[প্রথমপাতা]

 

 

 

ওইখানে যেওনাকো তুমি (১৭ পর্ব)
 
 

- মেহেরুন নেছা রুমা -

 
আরে মডেলিং তো খারাপ কিছু না। এখন অনেক ভদ্র আর শিক্ষিত মেয়েরাই এসব করছে। তুমি এত ভেব না তো রুপা। আর শোন ,তোমার এখনি কাউকে বলার দরকার নাই। এজন্য যে আসলে আমাদের অভিভাবকরা এখনো সেখানে পৌঁছেনি যে আমাদেরকে মডেলিং করতে অনুমতি দিবে। শুধু শুধু তাদেরকে বলতে যেয়ে সুযোগটাই হারাবে। শুরু করে যদি দেখ ভাল ,তখন বলবে। আর ভাল না হলে তো ছেড়ে দিবে। তাহলে আর বলাবলির কি দরকার।
রুপা বলল,বাবা মাকে না জানিয়ে আমি জীবনে কিছু করিনি। আমার সব কথা আমার মাকে বলি।
বুঝতে পারছি। আমি এজন্য বলতে না করি যে তারা তো তোমাকে অনুমতি নাও দিতে পারে।
অনুমতি না দিলে করব না। কিন্তু না জানিয়ে আমি যেতে পারব না।
আচ্ছা এক কাজ কর রুপা। তুমি তাদেরকে জানিয়ে দেও যে তুমি কাজ করবে। তারপর বাড়ি গিয়ে তোমার বাবা মাকে বলবে। যেমন করেই হোক অনুমতি নিতে হবে। আর তুমি তো আমাকে তোমাদের বাড়ি নিতে চেয়েছিলে তাই না ? তো এবারই চল আমিও যাই। আমি তাদেরকে ঠিক ম্যানেজ করে ফেলব।
কেন জানি কনিকার কোন কথা ফেলতে পারে না রূপা। ওরা ঠিক করল আগামী কালই বাড়ি যাবে। আর সকালে উঠেই ওখানে জানিয়ে দিবে যে রূপা রাজি আছে।
রূপা সকালে সেখানে গেল। সাথে কনিকাকে নিতে চেয়েছিল। কনিকা যায়নি। রুপা একবার ভাবে,কনিকারই ইচ্ছা ছিল মডেল হবে,তার আগ্রহের কারনেই রূপা সেখানে গেল। সবকিছু বলতে গেলে কনিকার জন্যই হওয়া। তারপরও মেয়েটার মনে এখন এতটুকুও আফসোস নাই যে সে হতে পারেনি আর রূপার হয়ে গেল। মনে মনে কনিকাকে আরো বেশি করে ভালো লাগে তার। মেয়েটার মনে কোন অহমিকা নাই। কিন্তু সে রূপার সাথে কেন আসল না। মনে হয় লজ্জায়ই আসেনি। আমাকে প্রকাশ করতে চায় না।
রূপাকে দেখেই রিসিপশনের মেয়েটা হাসিমুখে বসতে বলল। কোন একজনকে ফোন করতেই ভেতর থেকে টাই পড়া এক সুদর্শন যুবক এসে রূপাকে পথ দেখিয়ে নিয়ে গেল ভেতরে। কাচের আড়াল করা একটা রুমে ঢুকে সেদিনের কথা বলা সেই ভদ্রলোককে দেখতে পায় রুপা। রূপাকে বসতে বলেই ফোনে কফি’র কথা বলে ।
কফি খেতে খেতে বিস্তারিত আলাপ হয়।
রূপাকে একটা খামে পঁিচশ হাজার টাকার একটা চেক ধরিয়ে দিয়ে বলে,আমরা আমাদের কথা অনুযায়ী কাজ করতে পছন্দ করি। আপনাকে যা যা বলা হয়েছে তার সবই পালন করা হবে। কোন চিন্তা করবেন না ম্যাডাম। আপনার প্রথম কাজ হবে ইন্ডিয়াতে। যাওয়া হবে আগামী মাসের একুশ তারিখ। এর মধ্যে আমরা সব ব্যবস্থা করে ফেলব। আপনি আপনার ব্যক্তিগত কাজগুলি গুছিয়ে নিন। ওখানে সাতদিন থাকতে হবে আপনার। এর মধ্যে প্রয়োজনীয় পোশাক গুলো এর মধ্যে কিনে ফেলবেন।
