[প্রথমপাতা]

 

 

 

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ হৃদয়ের এপিঠ-ওপিঠ (পর্ব-২)
 
 

- শাশ্বত স্বপন -

 

কথা অনুযায়ী বিকাল বেলায় তার বাসায় উপস্থিত হলাম। বিরাট এলাকা। চারদিকে গাছ আর গাছ। মাঝে দু’টি বড় দালান। আশে পাশে ছোটখাট পাকা করা ঘরও আছে। আমি বসে আছি, নজরুল চৌধুরীর বাস ভবনের লনে। আমার এক পাশে নজরুল চৌধুরী, অন্য পাশে আরেক জন লোক আর আমার সম্মুখে গম্ভীর অথচ অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে একজন মহিলা। সম্ভবত মিসেস নজরুল হবে। পাশের লোকটি আমার তথা পুরো জড়ো পরিবেশটা পরিবর্তন করার জন্য আমার দিকে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকালেন।
- তোমার নাম কি?
-শোভন মৃধা।
- আব্বার নাম?
- মরহুম ফরহাদ মৃধা।
- কবে মারা গেছেন?
- ’৭৪-এ।
- কিভাবে?
- কে বা কারা যেন আব্বাকে রাতের বেলায় ধরে নিয়ে যায়। তারপর আর কোনদিন ফেরেননি।
-উনার লাশ...?
- পাইনি। অনেক খোঁজাখুঁজি হয়েছে।
- তোমরা কয় ভাই-বোন?
- দুই ভাই, বোন নেই।
- তোমার মা...
- মা নেই।
- তাহলে এতদিন কোথায়...?
- বাবা নিখোঁজ হবার পর তার এক বন্ধুর বাসায় আমরা দুই ভাই মানুষ হয়েছি। মা শোকে শোকে...
- তারপর?
- আর কিছু বলতে ইচ্ছে করছে না।
নজরুল চৌধুরী এতক্ষণ মনোযোগ দিয়ে সব শুনছিলেন। এবার দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মহিলার দিকে তাকালেন। মহিলার চোখ ছলছল করছে। তিনি মৃদু হাসলেন আমার দিকে তাকিয়ে। তারপর বলতে শুরু করলেন―
- তুমি আমার অফিসে চাকুরীর জন্য গিয়েছিলে?
- জ্বী।
- চাকুরী করবে?
- অবশ্যই। দেড় বছর ধরে একটা চাকুরী খুঁজছি।

গাম্ভীর্যপূর্ণ মহিলাটি এবার আমার দিকে করুণ দৃষ্টিতে তাকালেন। তারপর প্রশ্ন করলেন, ‘তোমার বাবা মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন?’ মুক্তিযোদ্ধা! আমার বাবা, আমার বাবা ছিলেন। মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন কিনা সে আমি ভাবতেও চাই না―বলতেও চাইনা। আজকাল মুক্তিযোদ্ধা অনেকটা উপহাসের কার্টুনের মত। যেন, ওয়েস্টার্ণ সিরিজের কোন এক গ্রুপের সৈনিক যারা বিপক্ষ শক্তির সাথে বিজয়ী কিন্তু আপন স্বপক্ষের (বিভীষণ) শক্তির কাছে চরমভাবে বিজিত। পত্রিকার পাতায় মাঝে মাঝেই মুক্তিযোদ্ধা, পঙ্গু মুক্তিযোদ্ধা তথা মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের করুণ চিত্র দেখা যায়। আমি কোন কথা বললাম না। উনি তার নিজের কথা বলতে শুরু করলেন―
- আমার ভাইও যুদ্ধে মারা গেছেন। তাই বলছিলাম। তুমি কিছু মনে করো না। যুদ্ধে কেউ পক্ষে, কেউ বিপক্ষে থাকে। এটাই তো যুদ্ধের নিয়ম। মুক্তিযোদ্ধারা আমার ভাইটাকে দালাল মনে করে...
উনি থেমে গেলেন। উনি ভাবছেন, আমার বাবা তার ভাইয়ের মত ছিল। আমার প্রচণ্ড রাগ হল। এখানে একটা চাকুরী মিললে মিলতেও পারে। বাবা মুক্তিযোদ্ধা হোক আর রাজাকার হোক তাতে আমার কিছুই আসে যায় না। যদি বলি বাবা কমরেড ছিলেন। উনারা হাসবেন। যদি বলি সিরাজ সিকদারের সর্বহারা পার্টি করতেন। তাহলে তিনজনেই হয়তো চেয়ারে বিশেষ ভঙ্গীত বসবেন--যেন এক্ষুণি ডাকাত আসবে। আমি মহিলার দিকে তাকিয়ে আবার চোখ টেবিলের দিকে রাখলাম।


