[প্রথমপাতা]
|
ওইখানে যেওনাকো তুমি (১৬ পর্ব)
- মেহেরুন নেছা রুমা
-
রূপাকে রুমে না পেয়ে কনিকা সারা হোস্টেল খুঁজল। যদিও রুপা কখনোই নিজের রুম
এবং স্টাডি রুম ছাড়া কোথাও যায় না। তারপরেও কনিকার মনের অস্থিরতা কমাতেই এই
চক্কর। পরে জানতে পারল রুপা রেহানা আপুর বাসায় আছে। আজ আর রাতে ফিরবে না।
কনিকার মনে টেনশন শুরু হয়ে গেছে। রূপা আবার রেহানাকে বলে না দেয়।
সারারাত অস্থিরতায় ঘুম হল না কনিকার। শেষ রাতে যখন ঘুমালো তখন আর সকালে
ডাইনিং এ যেয়ে নাশতা করার সুযোগ হল না তার। সেই ঘুম ভেঙেছে সকাল এগারোটায়।
উঠে দেখে রুপা বিছানায় শুয়ে মগ্ন হয়ে বই পড়ছে।
আরে কখন এলে রুপা ? তোমার অপক্ষোয় সারা রাত আমার চোখে ঘুমই আসেনি।
কেন ? আমাকে কি দরকার ?
দাঁড়াও এক মিনিট ,দেখাচ্ছি ; বলেই কনিকা তার ব্যাগটি খুলে ভেতর থেকে একটা
সাদা খাম বের করে রুপার হাতে দিল।
কি এটা ?
খুলেই দেখ না ?
রুপা কনিকার মুখের দিকে তাকিয়েই খামটা খুলছে । খামের ভেতরে একটা কম্পোজ করা
চিঠি। চিঠি মানে সেই ‘নতুন মুখ’চাওয়া প্রতিষ্ঠানটি রুপাকে সাতাশ তারিখ
বিকেল তিনটায় যেতে বলছে।
কনিকার চোখে মুখে আলোকচ্ছটা। উৎফুল্ল মনে রুপাকে বলে,তোমার ইন্টারভিয়্যু
নিবে রুপা। আমি তো নিশ্চিৎ যে তোমার হয়েই যাবে।
চিঠিটা খামে ভরতে ভরতে রুপা কনিকাকে জিজ্ঞাসা করে ,তোমার চিঠি কোথায় ?
সেটাও দেখি ? দু’জনকে কি একই সময়ে যেতে বলছে ?
কনিকা তখন একটু মন খারাপ করে বলে,আমারটা হয়নি ।
হয়নি মানে ?
হয়নি মানে প্রথম বাছাইতেই আমি বাদ পড়েছি।
মিথ্যা বলছ কেন কনিকা ? তোমার টা না হলে তোমাকে এত খুশি দেখাচ্ছে কেন ? আর
তোমার হবেই না কেন ? ঢং না করে তোমার কাগজ দেখাও।
সত্যি বলছি রুপা । আমার চিঠি আসেনি। তবে তোমার যে এসেছে তাতে আমি খুশি।
আরে আমিতো ওখানে যেতেই আগ্রহী নই। শুরু থেকেই তো তুমি লাফাচ্ছিলে। আর তোমার
জোর করাতেই তো আমি বায়োডাটা দিলাম । ওসব মডেল ফডেল হতে আমার কোন ইচ্ছাই নেই
। তুমি একা যেতে চাচ্ছিলে না তাই আমি দিলাম। এখন তোমর না হলে আমি গিয়ে কি
করব ? বাদ দেও ওসব কনিকা। পড়াশুনায় মন দাও। তোমাকে তো আমি পড়তেই দেখি না।
সারাক্ষণ মাথার মধ্যে মডেল হওয়ার ভাবনা।
দেখ রুপা আমার চিঠি আসেনি তাতে কি ? তোমাকে সিলেক্ট করেছে তুমি অবশ্যই
সেখানে যাবে। আমি আবার চেষ্টা করে যাব। এবার না হয়েছে পরের বার হব। কিন্তু
তুমি আমার জন্য কেন যাবে না ? তোমাকে যেতেই হবে। আর আমি নিশ্চৎ তুমি অবশ্যই
পাস করবে।
মানিক বন্দোপাধ্যায়ের ‘পুতুল নাচের ইতিকথা নিয়ে’ নিয়ে বালিশে হেলান দিয়ে
পড়ছে রুপা। গতকাল বইটি হাতে নিয়েছিল। কোন বই শুরু করে শেষ না হওয়া পর্যন্ত
রূপা স্বস্তি পায় না। কনিকা কিছুক্ষণ চোখ বুজে থাকে আবার উঠে রূপাকে মডেলিং
সম্পর্কিত নানান কথা বলতে থাকে। তারপর সাতাশ তারিখ রূপা সেখানে গেলে কি কি
হতে পারে সেসব নিয়ে কথা বলে। রূপা বারবারই বলে,কনিকা আমার তো সেখানে যেতেই
ইচ্ছা করছে না। আগ্রহটা তেমারই ছিল বেশি। তোমার যখন ইন্টাভিয়্যু কার্ড
আসেনি তো আমার যাওয়ার কোন মানে নেই। আমাকে আমার কাজ করতে দাও।
কনিকা রূপার কথা কিছুতেই মানবে না। রূপাকে যেন যেতেই হবে। বলে,আরে গিয়েই
দেখ না। গেলেই যে হয়ে যাবে এমন তো কোন কথা নেই। কনিকার অনেক জোরাজুরির পর
রূপা ঠিক করল ওর মন রক্ষা করতে হলেও একবার গিয়ে দেখবে ।
