[প্রথমপাতা]

 

 

 

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ হৃদয়ের এপিঠ-ওপিঠ (পর্ব-১৫)

  

- শাশ্বত স্বপন -

 

পারিবারিক সম্পর্কে কারণে তারা দু’জন বিভিন্ন জায়গায় বেড়াতে যেত। নিচের অডিটোরিয়ামে তারা দু’জনই বিভিন্ন অনুষ্ঠানে উপস্থাপক হত। ন্যান্সিদের নিজস্ব বাসার নিচ তলার পুরো অংশই সাংস্কৃতির কেন্দ্রস্থল। সংগীত ও বিভিন্ন যন্ত্র বাজানো সে এখান থেকেই শিখত। তার সংগীত ও যন্ত্র শিক্ষার জন্য বড় মাপের ওস্তাদ ছিল। প্রথম পর্যায়ে কিসটা ন্যান্সির কাছে লজ্জা লাগলেও পরে সহজ হয়ে উঠে। তারা এক সাথে ছবি দেখত, ছবি তুলত। কোন এক পরিবার ঐতিহাসিক কোন স্থানে বেড়াতে গেলে তারা দু’জন অবশ্যই যেত। সবই চলত সকলের চোখের সামনে। কেউ কোনদিন তাদের কিছু বলেনি। আসলে দু’পরিবারের প্রধান কর্তা ও কর্ত্রীরাই ছেলেমেয়েদের সময় দিতে পারত না। তারা বেশির ভাগ সময় থাকত বাইরে। ন্যান্সি ও ফ্রান্সিস একসাথে ব্যাডমিন্টন, লুকোচুরি ইত্যাদি খেলত। সব খেলা ন্যান্সিদের বাসায়ই হত। ন্যান্সিদের খেলার নানান সরঞ্জাম ছিল। সেগুলো ম্যাক্সিম, ম্যারিওনাও ব্যবহার করত। কখনও বিকিনি পড়ে ন্যান্সি ফ্রান্সিসের সামনে গোসল করত, কখনও একসাথে। কখনও ফ্রান্সিসের ভাই-বোনরাও একসাথে গোসল করত। ন্যান্সিকে অনেক আনন্দই বেশিক্ষণ করতে দেওয়া হত না। কারণ অতিরিক্ত কোনকিছু তার দেহে সইত না। অসুখ জিনিসটা লেগেই থাকত।

এভাবে তাদের মধ্যে তিন বছর কেটে গেছে। ন্যান্সি ও ফ্রান্সিস ও লেভেল-এ ভর্তি হয়েছে। এখন তারা দু’জন গাড়ি হাঁকিয়ে অনেক দূর চলে যায়। মাঝে মাঝে রোড রং ও সিগন্যাল রং করে পুলিশে ধরা পড়লে ন্যান্সি তার বাবার নাম ও ঠিকানা বলত। পুলিশ সসম্মানে ছেড়ে দিত। ফ্রান্সিস অবাক হত। সে ভাবত, এ দেশে ধনীদের কত দাম! তারা প্রায়ই চাইনিজ খেতে যেত। কখনও দু’জনে। কখনও স্বপরিবারে। কখনও ফ্রান্সিস, ন্যান্সি, ম্যাক্সিম ও ম্যারিওনা এক সাথে মিলে যেত। একদিন দু’জনে হুইস্কি খেয়ে মাতাল অবস্থায় বাড়ি ফিরলে রেহানা একটু বকেন। ফলে ন্যান্সি পুরো একদিন দরজা বন্ধ করে রাখল। কিছুই খেল না। এমনকি ফ্রান্সিসের টেলিফোনও রিসিভ করল না। কেউ কর্তৃত্ব দেখালে তার অসহ্য লাগে। ফ্রান্সিস বিকালে এসে অনুরোধ করে দরজা খোলায়। পরে দু’জনে একসাথে খেয়ে, খেলতে চলে যায়।