জীবনে প্রথম এক সাথে এতগুলি টাকা দেখল রুপা । শুধু দেখেইনি নিজের হাতের মুঠোয় এখন পঁিচশ হাজার টাকার চেক। পঁিচশ হাজার টাকা তার কাছে অনেক। তাও নিজের উপার্জনে। ভাবতেই অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে । যদিও উপার্জনের সে এখনো কিছুই করেনি। কাজ শুরু না হতেই টাকা ! রূপার মনে একটু সংশয় , কোন ভুল করছে না তো সে ? কাউকে বলা হল না,আর তাদের টাকা নিয়ে নিলাম । এরপর ভুল হলে যে ফিরে যাব সেই উপায় কি ?
কিছুটা সংশয় কিছুটা উত্তেজনা নিয়ে রুমে এসে কনিকাকে সব খুলে বলল।
সব শুনে কনিকার উচ্ছাস দেখে কে ! মনে হয় চেকটা রূপা নয়,কনিকাই পেয়েছে। গড়গড় করে সব পরিকল্পনা করে যাচ্ছে সে।
লঞ্চে উঠে কনিকা শিশুদের মত আনন্দে নাচতে থাকল। এতবড় লঞ্চ সে জীবনেও দেখেনি। রূপাকে নিয়ে নিচতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত ঘুরে দেখল। পানি দেখে কনিকার একটু একটু ভয় লাগছে। রাতের অন্ধকারে লঞ্চ যদি টাইটানিক জাহাজের মত তলিয়ে যায় তাহলে নিশ্চিৎ মৃত্য।
রুপা বলে, এত সহজে এত বড় লঞ্চ ডুবে না। তবে দুর্ঘটনা ঘটতেই পারে। তার জন্য কি মানুষ লঞ্চে উঠবে না ?
তিন তলায় রেলিং এর পাশে ওদের কেবিন। রাতের বেশির ভাগ সময় তারা রেলিং এ বসে নদীর ঢেউ দেখেছে। আকাশ ভরা পূর্নিমার চাঁদ। বেছে বেছ পূর্নিমার রাতেই ওদের যাত্রা হল। না হলে বিশাল আকাশের বুকে এমন একটা ভরাট থালার মত চাঁদের সৌন্দর্য কি করে উপভোগ করত তারা !
কনিকার খুবই ভাল লাগছে। নদীর বুক চিড়ে ঢেউয়ের তালে দুলে দুলে লঞ্চ এগিয়ে যাচ্ছে। পাশ দিয়ে আরো দু একটি লঞ্চ যেতে দেখে আনন্দে হাত নেড়ে উঠে কনিকা। ছোট ছোট মাছ ধরার নৌকাগুলোতে এক ধরনের আলো জ্বলে মিটমিট করে। দেখলে মনে হয় নদীতে ভাসছে এক ঝাঁক আলোর পোকা। অনেক দূর তীর হতে ছোট ছোট বিদ্যুতের আলো তারার মত ঝিকিমিক করে জ্বলতে দেখা যায়।
সারা রাত দু’জনে বলতে গেলে না ঘুমিয়ে লঞ্চ ভ্রমন উপভোগ করেছে। শেষ রাতের দিকে ঘুমাতে যেয়েও কনিকার ঘুম আসছে না। তার কাছে মনে হচ্ছে দরজা বন্ধ করে ঘুমালে যদি কিছু হয়ে যায় ? যদি লঞ্চ ডুবে যায় ?
রূপারও ঘুম আসছে না। এতদিন পর বাড়ি যাচ্ছে সেই উৎসাহে তার চোখে ঘুম নাই। আর কয়েক ঘণ্টা পরই পৌঁছে যাবে । তাকে দেখে মা কেমন করবেন তার একটা ছবি যেন চোখের উপর ভাসছে।
