প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

বঙ্গবন্ধু হত্যা :পূর্বাপর ও অতঃপর

 


আবদুল মান্নান
 

 

কোন একটি দেশের রাজনীতিবিদ, সরকার বা রাষ্ট্রপ্রধানের আততায়ীর হাতে নিহত হওয়া নতুন কিছু নয় । ইসলামের প্রথম যুগে চার খলিফার মধ্যে তিন খলিফাকে ঘাতকদের হাতে প্রাণ দিতে হয়েছিল । তারও আগে রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজারকে তাঁর অতি আপনজনেরা প্রকাশ্যে হত্যা করেছিল । সেটি খ্রিষ্টপূর্ব ৪৪ শতকের ঘটনা । এই হত্যাকান্ডে ষাটজন রোমান সিনেটর (সংসদ সদস্য) অংশগ্রহণ করেছিল যার মধ্যে সিজারের একান্ত আপনজন বলে পরিচিত মার্কাস ব্রুটাসও ছিল । যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট আব্রহাম লিংকন সহ চারজন প্রেসিডেন্ট আততায়ীর হাতে প্রাণ দিয়েছেন । ভারতের মহাত্মাগান্ধী, প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী ও রাজীব গান্ধী, পাকিস্তানের প্রথম প্রধানমন্ত্রী লিয়াকত আলী খান, সেনা শাসক জিয়াউল হক, প্রধানমন্ত্রী বেনজির ভূট্টো, চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদোর আলেন্দে, বার্মার প্রধানমন্ত্রী অং সান (সুচির পিতা), মিশরের আনোয়ার সাদাত সহ আরো অনেকেই ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ঘাতকের বুলেট বা বোমার স্বীকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন । দেখা যায় এই সব হত্যাকান্ডের পিছনে দীর্ঘ দিনের সূক্ষ্ম ও পরিকল্পিত প্রস্তুতি ছিল । কোন কোন ক্ষেত্রে হত্যাকান্ডের পিছনে সীমিত সংখ্যক মানুষের সম্পৃক্ততা থাকলেও অন্যদের বেলায় এই সম্পৃক্ততার পরিধি অনেক বিস্তৃত ছিল যেমনটি দেখা যায় বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের ক্ষেত্রে । ১৯৭৫ সালের ১৫ আগষ্ট বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ড হঠৎ ঘটে যাওয়া কোন দূর্ঘটনা ছিলনা । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ ব্যর্থ করে দিতে প্রস্তুতিটা শুরু হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধ চলাকালিন সময় এবং তাতে সম্পৃক্ত ছিল খোদ আওয়ামী লীগের অভ্যন্তরে থাকা কিছু দলীয় নেতৃবৃন্দ আর প্রবাসী সরকারের কতিপয় কর্মকর্তা । এদের নেতৃত্বে ছিলেন প্রবাসী সরকারের পররাষ্ট্র বিষয়ক মন্ত্রী খোন্দকার মোশতাক আহমদ । এই কাজে তিনি সাথে পেয়েছিলেন কুমিল্লা হতে নির্বাচিত আওয়ামী লীগের সংসদ সদস্য জহিরুল কাইউম, তাহের উদ্দিন ঠাকুর, সরকারের আমলা কর্মকর্তা মাহবুব উল আলম চাষী প্রমূখদের। এদের একদিকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন নিয়ে ছিল সন্দেহ আর অন্যদিকে ছিল দলের অভ্যন্তরে ক্ষমতার দ্বন্ধ । আর একদল সামরিক কর্মকর্তা চাইতেন এই যুদ্ধটা একটি সামরিক কমান্ডের অধীনে পরিচালিত হোক । এদের একটা বড় অংশ চাইতেন না তাদের উপর কোন বেসামরিক সরকার খবরদারি করুক । এই মুক্তিযুদ্ধ যে একটি জনযুদ্ধ ছিল তা তারা মানতে নারাজ ছিলেন । মোশতাক মনে করতেন তাকে মন্ত্রীসভায় স্থান