প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

তিস্তার পানি গড়াক, বন্ধুত্ব অটুট থাকুক


আবদুল মান্নান
 

 

বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চার দিনের রাষ্ট্রীয় সফরে আগামী ৭ এপ্রিল ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির আমন্ত্রণে নতুন দিল্লী যাচ্ছেন । ২০০৯ এর পর এটি শেখ হাসিনার দ্বিতীয় ভারত সফর । ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি একবার বাংলাদেশে এসেছিলেন । দুটি প্রতিবেশী দেশের মাঝে সরকার বা রাষ্ট্র প্রধানদের মাঝে এমন সফর নিয়মিত হয়ে থাকে । চরম বৈরী সম্পর্ক থাকা সত্ত্বেও ভারতের প্রধামন্ত্রী পাকিস্তান গিয়েছেন এবং একই ভাবে পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফও ভারত সফর করেছেন । যুক্তরাষ্ট্র আর জার্মানির মধ্যে এই মূহূর্তে রাষ্ট্রীয় সম্পর্কে ভাটা পরেছে তথাপি ক’দিন আগে জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল ওয়াশিংটন সফরে গিয়েছিলেন । সাংবাদিকরা ট্রাম্প আর মার্কেলের ছবি তোলার সময় বেশ উচ্চ কণ্ঠে ট্রাম্পকে অনুরোধ করছিলেন মার্কেলের সাথে করমর্দন করতে । কিন্তু ট্রাম্প সকল শিষ্টাচারকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মার্কেলের সাথে করমর্দন করতে অস্বীকার করেন । ভারতের কোন সরকার প্রধান বাংলাদেশে রাষ্ট্রীয় সফরে আসলে অথবা বাংলাদেশের কোন সরকার প্রধান ভারতে রাষ্ট্রীয় সফরে গেলে উভয় দেশের মিডিয়া, রাজনৈতিক বিশ্লেষক আর এক শ্রেণীর সুশীল ব্যক্তিদের মাঝে বেশ হৈ চৈ পরে যায় আলোচন সমালোচন হয় আর বাংলাদেশের সরকার প্রধান যদি শেখ হাসিনা থাকেন এ’সবের মাত্রাটা অনেক বেশী হয় । বিএনপি-জামায়াত বেশ চড়া গলায় বলে শেখ হাসিনা যাচ্ছেন বাংলাদেশের স্বার্থ ভারতের হাতে তুলে দিতে । এদের মধ্যে আবার কিছু আছেন যাদের ধারণা আগেরবার না করলেও এবার শেখ হাসিনা ভারতের কাছে দাসখত লিখে দিয়ে বাংলাদেশকে ভারতের করদ রাজ্য বানিয়ে দিয়ে আসবেন । যারা নির্মোহ ভাবে চিন্তা করেন তারা প্রত্যাশা করেন শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের ফলে দু’দেশের মধ্যে যে সব অমীমাংসিত সমস্যা আছে তা শেখ হাসিনা সমাধান করতে পারবেন । শেখ হাসিনার উপর তাদের বিশ্বাস আকাশচুম্বি কারণ তাঁর আমলে কোন তৃতীয় পক্ষের হস্তক্ষেপ ছাড়া পার্বত্য শান্তি চুক্তি হয়েছে । দীর্ঘ দিনের গঙ্গা পানি বন্টন চুক্তিও তিনি করেছেন । আর ষাট বছরের পুরানো অমিমাংশিত ছিট মহল বিনিময় চুক্তি করে তিনি নিজের অবস্থানকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছেন। এই সমস্যাটি ভারত ভাগের পর হতেই শুরু হলে তা বঙ্গবন্ধু আর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির মাঝে সম্পাদিত চুক্তির বলে অনেক আগেই হওয়ার কথা ছিল । কিন্তু ভারতের পার্লামেন্টে চুক্তিটি অনুমোদিত না হওয়ায় তা বাস্তবায়নে দীঘ সময় লেগেছে । একই ধারাবাহিকতায় দু’দেশের মধ্যে সীমান্ত চিহ্নিতকরণ চুক্তিও এই দুই প্রধানমন্ত্রীর সদিচ্ছার কারণে বাস্তবায়িত হয় । ১৯৯৬ সালে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা সরকার গঠন করার পর ত্রিশ বছর মেয়াদী গঙ্গার পানি বন্টন চুক্তি স্বাক্ষর করে গঙ্গার পানি বন্টন সমস্যার মধ্য মেয়াদী সমাধান করেন । এই মুহূর্তে ভারত হয়তো বাংলাদেশের কাছে অনেক কিছুই চায় অন্যদিকে ভারতের কাছে বংলাদেশের চাওয়ার তালিকা খুব বেশী দীর্ঘ নয় ।
