[প্রথমপাতা]
|
ওইখানে যেওনাকো তুমি(১৪তম পর্ব)
- মেহেরুন নেছা রুমা
-
রূপা যখন সুইটিকে পড়ায়, পড়ার ঘরের পাশের ঘরের দরজাটা সব সময়ই বন্ধ
থাকতে দেখে। সুইটি ছাড়া ঘরে আর কাউকে সে কখনো দেখেনি।
একদিন রূপা দেখে সেই ঘরের দরজাটা খোলা। ভিতরে একজন মানুষের পা। বিছানার শেষ
প্রান্তে পা দুটি দেখা যাচ্ছে। হঠাৎ করে চোখ পড়ে যাওয়াতে রূপা সুইটিকে
জিজ্ঞাসা করে, ওই ঘরে কে ? সুইটি বলে,আমার বাবা ।
তোমার বাবা এ সময় বাসায় থাকেন ? কৈ এতদিন তো দেখিনি তাকে।
সে তো প্রতিদিনই এ সময় বাসায় থাকেন আপু। বাবা দুপুরে খেতে আসেন। খেয়ে তিনটা
চারটা পর্যন্ত ঘুমান। তারপর বের হয়ে আবার রাতে আসেন।
কোন কারন নেই ,তারপরেও কথাটি শুনে এবং সুইটির বাবাকে ঘরে দেখে রুপার কেমন
যেন ভয় লাগল মনে। সেদিন সে তাড়াতাড়ি হোস্টেলে ফিরে এল। রুমে বসে বিষয়টা
ভেবে নিজেই নিজের মনকে বুঝাল। সে কেন ভয় পাচ্ছে। সুইটির বাবা ব্যাবসায়ী
মানুষ । দুপুরে খেতে এসে বাসায় একটু বিশ্রাম নেয়। এটাতো তার সারা জীবনের
রুটিন। কখনো তো উনি নিজের ঘর থেকে বের হয়ে উঁকি দিয়েও দেখেনি। শুধু শুধু
তাকে ভয় পাবার কি আছে।
তার একদিন পর রূপা আবার পড়াতে গেল। সেদিনও সেই ঘরের দরজাটা একটু খোলা।
রূপার চোখ বারবারই সেদিকে চলে যায়। সুইটিকে বলল ,ওই দরজাটা বন্ধ করে দিয়ে
এস তো সুইটি।
সুইটি দরজাটা টেনে দিয়ে এসে নিজের চেয়ারে বসল।
এরপর থেকে আবার প্রতিদিনই দরজা আগের মতই বন্ধ থাকে। রূপা আর সেদিকে খেয়াল
করে না। তার মত সে পড়ায়। সময় হলে চলে আসে। এভাবে আরো একটা মাস পার হয়।
রূপার হাতে সুইটিই বেতনের টাকাটা তুলে দেয়। কারন তার মা তো অফিসেই থাকে।
রূমের অন্য সবার চেয়ে কনিকার সাথে একটু বেশি ভাব রূপার। মেয়েটার সঙ্গ রূপার
খারাপ রাগে না। আর কনিকাও তাকে ছাড়া কিছু বুঝে না।
একদিন কনিকা একটা খবরের কাগজ খুব মন দিয়ে পড়ছে। রূপা জিজ্ঞাসা করে ,কি
ব্যাপার কনিকা ? কি আছে ওর মধ্যে ? সেই কখন থেকে দেখছি চোখের সামনে ধরে আছ।
আছে একটা জিনিস। তোমকে বলা যাবে না।
কেন ? আমাকে বলা যাবে না কেন ? দেখাও তো কি ?
বলেই রূপা কনিকার হাত থেকে কাগজটা কেড়ে নিল। সেরকম কিছুই দেখতে পেল না। না
দেখে কনিকাকে জিজ্ঞাসা করল,কি দেখছিলে তুমি এখানে ? আমি তো তেমন কিছুই
দেখছি না ।
দেখছ না তুমি ? এই দেখ, বলেই একটা বিজ্ঞাপনের দিকে আঙ্গুল ধরে দেখাল কনিকা।
রূপা হেসে দিয়ে বলল,ওহ্ এই ব্যাপার ? এটা দেখছ এত মনোযোগ দিয়ে ? যাবে নাকি
সেখানে ?
