প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

যুদ্ধটা আল্লাহ্ ও ইসলামের বিরুদ্ধে


আবদুল মান্নান
 


 

গত ১ জুন একদল স্বঘোষিত ইসলামের সৈনিকে অত্যন্ত নৃশংস ভাবে ঢাকার গুলশানের একটি রেষ্টুরেন্টে সতেরজন বিদেশী আর দু’জন পুলিশ সদস্য সহ ২২ জন নিরাপরাধ মানুষকে হত্যা করার পর বাংলাদেশ সহ সারা বিশ্ব যখন স্তম্ভিত তখন বিতর্ক চলছে বাংলাদেশে ‘আইএস’ আছে কী নেই । একটা বিষয় ক্ষুদ্র বুদ্ধিতে বুঝতে অপারগ ‘আইএস’ থাকলেই বা কী আর না থাকলেই বা কী? বাস্তবতা হচ্ছে একদল উন্মাদ গত বছর তিনেক ধরে রাজধানী ঢাকা সহ বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় চাপাতি দিয়ে মানুষ হত্যার এক ভয়াবহ নৃশংসতার সংষ্কৃতি চালু করেছে । প্রথমে তারা মুক্তমনা মানুষ খুন করেছে । তারপর বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, প্রগতিশীল রাজনৈতিক নেতা, বিদেশী সমাজকর্মী, মসজীদের ইমাম-মুয়াজ্জিন, অন্য ধর্মের যাজক পুরোহিত আর সেবায়ত আর সব শেষে গুলশান ট্রাজেডি । এই সবের রেশ না কাটতেই এই উন্মাদরা নজিরবিহীন ভাবে পবিত্র ঈদের দিনে হামলা চালালো ঐতিহাসিক শোলাকিয়ায় ঈদের জামাত শুরু হওয়ার কিছু আগে সেই জামাতের ইমাম মওলানা ফরিদউদ্দিন মাসুদকে হত্যা করার জন্য কিছু দূরের স্কুল মাঠে কর্তব্যরত পুলিশের উপর । হত্যা করলো দু’জন পুলিশ সদস্য আর এক জন মহিলাকে । পুলিশের গুলিতে নিহত হলো একজন ঘাতক । পওে জানা গেল সে একটি তারকা খচিত আধুনিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র । সেই দিনের ঘটনায় আহত হয়েছেন বেশ কয়েকজন পুলিশ । পুলিশের হাতে ধরা পরেছে তিনজন দুর্বৃত্ত । মনে রাখা ভাল ‘আইএস’ কোন একজন ব্যক্তি বা সংস্থা নয় যে সিটি কর্পোরেশন হতে ট্রেড লাইসেন্স নিয়ে ঢাকায় দোকান খুলে বসবে । এটি একটি মতবাদ যার সৃষ্টি মার্কিন প্রেসিডেন্ট বুশ আর বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের গণতন্ত্র রফতানির নামে প্রথমে ইরাক আর পরে লিবিয়া দখল করে তা ছত্রিশ ভাগে ভাগ করে দেয়ার পর থেকে শুরু। সম্প্রতি টনি ব্লেয়ারের বিরুদ্ধে এক সরকারি রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছে যা ‘চিকো‘ রিপোর্ট নামে (তদন্ত কমিটির প্রধান লর্ড চিকোর নামে) পরিচিত যাতে বলা হয়েছে ইরাক যুদ্ধ ছিল সম্পূর্ণ ভুল এবং তার জন্য দায়ী যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালিন প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশ জুনিয়র ও বৃটেনের প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ার । এই সব অপরাধের জন্য তাদের দু’জনের কেন যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচার হবে না তা বোধগম্য নয় । এর আগে নব্বইয়ের দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নকে হঠিয়ে আফগানিস্তান দখল করার জন্য