যা দেখছে তাই দেখে খুশি হয়ে যাচ্ছে কনিকা। তাকে দেখে রুপারও ভাল লাগছে। কনিকাকে বেড়াতে এনে ভালই একটা কাজের কাজ হল। বাবা মাও কনিকাকে আপন করে নিয়েছে।
রাতের বেলা কথায় কথায় কনিকা কায়দা করে রুপার মডেলিং এ সুযোগ পাওয়ার কথাটি বলল । প্রথমে বাবা মা বিষয়টি বুঝতেই পারলেন না। পরে যখন বুঝলেন তখন কিছুতেই রূপাকে অনুমতি দিবেন না বলে জানালেন। রূপাও ঠিক করল তাদের মনে কষ্ট দিয়ে সে ওই কাজে যাবে না। কনিকা সেটা হতে দিল না। বুঝিয়ে সুযিয়ে তাদেরকে রাজি করিয়ে ফেলল।
একদিন কনিকাকে নিয়ে রূপা তুলিদের বাড়ি গেল। তার সবচেয়ে প্রিয় বান্ধবীর বাড়ি,যে বাড়িতে কত কত সময় পার করেছে তারা। কনিকাকে তাদের স্কুল জীবনের সব গল্প বলল। তুলির কথা,নীরা আপুর কথা,সাকিরা আপুর কথা,তাদের সংগঠনের কথা।
মেয়েকে বিদায় দেয়ার সব আয়োজন করে ফেলেছে রুপার মা। আবার কবে বাড়ি আসবে মেয়েটা। রূপাকে নিয়ে মায়ের গর্ব হয়। আশে পাশের দু’চার বাড়ির মধ্যে একমাত্র তার মেয়েই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা করছে। মেয়ে তো দূর ,কোন বাড়ির ছেলেও কলেজ পেরিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের মাঠে পা দেয়নি। আর দু বছর পরই রূপা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পাস করে বড় কোন চাকরী করবে। মেয়েটা বাবা মায়ের গর্ব।
মেয়ের কথা ভাবতে ভাবতেই মায়ের আবার ছেলে দুটির কথা মনে পড়ে যায়। কি আশা ছিল আর কি হল ! দুটি ছেলেই বাবা মায়ের মনে দু:খ দিল।
বরাবরের মতই- ঠিক মত লেখাপড়া করিস,খাওয়া দাওয়া ঠিক ভাবে করবি,টাকার কথা ভাববি না,যা মন চায় তাই কিনে খাস,সাবধানে চলাফেরা করবি,রাত বিরাতে হোস্টেলের বাইরে একেবারেই যাবি না,আরো কত কত উপদেশ বাবা মায়ের। সব বাবা মা ই সন্তানের মঙ্গল চিন্তায় উদ্বীগ্ন থাকেন। তাদের সকলের কথা প্রায় একই রকম।
ফিরতি পথে রূপাকে কিছুটা মলিন দেখা গেল। মাকে ছেড়ে আসতে প্রতিবারই তার মন খারাপ হয়ে যায়। কনিকার উৎসাহ আগের মতই আছে। এবার লঞ্চের রেলিং এ বসে রাতের প্রায় অর্ধেকটা তার বন্ধুর সাথে ফোনে কথা বলে পার করল। কথা বলতে বলতে প্রায়ই নেটওয়ার্ক সমস্যা করার কারনে লাইন কেটে যায়। আবার ফোন আসে আবার কথা চলে। রূপা পুরো রাত না ঘুমিয়ে তারাশংকরের ‘কবি’ পড়ে শেষ করল।

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