তাই ভাবছি রুপা। চলো না আমরা দু’জনেই যাই।
ধ্যাৎ,এসব আমার পছন্দ না। আর কোনদিন ভাবিনিও এটা নিয়ে।
ভাবনি তাতে কি ? এখন ভাব । আরে আমরা গেলেই কি চান্স পেয়ে যাব নাকি বোকা।
তারপরেও নিজেদেরকে যাচাই করে দেখতে দোষ কি।
তোমার ইচ্ছা করলে তুমি যাও কনিকা। আমাকে দিয়ে ওসব হবে না।
-প্লিজ রূপা,না করো না। আমি ওটা দেখেই তোমার কথা ভাবছিলাম। তুমি সব দিক
থেকে পারফেক্ট। আর আমারও অনেক দিনের ইচ্ছা যে আমি মডেল হব। ইস টেলিভিশনের
পর্দায় আমাদেরকে দেখা যাবে। রাস্তার বড় বড় বিল বোর্ডে আমি হাসি মাখা মুখে
দাঁিড়য়ে থাকব।
আরে বাহ্ কনিকা। তুমি তো বিজ্ঞাপন দেখেই মডেল হয়ে গেছ। তুমিই পারবে ,তাই
তুমিই যাও। আমি এমন স্বপ্নও দেখি না আর যেয়ে কাজও হবে না।
রূপা ,তুমি না আমার সবচেয়ে কাছের বন্ধু। দেখ আমার একা যেতে সাহস হচ্ছে না।
তুমি গেলে আমি একটু ভরসা পাই। তুমি না হয় চান্স পেলেও চলে এস। আর আমি চান্স
পেলে তো বুঝ কি হয়ে যাব। ভাবতেই ভাল লাগছে আমার।
পত্রিকার পাতায় কোন এক মিডিয়াতে ‘নতুন মুখ’ চেয়ে বিজ্ঞাপন দেয়া হয়েছে।
আঠারো থেকে পঁচিশ বছরের মধ্যে সুন্দরী শিক্ষিতা মেয়েরা অংশগ্রহন করতে
পারবে। ইন্টারভিয়্যুতে টিকতে পারলে তাদেরকে নামী দামী কোম্পানীর পণ্যের
মডেল করা হবে ,নাটকে অভিনয়ের সুযোগ দেয়া হবে। একজন সুপার স্টার হতে যা যা
লাগে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে সব রকম সহযোগিতা করা হবে। মোট কথা টিকতে পারলে এক
লাফে আকাশের তারা হয়ে যাবে।
এসব লোভনীয় প্রস্তাব রূপাকে আকর্ষন করতে পারেনি। সে কনিকার উচ্ছাস কে হেসে
উড়িয়ে দিয়ে পড়ায় মন দিল। কিন্তু কনিকাকে দেখল ওটা নিয়ে বেশ ভাবছে। একটু পর
পর সেটা নিয়েই সে কথা বলতে আগ্রহী। মাঝে মাঝে আবার সেল ফোনে হুম হা বলে কথা
চলছে।
পরদিন রূপা যথা সময়ে সুইটিকে পড়াতে গেল। কলিং বেল বাজতেই ভেতর থেকে দরজা
খুলে দিল চল্লিশোর্ধ একজন পুরুষ। এর আগে কোনদিন রূপা তাকে দেখেনি। প্রথমে
একটু ভয় পেয়ে গেল। তারপর দরজার এ পাশে দাঁড়িয়েই বলল,সুইটি কি বাসায় নেই ?
আমি ওর টিচার। ভেতরের লোকটি দরজা থেকে সরে দাঁড়িয়ে বলল, আপনি এসে বুসন ।
সুইটি ভেতরেই আছে। আমি ওর বাবা। বলেই সে তার ঘরে চলে গেল। রূপা স্বভয়ে এসে
পড়ার ঘরে বসল।
বাসাটা কেমন ছিমছাম লাগছে। গা কাটা দিয়ে ওঠে যেন। এক মিনিট সময় কে বড় দীর্ঘ
মনে হতে থাকে। সুইটি কেন আসছে না এখনো। ভিতরে ভিতরে অস্থীর হয়ে উঠছে রূপা।
সুইটির বাবার ঘরের দরজা খোলার শব্দ পাওয়া গেল। ঘরের মধ্যে তার হাঁটা চলা
টের পাচ্ছে রূপা । খুবই অস্বস্তি লাগছে তার। লোকটাকে কি ডেকে জিজ্ঞাসা করবে
সুইটির আসতে কতক্ষণ লাগবে ?
মনে মনে ভাবছে ঠিকই কিন্তু ডাকার সাহস পেল না। কয়েক মিনিট পর সুইটির বাবা
রূপার সামনে এসে দাঁড়ায়। রূপা ভয়ে হঠাৎই চমকে উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে।
আরে বসুন ,ভয় পেয়েছেন আমাকে দেখে ?
ভয়টা কে যতটা সম্ভব আড়াল করে রূপা বলে, সুইটি কোথায় ,তাকে যে দেখছি না ?
আমি তাহলে উঠি আজ।
আরে বসুন না ম্যাডাম। সুইটি একটু বাইরে গেছে। দূরে নয়,এখানেই ওর এক
বান্ধবীর বাসায়। চলে আসবে এখনি ।
লোকটার চাহনি দেখে রুপার পেটের মধ্যে গুলিয়ে উঠে। রুপা আর এক মুহুর্তও বসবে
না বলে উঠে দাঁড়াল।
কোথায় যাচ্ছেন ম্যাডাম ?
