প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

বাংলাদেশের উত্থান এখন আর কল্পকাহিনি নয়


আবদুল মান্নান
 


 

ভারতের বাণিজ্যিক রাজধানী মুম্বাই-এর তাজ হোটেলের নাম শোনেন নি এমন মানুষ উপমহাদেশে কম আছেন । ২০০৮ সালে হোটেলটি পাকিস্তানি সন্ত্রাসীরা মানুষ হত্যা করে দখল করে নিয়েছিল । হোটেল তাজের ইতিহাস নিয়ে নানা গল্প বাজারে প্রচলিত আছে । তেমন একটি হচ্ছে টাটা সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জামসেদজি টাটা ব্যবসায়িক কারণে লন্ডন গিয়েছিলেন । উঠতে চেয়েছিলেন এক অভিজাত হোটেলে । তাঁকে সাফ জানিয়ে দেওয়া হলো হোটেলে সাদা চামড়া ছাড়া কাউকে রুম ভাড়া দেওয়া হয় না । তিনি ক্ষোভের সাথে রিসেপসনে জানিয়েছিলেন ভারতে ফিরে গিয়ে তিনি এমন একটি হোটেল বানাবেন যেটি দেখতে সাদা চামড়াওয়ালারা একদিন ভিড় করবে । বানিয়েছিলেন তিনি হোটেল তাজ । ঠিক অদূরেই গেইট অব ইন্ডিয়া । দেশ ভাগের পর শেষ সাদা চামড়ার ব্রিটিশ সৈনিকরা সেই গেইট দিয়ে জাহাজে উঠে ব্রিটেনের উদ্দেশ্যে যাত্রা করেছিল । অন্য কাহিনী হচ্ছে টাটা পরিবারের জে আর ডি টাটা মুম্বাইয়ের বিখ্যাত বনেদি হোটেল ওয়াটসনে গিয়েছিলেন তার এক বন্ধুকে নিয়ে । হোটেলে ঢোকার মুখে দেখেন বড় বড় হরফে লেখা ‘কুকুর ও ভারতীয়দের প্রবেশ নিষেধ’। তারপর বানিয়েছিলেন হোটেল তাজ । কেউ কেউ বলেন তাজের দরজায় নাকি লেখা ছিল ‘কুকুর আর ব্রিটিশদের প্রবেশ নিষেধ’। প্রবাদ আছে ভারত স্বাধীন হলে ব্রিটিশ সরকার এই ব্যাপারে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নেহেরুর সাথে যোগাযোগ করে । নেহেরুর অনুরোধে পরে সেই লেখা মুছে ফেলা হয় । এই সব ঘটনার সত্য মিথ্যা নিয়ে গবেষণা করার তেমন একটা প্রয়োজনীয়তা কখনো কেউ অনুভব করে নি তবে হোটেল ওয়াটসন এখন বিস্মৃত ইতিহাস ।
উপরের এই গৌরচন্দ্রিকা দেওয়ার একটা কারণ আছে । ১৬ অক্টোবর বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম দু’দিনের সফরে বাংলাদেশে আসছেন । পরদিন তিনি জাতীসংঘ ঘোষিত ‘আন্তর্জাতিক দারিদ্র মুক্তি দিবস’ বাংলাদেশেই পালন করবেন । বিশ্বের সামনে তিনি তুলে ধরবেন কোন আশ্চর্য জাদুতে পঁয়তাল্লিশ বছর আগে যেই দেশটির কোন ভবিষ্যৎ আছে বলে কোন অর্থনীতিবিদ মনে করেন নি সেই বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে উন্নয়নের একটি তাক লাগানো রোল মডেল । ১৯৪৭ সালে দেশ ভাগের সময় স্বাধীনতার নামে বাংলাকে ভাগ করে পূর্ব পাকিস্তান (পূর্ব বাংলা) সৃষ্টি করা হয়েছিল । দেশ ভাগের পূর্বে বাংলার একমাত্র রপ্তানিযোগ্য পণ্য ছিল পাট আর চা । তবে বাংলার অর্থনীতি পাটের উপরই নির্ভরশীল ছিল বেশি । একসময় বাংলার সিল্ক কাপড় আর বস্ত্রের জগৎজোড়া খ্যাতি ছিল । সেই খ্যাতির কবর রচনা করেছিল ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি আর ইংরেজ শাসন । বাংলার কাঁচা পাট প্রক্রিয়াজাতকরণ করে গড়ে উঠেছিল স্কটল্যান্ডের ডান্ডি শহর । বিংশ শতাব্দীর গোড়ার দিকে পশ্চিম বঙ্গের হুগলি নদীর তীরে অবাঙালিদের মালিকানাধীন বেশ কয়েকটি পাটকল স্থাপিত হয়েছিল । দেশ ভাগের পর দেখা গেল পাটের প্রধান উৎপাদন ক্ষেত্র পূর্ব বাংলার ভাগে পড়েছে আর সব পাটকল হয় ডান্ডিতে অথবা পাকিস্তানের চির শত্রু ভারতে । পূর্ব বাংলার পাট ডান্ডিতে যাওয়া অব্যাহত রইলো । সাতচল্লিশ পরবর্তীকালে দেশে বেশ কিছু পাটকল স্থাপিত হয় যার অধিকাংশরই মালিক পশ্চিম পাকিস্তানিরা । আগে ইংরেজরা বাংলাকে শোষণ করতো আর তাদের অবর্তমানে তাদের আসন দখল করলো পশ্চিম পাকিস্তানি লুটেরা পুঁজিপতিরা । সেই প্রেক্ষাপটে একাত্তরে বাঙালি মুক্তিযুদ্ধে গিয়েছিল ।
যুদ্ধ শেষে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে সরকার গঠিত হয়েছিল যে কোন বিচারে সেই সরকার যে ধরনের রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হয়েছিল তার পরবর্তী কোন সরকারকেই তেমন কোন চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয় নি । ব্যাংকে কোন অর্থ নেই, গুদামে কোন খাদ্য নেই, যে সকল আন্তর্জাতিক শক্তি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল তারা বঙ্গবন্ধু সরকারকে বিপাকে ফেলার জন্য নানা ষড়যন্ত্রে লিপ্ত, দেশের যোগাযোগ ব্যবস্থা সম্পূর্ণ বিপর্যস্ত, ভারত হতে দেশে ফিরছে এক কোটি শরণার্থী, দেশের ভিতরে কয়েক লাখ মানুষ উদ্বাস্তু হয়েছেন । আজকের প্রজন্মকে সেই চরম দুর্দিনের কথা ঠিক বুঝানো যাবে না । সেই মুহূর্তে বাংলাদেশের পাশে এসে দাঁড়িয়েছিল তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন, ভারত, জাপান, পূর্ব ইউরোপীয় কিছু দেশ, যুক্তরাজ্য আর অস্ট্রেলিয়া । বিশ্বের অনেক বাঘা বাঘা অর্থনীতিবিদ তখন বলেছিলেন বাংলাদেশ টিকে থাকলে যেকোন দেশ টিকে থাকবে । নরওয়ের অর্থনীতিবিদ জ্যাস্ট ফাল্যান্ড ও ব্রিটিশ অর্থনীতিবিদ জ্যাক পর্কিনসন অনেক যোগ বিয়োগ করে প্রমাণ করার চেষ্টা করলেন বাংলাদেশের পক্ষে একটি স্বাধীন দেশ হিসেবে টিকে থাকা সম্ভব হবে না । মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারসহ আরো অনেকে এই মত প্রকাশ করলেন দেশটি হয়তো টিকে থাকবে কিন্তু সব সময়ের জন্য সেটি অন্যের দয়া দাক্ষিণ্যের ওপর নির্ভরশীল থাকবে । কিসিঞ্জার ঘোষণা করলেন তার বিখ্যাত তলাবিহীন ঝুড়ি তত্ত্ব । সেই ঝুড়িতে এখন শুধু তলাই লাগে নি ঝুড়ি ভর্তি হয়ে তা উপচে পড়ছে । শুরুতে দেশের সাড়ে সাত কোটি মানুষকে দু’বেলা অন্ন যোগানোটাই ছিল সবচেয়ে কঠিন কাজ । সেটি যাতে হতে না পারে কিছু পরাশক্তি তো সর্বশক্তি নিয়োগ করে চেষ্টা করে সফলও হয়েছিল যার উৎকৃষ্ট প্রমাণ ১৯৭৪ সালের দুর্ভিক্ষ । সেই সব দিনে দান খয়রাতই ছিল দেশের মানুষের বেঁচে থাকার