[প্রথমপাতা]

 

 

 

ওইখানে যেওনাকো তুমি(১৩ পর্ব)
 
 

- মেহেরুন নেছা রুমা -

 
এর মধ্যে এক আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে গেছে। হঠাৎ একদিন নীরা আপু এসে উপস্থিত। সাথে একজন ভদ্রলোক। দেখতে কেমন শান্ত পরিমার্জিত অথচ বুদ্ধিদীপ্ত মুখমন্ডল।
রেহানা আপুকে বলল আমরা যেন বিকেল পাঁচটায় টিএসসি যাই।
যথা সময়ে আমরা উপস্থিত হলাম। দেখি নীরা আপুর সাথে এক ভদ্রলোক। আমাদের সাথে নীরা আপু পরিচয় করিয়ে দিলেন । বললেন ,অনেক দেখে শুনে মনে হল হাত ধরে হাঁটার মত একটা মানুষ পেয়েছি এবং যার সাথে আমি একাকি রাত নির্ভিঘেœ বসে গল্প করতে পারি। তাই তোদেরকে দেখাতে নিয়ে আসলাম। দেখে বলতো লোকটাকে বিয়ে করা যায় কি না ? ইনি হলেন ‘অসীম দিগন্ত’। একজন কবি।
দু’জনই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। এক সাথে বলে উঠলাম-অসীম দিগন্ত ! কবি !
রেহানা আপু বললেন , তোর কাছে যখন সে মানুষ বলে বিবেচিত হয়েছে আমাদের আর যাচাই করার কিছু নাই।
তারপর চার জনে আড্ডা জমে উঠল।
কবি ‘অসীম দিগন্ত’র নাম অল্প কিছু শুনেছে রুপা । বিভিন্ন পেপার পত্রিকায় তার কবিতা প্রকাশিত হয়। কোনদিন পড়েছে হয়তো। রূপার ভালই লাগল অসীম দিগন্তকে দেখে। কথাবার্তার মধ্যেও কবিতা চলে আসে তার। এই লোকটাকে দেখে মনে হয়ে কোনদিন কারো সাথে জোরে ধমক দিয়ে কথা বলতে পারবে না। একজন পুলিশ স্ত্রীর সাথে একজন কবি সংসার করবে !
অসীম দিগন্ত বললেন, নীরার মুখে আপনাদের কথা এত শুনেছি যে দেখার আগ্রহটা দমিয়ে রাখতে পারলাম না। নীরা বলেছিল ,আমার বন্ধু আর আমার ছোট বোন যদি আপনাকে দেখে পছন্দ করে তো আমি বিয়ের ব্যাপারে এক ধাপ এগিয়ে যাব। তাই তাকে এক ধাপ এগিয়ে নেয়ার প্রচেষ্টায় নিজেকে উপস্থাপন করলাম। রমনীদ্বয় আমাকে মনে লেগেছে কি ভাই ?