আমি চলে যাচ্ছি । সুইটিকে বলবেন পরে আসব।
আরে এভাবে চলে যাচ্ছেন যেন আমি মানুষ নই,বাঘ জাতীয় কিছু। বলেই সে রুপার
প্রায় গা ঘেষে এসে দরজার কাছে দাঁড়াল। তারপর বলল,আপনি তো দারুণ একটা মেয়ে।
আপনার সাথে সময় কাটাতে আমার খারাপ লাগবে না। না হয় তার বিনিময়ে আপনাকে
পুষিয়ে দেয়া হবে। সুইটিকে যতটুকু সময় দেন ,আমাকে তার অর্ধেক দিলেও আমি তার
দ্বিগুন পে করব ম্যাডাম।
কথাটি বলে শেষ করার আগেই রূপা কষে এত চড় মারল তার গালে। তারপর দরজাটা ঠাস
করে খুলে বেরিয়ে গেল। সুইটির বাবা কিছু বুঝে উঠার আগেই রূপা সেই এলাকা পার
হয়ে জোরে জোরে পা ফেলে বড় রাস্তায় উঠে সোজা রেহানার রুমে চলে গেল। রাগে
ক্ষোভে ইচ্ছা করছে এখনি সুইটির বাবার মুখোশটা তার স্ত্রীর সামনে তুলে ধরে।
তার সাথে এই ব্যবহারের কথা অবশ্যই সেই মহিলাকে জানাবে সে। তবে রেহানাকে আগে
জানাতে হবে। কারন টিউশনিটা রেহানাই ধরিয়ে দিয়েছিল।
রেহানা রুমে নেই। এ সময় তার থাকার কথাও নয়। ঘরটা তার খোলাই থাকে। রূপাকে
এখানের সবাই চিনে ,তাই রূপা এলে কারো কিছু বলার নেই। রেহানার ঘরে শুয়ে বসে
রূপা অপেক্ষা করছে। মনটা ভীষণ রকম খারাপ হয়ে আছে। কী বিশ্রী কথা শুনাল
সুইটির বাবা। সুইি যে আজ পড়বে না একথা আগে জানানো উচিৎ ছিল তাদের। সুইটির
বাবা দুপুর বেলা ঘরে থাকে একথা আগে জানলে রূপা পড়াতে রাজিই হত না। এ মাসের
টাকাটাই গেল। তা যায় যাক। কিন্তু ওই বাসায় আর না।
সন্ধ্যের একটু পর রেহানা আসল। ঘরে ঢুকে রূপাকে দেখেই অবাক।
কি ব্যাপার রূপা ? আজ তো তোমার আসার কথা না। কোন সমস্যা ?
মন টা তোমাকে দেখতে চেয়েছিল আপু। তাই চলে এলাম।
কখন আসছ ?
অনেক আগে।
কেন আজ ক্লাসে যাওনি ?
না। ভাল লাগছিল না।
কেন ,বাড়ির জন্য মন খারাপ হ্েচ্ছ ?
আপু একটা কথা ছিল।
তা তো আমি আগেই বুঝেছি। কিছু না হলে ক্লাস বাদ দিয়ে তুমি আমার রুমে একা এসে
কেন বসে থাকবে ? কি হয়েছে বল ।
রূপা সুইটির বাবার কথা বলতেই রেহানা সুইটির মাকে ফোন করল ।
স্বামীর কীর্তিকলাপের কথা শুনে সে তো নাই। সে বলে,আমি তো সুইটির বাবাকে
বলেই এসেছিলাম যে সুইটির ম্যাডাম আসলে যেন বাইরে থেকেই বলে দেন যে সুইটি আজ
বাসায় নেই। সুইটিকে তো সে ই আমার অফিসে দিয়ে গেছে। ওকে আজ নাচের স্কুলে
ভর্তি করাবো বলে স্কুল ছুটির পর ওর বাবাকে দিয়েই আমার কাছে এনে রেখেছি। আমি
অফিস থেকে বের হয়ে ওকে নাচের স্কুলে ভর্তি করিয়ে তারপর বাসায় যাব। সে বাসায়
থাকবে বলে ,তাকে বলা হল ,ম্যাডাম আসার সাথে সাথে যেন বলে দেয় সুইটি আজ পড়বে
না। মেয়েটার কোন ফোন নম্বার থাকলে আমি ই তাকে জানিয়ে দিতাম। এখন তো আমার
লজ্জায় অপমানে মরে যেতে ইচ্ছা করছে। কতটা নিচু মন হতে পারে একজন পুরুষের।
একটু সুযোগ পেলেই মেয়ে মানুষের উপর ঝাঁপিয়ে পড়তে চায়। এখন তো এ কথা শুনে
তার উপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে রেহানা। সে কেন রূপাকে ঘরে বসাল। ভাগ্যিস
রুপা নিজেকে রক্ষা করতে পেরেছিল। রূপার সাথে মহিলা কথা বলে দু:খ প্রকাশ
করল। বলল,তুমি আমাকে ক্ষমা করো বোন। তোমার এই অপমান মানে আমার নিজের অপমান।
আমার স্বামীকে আমি ই চিনতে পারিনি। তোমার টাকাটা আমি রেহানার কাছে পাঠিয়ে
দিব।
ARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|