একমাত্র ভরসা । সেই বাংলাদেশ বর্তমানে ষোল কোটি মানুষকে অন্ন যোগান দিয়ে অন্য দেশে প্রয়োজনে রিলিফ দেয়, খাদ্য রপ্তানি করতে পারে । যে দেশ নিজ দেশের মানুষের খাদ্য নিজে উৎপাদন করতে পারে সেই দেশের মতো সুখী দেশ আর হয় না । এই অসাধারণ অর্জনের কৃতিত্ব আমাদের দেশের কৃষক আর সরকারের, আর আরো সুনির্দিষ্ট করে বলতে হলে বলতে হয় শেখ হাসিনা নেতৃত্বাধীন সরকারের । সকলেই এটি নিশ্চয় স্বীকার করবেন শেখ হাসিনাও তাঁর পিতার মতো সব সময় কৃষকদের বন্ধু হওয়ার চেষ্টা করেছেন আর কৃষি উৎপাদনে বিপ্লব ঘটানোর সর্বাত্মক চেষ্টা করে সফল হয়েছেন । ফাল্যান্ড আর পার্কিনসন ২০০৭ সালে লিখতে বাধ্য হয়েছেন ‘গত তিন দশকে বাংলাদেশ সীমিত হলেও চোখে পড়ার মতো উন্নতি করেছে’ ।
স্বাধীন বাংলাদেশের প্রথম অর্থমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমদ ১৯৭২-৭৩ সালের জন্য যে বাজেট ঘোষণা করেছিলেন তার আকার ছিল ৭৮৬ কোটি টাকা । লক্ষ্য ছিল যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশকে পুনর্গঠন । বঙ্গবন্ধু সরকারের পুরো শাসনকালেই বার্ষিক বাজেটের মূল লক্ষ্য ছিল দেশ পুনর্গঠন, কৃষি ও শিক্ষা খাতের উন্নয়ন । এই সময় অভ্যন্তরীণ সম্পদ আহরণ তেমন একটা সম্ভব ছিল না । বঙ্গবন্ধু কৃষকদের জমির খাজনাও মওকুফ করে দিয়েছিলেন । যা আমদানি হতো তা অনেকটা ছিল সরকারি পর্যায়ে । বাজেটের একটি উল্লেখযোগ্য অর্থের যোগান হতো বিদেশি খয়রাতি সাহায্য হতে । প্রতি বছর প্যারিসে বসতো দাতা দেশ ও সংস্থার বৈঠক । তারা বসে ঠিক করতো কত টাকা বাংলাদেশকে খয়রাত হিসেবে আর কত টাকা ধার হিসেবে দেওয়া যায় । যেহেতু ধার পরিশোধ নিয়ে তাদের সন্দেহ ছিল খয়রাতের পরিমাণটা একটু বেশি থাকতো । এই দাতা গোষ্ঠীর অর্থ বরাদ্দ দেখে বাংলাদেশ তার পরবর্তী বাজেট নির্ধারণ করতো । সেই দান-খয়রাতের বা ধার কর্জেরও বর্তমানে তেমন একটা প্রয়োজন হয় না । দাতাদের বৈঠকও আর বসে ন। বাংলাদেশের পৌনঃপুনিক বাজেটের এখন পুরোটাই এই দেশের মানুষ যোগান দেয় এবং যা আহরিত হয় তার প্রায় চল্লিশ ভাগ উদ্বৃত্ত থাকে । ২০১৬-১৭ অর্থ বছরে বাংলাদেশের বাজেটের পরিমাণ ছিল ৩ লক্ষ ৪২ হাজার কোটি টাকা যার মধ্যে এক লক্ষ এগার হাজার কোটি টাকা হচ্ছে বার্ষিক উন্নয়ন খাতের বরাদ্দ । যে অর্থ দিতে এক সময় বিশ্বব্যাংক সহ অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থা দ্বিধান্বিত থাকতো তারা সকলেই সেই অর্থ দিতে এখন কোন কার্পণ্য করে না কারণ তারা বুঝে গেছে এই বাংলাদেশ আর চল্লিশ বছর আগের বাংলাদেশ এক নয় । এই বাংলাদেশের এখন ঋণ ব্যবহার ও পরিশোধের সক্ষমতা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় অনেক বেশি । যত বেশি ঋণ দেওয়া যায় তত বেশি নিজের লাভ । পদ্মা সেতুতে অদ্ভুত ঠুনকো অজুহাতে ঋণ না দিয়ে শেষতক বিশ্বব্যাংকই ঠকেছে । তা হতে শিক্ষা নিয়ে তারা তাদের ঋণ দেওয়া সম্পর্কে শর্ত ও নীতির আংশিক পরিবর্তন করেছে । ঋণ দেওয়ার ব্যাপারে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে তারা আগের যে কোন সময়ের তুলনায় উদার । শুধু তাদের আমলাতন্ত্রেও চর্বিটা একটু ছেঁটে ফেলতে পারলে দেওয়া অর্থ আরো কার্যকর ও দ্রুততার সাথে কাজে লাগানো যেত । যে বাংলাদেশে শুরুতে এক ডলার পরিমাণের বিদেশি মুদ্রা মজুদ ছিল না সেই বাংলাদেশে বর্তমানে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ একত্রিশ বিলিয়ন (তিন হাজার একশত কোটি) ডলার । গত বছর বাংলাদেশের রপ্তানি আয় ৩৪.২৪ বিলিয়ন ডলার । শত্রুর মুখে ছাই দিয়ে এখন বাংলাদেশ নিজের অর্থেই বানাচ্ছে তার স্বপ্নের পদ্মা সেতু । এরই মধ্যে সেতুর প্রায় ৩৫ ভাগ কাজ শেষ হয়েছে । বিশ্বব্যাংক এই সেতুতে অর্থায়ন না করে একদিক থেকে বাংলাদেশের উপকারই করেছে । এই দেশের মানুষ এখন বলতে পারবে দেশের জন্য যেমন জীবন দিতে পারি নিজের অর্থে পদ্মা সেতুও বানাতে পারি । হয়তো কোন একদিন বিশ্বব্যাংকের কোন এক কর্তা ব্যক্তি দেখতে আসবেন সেই সেতু সাহেবদেও হোটেল তাজ দেথতে আসার মতো আর কি। বাংলাদেশের সাধারণ মানুষ এক সময় বিদেশ হতে পুরানো কাপড় না আসলে খালি গায়ে রাস্তায় বের হতো । বর্তমানে এই দেশ বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম তৈরি পোশাক রপ্তানিকারী দেশ । বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্টের পরিধানে হয়তো তেমন একটা পোশাক থাকবে । গায়ে জামা নেই এমন মানুষ খুঁজতে হলে হারিকেন লাগবে ।
স্বাধীন বাংলাদেশের জন্মের শুরুতে সাড়ে সাত কোাটি জনসংখ্যার ৭০ ভাগই ছিল হতদরিদ্র । ক’দিন আগে বিশ্বব্যাংক সকলকে ডেকে জানিয়ে দিল ষোল কোটি মানুষের দেশে দরিদ্রের সংখ্যা (১.৯০ ডলার দৈনিক আয়) বর্তমানে মোট জনসংখ্যার ১২.৯ ভাগ । হত দরিদ্রের সংখ্যা ৭ ভাগ হবে। ব্যাংকের প-িতজনেরা আরো বলছেন গত তিন দশকে বাংলাদেশের দারিদ্র বিমোচন তাক লাগানোর মতো যদিও বিভিন্ন সময় সরকারকে অভ্যন্তরীণ ও বাইরের অনেক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হয়েছে । বিশ্বব্যাংক আরো জানাচ্ছে বিশ্ব অর্থনীতিতে বর্তমানে বাংলাদেশের অবস্থান ৪৪তম । দু’বছর আগে তার অবস্থান ছিল ৫৮ তম । বিশ্ব অর্থনীতির নানা ঝড়ঝাপটা মোকাবেলা করে বাংলাদেশের বছরে গড় প্রবৃদ্ধির হার ছয়ের উপরে রাখতে সক্ষম হয়েছে । এই মুহূর্তে তা ৬.৭% এ অবস্থান করছে । সব ঠিক থাকলে সেটি বছর শেষে সাত পর্যন্ত উঠতে পারে ।