ভারতের সাথে বাংলাদেশের সম্পর্কের ধরণ ও মাত্রা অন্য যে কোন দেশের তুলনায় ভিন্ন মাত্রিক । এর প্রধান কারণ এই দুই দেশ একসময় অবিভক্ত ভারতবর্ষের অংশ ছিল । দুটি দেশই দু’শত বছর ধরে ইংরেজদের দ্বারা শাসিত, লুণ্ঠিত ও শোষিত হয়েছে । বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ভারত সরকার ও তার জনগণের অবদান বাংলাদেশের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ । একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে কম পক্ষে বার হাজার ভারতীয় সৈন্য বাংলদেশের স্বাধীনতার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করেছেন । বাংলাদেশ পাকিস্তান হানাদার বাহিনী হতে মুক্ত হওয়ার তিন মাসেরও কম সময়ের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর অনুরোধে ভারতীয় বাহিনী বাংলাদেশ হতে সৈন্য প্রত্যাহার করেছে । স্বাধীনতা পরবর্তিকালে যুদ্ধবিধ্বস্থ বাংলাদেশ পূনর্গঠনে ভারত যথাসাধ্য সহায়তা করেছে । শুরুতে ভারত বাংলাদেশের মধ্যে অন্যতম সমস্যা ছিল অভিন্ন গঙ্গা নদীর পানি বন্টন যেটির উৎপত্তি উজানে ভারতের ফারাক্কা বাঁধের কারণে হয়েছিল । সেই সমস্যার স্বল্প মেয়াদী সমাধান বঙ্গবন্ধু ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধির সাথে দিল্লিতে চুক্তি করে গিয়েছিলেন । নিশ্চিত করেছিলেন বাংলাদেশ শুষ্ক মৌসুমে কম পক্ষে ৪৪ হাজার কিউসেক পানি পাবে । দীর্ঘ মেয়াদি সমাধানের জন্য গঠিত হয়েছিল যৌথ নদী কমিশন । তবে ঘাতকদের হাতে বঙ্গবন্ধু ও ইন্দিরা গান্ধী নিহত হওয়ার পর এই কমিশন তেমন একটা কাজ করেনি । বঙ্গবন্ধু হত্যার পর জিয়ার আমলে সৃষ্ট পাবর্ত্য চট্টগ্রামে পাহাড়ী বাঙালি অশান্তি ও রক্তক্ষরণ শুরু হলে তাও সমাধান করেন বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা । এর ফলে কয়েক ভারতে অবস্থনরত কয়েক হাজার পাহাড়ি জনগোষ্টি বাংলাদেশে ফিওে আসে । বেগম জিয়া যখনই ক্ষমতায় এসেছেন তখনই বাংলাদেশকে ভারতীয় বিচ্ছিন্নতাবাদিদের অভয়আশ্রম হিসেবে ব্যবহার করতে দিয়েছেন । ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্যগুলিতে বাংলাদেশের ভিতর দিয়ে অবৈধ অস্ত্র সরবরাহের করিডোর খোলার ব্যবস্থা সুগম করেছেন । সংসদে দাঁড়িয়ে বেগম জিয়া সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী ব্যারিষ্টার মওদুদ আহমদ বেশ জোড় দিয়ে বলেছেন ভারতের পূর্বাঞ্চলে যে সকল বিচ্ছিন্নতাবাদি আন্দোলন করছে তারা আসলে তাদের স্বাধীনতার জন্য লড়াই করছে এবং বাংলাদেশের উচিৎ তাদের এই ‘আন্দোলনকে’ নৈতিক সমর্থন দেওয়া যেমনটি ভারত বাংলাদেশকে ১৯৭১ সালে করেছিল । আগামী ৭ই এপ্রিল হতে শুরু হতে