রেহানা হেসে ফেলল । বলল,ভাই আমার বন্ধুর মনে যখন আপনি লেগে গেছেন তখন আর কারো মনে লাগার চেষ্টা করিয়েন না। আপনাকে একেবারে ক্রশফায়ারে দিবে ।
কবি কে বিদায় দিয়ে ওরা তিনজন হোস্টেলে আসল। নীরা তখন সব খুলে বলল । কিভাবে কোথায় অসীমের সাথে দেখা। অনেক দিন থেকে অসীমকে জানে। নারীদের প্রতি তার দারুণ শ্রদ্ধাবোধ। যে কাজগুলি আমরা করতাম সে সেসব কাজ করে। আমি যেখানে আছি সেখানে অসীমের দারুণ জনপ্রিয়তা। বিশেষ করে নারীদের কাছে। নারীদের যেকোন বিপদে আপদে সে ছুটে যায় সবকিছু ফেলে। ওরকম একটি কাজ করতে যেয়েই তার সাথে আমার পরিচয়। তারই আপন চাচা বাড়ির কাজের মেয়েকে ধর্ষণ করেছিল। অসীম তার চাচার বিরুদ্ধে মামলা করতে এবং সুবিচার চাইতে এসেছিল আমার কাছে। আমি তাকে সব রকম আইনি সহায়তা দিয়েছি। তার সব কাজে সে আমাকে পায়। এভাবেই তার কাছাকাছি যাওয়া। আমার মতের সাথে তার মতের মিল দেখে আমি অবাক মানি। অসীমের বাবা মা বেঁচে নেই। একটা ছোট বোন আছে বিবাহিতা। মোটামুটি স্বচ্ছল পরিবারে অসীমের জন্ম। কবিতা তার নেশা । সেটাকেই এখন সে পেশা হিসেবে নিয়েছে।
তার সাথে আমার সব রকম কথা বার্তা হয়েছে। আমাকে বিয়ে করলে এক টাকার যৌতুক তাকে দেয়া হবে না ,তবে বাবা মায়ের সম্পত্তির আমি যেটুকু প্রাপ্য তা আমি নেব এবং সেটা যখন আমার মন চাইবে তখন। সে সেসব নিয়ে কখনো আমাকে কিছু বলতে পারবে না,আমি চাকরিতে তার কোন আপত্তি থাকতে পারবে না, পেশাগত কারনে আমার কাজের অনেক চাপ থাকবে ,সে সেটা নিয়ে আমাকে কিছু বলতে পারবে না,ঘরের বৌ এত বাইরে কেন,–এমন সব কথা বার্তা বলা যাবে না। সংসারটা যেহেতু দুজনের তাই তার প্রতি দায় দায়িত্বও থাকবে দু’জনের সমান। তার কবিতা লেখায় আমি কোন বাধা সৃষ্টি করব না এবং আমার চাকরীতেও সে কোন বাধা সৃষ্টি করবে না।
আমার এসব কথা শুনে সে হেসে বলে ,এতদিন আমাকে দেখে কি আপনার এগুলো বলার প্রয়োজন ছিল ? আমি নিজেই তো মেয়েদের অধিকারের কথা বলি। আর যৌতুকের কথাটা শুনলেও আমার নিজের প্রতিই নিজের লজ্জা হয়,আমি পুরুষ বলে। এই লজ্জাটা সকল পুরুষের হওয়া উচিৎ । যার সাথে সারা জীবনের সম্পর্ক হবে তার সাথে দেনা পাওনার কথা আসবে কেন ? আর নারীকে আমি মানুষ বলে জানি। তারা কোন পণ্য নয় । যে দরদাম করব ।
তার কথা শুনে আমি মুগ্ধ হয়ে যাই। তারপরেও আরো সময় নেই তাকে বুঝতে। আমি বলেই নিয়েছি যে আমি আর ধোকা পেতে চাই না। আমার পিছনের কথা তাকে আমি বলেছি। তার সেসবে কোন আগ্রহ নাই। সে বলে ,যখন থেকে আমাকে চিনে তখন থেকেই সে আমাকে বিচার করবে। আমার অতীত নিয়ে ঘাটাঘাটি সে কোনদিন করবে না। সে আরো বলেছে প্র্েরয়োজনে স্ট্যাম্পে আমাদের সকল কথা লিখিত থাকবে । ভবিষ্যতে যদি কথার গরমিল হয় তাহলে যেন তাকে শাস্তি দিতে পারি। আমি আর এতটা বাড়াবাড়ি করতে চাইনি। এখন তাকে বাবা মায়ের সামনে পেশ করে বিয়ের কাজটা সেরে ফেলব। কোন আয়োজন থাকবে না। পরিবারের ছোট্ট পরিসরেই আমাদের বিয়ে হবে।