যুক্তরাষ্ট্র আধুনিক অস্ত্র দিয়ে পাকিস্তানে অবস্থিত শরণার্থী শিবির হতে যুবকদের রিক্রুট করে তালেবান সৃষ্টি করেছিল । তাদেরকে বলা হয় নাস্তিকদের হাত হতে তাদের দেশ উদ্ধার করে সেখানে পুনরায় ইসলাম প্রতিষ্ঠা করার জন্য তাদেরকেই যুদ্ধ করতে হবে । বলা যেতে পারে এই অঞ্চলে মার্কিন আধিপত্যবাদ কায়েম করার জন্য তারা তাদের যুদ্ধটা আফগানিস্তানের যুবকদের কাছে আউটসোর্স করেছিল । এই সব কথা আমার নয় খোদ সাবেক মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রী হিলারি ক্লিন্টনের । তিনি আগামী নির্বাচনে সে দেশের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্য ডেমোক্রেট প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন । তালেবানরা পরে আল কায়দা সৃষ্টি করে । সেই আল-কায়দার বিষ এখন নানা নামে সারা বিশ্বে ছড়িয়েছে । ইরাকের সাদ্দাম হোসেন আর লিবিয়ার গাদ্দাফি খারাপ শাসক ছিলেন বটে কিন্তু এটিতো এখন প্রমাণিত সত্য তাদের আমলে সেই সব দেশে ইসলামের নামে এই জঙ্গিবাদের উত্থান হয় নি ।
আল-কায়দা বিভক্ত হয়ে প্রথমে আইএসআইএর সৃষ্টি হয়েছে । পরে সেই নাম পরিবর্তন করে আইএস রাখা হয়েছে যার নেতৃত্বে ছিল আবু-বকর আল বাগদাদি । খবরে প্রকাশ সম্প্রতি বাগদাদি মার্কিন বিমান হামলায় নিহত হয়েছেন । একাধিক বিশ্ব মিডিয়া ইতোপূর্বে এই তথ্য প্রকাশ করেছে যে আসলে আইএস ইসরাইলের সৃষ্টি যাতে মদদ দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র আর আল বাগদাদি একজন ইহুদি । আইএস বিশ্বের সর্বাধিক বিত্তশালী জঙ্গিসংগঠন এবং ব্যবহার করে সর্বাধুনিক অস্ত্র আর যানবাহন । আল-বাগদাদি আর তার অনুসারীরা ২০১৫ সনে ঘোষণা করেছিল পবিত্র কাবা শরিফে মানুষ মূর্তিপূজা করে (নাউজুবিল্লাহ্) । বাগদাদি পবিত্র কাবায় রক্ষিত আল-হাজার আল আসওয়াদ পাথরের কথা বলছিলেন । তিনি এও ফতোয়া দিয়েছিলেন ইসলামে ঈদের নামাজ নামে কিছু নেই । গুলশান হত্যাকান্ডের পর আইএস জঙ্গিদের গাড়ী বোমা বিস্ফোরণে বাগদাদে দুইশ’র উপরে মানুষ খুন হয়েছে । ৪ জুন তারা পবিত্র মদিনা নগরী সহ সৌদি আরবের একাধিক জায়গায় হামলা করে সাতজনকে হত্যা করেছে । একটি হামলা ছিল মসজিদে নববীর সামনে । হয়তো জঙ্গিরা বোমা নিয়ে ভিতরে প্রবেশ করতে চেয়েছিল নিরাপত্তা কর্মীদের বাঁধার কারণে তা সম্ভব হয় নি । এর আগে তুরস্কের রাজধানী ইস্তাম্বুল বিমান বন্দরে জঙ্গি হামলায় ৪২ জন নিহত হয়েছেন । ঈদের পরদিন শুক্রবার ইরাকের বালাদ শহরের এক দরগাহে আইএসআই-এর এক আত্মঘাতি বোমায় নিহত হয়েছেন পঁত্রিশ জন । সিরিয়া আর ইরাকে প্রতিনিয়ত এই তথাকথিত আইএস-এর হামলায় নিরীহ মানুষ নিহত হচ্ছেন । ইয়েমেন, ইস্তাম্বুল, সিরিয়া আর ইরাকে প্রতিনিয়ত একবিংশ শতকের এই হার্মাদদের হাতে যারাই নিহত বা আহত হচ্ছেন তারা সকলেই মুসলমান এবং এই ঘাতকদের তুলনায় ভাল মুসলমান । শুধু এই পবিত্র