দিলেও তিনি যথেষ্ট গুরুত্ব পাচ্ছেন না । প্রবাসী সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ মোশতাককে তেমন একটা বিশ্বাস করতেন না যার কারণে যখন বাংলাদেশ হতে একটি প্রতিনিধি দল জাতিসংঘে বাংলাদেশের পক্ষে লবি করতে যায় সেই দলে মোশতাককে রাখা হয় নি । ১৯৭১ এর সেপ্টম্বর মাসে মোশতাক জহুরুল কাইউমের মাধ্যমে কোলকাতাস্ত মার্কিন কন্সাল জেনারেলের কাছে খবর পাঠান যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের কারাগার হতে বঙ্গবন্ধুর মুক্তির ব্যাপারে সহায়তা করলে তিনি মুক্তিযুদ্ধ বন্ধ করতে ব্যবস্থা নেবেন । এটি ছিল মোশতাকের একক সিদ্ধান্ত । মার্কিন কন্সাল জেনারেল মোশতাকের প্রস্তাবে সায় দেন নি কারণ তিনি জানতেন প্রবাসী সরকারকে ডিঙ্গিয়ে কিছু করার ক্ষমতা মোশতাকের নেই ।
মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পাকিস্তানের সামরিক গোয়েন্দা সংস্থা মুক্তিযুদ্ধরত সেনাবাহিনীর ভিতরে তাদের নিজস্ব এজেন্ট অনুপ্রবেশ ঘটানোর তৎপরতা শুরু করে যাতে তারা পরবর্তিকালে বাংলাদেশকে পুনরায় পাকিস্তানের সাথে একিভূত করার চেষ্টা করতে পারে । বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার কাজে যে সকল সামরিক অফিসার নেতৃত্ব দিয়েছিল তাদের প্রায় সকলেই মুক্তিযুদ্ধের শেষের দিকে পাকিস্তান হতে এসে প্রবাসী সরকারের সাথে যোগ দিয়েছিল । বস্তুত পক্ষে এরা কেউ যুদ্ধের ময়দানে লড়াই করে নি । হত্যাকান্ডের অন্যতম পরিকল্পনাকারি মেজর সৈয়দ ফারুক রহমান মুক্তিযুদ্ধে চূড়ান্ত বিজয় অর্জনের ঠিক পূর্বমুহূর্তে মধ্যপ্রাচ্যের কোন একটি দেশ হতে কোলকাতা আসে এবং যশোর মুক্ত হওয়ার পর মুক্তিবাহিনীর সাথে যোগ দেন । পাকিস্তান ফেরত এই সব ষড়যন্ত্রকারী ও ঘাতকদের সাথে জিয়াউর রহমানের সুসর্ম্পক ছিল । ১৯৭৫ সালের মার্চ মাসে ফারুক রহমান জিয়ার সাথে বঙ্গবন্ধু সরকারকে উৎখাতের পরিকল্পনা নিয়ে আলোচনা করেন । জিয়া ফারুককে বলেন একজন সিনিয়র অফিসার হিসেবে তিনি এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সরাসরি জড়িত হতে পারবেন না তবে তারা তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে এগিয়ে যেতে পারে । জিয়া তখন ডেপুটি চীফ অব স্টাফ ছিলেন । বঙ্গবন্ধু এই পদটি জিয়ার জন্যই সৃষ্টি করেছিলেন । প্রজাতন্ত্রের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা হিসেবে জিয়ার উচিৎ ছিল ফারুক গংদের এই সব পরিকল্পনা সম্পর্কে তার উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের জানানো । আর বঙ্গবন্ধুর ধানমন্ডির বাড়ীতে জিয়ার অবারিত যাতায়াত ছিল ।