নীরার কথা শুনে রূপা রেহানাকে বলল,দেখলেন আপু ,আমি বলেছিলাম না কেউ না কেউ তো ভাল অবশ্যই আছে ? আমাদের কবি দিগন্ত ভাইয়া ঠিক সেরকম ভাল মানুষ।
রেহানা একটা হাই তুলে বলে , ঠিক তাই যেন হয়। অন্তত নীরা যেন জীবনে সুখি হয় এটাই দেখতে চাই।
রেহানার হোস্টেল ছেড়ে আসতে রূপার কষ্ট হচ্ছিল। এতদিন ওখানে থেকে ওটাকেই তার নিজের ঠিকানা বলে মনে হচ্ছিল। এখন না এসে উপায় ছিল না। ওখানে শুধু কর্মজীবি নারীদেরই স্থায়ী ভাবে থাকার অধিকার আছে। কোন ছাত্রীর নেই। আর রূপার পক্ষে সেখানের খরচ মেটানোও কষ্টকর হত। তার চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে থাকা ছাত্রীদের জন্য সুবিধাজনক। হোস্টেলে থাকার নানান কায়দা কানুন রেহানা এবং নীরা ভাল করে বুঝিয়ে দিয়েছিল রূপাকে। বাড়ি ঘর আত্মীয় পরিজন থেকে দূরে আসার একটাই উদ্দেশ্য ,আর তা হল জীবনে প্রতিষ্ঠা লাভ। এ কথাটি যেন সব সময় মনে থাকে-এ কথা বলে দিয়েছিল নীরা। বাবা মার কাছ থেকে রূপাকে নীরা ই তো নিয়ে এল ঢাকাতে। নীরার যেন সেই বড় মুখ রক্ষা হয় তাই বারবার বলে দিচ্ছিল রূপাকে।
যদিও রূপা এ সব কিছুই বেশ ভাল ভাবে বুঝতে পারে। সে জানে মা বাবার মনে কি কষ্ট। ভাই দুটির একটি বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেল ,অন্যটি পড়াশুনা ছেড়ে দিয়ে রাস্তার বখাটে খাতায় নাম লিখিয়েছে। খেলাধুলা আর মারামারি যেখানে সেখানে তার সরব উপস্থিতি। একমাত্র রূপাই বৃদ্ধ বয়সে বাবা মায়ের অবলম্বন । রূপার পরিবারে কেউ কোনদিন কলেজের গন্ডি পার হতে পারেনি। কোন মেয়ে তো নয় ই। সেদিক থেকে রূপা নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করে।
হোস্টেলে তার সাথে একই রুমে আরো পাঁচটি মেয়ে থাকে। এক রুমে পাঁচ জন করে থাকার কথা। কিন্তু প্রথম বর্ষে সব রুমেই অতিরিক্ত হয়ে থাকতে হয়। ফাইনাল ইয়ারের ছাত্রীদের পরীক্ষা পর্যন্ত এই ব্যবস্থা। এর পর তারা পরীক্ষা দিয়ে চলে গেলে নতুনরা সিস্টেম অনুযায়ী থাকতে পারবে। তবে পাঁচ জনের জায়গায় ছয় জন বা সাত জন প্রায়ই হয়। সারা বছরই রুমের কারে না কারো গেষ্ট থাকবেই। আজ ওর বোনের ভর্তি পরীক্ষা তো কাল চাকরীর ইন্টারভিউ। এমন করে বছরের প্রায় দুই তৃতীয়াংশ রাত এক জনের বিছানায় দুই জনে ভাগাভাগি করে ঘুমাতে হয়। শুধুু তাই নয়,এর সাথে ভাগ করতে হয় পড়ার টেবিল,আলমারি,বইয়ের তাক সবকিছু। এমনকি খাবারও।