নজরুল চৌধুরী হঠাৎ শশব্যস্ত হয়ে উঠলেন। চায়ের একটা কাপ আমার দিকে বাড়ালেন। আরেক কাপ দ্বিতীয় লোকটিকে দিলেন। যার নাম, আমি এখনও জানি না। নিজে এক কাপ নিলেন। মহিলাটি কিছু গ্রহণ করল না। এমনকি চায়ের কাপও না। ট্রেতে ও প্লেটে ফলমুল জাতীয় নানা খাবার কাজের মহিলা দিয়ে গেছে। স্বর্গ বাসিন্দা এই কোটিপতির সাথে আমি খাবার খাচ্ছি। ভাবতেই অবাক লাগে। মুখে খাবার নিলেও গলা দিয়ে সহজে নামতে চায় না। একটা ব্যাপার বেশ অবাক লাগলো। এরা দু’জন, কেউ মহিলাকে কিছু মুখে দিতে বলল না। মহিলা আমার বাবা তথা মুক্তিযোদ্ধাদের ব্যাপারে মনে হয়, কিছু বলতে চেয়েছিলেন। নজরুল চৌধুরী বলে উঠলেন, ‘রাখ এসব ফালতু কথা।’

হ্যাঁ, ফালতু কথা। এখন, এটা একটা ফালতু ব্যাপারই বটে। মুক্তিযুদ্ধ আমিই মেনে নিতে চাই না ভুক্তভোগী হয়েও, আর সেখানে উনারা...। আমি মুক্তিযুদ্ধের চেয়ে আমার বাবাকে, আমার মাকে বড় মনে করি। আমার ভালবাসা আল্পনাকে বড় মনে করি। মুক্তিযুদ্ধ আমাদের সংসার, আমাদের জীবন, আমাদের ভালোবাসা--সবকিছু ছিন্ন-ভিন্ন করে দিয়েছে। জাতীয় স্বার্থ দেখার মত মন-মানসিকতা যেটুকু ছিল তাও বিলীন হতে হতে একেবারে চৈত্র মাসের রৌদ্র তাপে শুকিয়ে যাওয়া পুকুরের তলায় ঠেকে গেছে। যেখানে আমার তথা আমাদের এ অবস্থা--যেখানে আমি না খেয়ে মরে গেলেও কেউ এক মুঠো খাবার দিয়ে সাহায্য করে না― সেখানে অন্য মানুষ কি অবস্থায় আছে―তারা কি করে বা করল―তা জানার সামান্য আগ্রহও আমার নেই। প্রতিহিংসা বলতে আমার মনে কিছু নেই। স্বার্থপর? হ্যাঁ, স্বার্থপর। আমার মতো অবস্থায় পড়লে বুলি আওড়ানো, মঞ্চ কাঁপানো বক্তারাও বুঝত, মা-বাবা হারানোর ব্যথা কত গভীর, কত জ্বালাময়। দশ বছরের তিলে তিলে গড়ে তোলা গভীর প্রেম বিসর্জন দেওয়া কত কষ্টের! আমাকে সবকিছুই মেনে নিতে হয়েছে। এখন আমার কোন লক্ষ্য নেই। জীবন যেদিকে চলে―চলুক না।