যাওয়া শেখ হাসিনার দিল্লী সফর নানা কারণে ভারত আর বাংলাদেশের জন্য গুরুত্বপূর্ণ । শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের সময় তাঁকে রাষ্ট্রপতি ভবনে থাকার আমন্ত্রণ জানিয়েছেন ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখার্জি । এটি সচরাচর ঘটেনা । ইতোমধ্যে উভয় দেশের কোন কোন পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে ভারত বাংলাদেশের সাথে সামরিক চুক্তি করতে চায় । বর্তমান বিশ্বে এক দেশ আর এক দেশের সাথে সামরিক চুক্তি করা অর্থহীন । সামরিক চুক্তির মূল বিষয় হচ্ছে একটি দেশ অন্য কোন দেশ কর্তৃক আক্রান্ত হলে দ্বিতীয় দেশ তার সহায়তায় এগিয়ে আসবে । ষাটের দশকের ঠা-া লড়ায়ের (পড়ষফ ধিৎ) সময় সোভিয়েত ইউনিয়ন পূর্ব ইউরোপীয় দেশ গুলোকে নিয়ে গঠন করে ওয়ারশ প্যাক্ট আর যুক্তরাষ্ট্র পশ্চিম ইউরোপীয় দেশ গুলোর সাথে গঠন করে ন্যাটো । সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন হওয়ার পর ওয়ারশ প্যাক্ট ভেঙ্গে যায় । ন্যাটো কখনো তেমন করে ওয়ারশ প্যাক্ট ভূক্ত দেশ গুলোর বিরুদ্ধে কোন ভূমিকা রাখতে পারে নি । তবে বলকান যুদ্ধের সময় সাবেক যুগোস্লাভিয়ার ভেঙ্গে যাওয়ার মূহূর্তে সেই অঞ্চলে যে রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ শুরু হয়েছিল তা বন্ধ করতে ন্যাটো বিমান হামলা চালিয়েছিল । ঠিক একই ভাবে ন্যাটো ইরাক, মিশর আর লিবিয়া ধ্বংস করতে নিজেদের সমর শক্তি ব্যবহার করেছিল । বাংলাদেশের সাথে ভারতের কোন সামরিক চুক্তিও নিরর্থক কারণ অদূর ভবিষ্যতে এই দু’দেশের কোন দেশই কোন যুদ্ধে জড়ানোর সম্ভাবনা নেই । ভারতের সাথে সীমিত আকারে পাকিস্তানের সাথে সীমান্ত সংঘর্ষ হতে পারে আর তা যদি হয় তাতে বাংলাদেশের তেমন একটা কিছু করার নেই । উত্তরে চীনের সাথেও ভারতের তেমন কোন সমস্যা নেই । আবার বলা হচ্ছে শেখ হাসিনার সফরের সময় যে ক’টি সমঝোতা চুক্তি হতে পারে তার একটি হচ্ছে সামরিক সহায়তা চুক্তি । একটি কথা বলে রাখা ভাল সমঝোতা চুক্তি মেনে চলা আবশ্যকীয় নয় (হড়হ-নরহফরহম) । এই চুক্তি হলে দু’দেশের মধ্যে তথ্যের আদান প্রদান, যৌথ সামরিক মহড়া, যৌথ প্রশিক্ষণ, সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় হতে পারে । প্রথম দু’টি কোন সমঝোতা চুক্তি ছাড়াও ভারত ও অন্যান্য একাধিক দেশের সাথে ইতোমধ্যে হয়ে থাকে । যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বা নৌবাহিনীর সাথে বাংলাদেশের নিয়মিত যৌথ মহড়া হয়ে থাকে । ভারতেও অন্যান্য দেশের সাথে তেমন মহড়া হয়ে থাকে । সামরিক সরঞ্জাম ক্রয়ের বিষয়টি একটি অত্যন্ত সুপরিকল্পিত ও সুচিন্তিত বিষয় হিসেবে বিবেচিত । কোন দেশের প্রতিরক্ষা বাহিনী এক সাথে অনেক দেশ হতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় করে তাদের সক্ষমতা বৃদ্ধি করে না । একটি বা দুটি দেশের কাছ হতে প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় করা হয় তার কারণ তা রক্ষণাবেক্ষণ, খুচরা যন্ত্রাংশের প্রাপ্যতা ও তা ব্যবহার করা সহজ হয় অথবা নিজেরা তা তৈরি কওে, যুক্তরাষ্ট্র বা রাশিয়া তার বড় প্রমান । বাংলাদেশের জন্মলগ্ন হতে যে সব সামরিক সরঞ্জাম ব্যবহার হয়ে আসছে তা রাশিয়ার তৈরী (পূর্বে সোভিয়েত ইউনিয়ন)। পরে চীন যোগ হয়েছে । গাজীপুরে যে সমরাস্ত্র কারখানা রয়েছে সেখানে মূলত চীনা প্রযুক্তি ব্যবহার হয়ে থাকে । হঠাৎ করে ভারতীয় সামরিক সরঞ্জাম বাংলাদেশের প্রতিরক্ষা বাহিনীতে সংযুক্ত করাটা ততটা সহজ হবে না । এটি বুঝার সক্ষমতা নিশ্চয় শেখ হাসিনার রয়েছে । সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষর হওয়ার অর্থ এই নয় যে সামনের মাস হতেই বাংলাদেশ ভারত হতে সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় শুরু করবে অথবা ভারত পাকিস্তান সীমান্তে কোন সংঘাত শুরু হলে বাংলাদেশের সেনা বাহিনী সেখানে গিয়ে হাজির হবে ।
বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে কটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যার আসু সমাধান হওয়ার প্রয়োজন তার মধ্যে আছে অভিন্ন ৪২টি নদীর, বিশেষ করে তিস্তার পানি বন্টন, সীমান্তে বিএসএফ কর্তৃক মানুষ হত্যা আর দু’দেশের মধ্যে বাণিজ্যিক ভারসাম্যতা ফিরিয়ে আনা । তিস্তা পানি বন্টন সমস্যা বর্তমানে মারাত্মক আকার ধারণ করেছে । বিশাল তিস্তা নদী এখন সম্পূর্ণ মরুভূমি । এই সমস্যা সমাধানে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সদিচ্ছার ঘাটতি আছে বলে মনে হয় না । সাবেক প্রধানমন্ত্রী ডঃ মনমোহন সিং-এর ২০১১ সালে বাংলাদেশ সফরের সময় এই সমস্যার সমাধান হয়ে যাওয়ার কথা ছিল । কিন্তু শেষ মুহূর্তে পশ্চিম বঙ্গের মূখ্য মন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি বেঁকে বসলে তা ভেস্তে যায় । বলা হয় ভারত যেহেতু একটি ফেডারেল রাষ্ট্র সেহেতু পানির মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ অন্য যে কোন দেশের সাথে বন্টন করতে চাইলে যে রাজ্য এই সম্পদের ভাগিদার সেই রাজ্যের সরকারের সম্মতি লাগবে । এটি একটি খোঁড়া যুক্তি কারণ ভারতের সংবিধানেই আছে তৃতীয় কোন দেশের সাথে চুক্তি করার জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের সিদ্ধান্তই যথেষ্ট (ধারা ২৪৫) । কিন্তু পশ্চিমবঙ্গের এক রোখা মূখ্যমন্ত্রী তা মানতে নারাজ । তিনি বলেছেন তাঁর রাজ্যের স্বার্থ রক্ষা করে যা করার প্রয়োজন তা করা হবে । ন্যায্য কথা । কিন্তু তার অতীত কর্মকা- দেখে মনে হচ্ছে তাঁর কথার মূল্য দিতে তিনি নিজেই নারাজ । বলতে পারতেন যে পানি তিস্তায় আছে তার কতটুকু পেলে তার রাজ্যের প্রয়োজন মিটবে তারপর কতটুকু বাংলাদেশকে দেওয়া যাবে তা হিসাব করে তিস্তার পনি বন্টর চুক্তি হতে পাওে । তিনি এই হিসাব নিকাশতো করতেই পারেন । কিন্তু মমতা ব্যানার্জি তার ধারে কাছে যান না । আবার বাংলাদেশ নিজের দেশের ভিতর গঙ্গা বাঁধ করতে চাইলে তিনি বলেন এমন বাঁধ করতে দিতে পারেন না । তিন কী জানেন চীন ইতোমধ্যে উত্তরে ব্রম্মপূত্র নদীর উপর বাঁধ দেওয়ার পরিকল্পনা করে ফেলেছে । তা সম্পূর্ণ বাস্তবায়ন হলে ভারত ও