রূপার ভাগাভাগি করতে সমস্যা নাই। কিন্তু ওর কাছে অসহ্য লাগে যখন পড়াশুনায় ব্যাঘাত ঘটে। এতকাল একা ঘরে আপন মনে পড়াশুনা করত সে। এখন এক ঘর ঠাসা মেয়েদের মধ্যে বসে পড়তে হয়। শব্দ করে না পড়লে তার পড়া হত না । এখন সেরকম শব্দ করে পড়া তার হয় না। রুমে আরো পাঁচটি মেয়ে থাকাতে তাদের কথাও ভাবতে হয়। যাই করুক নিজের একার কথা ভাবার সুযোগ নেই । এক সঙ্গে পাচঁ জনের কথা ভেবে কাজ করতে হয়। রাত দশটায় রুমের আলো নিভিয়ে দিতে হবে। এর পর যদি কারো পড়াশুনা করতে হয় তো স্টাডি রুমে যেয়ে পড়তে হবে। সেখানে আরো সমস্যা। সব ডিপার্টমেন্টের চেনা অচেনা মেয়েদের ভীড়ে রূপা পড়াশুনা করতে যেন ইতস্তত করে। মুখ দিয়ে শব্দটা বের হতে চায় না। ভীষন বেকায়দায় পড়ে গেছে সে। খেতে গেলেও সমস্যা হয়। যা রান্না হয় তার গলা দিয়ে নামতে চায় না। তার উপর একটু দেরি করে গেলে খাবার ভাল পাওয়া যায় না। মাছ হয়তো রান্না হয়েছে, কিন্তু হাড়িতে কেবল ঝোলটা পাওয়া যায় এমন।
এক সপ্তাহ হোস্টেলে থেকে সপ্তাহের ছুটির দিনটিতে গেল রেহানার হোস্টেলে। যেন আপন ঘরে ফিরে এসেছে । রেহানার বিছানার উপর সটান হয়ে শুয়ে পরিতৃপ্তির একটা হাই তুলল। হোস্টেলের গল্প করল রেহানার সাথে। রেহানা বলে,এসব যত তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারবে ততই তোমার জন্য ভাল। আগে কি ছিলে কি করেছিলে সেসব মাথা থেকে ঝেড়ে ফেল। নইলে এই বৈষম্যের কথা ভেবে ভেবেই তোমার পড়াশুনায় মন বসাতে পারবে না। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এ পর্যন্ত যত জ্ঞানী গুনি দেশের মুখ উজ্জল করে বের হয়েছেন তাদের সবাই ওমন জীবন যাপন করেছেন। তুমিও পারবে রূপা। ওই জীবনের সাথে নিজেকে মিলিয়ে নাও। হোস্টেল জীবনের সাথে নিজের ভালবাসা তৈরি কর। দেখবে সব ঠিক হয়ে গেছে।
রেহানার কথাগুলো টনিকের মত কাজ করল রূপার মনে। হোস্টেলে ফিরে এসেই রেহানার কথাগুলো ভাবল,তারপর সবকিছু গুছিয়ে নিয়ে আটঘাট হয়ে বসল। মনে করতে থাকল,এটা এখন থেকে আমার ঘর,আমার পরিবেশ,এটাই আমার পড়াশুনার উপযুক্ত ¯থান। সে রাতেই রূপা হোস্টলের ডাইনিং এ প্রথম বারের মত পেট ভরে ভাত খেল। রুমেমেটদের সাথে গল্প করল। বই নিয়ে যখন পড়তে বসল তখন অন্যদের বলল,এখন আমি পড়ব আমার মত করে। তোমাদের সাথে আবার পরে কথা হবে।
