|
||||||||||||||||||
|
সার্চ কমিটিতো হলো-বিএনপি এখন কী করবে?
WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.
|
লেখকের আগের লেখাঃ মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সব সময় নিজের জীবনকে নিয়তির উপর ছেড়ে দেবেন না ক্ষুব্ধ, লজ্জিত এবং ক্ষমাপ্রার্ö
|
প্রত্যেক গণতান্ত্রিক দেশে সেই দেশের জাতীয় নির্বাচন সহ জনপ্রতিনিধিত্ব মূলক সকল নির্বাচন পরিচালনার জন্য একটি নির্বাচন কমিশন অথবা অন্য কোন নামের একটি সংস্থা থাকে । যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন পরিচালনা সেই দেশের প্রত্যেক অঙ্গরাজ্যের প্রশাসনিক কর্মকর্তারা করে থাকেন । এই কর্মকর্তারা আবার অঙ্গরাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেটের অধীনে নির্বাচন পরিচালনার কাজটি করেন । এই সেক্রেটারি একজন নির্বাচিত প্রতিনিধি হন । আর যে সকল কর্মকর্তারা তার অধীনে নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন তারাও নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি হয়ে থাকেন, যেমন আমাদের দেশের ইউনিয়ন কাউন্সিলের চেয়ারম্যান । দেশে একজন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশনার আছেন । দেশের কোন নির্বাচন পরিচালনায় তার তেমন কোন ভূমিকা থাকে না । তিনি শুধু মাত্র নির্বাচনের সময় প্রার্থীদের আয় ব্যয় মনিটর করেন । তাঁর দপ্তর প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের সময় কেন্দ্রীয় ভাবে ফলাফল ঘোষণা করেন । অঙ্গরাজ্যের সকল নির্বাচন পরিচালনার দায়িত্ব রাজ্যের সেক্রেটারি অব স্টেটের । ফেডারেল (কেন্দ্রীয়) কমিশনার ফেডারেল সরকার নিয়োগ দেন । যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নানা ভাবে কারচুপি হয় তবে তা নিয়ে অভিযোগ করলে তা তেমন একটা ধোপে টিকে না । একবার ফলাফল প্রকাশ হয়ে গেলে তা নিয়ে আর কেউ তেমন একটা মাথা ঘামায় না । বৃটেনের নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেন প্রধানমন্ত্রী । তা পার্লামেন্টের অনুসমর্থন লাগে । ভারতের নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে সেই দেশের রাষ্ট্রপতি নিয়োগ দেন । নির্বাচন কমিশনে ক’জন সদস্য থাকবেন তাও তিনি নির্ধারণ করেন । বাংলাদেশের নির্বাচন কমিশনও নিয়োগ দেওয়ার এক্তিয়ার সম্পূর্ণভাাবে রাষ্ট্রপতির । তবে সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার কারণে তা তিনি প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শে নিয়োগ দেবেন । নির্বাচন কমিশনে ক’জন সদস্য থাকবেন তা নির্ধারিত করা নেই । তবে সাধারণত একজন প্রধান নির্বাচন কমিশনার সহ মোট পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন গঠনের রেওয়াজ বাংলাদেশে দীর্ঘদিন ধরে প্রচলিত আছে । নির্বাচন কমিশনের গঠন প্রণালী ১৯৭২ সনে প্রণিত জনপ্রতিনিধিত্ব অধ্যাদেশ বা চবড়ঢ়ষব’ং জবঢ়ৎবংবহঃধঃরড়হ ঙৎফবৎ (জচঙ) দ্বারা নির্ধারণ করা হয়েছিল যা পরবর্তিকালে সংবিধানে অন্তর্ভূক্ত করা হয়েছে (১১৮ ধারা) । বঙ্গবন্ধু সরকার এই অধ্যাদেশ প্রণয়ন করেছিলেন এবং তার বলে বিচারপতি মোহাম্মদ ইদ্রিসকে বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দিয়েছিলেন । এই নির্বাচন কমিশনের অধীনেই ১৯৭৩ সালে স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছিল । বিদায়ী নির্বাচন কমিশনার সাবেক আমলা কাজী রকিবউদ্দিন এগারতম প্রধান নির্বাচন কমিশনার । তিনি সহ চারজন আমলা প্রধান নির্বাচন কশিনারের দায়িত্ব পালন করেছেন । বাকিরা সকলেই ছিলেন সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতি । পূর্বে নির্বাচন কমিশন প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরের অধীনে কাজ পরিচালনা করতো । ২০০৯ সালে কমিশনকে একটি পৃথক স্বায়ত্ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠানের রূপ দেওয়া হয় । তার জন্য একটি পৃথক সচিবালয় সহ আলাদা বাজেট বরাদ্দের ব্যবস্থা করা হয় । প্রয়োজনীয় জনবল নিয়োগও কমিশন দিতে পারে । নির্বাচন কমিশন গঠন আইন ও তা সংষ্কার সব কর্মকান্ডই আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে হয়েছে । শুরু হয়েছিল বঙ্গবন্ধু সরকারের আমলে সংষ্কার কর্মগুলো তাঁর কন্যার আমলেই হয়েছে ।
যারা নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব পালন করেছেন তাদের অনেকেই সমালোচনার উর্ধ্বে থাকতে পারেন নি । বিচারপতি নূরুল ইসলামের সময় (১৯৭৭-১৯৮৫) জেনারেল জিয়া নিজেকে রাষ্ট্রপতি ঘোষণা করার জন্য পাকিস্তানে তার বস জেনারেল আইয়ূব খানের আদলে ‘হাঁ’ ‘না’ নামক একটি রেফারেন্ডামের তামাশায় ব্যবস্থা করে বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থাকে তছনছ করে দিয়েছিলেন । তাকে কোন কোন নির্বাচনী এলাকায় মোট ভোটের ১১০ ভাগ ভোট দেওয়ার ব্যবস্থা হয়েছিল । বিচারপতি নূরুল ইসলাম রাতে ঘোষণা করেছিলেন ‘নির্বাচন’ সঠিক ভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে । এরশাদ ক্ষমতা দখল করে ১৯৮৬ সালে সংসদ নির্বাচনের ব্যবস্থা করেছিলেন । তখন প্রধান নির্বাচন কমিশনার বিচারপতি এটিএম মাসুদ (১৯৮৫-১৯৯০)। বেলা চারটায় পোলিং শেষ হওয়ার পর এক ঘন্টার মধ্যে চট্টগ্রামের একটি আসনের প্রায় দেড় লক্ষ ভোট গণানা শেষ করে ফেলা হয়েছিল । রাত দশটর দিকে ভোট গণনা বন্ধ হয়ে যায় এবং তা চব্বিশ ঘন্টা বন্ধ থাকে । চব্বিশ ঘন্টা পর এক সাথে সব কেন্দ্রের ফলাফল ঘোষণা করে এরশাদের জাতীয় পার্টিকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়েছিল (১৫৩ আসনে) । আওয়ামী লীগের ভাগ্যে ৭৬টি আসন জুটেছিল । এরশাদ বাংলাদেশের নির্বাচন ব্যবস্থায় ‘মিডিয়া ক্যূ’ শব্দ দু’টি সংযোজন করেছিলেন । নির্বাচন শেষে প্রধান নির্বাচন কমিশনার ঘোষণা করেন নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে । বিচারপতি আবদুর রউফ ১৯৯০ হতে ১৯৯৫ সন পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার ছিলেন । তাঁর আমলে জাতি ১৯৯১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচন উপহার পেয়েছিল । এরপর এলো সেই মাগুরা আর ঢাকা-১০ উপ-নির্বাচন । এই সময় নির্বাচন কমিশনার ছিলেন আবু সাঈদ নামক এক আমলা (২০০০-২০০৫) যিনি ঢাকা-১০ আসনের উপ-নির্বাচন উপহার দিয়েছিলেন । নির্বাচনে গুন্ডা আর হোন্ডা সংষ্কৃতিকে তিনি প্রাতিষ্ঠানিকি রূপ দিতে সক্ষম হয়েছিলেন । তখন বেগম জিয়া ক্ষমতার মসনদে । তুমুল সমালোচনার