বাংলাদেশে চরম বিপর্যয় নেমে আসবে । মমতা ব্যানার্জির এই বিষয়ে কথা বলার কোন লক্ষণ দেখা যায় না । তিনি সম্প্রতি বলেছেন চাইলেই সব কিছু পাওয়া যায় না । চিন্তা করে দেখতে পারেন কথাটা কতটুকু সত্য । বাংলাদেশ আশুগঞ্জ নৌবন্দর ব্যবহার করে ত্রিপুরাকে বিদ্যুত কেন্দ্র নির্মাণের জন্য ভারি যন্ত্রপাতি পরিবহনের সুযোগ করে দিয়েছে । পরিবহণের সুবিধার্থে বাংলাদেশের একটি নদীর উপর অস্থায়ী বাঁধ দিয়ে রাস্তা করে দিয়েছে । আশুগঞ্জ নদী বন্দর ব্যবহার করে ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য সমূহে কোলকাতা বন্দর হতে নিয়মিত ভারতীয় পণ্য পরিবহণ করা হয় । এ’ছাড়াও আছে বাংলাদেমের ভিতর দিয়ে ট্রান্সসিপমেন্টের সাহায্যে ভারতীয় পণ্য ভারতের এক অঞ্চল হতে অন্য অঞ্চলে পরিবহনের সুযোগ । পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশের সীমান্ত জুড়ে যে জেলা গুলো আছে সেই সব জেলার বিরাট সংখ্যক মানুষ মৌলবাদি ধ্যান ধারণায় বিশ্বাসী । বাংলাদেশে সীমান্তু জুড়ে পশ্চিম বঙ্গের জেলা গুলির প্রতি বাড়িতে এখনো দেলোয়ার হোসেন সাঈদির বয়ানের ক্যাসেট বেশ সমাদৃত । এইসব জেলায় সন্ত্রাস নির্ভর উগ্র ধর্মীয় মৌলবাদ বেশ সক্রিয় । তারা নিয়মিত সহায়তা পেত বাংলাদেশের জঙ্গিদের কাছ হতে যা এখন শেখ হাসিনা সদিচ্ছার কারণে বন্ধ করা হয়েছে । জঙ্গিদের বিরুদ্ধে নিয়মিত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা করছে । এটি মমতা ব্যানার্জি আর দিল্লীকে বুঝতে হবে আর কিছু না হোক ভারতের নিরাপত্তার স্বার্থে বাংলাদেশের সাথে তাদেও সম্পর্ক বন্ধুত্বপূর্ণ রাখা একান্তভাবে জরুরী । এই সম্পর্ক শেখ হাসিনার সরকারের আমলে যতটুকু উষ্ণ রাখা সম্ভব অন্য কোন সরকারের আমলে তা সম্ভব নয় । শেখ হাসিনার আসন্ন সফরের সময় তা হলেও দ্রুততম সময় তিস্তা পানি বন্ট চুক্তি অনিবার্য হয়ে পরেছে । আগামী বছর বাংলাদেশে একটি জাতীয় সংসদ নির্বাচন হবে । ভারত নিশ্চয় চাইবে না যে সরকার তার দেশের বিচ্ছিন্নতা বাদিদের মুক্তিসংগ্রামি মনে করে তারা এই তিস্তা পানি বন্টনের বিষয়টাকে সামনে নিয়ে এসে তা প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার জন্য নির্বাচনি প্রচারণায় ব্যবহার করুক । ডঃ মনমোহন সিং একজন শিক্ষিত, মার্জিত কিন্তু দূর্বল প্রধানমন্ত্রী ছিলেন কারণ তিনি সব সময় সোনিয়া গান্ধীর ছায়াতলে তাঁর দায়িত্ব পালন করেছেন । সে দিক দিয়ে নরেন্দ্র মোদি অনেক বেশী শক্তিসালী । সদ্য সমাপ্ত বেশ কিছু রাজ্য সভা নির্বাচনে, উতর প্রদেশ সহ তার দল বিজেপি বিজয়ী হয়েছে । তিস্তার পানি বন্টন চুক্তি তাঁর এবং শেখ হাসিনার শাসনামল না হলে অন্য সময় হওয়াটা কঠিন হয়ে পরবে । এই একটি সমস্যার একটি গ্রহণযোগ্য সমাধান হয়ে গেলে অন্য সমস্যা গুলের সমাধান খুঁজে বের করা তেমন একটা কঠিন হবে না বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন ।

লেখক: বিশ্লেষক ও গবেষক । ঢাকা মার্চ ৩১, ২০১৭

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

 

 

 [......লেখক আর্কাইভ]