এভাবে পাঁচ বছর কেটে যায়। তাদের মাঝে দৈহিক কোন সম্পর্ক হয়েছিল কিনা তা ন্যান্সির ডায়েরী থেকে বুঝা গেল না। ডায়রীর শেষের দিকে অনেক পাতা খালি। কিছুই লেখা নেই। পরবর্তী ঘটনা ডাক্তারের দেওয়া কাগজ থেকে বুঝা গেল। ন্যান্সি একদিন জোর করে ফ্রান্সিসকে নিয়ে চিটাগাং রোডের দিকে যায়। রাস্তায় হঠাৎ গাড়ি স্টার্ট বন্ধ হয়ে যায়। ফ্রান্সির দরজা খুলে যেই বাইরে এসেছে তখনই একটা পাঁচ টন মালবাহী ট্রাক তার পিছন দিক থেকে এসে তার দেহের উপর দিয়ে চলে যায়। তার মাথাটা বোমা ফাটার মতো একটা প্রচণ্ড শব্দ করে। ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন মাথা চড়িয়ে পড়ে চারিদিকে। ন্যান্সি প্রচণ্ড জোরে আর্তচিৎকার করে। যার ফলে সে জ্ঞান হারিয়ে ফেলে। গাড়িতে তখন তাদের প্রিয় একটা গান চলছিল--‘ও--’ ডিয়ার, আই লাভ ইউ...।’

তারপরের ঘটনা অতি সহজ। ফ্রান্সিসের আব্বা ও আম্মার কথা কিছু জানা গেল না। ডাক্তার কোথাও কিছু লেখেনি। তবে অবস্থাটা আমি উপলব্ধি করতে পারি। তারা চিরতরে জার্মানীতে ট্রান্সফার হয়ে গেছে। বাংলাদেশের সড়ক দুর্ঘটনা নিশ্চয়ই তারা তাদের এলাকায় ছড়াবে। ছড়াবে এদেশে দুর্ঘটনা নিত্য নৈমিত্তিক ব্যাপার। তাই দুর্ঘটনার এদেশে তারা আর আসবে না। ন্যান্সি দুই বছর পাবনা মানসিক হাসপাতালে ছিল, ভালো হয়নি। বিদেশে পাঠানো হয়েছে। ক্ষণিকের জন্য ভালো হলেও আবার একই অবস্থা। তারপর বাসায় এনে প্রাইভেট চিকিৎসা শুরু হলো। সাইক্রিয়াটিস্টদের পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট বোর্ড গঠন করা হলো, তাতেও কিছুই হলো না। ন্যান্সি প্রায়ই ফ্রান্সিস ফ্রান্সিস... করে উঠে। অবশেষে সকলের সিদ্ধাস্ত হলো, ফ্রান্সিস সদৃশ কোন ছেলেকে খুঁজে বের করতে হবে। ফ্রান্সিসকে সে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসত--যা ডায়েরীতে লেখা একটা পাতা থেকে বুঝা যায়--‘আই লাভ ফ্রান্সিস মোর দেন অল।’

ডায়েরীর এক পাতায় দু’জনের প্রিয় বিষয় সম্পর্কে লেখা আছে। ডায়েরীতে ন্যান্সি প্রতিদিন দু’একটা লাইন হলেও লিখত। লেখা আছে--দু’জনের প্রিয় রং গোলাপী, দু’জনেরই বেড়াতে ভালো লাগে। তাদের প্রিয় ফল আপেল, প্রিয় কথা ভালোবাসি। প্রিয় ব্যক্তিত্ব ড্যাডি এণ্ড মাম্মী। তবে ফ্রান্সিসের ওয়েস্টার্ণ সিরিজের বই ভালো লাগে। ন্যান্সির প্রেমের বই ভালো লাগে। তার লেখা আর আমার কল্পনা থেকে যতটুকু বোঝা যায়, তাদের ভালোবাসার সম্পর্ক হয়তো আরো অনেক বেশি গভীর ছিল। অনেক কথাই হয়তো ন্যান্সি তার ডায়েরীতে লেখেনি। জীবনের বহু ঘটনা-কল্পনা-আশা-আকাঙ্খা কাগজের পাতায় লেখা যায় না। অনেক কথা লেখার মাঝেই লুকিয়ে থাকে। কল্পনার সাহায্যে হয়তো অনেক কথাই লেখা যায়। কিন্তু তার মধ্যে অনেক ফাঁক-ফোঁকর রয়ে যায়।

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