সবাই কেন জানি, চুপচাপ হয়ে আছে। আমি কি বলব―তাও ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না। হঠাৎ দোতলা থেকে প্রচণ্ড একটা শব্দ কানে ভেসে এলো। কিছু একটা ভেঙ্গেছে মনে হয়। গ্রীল দেওয়া দোতলার বারান্দার দিকে তাকালাম। দোতলার দরজাটা খোলা। মূল স্থানে শব্দটা যে আরো জোরালো হয়েছে―এ ব্যাপারে আমি নিশ্চিত। অথচ তিন জনের কেউ সেদিকে ফিরেও তাকাল না। টু শব্দটিও করল না। মনে হয়, উনারা যেন জানেন, দোতলায় কি হয়েছে। খোলা দরজা দিয়ে সালোয়ার-কামিজ পরিহিতা একটা মেয়ে বারান্দায় এলো। গ্রীল ধরে দাঁড়াল। আমরা দোতলা থেকে মনে হয়, পঞ্চাশ গজ দূরে। মোটামুটি পরিস্কার সব দেখা যাচ্ছে। তাকালাম মেয়েটির দিকে। কিশোরী ও যুবতীর মাঝামাঝি মনে হয়। বেশ রাগান্বিত। এই মুহুর্তে ভেঙ্গে যাওয়া ঘটনার সাথে সে জড়িত বলে মনে হচ্ছে। বারবার মাথায় হাত দিচ্ছে। এদিক-ওদিক তাকাচ্ছে। এক স্থানে স্থির থাকতে পারে না। শিশুর মতো বায়না ধরে গুনগুন করে কি যেন চাইছে। একজন মহিলা দরজা দিয়ে তার কাছে আসল; হাতে এক গ্লাস পানি ও ঔষধ মনে হচ্ছে। মেয়েটি জোড় করে গ্লাসটা নিজের হাতে নিয়ে গ্রীলের ফাঁক দিয়ে নিচে ফেলে দিল। আমি তিন জনের দিকে তাকালাম। একই অবস্থায় আছে। মেয়েটি হঠাৎ আমার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। আমিও তাকিয়ে রইলাম। তারপর তিন জনের দিকে তাকিয়ে দেখি, উনারা একবার আমার দিকে, একবার মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে এবং বেশ আগ্রহ দৃষ্টি নিয়ে। কিছুক্ষণ আগের উত্তেজিত মেয়েটি আমার দিকে তাকিয়ে একেবারে স্থির হয়ে আছে। যেন, কি সে দেখেছে। আমি ঢোক গিললাম। একটু ভয়ও পেলাম। মহিলাটি বেশ খুশী ভঙ্গীতে ব্যাপারটা পর্যবেক্ষণ করছে। ব্যাপারটা কিছুই বুঝে উঠতে পারিছ না। এখন আমার কি করণীয়―তাও ভাবতে পারছি না। আমি কি উঠে দাঁড়াব? চলে যাব? নাকি বলব, আজ আসি? কিছুই ভাবতে পারছি না। একজন কোটিপতির সামনে অনুমতি না নিয়ে দাঁড়িয়ে যাওয়াটা ঠিক হবে না। চাকুরীর লোভটা আমাকে যেন চেয়ারের সাথে বেঁধে ফেলেছে। বি.এ পাস করে দেড় বছর ধরে চাকুরীর পিছনে ঘুরছি―কোথাও চাকুরী পাচ্ছি না। সাধারণ একটা পিয়নের চাকুরীও মামা-কাকা ছাড়া হয় না। আমি মাথা নিচু করে রইলাম। মহিলাটি তার মেয়েকে ডাকছে―‘আয় মা―আয়―।’