১৯৭২ সালের ১০ জানুয়ারি তারিখে পাকিস্তানের কারাগার হতে বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তনের পর ১২ তারিখ নতুন মন্ত্রীসভা শপথ গ্রহণ করে । নতুন মন্ত্রীসভা যুদ্ধবিধ্বস্থ দেশটিকে আবার নিজের পায়ে দাঁড় করাতে এতই ব্যস্ত ছিল যে দেশে অভ্যূত্থানের যে একটি নীল নকশা প্রস্তুত হচ্ছে সেই সম্পর্কে খোঁজ খবর নেওয়ার প্রয়োজন কেউ অনুভব করে নি । তবে এই বিষয়ে ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা ‘র’ ঠিকই খবর রেখেছিল যা তারা বঙ্গবন্ধুকে একাধিকবার অবহিত করেছিল তবে তিনি তাতে তেমন একটা গুরুত্ব দেন নি । একই সময় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি বেশ নাজুক হচ্ছিল । মওলানা ভাসানির ন্যাপের ছাতার নীচে অতি বাম আর অতি ডান পন্থিরা একত্রিত হয়েছে । ছাত্রলীগ হতে বের হয়ে একদল মেধাবি তরুণ ‘বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রে’ দীক্ষিত হয়ে গঠন করেছে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল। এদের নেতৃত্ব দিতে এগিয়ে এসেছেন যুদ্ধ দিনের নয় নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার মেজর জলিল । সাথে আছেন ছাত্র নেতা সিরাজুল আলম খান, আ স ম আবদুর রব, শাহজাহান সিরাজ, হাসানুল হক ইনু, আ ফ ম মাহবুবউল হক প্রমূখ । বঙ্গবন্ধু সরকার যখন দেশ গড়তে ব্যস্ত তখন এই সব দল ও গোষ্ঠী দেশকে অস্থিতিশীল করতে নানা কর্মসূচী পালন শুরু করে । ১৯৭৩ সালের ১৬ ডিসেম্বর পূর্ব পাকিস্তান (তখনও নাম পরিবর্তন হয় নি) কমিউনিষ্ট পার্টি (এম-এল) পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলী ভূট্টোর কাছে ‘স্বৈরাচার’ মুজিব সরকারকে উৎখাত করার জন্য অর্থ, অস্ত্র আর বেতারযন্ত্র চেয়ে বার্তা পাঠান । ভূট্টো তার আস্থাভাজন এক কর্মকর্তাকে আবদুল হককে সহায়তা করার নির্দেশ দেন । এই সময় ইরফানুল বারী সম্পাদিত মওলানা ভাসানির সাপ্তাহিক সংবাদ পত্র ‘হক কথা’, জাসদের মূখপত্র দৈনিক ‘গণকণ্ঠ’ ও কট্টর চীন পন্থিদের সাপ্তাহিক এনায়েতুল্লাহ খানের ‘হলিডে’ পত্রিকা নানা ধরণের গুজব ছড়িয়ে দেশের মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে । কয়েক জায়গায় ১৯৭৩ সালের দূর্গা পূজার সময় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোরও চেষ্টা করা হয় ।
অন্যদিকে বঙ্গবন্ধু তাঁর নিজের নিরাপত্তার ব্যাপারে ছিলেন চরম উদাসীন । মেজর জেনারেল সুজান সিং উবান ১৯৭১ সালে স্পেশাল ফ্রন্টিয়ার ফোর্সের অধিনায়ক ছিলেন । তিনি পার্বত্য অঞ্চলে মুক্তিবাহিনীর পাশে থেকে যুদ্ধ করেছেন । ১৯৭৩ সালে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী উবানকে ঢাকা প্রেরণ করেণ । উদ্দেশ্য ছিল তিনি বঙ্গবন্ধুকে জাতীয় রক্ষিবাহিনী গঠনে সহায়তা করবেন । উবান তাঁর স্মৃতি কথা মূলক গ্রন্থ ‘ফ্যান্টামস অব চিটাগং’-এ লিখেছেন তিনি বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বর বাড়ীতে গিয়ে দেখেন বাড়িটি সম্পূর্ণ অরক্ষিত এবং সকলের জন্য বাড়ির দরজা অবারিত । এই বিষয়ে তিনি বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করলে জবাবে বঙ্গবন্ধু বলেন ‘জনগণ আমাকে জাতির পিতা বলে ডাকে । তাদের জন্যতো আমার দরজা খোলা রাখারই কথা।’