মুখে বিচারপতি আবদুর রউফকে পদত্যাগ করতে হলেও আবু সাঈদ তার মেয়াদ শেষ করেছিলেন । আবু সাঈদ যখন নিয়োগ পান তখন শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার ক্ষমতায় । বিচারপতি সাহাবুদ্দিন, বিচারপতি লতিফুর রহমান, আবু সাঈদদের শেখ হাসিনা খুব বিশ্বাস করেছিলেন । দায়িত্ব পেয়ে তাদেও অবস্থান ১৮০ ডিগ্রী পরিবর্তন করতে তারা সময় ক্ষেপন করেন নি । তত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা বিচারপতি সাহাবুদ্দিন আর শেখ হাসিনার প্রথম মেয়াদেও রাষ্টপতি বিচারপতি সাহাবুদ্দিন সম্পূর্ণ ভিন্ন মানুষ ছিলেন। ২০০১ সালের নির্বচানের সময় তাঁর ভ’মিকার জন্য তিনি সব সময় নিন্দিত হয়ে থাকবেন । বাবার মতো শেখ হাসিনাও মানুষকে সহজে বিশ্বাস করেন । এটি কখনো কখনো বিপদেও কারণ হতে পারে । এরা সকলে ইতিহাসের পাতা হতে হারিয়ে গেছেন । ১৫ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনের কয়েক সপ্তাহ পর বেগম জিয়াও পদত্যাগ করেন । তারপর দায়িত্ব নেন বিচারপতি একেএম সাদেক । নির্বাচনে কারচুপিতে সহায়তার অভিযোগে তিনি এক বছর দায়িত্ব পালন কওে পদত্যাগ করেন । তার স্থলে সাবেক আমলা আবু হেনা প্রধান নির্বাচন কমিশনার হয়ে আসেন । তিনি একজন আমলা হলেও যথেষ্ট দক্ষতার সাথে ১৯৯৬ সালের সংসদ নির্বাচন পরিচালনা করেন । সেই নির্বাচনে যেহেতু আওয়ামী লীগ জয়ী হয়েছিল সেহেতু বেগম জিয়া তার অপসারণ দাবি করে রাজপথে নেমে যান । বেগম জিয়া ও তাঁর দলের সমস্যা হচ্ছে যেহেতুৃ বিএনপি’র জন্ম রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধীষ্ট থাকার সুবাধে সেহেতু তিনি বা তাঁর দল নিজেদের কখনো ক্ষমতার বাইরে কল্পনা করতে পারেন না । তারা সব কিছু নিজের মতো করে চান । না হলে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন । ২০০৫ সালে বেগম জিয়ার রাষ্ট্রপতি ডঃ ইয়াজুদ্দিন বিচারপতি এম এ আজিজকে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ দিয়েছিলেন। আজিজ পুরো নির্বাচন কমিশনকে একটি সার্কাস পার্টিতে রূপান্তর করতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
২০১২ পর্যন্ত বাংলাদেশের সকল নির্বাচন কমিশনার সংবিধান অনুযায়ী নিয়োগ দিয়েছেন মহামান্য রাষ্ট্রপতি । সংবিধানে বিধান আছে তিনি প্রধানমন্ত্রী পরামর্শ অনুযায়ি একক ভাবে এই নিয়োগ দেবেন । প্রধানমন্ত্রী হতে তিনি কী পরামর্শ নিয়েছেন বা আদৌ নেওয়ার প্রয়োজন মনে করেছেন কী না তা তিনি ছাড়া অন্য কেউ জানার কোন সুযোগ নেই । প্রধানমন্ত্রী ছাড়া প্রয়োজন বোধে তিনি অন্য কারো পরামর্শ নিতে পারেন । এতে দোষের কিছু নেই । নিলে সংবিধান লংঘন হওয়ার কোন কারণও নেই । প্রধানমন্ত্রীর পরামর্শের বিষয়টা একান্ত গোপনীয় । অন্য কারো পরামর্শ নেওয়ার বিষয়টারও আইনগত কোন ভিত্তি নেই । আর কী পরামর্শ দেওয়া হয়েছে তা রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর একান্ত নিজস্ব বিষয় । কাজী রকিবউদ্দিন কমিশন গঠনের পূর্বে বেগম জিয়া আর তার মিত্ররা দাবি করেন নির্বাচন কমিশন গঠন করার পূর্বে রাষ্ট্রপতিকে সকল দলের সাথে আলোচনা করে এমন একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন যা সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে । এটি নিতান্তই কল্পনা বিলাস ছাড়া আর কিছুই না । কারণ বিশ্বে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য বা সকলের শ্রদ্ধাভজন বলে কোন কিছু নেই । সব মানুষেরই কোন কোন না সমালোচক ছিল এবং থাকে । সত্যিই কখনো তেমন কাউকে পাওয়া গেলে তিনি মানুষ হবেন না, হবেন একজন ফেরেস্তা । তারপরও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান সব দলের সাথে আলোচনার একটি ব্যবস্থা করলেন । বেগম জিয়া ও তাঁর মিত্ররা বায়না ধরলেন সর্বজনের কাছে গ্রহণযোগ্য করতে হলে নির্বাচন কমিশনের সদস্য খোঁজার জন্য একটি সার্চ কমিটি করতে হবে । তখন বেগম জিয়ার দল তাদের মিত্র জামায়াত সহ সংসদে বিরোধী দলের ভূমিকা পালন করছেন । রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান অসম্ভব ভাল মানুষ । বেগম জিয়ার মুখ রক্ষার্থে তিনি একটি সার্চ কমিটিও গঠন করলেন । পরে রকিবউদ্দিনের নেতৃত্বে গঠিত হলো পাঁচ সদস্য বিশিষ্ট নির্বাচন কমিশন । বেগম জিয়া আর তাঁর সাঙ্গপাঙ্গরা চিৎকার জুড়ে দিল মানি না মানব না । সংবিধানের বাধ্য বাধকতা না মানার মধ্য দিয়ে বিএনপি’র জন্ম । সেই চক্র হতে দলটি আজও বের হতে পারে নি ।
আগামী ৮ ফেব্রুয়ারি কাজী রকিব উদ্দিন কমিশনের মেয়াদ শেষ হবে । আবারও বেগম জিয়া আওয়াজ তুললেন সার্চ কমিটির মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠন করতে হবে । রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বললেন কোন সমস্যা নেই । ডাক পরতেই বেগম জিয়া সেজে গুজে সভাপারিষদ নিয়ে ছুঠে গেলেন বঙ্গভবনে । কথা বার্তা হলো । আসার সময় রাষ্ট্রপতির হাতে একটা কাগজও গুঁজে দিয়ে আসলেন । বললেন তারা যা মুখে বলেছেন তা কাগজে লিখে দিয়ে এসেছেন । প্রয়োজন ছিল না । রাষ্ট্রপতি একজন ঝানু রাজনীতিবিদ। তাঁর রাজনৈতিক প্রজ্ঞার কাছে বেগম জিয়া নস্যি । আওয়ামী লীগ সহ মোট একত্রিশটি দল তাদের পরামর্শ নিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে গেল । এদের মধ্যে বেশীর ভাগই হোন্ডা পার্টি, মানে ওয়ান ম্যান পার্টি । বঙ্গভবনের চা নাস্তার একটা সুনাম আছে । লনটাও বেশ মনোরম । সব শুনে রাষ্ট্রপতি তাঁর নিজস্ব সিদ্ধান্তে ছয় সদস্য বিশিষ্ট একটি সার্চ পর্টি গঠন করলেন । ২৫ তারিখ রাতে প্রজ্ঞাপন জারি হলো । এই পার্টিকে দশ কর্মদিবস সময় দেওয়া হলো চারিদিকে খোঁজা খুঁজি করে একটি প্যানেল প্রস্তাব করার জন্য । তবে রাষ্ট্রপতি প্যানেল হতে পরবর্তি নির্বাচন কমিশন গঠন করবেন নাকি নিজের মতো করে গঠন করবেন তা একান্তভাবে তাঁর এক্তিয়ার । তবে তিনি যাই করুন তাতে সাংবিধানিক বাধ্য বাধকতার কারনে প্রধানমন্ত্রীর সায় থাকতে হবে । সার্চ কমিটি তিনি নিজে করেছেন নাকি অন্য কারো পরামর্শে করেছেন তা তিনি বলতে বাধ্য নন । সার্চ কমিটিতে আপিল বিভাগের একজন বিচারপতি, হাইকোর্টের একজন বিচারপতি, কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান ও মহা হিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সৈয়দ মঞ্জুরুল ইসলাম ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য ডঃ শিরীন আখতার আছেন । এই ছয় জনের মধ্যে প্রথম চারজন সাংবিধানিক পদে অধিষ্ট আছেন । এই পদে পদায়নের পর তারা শপথ নিয়েছেন এবং তাঁরা কেউই সরকারের নয় প্রজাতন্ত্রের কর্মকর্তা । সৈয়দ মঞ্জুরের কোন রাজনৈতিক পরিচয় না থাকলেও তিনি বা ডঃ শিরীন আখতারের পরিবারে কোন রাজাকার আলবদর নেই বলে সকলে জানে । শিরীন আখতারের বাবা কক্সবাজার আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন বলে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে । তাতে অসুবিধার কোন কারণ দেখি না । দেশের অধিকাংশ মানুষ রাজনৈতিক ভাবে বিভাজিত । তথাকথিত নিরপেক্ষ বলে কেউ নেই । সুশীলদের প্রায় সকলেই আওয়ামী লীগ বিরোধী তা বলার অপেক্ষা রাখে না । তাতেও কোন অসুবিধা নেই । রাজনৈতিক পরিচয় স্বচ্ছ থাকলে সকলের জন্য মঙ্গল । প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমান চার সদস্য বিশিষ্ট সার্চ কমিটি গঠন করেছিলেন । তাতেও কর্মকমিশনের তৎকালিন চেয়ারম্যান ও মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক সদস্য ছিলেন । সেই কমিটির প্রধান ছিলেন বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন । তিনি এবারও আছেন, দুজন শিক্ষককে অন্তর্ভূক্ত করে সার্চ কমিটির মোট সদস্য সংখ্যা ছয় করা হয়েছে । প্রথম কমিটি গঠন হওয়ার পরও বেগম জিয়া ঘোষণা করেছিলেন মানি না । এবার তিনি, তার দলের মহাসচিব ও দপ্তর সম্পাদক রুহুল কবির রিজভী একই সুরে বলে উঠেন উঠলেন মানি না । ‘এটি একটি দলীয় কমিটি’ । বললেন তারা হতাশ ও ক্ষুব্দ । যদিও সদস্যদের কেউ সক্রিয় রাজনীতির সাথে জড়িত নন । তারা বলেন মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক ও কর্ম কমিশনের চেয়ারম্যান সরকারি কর্মকর্তা । মির্জা ফখরুল আর রহুল কবির রিজভির রাষ্ট্র ও সরকারের মধ্যে পার্থক্য বুঝার সক্ষমতা আছে বলে মনে করেছিলাম । বুঝা গেল তাদের চিন্তাধারা আর বেগম জিয়ার চিন্তাধারার মধ্যে তেমন কোন তফাৎ নেই । তারা নাকি মনে করেছিলেন আবারো বঙ্গভবনে তাদেও ডাক পরবে । বিএনপি ভুলে যায় তারা এখন আর ক্ষমতায় নেই। ক্ষমতায় আসতে হলে দলের খোল নলচে আর ধ্যাণ ধারণা পাল্টাতে হবে । আগুণ সন্ত্রাসের সাথে নিজেদেও সম্পৃক্ত কওে তারা জনগনের কাছে নিজেদেও গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছেন । মূল কথা হচ্ছে রাষ্ট্রপতির সাথে সার্চ কমিটি নিয়ে কথা বলা, নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন ইত্যাদি বিষয় শ্রেফ লোক দেখানো । কমিটিতে মির্জা ফখরুল থাকলেও রহুল কবির রিজভি বলতেন মানি না । উল্টোটাও হতে পারাও বিচিত্র নয় । তাদের প্রথম উদ্দেশ্য সাংবিধানিক পদগুলোকে বিতর্কিত করা এবং আগামি নির্বাচনকে সামনে রেখে জনগণের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করার একটা ক্ষেত্র তৈরী করা । তবে বিএনপি ও তার মিত্রদের বুঝা উচিৎ ২০১৩-১৪ আর ২০১৭-১৮ সালের বাস্তবতা এক হবে না । সংসদে বিএনপি ও তার মিত্ররা না থাকলে গণতন্ত্রের যত না ক্ষতি তার চেয়েও বড় ক্ষতি তাদের নিজেদের । একাদশ সংসদ নির্বাচনে অংশ না নিলে বিএনপি আর মুসলীম লীগের মধ্যে তেমন একটা তফাৎ থাকবে না । বুঝলে দলের জন্য ভাল না বুঝলে জনগণের জন্য মঙ্গল ।
লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক । জানুয়ারি ২৭, ২০১৭