মহিলার চোখে জল। সে তা আঁচল দিয়ে মুছে আবার ডাকল। আমি বিহ্বল দৃষ্টিতে আবার তাকালাম। বেশ সুন্দরী। তবে রোগারোগা ভাব। অনেকটা নেশাগ্রস্ত রোগীর মত। মেয়েটি গ্রীল ভেঙ্গে লাফ দিয়ে আসতে চাইছে। দ্বিতীয় লোকটি হাতের ইঙ্গিতে কি যেন বোঝাল। মেয়েটি দরজা দিয়ে আবার চলে গেল। এতক্ষণে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লাম। একটা নাটকীয় অবস্থা হতে যেন মুক্তি পেলাম। দ্বিতীয় লোকটি বাসার দিকে তাকিয়ে আছে। তবে কি মেয়েটি এ পথে আসবে? মাত্র এক মিনিটের ব্যবধানে হঠাৎ মেয়েটি নিচতলা থেকে দৌড়ে এলো আমাদের সামনে। লোকটি মেয়েটির হাত ধরল; সে ঝাড়া দিল। কপাল ছুঁয়ে দেখল, জ্বর আছে কিনা। মেয়েটি এক দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না। সবাই যার যার আসনে চুপচাপ বসে আছে। আমার হৃৎস্পন্দন বেড়ে গেছে। সবাই রহস্যময় কিছু আবিস্কারের আশায় আমার আর মেয়েটির দিকে তাকাচ্ছে। মেয়েটির চোখের জল দু’গাল বেয়ে ঝরছে। এলোমেলো চুল। এবার স্পষ্ট তাকে রোগী মনে হল। পাগল পাগলও মনে হচ্ছে; নতুবা এই বয়েসী একটা মেয়ে এমন করে। পঞ্চাশ গজ দূরে তাকে যে রকম মনে করেছিলাম, কাছে আসার পর তাকে আরো সুন্দরী মনে হচ্ছে। যেমনি চেহারা--তেমনি গায়ের রং। তবে বেশ রোগা-রোগা। মুখমণ্ডল থেকে নিচের দিকে তাকাতেই ‘ফ্রান্সিস―’ বলে এমন জোড়ে চিৎকার করে উঠল যে, আমি ভয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। ভয়ে হাত-পা সহ সমস্ত দেহ কাঁপতে শুরু করেছে। সে চিৎকার দিয়েই আমাকে জড়িয়ে ধরল। তিন জনে টিভির পর্দায় ভাল একটা ছবি যেন উপভোগ করছে। দ্বিতীয় ব্যক্তিটি খুশী খুশী ভাব নিয়ে বত্রিশ দাঁত বের করে হা করে তাকিয়ে আছে। নজরুল চৌধুরী ব্যবসায়ী ভঙ্গীতে ছোটখাট ব্যবসায়ীর জয়-পরাজয়ের দৃশ্য দেখছে। মহিলাটি খুশীতে কাঁদতে শুরু করেছে। মেয়েটি খুব বেশী হলে তিরিশ সেকেণ্ডের মত আমাকে জড়িয়ে ধরেছিল। সে যে কোন নারী, এ যেন তার চিন্তায় ছিল না। কেন সে আমাকে জড়িয়ে ধরল? বুঝে না উঠতেই সে আমার হাতের তালু দিয়ে তার মুখমণ্ডল ঘষতে শুরু করল। একবারে উন্মাদের মত। তারপর হঠাৎ আমাকে ধাক্কা দিল। আমি পাকা গ্রাউণ্ডে পড়ে গেলাম। মনে হল, সে যা চেয়েছিল―তা পেল না। দ্বিতীয় ব্যক্তি মেয়েটিকে ধরল। আদর করতে লাগল। সে ব্যক্তিকে জড়িয়ে ধরে কেঁদে কেঁদে কি যেন বলতে লাগল। দু’একটা লাইন আমি ভালভাবে বুঝতে পারলাম―“আংকেল, আই ওয়ান্ট ফ্রান্সিস, প্লিজ ফ্রান্সিসকে এনে দাও...। ”

ফ্রান্সিস কে? আমি বুঝতে পারলাম না। তবে কিছুটা অনুমান করতে পারলাম। মনে হয়, প্রেম ঘটিত ব্যাপার। অবশ্য এটা নাও হতে পারে। নজরুল চৌধুরী ও মহিলা মেয়েটিকে ধরতেই সে কামড় বসাতে চাইল। মনে হয়, ঘটনা বেশ বড়। এখনো আমি স্পষ্ট কিছু জানি না। এই যে এত মানুষ পৃথিবীতে, সবার জীবনে কত ঘটনাই থাকে। দুঃখ-কষ্ট, সুখ-শান্তি নিয়েই মানুষের জীবন। কখনো বড় কোন দুঃখ মানুষকে তেমন ক্ষতি করতে পারে না। আবার কখনো ছোট কোন দুঃখ মানুষকে এমন পথে চালিত করে, যে পথ থেকে সে কখনো ফিরে আসতে পারে না। তাদের দুঃখ ছোট না বড়―তা আমি জানি না। তবে কোন ব্যক্তির একেবারে মরে যাওয়ার চেয়ে জীবন্মৃত হয়ে থাকা অনেক কষ্টের, অনেক যন্ত্রণার।