রমজান মাসেই বাংলাদেশ সহ মধ্যপ্রাচ্যে আইএস জঙ্গিরা খুন করেছে কমপক্ষে আটশত মানুষ । ঢাকার হত্যাকান্ডটি তারা ঘটিয়েছে জুমাতুল বিদার রাতে আর শবে কদরের আগের রাতে । একজন মুসলমান কখনো নিরীহ মানুষ খুন করতে পারে না । সুতরাং এটি নির্দ্বিধায় বলা যায় আইএস জঙ্গিরা খিলাফত বা আল্লাহর আইন প্রতিষ্ঠা করার নামে যা করছে তা মূলত আল্লাহ, ইসলাম আর মানবতার বিরুদ্ধে যুদ্ধ । গুলশানে ১ তারিখের হামলায় যারা নিহত হয়েছেন তাদের বেশীর ভাগই বিদেশী । সর্বাত্মক ভাবে সতর্ক না হলে আগামী দিনের চিত্রটা ভিন্ন হতে পারে । আরো নিন্দনীয় বিষয় হচ্ছে ঢাকার ঘটনায় বিশ্বের অনেক দেশের সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানরা ক্ষুব্দ প্রতিক্রিয়া ও সমবেদনা জানালেও মালয়েশিয়া ছাড়া কোন মুসলমান প্রধান দেশ কোন প্রতিক্রিয়া দেখায় নি । বাংলাদেশের ইসলাম পছন্দ কোন দল এই ঘটনার নিন্দা করেনি ।
বাংলাদেশে হয়তো আইএস নামের কোন জঙ্গি সংগঠন নেই কিন্তু তাদের মতবাদে দীক্ষিত ইসলামী ছাত্র শিবির, হিযবুত তাহরির, হিযবুদ তওহিদ, আনসারউল্লাহ বাংলা টিম, হুজি, জেএমবি, হেফাজত তো আছে । এদের উত্থান শুরু হয় বঙ্গবন্ধু হত্যার পর যখন জিয়া ছাত্র শিবিরকে পুনরুজ্জীবন দান করেন তখন হতে। তারা শাখা প্রশাখা বিস্তার করে বেগম জিয়ার শাসনামলে । হেফাজত বর্তমান সরকারের আমলেও অনেক আসকারা পেয়েছে যার কোন প্রয়োজন ছিল না । এদের সকলেরই আদি সংগঠন ছাত্র শিবির । এদের অনুসারিরা মূলত কওমি মাদ্রাসা হতে আসে । এই সবের সাথে সম্প্রতি যোগ হয়েছে উচ্চবিত্ত ঘরের ইংলিশ মিডিয়ামে পড়–য়া উঠতি বয়সের পারিবারিক, সমাজ আর বাস্তব জগৎ বিচ্ছিন্ন একদল উঠতি বয়সের তরুণ তরুণী যারা অনেকটা অ্যাডভেনচারের খোঁজে এই সব জঙ্গি সংগঠনে যোগ দিয়েছে । এই সমস্যা শুধু যে বাংলাদেশের একার তা কিন্তু নয় । ইতোমধ্যে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, কানাডা, ইউরোপ, ভারত, পাকিস্তান, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়ার কয়েক হাজার তরুণ তরুণী আইএস-এ যোগ দিতে বিভিন্ন পথে ইরাক আর সিরিয়া পাড়ি দিয়েছে ।
১ জুন ঢাকার গুলশানে বা ঈদের দিন কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়ায় যে হামলা ও নরহত্যা হয়েছে তার অবসান রাতারাতি হবে তা বিশ্বাস করা হবে বোকামি । যেখানে বিশ্বের উন্নত দেশ এই সমস্যা মোকাবেলা করতে হিমশিম খাচ্ছে সেখানে বাংলাদেশে কোন মিরাকেল আশা করা উচিৎ নয় । গুলশান ঘটনা নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে কোন কোন শৌখিন নিরাপত্তা বিশারদ সরকারকে একহাত নিয়েছেন । বেগম জিয়া প্রশ্ন করেছেন গুলশানে এ্যাকশান নিতে এত দেরী কেন হলো । জিম্মি পরিস্থিতি আর সাধারণ ছিনতাই পরিস্থিতি এক নয় । ২০০৮ সনে মুম্বাই তাজ হোটেলে পাকিস্তান ভিত্তিক লস্করই তৈয়বা জঙ্গি সংগঠন