রাত দশটার পর স্টাডি রুমে যেয়ে বইয়ের মাঝে ডুবে গেল। আশে পাশে কেউ আছে সেটা মনের ধারে কাছেও আনল না। একদিনেই রূপা নিজেকে মানিয়ে নিল। এখন আর তার সমস্যা হয় না। বরং বেশ ভালই লাগে। ভাল লাগে সব রুমের লাইট নেভানোর পর চুপি চুপি পাঁচজন এক বিছানায় বসে গল্প করতে। কৌটা খুলে বিস্কুট,চানাচুর খেতে, মেয়েদের বাড়ির কথা শুনতে। এক একটা মানুষের মাঝে কত কত গল্প লুকিয়ে আছে। রূপা সেসব শুনে নানা রকম অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে যায়।
রূপার রুমের পাঁচজন মেয়ে পাঁচ ডিপার্টমেন্টের। একজন ইংরেজি,একজন নাট্যকলা,একজন,পদার্থ,একজন হিসাব বিজ্ঞান, আর রূপা রসায়ন। আলাদা আলাদা ডিপার্টমেন্টের গল্প শুনতে রূপার ভালই লাগে। ইংরেজি সাহিত্যের মেয়েটি সাহিত্যের নানা বিষয় নিয়ে রূপার সাথে গল্প করে। সাহিত্য নাকি তার মোটেও ভাল লাগে না। অথচ রূপার ভীষণ ভাল লাগে। রূপা নিজের পড়ার ফাঁকে ফাঁকে প্রায়ই ইংরেজি সাহিত্যের বইগুলি তার কাছ থেকে নিয়ে পড়ে ।
রূপাদের রুমে এখন অতিরিক্ত হয়ে যে মেয়েটি আছে তার নাম কনিকা। কনিকা বাংলা বিভাগের ছাত্রী। এখনো তার সিট বরাদ্দ হয়নি । যতদিন পর্যন্ত না হবে সে ততদিন পর্যন্ত এখানেই থাকবে। কনিকার সাথে তেমন কিছু নেই। কয়েকটি বই খাতা,আর কিছু জামা কাপড় নিয়ে একটা মাত্র ব্যাগ। কনিকা বলে,আমিতো এখনো পারমানেন্ট হইনি,তাই বাড়ি থেকে কিছু আনিনি। যখন নিজের সিট পাব তখন সবকিছু নিয়ে আসব।
কনিকার সাথে রূপার দারুণ ভাব হয়ে গেছে। এই ছয় জনের মধ্যে রূপাই সবচেয়ে সুন্দর। তবে সবদিক থেকে কনিকা সবচেয়ে আকর্ষনীয় । নিজেকে সে সব সময় ফিটফাট রাখে। নিজের সৌন্দর্যটাকে অনেক যতœ করে সে। রূপাকে প্রায়ই বলে,তোমার মত যদি আমি হতাম দেখতে সিনেমার নায়িকা হয়ে যেতাম। রূপা হেসে বলে,না ভাই আমার অতো সিনেমার নায়িকা হয়ে কাজ নাই ।
রূপার ক্লাসগুলো প্রায়ই বিকেলে থাকে। তাই দুপুর পর্যন্ত কনিকাকে সে রুমেই পায়। কনিকা বলে ,আমার প্রতিদিন ক্লাস করতে ভাল লাগে না। সে একদিন যায় তো তিন দিন যায় না। এই সুযোগে রুপার সাথে তার সখ্যতা গড়ে ওঠে। কনিকার সাথে একজনের হ্্রদয় ঘটিত সম্পর্ক আছে। নির্জন দুপুরে কনিকা তার সাথে মোবাইলে গল্প করে। হোস্টেলে মেয়েদের মোবাইল রাখা নিষিদ্ধ। কি›তু প্রায় প্রতি রুমে অন্তত দু’জন মেয়ের কাছে মোবাইল আছেই। কর্তৃপক্ষ তা জানে কি জানে না সেটা বুঝা যায় না।
মাসের এক দুই তারিখের মধ্যেই বাড়ি থেকে রূপার টাকা চলে আসে। মনে মনে ভাবে পড়াশুনার পাশাপাশি যদি কোন একটা উপার্জনের পথ পাওয়া যেত ,বাড়ি থেকে টাকা পাঠাতে হত না। বিষয়টা নিয়ে রেহানার সাথে আলাপ করে। রেহানা বলে এখনি এসব ভেব না রূপা। আর কিছুদিন যাক। তবে হ্যা ,তুমি ইচ্ছা করলে একটা দ’ুটো টিউশনি করতে পার । সেই সময় কি তোমার হবে ?
