, থ্রী পিছ,টু-পিছ, ফ্রক-সালোয়ার-সেমিজ ইত্যাদি সংখ্যা আট-নয় শত হবে। আমি অবাক। সে এক একটা পোষাক মাসে দুই-এক দিন পড়ত। তারপর যেখানে-সেখানে ফেলে রাখত। পরে ঐগুলো গরীবদের দিয়ে দেওয়া হতো। ছোটবেলা থেকে সে বহু প্রেজেনটেশন পেয়ে আসছে। তার জন্য কোন অনুষ্ঠান হলে পোষাক, প্রসাধনী সামগ্রী ইত্যাদি বেশি আসত। মনে পড়ে গেল মধূসুদনের কথা। হায়রে মধুসূদন, তোমার উত্তরসূরী আজ আমার সামনে। বুয়া আলমারী খুলতেই সে থ্রি-পিছ আর একটা সালোয়ার-কামিজ বের করল। আমাকে বলল, কোনটা সে পড়বে? আমি টু-পীছের কথা বললাম। আমার জন্য সে ফ্রক বের করেছে। আমাকে ফ্রক পরাবে। আমি লুঙ্গি, গেঞ্জি দেখালাম। সে নাক ছিটকায়। এবার আমি জোর করে তাকে অন্য রুমে নিয়ে গেলাম। নয়তো সব জামা-কাপড় বের করে বিশৃংখলার সৃষ্টি করবে। এসব জামা-কাপড় অনেকগুলো এ রুমের আলনায়ই থাকত। কিন্তু তার পাগলামীর জন্য সবই আলমারীতে তালা বদ্ধ করে রাখা হয়েছে।

সে তোয়ালে দিয়ে তার শরীর মুছে ফেলল। আমি অন্য রুমে যেতেই সে হাত ধরে তার সামনে দাঁড় করাল। আমি শার্ট-প্যান্ট খুলে লুঙ্গি, গেঞ্জি পরিধান করেছি। সে মিটিমিটি হাসছে আমার পোষাক চেঞ্জ দেখে। তারপর সে আমাকে অন্যদিকে তাকাতে বলল। আমি অন্যদিকে তাকিয়ে রইলাম। আশেপাশে কেউ নেই। সে তার ফ্রক খুলল। আমি টের পেলাম। ফিরে তাকাতেই সে দু’হাত দিয়ে বুক ঢেকে পেছন ফিরে বসে পড়ল। আমি পিঠের দিকে তাকালাম। পিঠে দিলাম এক চুমো।
--এই, সরে যাও--অন্যদিকে তাকাও--আমি ইয়েস বললে তুমি তাকাবে।
-- কেন, আমার পোষাক চেঞ্জ এর সময় তুমি দেখেছ না।
--তুমি তো ছেলে।
--তুমি কি মেয়ে?
--হ্যাঁ, অন্যদিকে তাকাও। পরে পুরস্কার দেব।
--তাই--?
--হ্যাঁ, সত্যি বলছি।

হায়রে পাগল! জাতে মাতাল তালে ঠিক। আমি অন্যদিকে এ্যাটেনশন হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। ইয়েস বলতে তাকালাম। সে টু-পীছ পড়ে ফেলেছে। আবার অন্যদিকে তাকালাম তার কথা মতো। সে আমার গলা ধরে ঠোঁটের উপর বসিয়ে দিল গাঢ় চুম্বন। থুথু লেগে গেছে। সাথে সাথে বলে দিল, এটা হলো পুরস্কার। তাকিয়ে রইলাম ওর দিকে। ও হাসছে। সে আমার ভেজা শার্ট, প্যান্ট, তার ফ্রক সবই ফেলে দিল নিচে। তারপর সে তোয়ালে দিয়ে আমার মাথা মুছতে লাগল। ভালোভাবে আমি মাথা মুছিনি সত্য কিন্তু তার দৃষ্টি আমার দিকে গেল? আমি অবাক, কে বলবে সী ইজ মেন্টাল পেসেন্ট? লাজ-লজ্জা সবই যখন আছে তখন...। কি জানি, এ দুনিয়াতে কত জাতের পাগল আছে। এক জনের সঙ্গে অন্য জনের সাদৃশ্য না থাকাই স্বাভাবিক। আসলে সূক্ষ্নভাবে, আমরা কেউ সুস্থ্ নই--সবাই আপেক্ষিক সুস্থ্। তাই একজন অন্য জনকে মনে করি অসুস্থ। মুসলমানে মুসলমানে যুদ্ধ করে বাংলাদেশ ও পাকিস্তান হয়ে গেল। বিশ্বে, এদের অসুস্থই ভেবেছে। কিন্তু তৎকালীন সমাজে বাঙালিরা বুঝতে পেরেছিল ধর্মগত মিল হলেও সংস্কৃতিগত, ভাষাগত, শিক্ষাগত তথা জাতিসত্ত্বাতে বিরাট ব্যবধান। তাই ধর্মের মিল দিয়ে একত্রে থাকা সম্ভব নয়। তাছাড়া ধর্ম ভীরুরা ছিল ধর্ম ব্যবসায়ীদের দ্বারা আক্রান্ত। ধর্মের সূত্র টেনে পাকিস্তানিরা বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে বিরাট আঘাত হেনেছিল। বাঙালিরা বুঝল, বাঙালি বিধর্মীদের সাথে ভাই-বোন হিসেবে স্বাচ্ছন্দে থাকা যায়। কিন্তু পাকিস্তানি মুসলমানদের সাথে তা মোটেও সম্ভব হচ্ছে না। তাই সব ভেবে চিন্তে বাঙালিরা সময়ের প্রয়োজনে জাতিসত্ত্বাকে ধর্মের উপর স্থান দিল। তাই বলে ধর্মকে তারা কখনো খাট করে দেখেনি। সময়ের প্রয়োজনে জাতিসত্ত্বাকে প্রাধান্য দিয়েছে মাত্র। বাঙালিরা নিশ্চয় নিজেদেরকে অসুস্থ ভাবে না। আজকের বাংলাদেশে একদল মৌলবাদীদের ভাবে অসুস্থ। আবার মৌলবাদীরা ঐ দলটিকে ভাবে অসুস্থ। আসলে কারা অসুস্থ--তা নির্ণয় করা খুবই সহজ, আবার খুবই কঠিন।

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