[প্রথমপাতা]

 

 

 

ওইখানে যেওনাকো তুমি (২০তম পর্ব)
 
 

- মেহেরুন নেছা রুমা -

 
যে খাবার ক্ষুধার্ত রুপা পেট ভরে খেয়েছিল, সেই খাবারে মেশানো ছিল রুপার জন্য সর্বনাশের বীজ। খাবারের সাথে নেশাজাত পদার্থ মিশিয়ে মাতাল করে দিয়েছে রুপাকে। রূপার মন এবং মগজ এখন কোনকিছু বুঝার ক্ষমতা নেই তার। নিজের বিবেক বুদ্ধি বিবেচনা হারিয়ে কাঠের পুতুল সেজে বসে আছে। তাকে তারা একেবারে ঘুম পাড়িয়ে রাখেনি। কারন ঘুম পাড়ানো হলেতো তাদের খেলা জমবে না। সে খেলায় রুপাকে জেগে থাকতে হবে। উপভোগ করে বুঝাতে হবে সে যা করছে প্রান খুলে করছে। রুপা পুরোপুরি চৈতণ্যে থাকলে সেটা সম্ভব হবে না। তাই নেশাগ্রস্থ করে দেয়া হয়েছে। যাতে মুভিটা সুপার ডুপার হিট হয়।
সাজানো শেষে মহিলা তার সরঞ্জাম নিয়ে ঘর থেকে বেড়িয়ে গেল। রুপা সেই চেয়ারেই বসে রইল। তাকে সুন্দর একটা ঝমকালো পোশাকও পড়ানো হয়েছে।
পঁচিশ চাব্বিশ বছর বয়সের একটি ছেলে রুপার কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়াল। তারপর তাকে চেয়ার থেকে উঠে দাঁড় করাল। রুপা তার চোখের সামনে অনেকগুলো পুরুষকে ভাসতে দেখছে। কেমন রঙিন আলোতে তার দিকে চেয়ে মিটমিট হাসছে ছেলেগুলো। একই রকমের কতগুলো ছেলে । কি অদ্ভুত দৃশ্য।
ছেলেটি রুপার দুটি হাত ধরে নিজের কাঁধের উপর রেখে কাছে এসে দাঁড়াতেই রুপা পড়ে যেতে চাইল । ছেলেটি তখন রুপাকে কোলে তুলে বিছানার দিকে নিয়ে গেল। মনে হচ্ছে রুপা তার বিয়ে করা নতুন বৌ।
সারা রাত ধরে নেশাগ্রস্ত রূপাকে নিয়ে যা ঘটল তার পুরোটাই সুন্দর করে ভিডিও করা হল। তিনজন পুরুষের সাথে রূপাকে নিয়ে দশটি ধারাবাহিক পর্নোগ্রাফি এক রাতের শুটিং এ ই সম্পন্ন হল।
বিশ বছরের জমানো পবিত্রতা এক নিমিষেই হারিয়ে গেল রূপার। এখনো সে জানে না তার সাথে কি হচ্ছে। নেশাগ্রস্ত অব¯থায় তাকে যেভাবে যা করতে বলা হচ্ছে সে তাই করছে। দুনিয়াটাকে কেমন হালকা বেলুনের মত মনে হচ্ছিল। বুঝতেও পারল না কি সর্বনাশটা ঘটে গেল তার জীবনে।
কখন রাত শেষ হল,কখন ভোর হল কোন কিছুই তার জানা নেই। মনে হচ্ছে কত কত বছর ধরে সে শুধু ঘুমাচ্ছে। একবার দু’বার হালকা চোখ খুলেই আবার ঘুমিয়ে পড়ছে।
এমন করে ঘুমের মধ্যেই সে নিজেকে এক সময় কোন এক চলন্ত গাড়ির মধ্যে আবিস্কার করল। শত চেষ্ট করেও কিছু মনে করতে পারছে না। শুধু ঘুমাতে ইচ্ছা করছে। হাত পা ছড়িয়ে দিয়ে আরামের একটা ঘুম। সারা শরীর জুড়ে ব্যাথা। ঘুমের মধ্যেই ব্যাথার উপস্থিতি টের পাচ্ছে। সাথে গাড়ির ঝাকুনিও টের পাচ্ছে। এক নজর চোখ খুলে দেখল গাড়িতে অচেনা একটি মেয়ে। তার দিকে একবার তাকিয়েই আবার চোখ বন্ধ করল। মনে করার চেষ্টা করল মেয়েটা কে । পারল না।