কেন হবে না আপু ? আমি ঠিক ম্যানেজ করে নিব। কিন্তু টিউশনি পাব কোথায় ?
আচ্ছা আমি চেষ্টা করে দেখছি কিছু করা যায় কিনা।
তার ক’দিন পরেই রেহানা রূপার জন্য একটা টিউশনি ঠিক করেছে। ক্লাস সেভেনের একটা মেয়েকে সপ্তাহে তিনদিন বাসায় যেয়ে পড়াতে হবে। মেয়েটার বাসা আজিমপুর কলোনিতে। পড়ানোর বাবদ তারা মাসে রূপাকে পনের শ টাকা দিবে।
রূপার কাছে এই পনের শ টাকাই অনেক। বাবার দেয়া টাকা থেকে এখন এই পনের শ সে বাদ দিতে বলবে।
রেহানার দেয়া ঠিকানা অনুযায়ী একদিন সন্ধ্যেবেলা রুপা গেল ছাত্রীর বাসায়। খুঁজে পেতে খুব বেশি কষ্ট হয়নি তার। বিশ্ববিদ্যালয় এবং এর আশে পাশের এলাকাটা এখন সে বেশ ভালই চিনে ফেলেছে।
ছাত্রীর নাম সুইটি। দেখতেও বেশ মিষ্টি মেয়ে। সুইটির মা সচিবালয়ে চাকরী করে। বাবা ব্যবসায়ী। মায়ের চাকরীর সুবাদেই তাদের সরকারী কলোনীতে বাস।
রূপা তার সুবিধা মত সময়ানুযায়ী দুপুর আড়াইটায় পড়াতে যায়। যেদিন তার বিকেলে ক্লাস থাকে না সেই তিনদিন সে পড়ায়। ক্লাস শেষে একবারে ছাত্রী পড়িয়ে রুমে আসে। আর সুইটির স্কুল থাকে সকাল সাতটা থেকে দুপুর একটা।
রূপার সাথে সুইটির মায়ের একদিনই মাত্র দেখা হয়েছিল। ওই সময়ে মহিলা কখনোই বাসায় থাকে না। রূপার জন্য প্রতিদিনই টেবিলে নাস্তা সাজানো থাকে। সম্ভবত সুইটিই তার মায়ের কথামত সাজিয়ে রেখে দেয়। এক মাস পরে টাকাটাও পেয়েছে সময় মত। রূপার জীবনে উপার্জন করা প্রথম টাকা। টাকা পেয়ে বেশ পুলকিত মনে হচেছ তার। রেহানার সাথে ছুটির দিন দেখা করে নিজের হরষ পুলকিত মনের অবস্থা জানাল। তারপর নিজের উপার্জনের টাকা দিয়ে রেহানাকে নিয়ে বাইরে খেল। খেয়ে দেয়ে গল্প করে যার যার ঠিকানায় এসে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ল।
মাঝে মাঝে নীরা হোস্টেলের নাম্বারে ফোন করে রূপার খোঁজ নেয়। পদোন্নতি হয়েছে তার । এখন ঢাকাতে বদলির এর সম্ভাবনা আছে। আজকাল অসীম দিগন্ত কে নিয়ে বেশ সুখে দিন যাপন করছে সে। অসীমের সাথে থেকে পুরুষদের সম্পর্কে নতুন ধারনা জন্মেছে নীরার মনে। কোন পুরুষের মনে নারীর জন্য এতটা শদ্ধাবোধ থাকতে পারে তা অসীমকে না দেখলে বিশ্বাস হতো।

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