লোকটি মেয়েটিকে জোর করে বাসায় নিয়ে যাচ্ছে। আমি হতবাক হয়ে তার দিকে তাকিয়ে আছি। আমি পাকা লন থেকে উঠে দাঁড়িয়েছি। মেয়েটি কয়েকবার পিছন ফিরে আমার দিকে তাকাল। তারপর বাসার ভিতরে অদৃশ্য হল। কিছুক্ষণ সবাই নিরব হয়ে রইল। দু’জনে দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে চেয়ারে বসলেন। আমাকেও বসতে বললেন। লোকটি ফিরে এসে জানাল, টিভিটা ভেঙে ফেলেছে। সে ইনজেকশন দিয়ে এসেছে। কিছুক্ষণের মধ্যে ঘুমিয়ে যাবে। এতক্ষণে নিশ্চিত হলাম, উনি একজন ডাক্তার। লোকটি চেয়ারে বসল।

হঠাৎ একটা কুকুরের ঘেউ ঘেউ শব্দ আমার পিছন দিক থেকে গর্জে উঠল। এই শব্দ আমার জীবনে শোনা কোন কুকুরের নয়; বুঝতে পালাম, বিদেশী জাতের কুকুর। এতক্ষণ মনে হয়, ঘুমিয়ে ছিল। শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে। আমার চেয়ার থেকে চৌদ্দ-পনর গজ দূরে ছিল। এতক্ষণ খেয়াল করিনি। তার চাহনীর ভঙ্গী ভয়ঙ্কর। অনেকটা বাঘের মত। সারা শরীর লম্বা লম্বা পশমে ভরা। মুখ ঘুরিয়ে ডাক্তারের দিকে তাকালাম। তিনি বললেন, ‘তুমি কিছু মনে কর না। ও একজন মেন্টাল পেসেন্ট।’ নজরুল চৌধুরী বলে উঠলেন, ‘থাক, আজ থাক, তুমি কাল এসো। আজ আমারই ভাল লাগছে না।’

নজরুল চৌধুরীকে বেশ ক্লান্ত লাগছে। তিনি ডাক্তারকে কিছু বলতে দিলেন না। আর আমার কাছে বলবেনই বা কেন? আমি তাদের কি উপকারে আসতে পারি? মহিলাটি আজই ব্যাপারটা বলার জন্য আগ্রহ দেখালেও, পরে থেমে গেল। ডাক্তার আমারে কাঁধে হাত রেখে বলল, “ইচ্ছে করে এতক্ষণ পরিচিত হইনি। আমি একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞ এবং ঐ যে মেয়েটিকে দেখলে―তার মামা। এ আমার বড় আপা, দুলাভাই। মেয়েটি তাদের একমাত্র সন্তান। এ বংশের প্রদীপ ও উত্তরাধিকারিণী। তোমাকে তোমার চাকুরী সম্পর্কে কিছু বলব না। তুমি কাল এসো, ঠিক এ সময়ে।”

একটা চাকুরী, কি চাকুরী―আমি জানি না। তারা আজ কিছু বলতেও চাইছে না। গোলক ধাঁধাঁর মধ্যে পড়ে গেলাম। মেয়েটি আমাকে জড়িয়ে ধরল। কিন্তু কেন? আমাকে তো তার চিনার কথা না। সে মেন্টাল পেসেন্ট। অতএব পাগলে কিনা করে--ছাগলে কিনা খায়। এ নিয়ে ভাবা বোকামী মাত্র। আমি সালাম দিয়ে আমার পথ মাপতে শুরু করলাম। সামনে একটা গাড়ি। ড্রাইভার পাশে দাঁড়িয়ে আছে। আমাকে যেতে দেখেই গাড়িতে উঠতে বলল। আমি ড্রাইভারের দিকে তাকালাম। তারপর পিছন ফিরে তাদের দিকে তাকালাম। আপত্তি সত্ত্বেও মহিলার কথা মত গাড়িতে উঠতে হল। ড্রাইভারকে সে ডেকে কি যেন, বুঝিয়ে দিল।

(চলবে...) 

 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