একরাত গেল শুটিং করে। পরের একটি দিন একটি রাত রুপা বেহুশের মত পড়েছিল সেই অন্ধকার কামরায়। জগতের কোনকিছুর সাথে তার যোগাযোগ নাই। রুপাকে পাহাড়া দেয়ার জন্য তখন যে মেয়েটা ছিল তার নাম স্যান্ডি । সে কলকাতা থেকে ঢাকা পর্যন্ত রুপার সাথে থাকবে এই চুক্তিতে নিয়োগ প্রাপ্ত।
রাত তখন ন’টা। হোস্টেলের গেটে গাড়ি এসে থামে। স্যান্ডি রুপাকে ঘুম থেকে ডেকে তুলে ।
রুপা জিজ্ঞাসা করে,আমি এখন কোথায়? আপনি কে ?
স্যান্ডি -আপনি আপনার হোস্টেলে চলে আসছেন। চলেন আপনাকে পৌঁছে দেই রুমে। আমি স্যান্ডি । ইন্ডিয়া থেকে আপনার সাথে এসেছি।
স্যান্ডি,ইন্ডিয়া। বিড়বিড় করতে করতে গাড়ি থেকে নামে রুপা।
সারা শরীর ব্যথায় নাড়াতে পারছে না। পা চলছে না। মাথার শিরাগুলো মনে হচ্ছে ছিড়ে যাবে এখুনি। দুনিয়া নিয়ে মাথা ঘুরছে।
স্যান্ডি রুপাকে নামিয়ে রেখে দ্রুত সেখান থেকে চলে গেল।
ইন্ডিয়া যাওয়ার সময রুপা তার রুমমেটদের কাছে বলে গিয়েছিল। কনিকাই তখন এই পরামর্শটা দিয়েছিল। বলেছিল ,এখন তো সবকিছুই কনফার্ম হয়ে গেছে রূপা। এখন কাউকে জানাতে কোন অসুবিধা নাই। ইন্ডিয়া থেকে ফিরে তুমি তো স্টার হয়ে যাবে। তো সবাই জানুক তুমি স্টার হচ্ছ্।
কনিকাই সকলকে আগ বাড়িয়ে কথাটা প্রচার করে দিয়েছিল। এছাড়া হোস্টেল থেকে কোথাও যেতে হলে কারন দেখিয়ে লিখিত দরখাস্ত করে তারপর যেতে হয়। রূপা কোন মিথ্যা অজুহাত দেখিয়ে যেতে চায়নি । তাই সত্যিটাই বলেছিল।
রুমে আসার সাথে সাথে অন্য মেয়েগুলি দৌঁড়ে আসল। এ কি হাল রূপার ! মাত্র তিন দিনে সে এমন অসুস্থ্য হল কি করে ? সফর প্রসঙ্গে জানতে সকলে ব্যস্ত হয়ে গেল। কারো প্রশ্নের কোন উত্তর দিতে পারল না রূপা। রুমে ঢুকেই বিছানায় শুয়ে আবার ঘুমিয়ে পড়ল।
পুরো হোস্টেলে কেমন কানাঘুষা চলল রাতভর। রূপা ইন্ডিয়া থেকে এভাবে ফিরে এল কেন ? তার তো সাতদিন থাকার কথা ছিল। তিন দিনেই এসে পড়ছে। তারপর সে এমন ঘুমাচ্ছে কেন।
ঘুম ভাঙল যখন তখন সকাল আটটা। চোখ খুলে নিজেকে হোস্টেলের রুমে দেখে প্রথমে বিষ্মিত হয়। সে এখানে কি করে এল। সে তো ইন্ডিয়া গিয়েছিল । মিউজিক ভিডিওতে শুটিং করতে।
জীবনে প্রথম উড়োজাহাজে উড়ে মেঘের কাছাকাছি যাওয়া ,ভিন্ন দেশের মাটিতে পা ফেলে কেমন শিহরন অনুভব, সাদা মাইক্রোবাস,জেসিকা ,একটা আলিশান ভবন,লিফট ,গরম পানিতে গোসল,মজাদার খাবার ,সব একটু একটু করে মনে পড়ল। তারপর কি ?

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