‘র’এর এক কালের শীর্ষ কর্মকর্তা আর কে যাদব তাঁর গ্রন্থ ‘মিশন র’ তে লিখেছেন বাংলাদেশে যে একটি সামরিক অভ্যুত্থ্যানের পরিকল্পনা হচ্ছে তা তারা তাদের সোর্স হতে জানতে পেরেছিলেন । ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর অনুমতি নিয়ে ‘র’ এর অন্যতম নীতি নির্ধারক আর এন কাউ ১৯৭৪ সালের ডিসেম্বর মাসে বঙ্গবন্ধুর সাথে বঙ্গভবনে দেখা করে তাঁকে এই ষড়যন্ত্র সম্পর্কে অবহিত করলে বঙ্গবন্ধু তা হেসে উড়িয়ে দিয়ে বলেন এরা সকলে আমার সন্তান । তারা আমার কোন ক্ষতি করতে পারে না । কাউ হতাশ হয়ে দিল্লি ফিরে যান । ‘র’ ১৯৭৫ সালে সর্বশেষ আর একজন কর্মকর্তাকে দিল্লি হতে ঢাকা পাঠায় । তিনি বঙ্গবন্ধুকে এই সম্ভাব্য অভ্যুত্থানের ব্যাপারে একটি পূর্ণাঙ্গ চিত্রই দেন নি এই ষড়যন্ত্রের সাথে কারা কারা জড়িত আছে তাদের নামও তাঁর কাছে প্রকাশ করেন । তবে ফলাফল একই । তবে বঙ্গবন্ধু জিয়াকে মার্চ মাসে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে বদলি করেন এবং এটি নির্ধারিত হয় যে জিয়া কোন একটি দেশে রাষ্ট্রদূত হয়ে চলে যাবেন । জিয়া অত্যন্ত চাতুর্যের সাথে আওয়ামী লীগের কিছু নেতৃবৃন্দের মাধ্যমে তার বদলির আদেশটি বাতিল করাতে সক্ষম হন । ১৯৭৫ সালে মাহবুব তালুকদার (বর্তমানে নির্বাচন কমিশনার) বঙ্গবন্ধুর স্পেশাল অফিসার হিসেবে কর্মরত ছিলেন । ১৫ই আগস্টের কয়েকদিন আগে তিনি গোয়েন্দা সংস্থায় কর্মরত তাঁর এক পরিচিত এক কর্মকর্তার কাছ হতে জানতে পারেন যে বঙ্গবন্ধুকে ক্ষমতাচ্যুত করতে এক গভীর ষড়যন্ত্র হচ্ছে । মাহবুব তালুকদার বিষয়টি জরুরি ভিত্তিতে শেখ ফজলুল হক মনিকে অবহিত করেন । মনিও তাঁর মামা বঙ্গবন্ধুর মতো এই সব সংবাদ আজগুবি বলে উড়িয়ে দেন ।
ষড়যন্ত্রকারীরা তাদের সকল কাজ অত্যন্ত পেশাদারিত্বের সাথে করেন । মার্চ মাস নাগাদ বঙ্গবন্ধুর নিরাপত্তার দায়িত্বে যাদের পদায়ন করা হয় তারা সকলে পাকিস্তানি ভাবধারার কর্মকর্তা ছিল । ১৫ই আগস্ট যে সকল সেনা অফিসার ৩২ নম্বর বাড়িতে পাহারারত ছিল সকলেই এক সময় বঙ্গবন্ধুর অন্যতম ঘাতক মেজর হুদা আর মেজর ডালিমের ইউনিটে কর্মরত ছিল । ঘটনার সময় তারা তেমন কোন প্রতিরোধ গড়ে তুলে নি । ঘাতকরা বঙ্গবন্ধুর বাড়ি আক্রমন করলে তিনি তৎকালিন সেনা প্রধান জেনারেল সফিউল্লাহকে টেলিফোন করেছিলেন । জেনারেল সফিউল্লাহ ঘাতকদেও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ব্যর্থ হন । তিনি পরদিন রেডিওতে গিয়ে খোন্দকার মোশতাক সরকারের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করণে । অন্য দিকে জাতীয় চার নেতা তা করতে অস্বীকার করলে তাদেও গ্রেফতার করা হয় এবং ৩ নবেম্বর কারা অন্তরালে হত্যা করা হয় । এই জাতীয় চার নেতার ঈমানের জোর ছিল যা অন্যদের ছিল না । জোনরেল সফিউল্লাহ সেনা নিবাসের বাড়িতে থাকা সত্ত্বেও তাঁর অধিনস্থ সেনা অফিসাররা দীর্ঘ দিন ধরে এমন একটি ভয়াবহ ঘটনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন আর তা তিনি জানতে পারেন নি এটি রহস্যজনক । ১৫ অগাস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা কওে খোন্দকার মোশতা ক্ষমতা দখল করলেও আসল ক্ষমতা রয়ে যায় জেনারেল জিয়ার হাতে । ৩ নভেম্বর জেল হত্যার পর খোন্দকার মোশতাককে জিয়া ক্ষমতাচ্যুত করে সুপ্রিম কোর্টেও প্রধান বিচারপতি এ এস এম সায়েমকে সাক্ষিগোপাল রাষ্ট্রপতি বানিয়ে তিনি নিজে ক্ষমতা দখল করেন । একই ভাবে যখন এরশাদ নির্বাচিত রাষ্ট্রপতি বিচারপতি সাত্তারকে হঠিয়ে ক্ষমতা দখল করেন তখন তিনিও বিচারপতি এ এফ এম আহসানউদ্দিন চৌধুরিকে রাষ্ট্রপতি নিয়োগ করেন । পাকিস্তান এবং বাংলাদেশে যতবার সেনা বাহিনী অবৈধভাবে ক্ষমতা দখল করেছে তাকে বৈধতা দিয়েছে দেশের প্রধান বিচারপতিরা ।
জেল হত্যাকা-ের পর জিয়া ঘতকদের নিরাপদে দেশ ত্যাগ করার সুযোগ কওে দেন । তারা বিশেষ বিমানে ব্যাংকক পাড়ি দেয় । পরে জিয়ার আস্থাভাজন শমসের মোবিন চৌধুরি (বেগম জিয়ার আমলে পরারাষ্ট্র সচিব) তাদেরকে পাসপোর্ট ও অর্থ দিয়ে আসেন । জিয়া ক্ষমতা দখল করে এই ঘাতকদেও বিভিন্ন দূতাবাসে গুরুত্বপূর্ণ পদে পদায়ন করেন । সেনা বাহিনী হতে অবসার নেওয়ার পর পিছনের তারিখ দিয়ে জিয়া নিজেকে লেঃ জেনারেল পদে পদোন্নতি দেন ।
ঘাতকরা বাংলাদেশকে একটি মিনি পাকিস্তানে রূপান্তর করতে চেয়েছিল । তার জন্য তাদেও প্রয়োজন ছিল বঙ্গবন্ধুকে বাংলাদেশের রাজনৈতিক দৃশ্যপট হতে সরিয়ে দেওয়া । তা তারা করেছিল এবং তাদেও সহায়তা করেছিল আওয়ামী লীগের ভিতরের কিছু মানুষ । বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করার পর পর্যাক্রমে দেশ শাসন করেন জিয়া, এরশাদ আর বেগম জিয়া । এই সময়ের মধ্যে বাংলাদেশ এক চরম প্রতিক্রিয়াশীল ও দূর্নীতিগ্রহস্ত দেশ হিসেবে বহির্বিশ্বে পরিচিতি লাভ করে । প্রকৃত রাজনীতিবিদরা রাজনীতির অঙ্গন হতে দূরে সরে যেতে বাধ্য হয় । তাদেও স্থলাভিসক্ত হন কালো টাকার মালিক, পেশী শক্তি, দূর্নীতি গ্রস্থ সামরিক ও বেসামরিক আমলা । এক কথায় রাজনীতি চলে যায় দুর্বৃত্তদের হাতে । ১৯৮১ সালে দীর্ঘ ছয় বছরের বেশী সময় প্রবাসে কাটিয়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা দেশে ফিরে রাজনীতিকে শুদ্ধ করার চেষ্টা করেছেন এবং এখনো করছেন। তবে তিনি যে পুরোপুরি সফল হতে পেরেছেন তা কিন্তু নয় । এর অন্যতম কারণ তাঁর চারপাশে কিছু মানুষ একটি অদৃশ্য দেওয়াল তৈরি কওে রেখেছে । এই দেওয়াল ভাঙ্গা সহজ নয় । তবে মানুষের বিশ্বাস বাংলাদেশকে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাদেশ বানানো কারো পক্ষে সম্ভব হলে সেই ব্যক্তিটি হবে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা । দেশের মানুষ তাঁর উপর যে পরিমানের আস্থা রাখে তা অন্য কারো উপর রাখে না । তাঁর উপর মানুসের এই আস্থা কাজে লাগাতে হলে নিজ দলের ছিদ্রগুলোকে বন্ধ করতে হবে । এই ছিদ্র দিয়ে লাগামহীন ভাবে অনেক জীবানু দলে ঢুকে গেছে । সেগুলোর বিনাশ করতে না পারলে ঘটে যেতে পারে অন্য কোন বিপর্যয় । পনেরই আগস্টের শহীদদেও প্রতি বিন¤্র শ্রদ্ধা।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক । আগস্ট ১২, ২০১৭

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

 

 

 [......লেখক আর্কাইভ]