কেমন করে হলো এমন এ’সব অসামান্য কীর্তি? এই সব কীর্তির মূল ‘যাদুকর’ এদেশের মানুষ । দেশটা যদি একুশ বছর সেনা শাসকদের অধীনে না থাকতো তাহলে এই বন্দরে অনেক আগেই পৌঁছে যেত সাফল্যের এই ভরা জাহাজ । আর ২০০৯ সাল হতে এই পর্যন্ত তো আছে একজন কা-ারির অসাধারণ নৈপুণ্যে উজানে বৈঠা ঠেলার উদাহরণ । সেই কা-ারি বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা । অনেকে বলবেন এমন কথা বলা মানায় সমীচীন নয়, দালালি হবে। অবশ্যই সমীচীন কারণ দেশের মঙ্গল হলে তার ফসল একজন শেখ হাসিনা তো ঘরে তুলেন না । তার ভাগ দলমত নির্বিশেষে সকলেই পান । অসাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনের দাবিতে যখন বেগম জিয়ার নেতৃত্বে পেট্রোল বোমার যুদ্ধ চলছিল তখন একজন শেখ হাসিনা যদি সংবিধানকে সমুন্নত রাখতে দৃঢ় না থাকতেন তা হলে বর্তমানের বাংলাদেশ দেখার জন্য হয়তো আরো দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করতে হতো । শেখ হাসিনার নেতৃত্ব এখন তার দলের সমর্থক বা শুভাকাক্সক্ষীদের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয় । স্বীকৃতি দিচ্ছে বিশ্ব নেতৃবৃন্দ । সম্মান জানাচ্ছে জাতিসংঘ, বিশ্বব্যাংক, এডিবি আর জি-৭ আর জি-৮ দেশের নেতৃবৃন্দ । সকলে তাঁর কাছে শুনতে চায় কেমন করে তিনি রচনা করেছেন তাঁর সাফল্যের উপাখ্যান । তারাও বিশ্বের অনেকে দেশে গিয়ে বলেন উন্নয়নের কাহিনী শুনতে চাও তো বাংলাদেশের প্রতি চোখ তুলে তাকাও । শেখার আছে অনেক কিছু । সেই শিক্ষা দেওয়ার জন্যই বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্টের বাংলাদেশ সফর । এসে গেছেন চীনের রাষ্ট্রপতি । একই সপ্তাহে এমন দু’জন ডাকসাইটে নেতার কিসিঞ্জারের কথিত তলাবিহীন দেশে আগমন চাট্টিখানা কথা নয় । বলাবাহুল্য তারা ছুটি কাটাতে আসছেন না । কিম সাহেব নাকি বরিশালেও যাবেন একদা যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি বর্ধিষ্ণু গ্রাম দেখতে । সেই গ্রামে এখন মানুষ মোবাইল ফোনে কথা বলে, সন্ধ্যা হলে গ্রামের চায়ের দোকানে বসে রাজা উজির মারে আর ক্যাবলে টিভিতে সুলতান সুলেমান দেখে । তার চেয়ে বড় কথা সেই গ্রামের মেয়েরা ভোর হলে দল বেঁধে সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যায় । কারো কারো স্কুটিও আছে । দেশটাকে যখন একজন নারী নেতৃত্ব দিচ্ছেন তখন তারা কী আর ঘরে বসে থাকতে পারে? তবে বাংলাদেশকে যেতে হবে আরো অনেক দূর । তার জন্য চাই বর্তমানের মতো দূরদৃষ্টি সম্পন্ন নেতৃত্ব । কে জানে একদিন হয়তো এই সাইকেল চালিয়ে স্কুলে যাওয়া কোন একজন নারী বিশ্বসভায় দাঁড়িয়ে কবির ভাষায় বলবেন ‘আমি যে এসেছি জয়বাংলার বজ্রকণ্ঠ থেকে, অমি যে এসেছি একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ থেকে’ । বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট আর চীনের প্রেসিডেন্ট আশা করি আপনারা বহুদিন মনে রাখবেন এই বাংলার চিরায়ত আতিথেয়তার কথা । সফল হোক আপনাদের এই সফর ।
 

লেখক; বিশ্লেষক ও গবেষক । অক্টোবর ১৩, ২০১৬

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

 

 

 [......লেখক আর্কাইভ]