হামলা করে কয়েকশত মানুষকে জিম্মি করেছিল । শুরুতে পুলিশ সহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা চেষ্টা করেছিল জিম্মি উদ্ধার করতে । বেশ কয়েকজন হতাহত হওয়ার পর তলব করা হয়েছিল এলিট কমান্ডো ফোর্স এনএসজিকে । হরিয়ানা হতে মুম্বাই পৌঁছাতে তাদের সময় লেগেছিল ষাট ঘন্টা আর সন্ত্রাসী নিধন ও জিম্মি উদ্ধারে সময় লেগেছিল বাহাত্তর ঘন্টা । তখন এনএসজি অবস্থান করতো হরিয়ানা, কোলকাতা, হায়দ্রাবাদ আর চেন্নাইতে । সেই অভিযানে ১৬৬ জন নিহত হয়েছিলেন যার মধ্যে ১৩৮ জন ছিল ভারতীয় আর গুরুতর আহত ২৯৩ । সাধারণত সন্ত্রাসীদের কবল হতে জীবিত জিম্মি উদ্ধার খুবই দুরুহ কাজ । রাশিয়া, যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের অনেক দেশে জিম্মি উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে ভয়ানক ট্র্যাজেডির মধ্য দিয়ে । সেই দিক থেকে তুলনা করলে গুলশানের জিম্মি উদ্ধার একেবারে একশত ভাগ সহি হয়েছে তা হয়তো বলা যাবে না কিন্তু সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় তার একটি সফল সমাপ্তি হয়েছে বলা যাবে । বেশ কিছু জিম্মিদের কমান্ডোরা উদ্ধার করেছে এবং তাতে সময় লেগেছে ১২ মিনিট । গুলশান আর শোলাকিয়ায় আমাদের চারজন পুলিশ সদস্য নিজেদের জীবন দিয়েছেন । এটি হয়তো তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণের অভাবের কারণে হতে পারে তবে তারা তাদের দায়িত্ব পালনে অবহেলা করেছেন তাতো বলা যাবে না ।
সেই স্বাধীনতা পরবর্তীকাল হতে দেখে আসছি যখনই আওয়ামী লীগ সরকারে থাকে তাকে উৎখাত বা বেকায়দায় ফেলার জন্য দেশে ও দেশের বাইরের ষড়যন্ত্রকারীরা ওভার টাইম কাজ করে । বঙ্গবন্ধু সেই ষড়যন্ত্রকে সময় মতো মোকাবেলা করতে না পারার কারণে তাঁকে নিজের জীবন দিতে হয়েছে । বঙ্গবন্ধু কন্যাকে শুধু বেকায়দায় ফেলার জন্যই নয় হত্যা করার জন্যও একাধিকবার চেষ্টা করা হয়েছে । তাঁর উপর দেশের মানুষের আস্থা আর দোয়া আছে বলেই তিনি সব ষড়যন্ত্র দৃঢ়তার সাথে মোকাবেলা করেছেন । তবে তাঁর উপর মানুষের যে আস্থা আছে তাঁর সভাপারিষদের অনেকেরই উপর তেমন একটা নেই । দেশের মানুষ বিশ্বাস করেন এই বিষয়টি উপলব্দি করে এই সভা পারিষদের দিকে তিনি একটু নজর দিবেন । ত্রিশ লক্ষ শহীদের বিনিময়ে অর্জিত বাংলাদেশ আল্লাহ্ আর ইসলাম বিরুদ্ধে একদল যুদ্ধবাজের কাছে হারতে পারে না । বেগম জিয়া নিত্যদিন বলে বেড়ান নির্বাচন দিয়ে তার হাতে ক্ষমতা ছেড়ে দিলে সব সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে । তবে কী দেশের মানুষকে বিশ্বাস করতে হবে এই সবের পিছনে আসলে ক্ষমতার খেলা । বিএনপি নেতা আসলাম চৌধুরীর মোসাদ কান্কেশন কী এখন সত্য প্রমানিত হচ্ছে ?

লেখক: বিশ্লষক ও গবেষক। জুলাই ৯, ২০১৬

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

 [......লেখক আর্কাইভ]