ঘুমাতে যেয়ে রূপার চোখে ঘুম আসছে না। মায়ের কথা আজ খুব বেশি মনে পড়ছে। রূপক
ভাইয়ের চিন্তায় মা অসুস্থ্য হয়ে গেলেন। অনেক দিন হল বাড়িতে যাওয়া হয়নি।
সাতাশ তারিখের পর দু’একদিনের মধ্যেই বাড়ি যাবে বলে ঠিক করল রূপা।
খুব বেশি বড় নয় ,তবে ছোটর মধ্যে বেশ ঝমকালো ডেকোরেশন । অফিসটি দেখে রূপার
পছন্দ হল। রিসিপশনে মডেল টাইপের একটা মেয়ে পটাপট ইংরেজি বলে। রূপাকে সেই
মেয়েই বসতে বলল। যে সোফাতে রুপা বসল তার সামনে কাচের টেবিলে কয়েকটা
ম্যাগাজিন। রূপা সেখান থেকে একটা ম্যাগাজিন হাতে নিয়ে উদ্দেশ্যহীন ভাবে
উল্টে পাল্টে দেখছিল। সাদা শার্ট কালো টাই পড়া প্রায় ছ’ফিট লম্বা এক
সুদর্শন যুবক এসে রূপাকে অন্য একটা কেবিনে নিয়ে গেল। রূপাকে পৌঁছে দিয়ে
ছেলেটা বের হয়ে গেল।
সাক্ষাৎকার পর্বে রুপাকে দেখেই সকলে মুখ চাওয়া চাওয়ি করল। রূপা বসে আছে
স্বাভাবিক ভাবে। ওদের হাসিমাখা মুখ দেখে আন্দাজ করল যে সে ইন্টারভিয়্যূতে
পাস করেছে। তারপরেও রূপার মনে কোন উচ্ছাস নাই।
মুখোমুখি বসা ভদ্রলোক রূপাকে উদ্দেশ্য করে বলল, আপনি তো পড়াশুনা করছেন ,তাই
না ?
জ্বি।
আমাদের এখানে কাজ করলেও আপনার পড়াশুনায় কোন সমস্যা হবে না। মনে করেন আপনাকে
আমরা নিচ্ছি। এখন আমাদের কথার সাথে আপনার মনের বোঝাপড়া করে আপনি যে
সিদ্ধান্ত নিবেন আমরা সেটাই মেনে নিব। আমাদের কাজ হল এখানে যে সকল ছেলে বা
মেয়ে আসে, তাদের কে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা দিয়ে একজন আন্তর্জাাতিক মানের
মডেল তৈরি করি। আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে দেশের নামি দামি কোম্পানির বিজ্ঞাপন
দাতারা চুক্তির মাধ্যমে বিজ্ঞাপনের মডেল নিয়ে থাকেন। এখানে আপনি যোগদানের
শুরুতেই একটা মিউজিক ভিডিওতে আপনাকে আমরা কাজ দেব।
আমি তো অভিনয় এর কিছুই জানি না।
সেটা আমাদের দেখার বিষয়। আপনার মধ্যে মডেল হওয়ার সব গুণই আছে। এখন শুধু
সেসব ফুটিয়ে তোলার কাজটা বাকি। আর সেটাই আমরা করে থাকি। আপনি মিউজিক ভিডিও
করার পরেই টেলিভিশনে পণ্যের মডেল হিসেবে আপনার পথ চলা শুরু হবে। এরপর
দেখবেন আপনার পরিচিতি দিন কে দিন বেড়ে যাচ্ছে। আপনার পড়াশুনায় কোন ক্ষতি
হবে না। এসব কাজে মাসে এক দু দিন সময় দিলেই হয়। আপনার প্রথম কাজেই মানে
মিউজিক ভিডিও করেই আপনি পাবেন পঞাশ হাজার টাকা। পাঁচটা গানের সাথে আপনার
অভিনয় থাকবে। এর পর আপনার পারিশ্রমিক আরো বাড়বে। আর প্রথম মাসের স্যালারির
ফিফটি পার্সেন্ট আমরা এ্যাডভান্স পে করি।
রূপা যতই শুনছিল ততই অবাক হচ্ছিল। একই সাথে অর্থ এবং খ্যাতি।
লোকটি রূপাকে বলল,আপনাকে দেখেই আমাদের পছন্দ হয়েছে । এজন্য যে আপনি একজন
মেধাবী ছাত্রী। আর এখানে আপনার মত মেয়েরা রাতারাতি উপরে উঠতে পারে। অল্পতেই
তারা সবকিছু বুঝে নিয়ে নিজের ক্যারিয়ার তৈরি করে নিতে পারে।
রূপাকে তারা আরো বলল,প্রথম যে কাজটি করা হবে তার শুটিং হবে দেশের বাইরে।
প্রথম ভারত,তারপর নেপাল। এই দুই দেশের কিছু দৃশ্য নিয়ে গানগুলির চিত্রায়ণ
হবে। পাসপোর্ট ,ভিশা ,যাতায়াত খরচ সহ আনুসাঙ্গিক যত প্রকার খরচ আছে সব
প্রতিষ্ঠান বহন করবে। রূপাকে শুধুমাত্র শুটিং উপযুক্ত কিছু পোশাক কিনতে
হবে।
সবকিছু শুনে রূপা মনে মনে মোটামুটি প্রস্তুত হয়ে গেল। তারপর একবার বলল,আমি
একটু ভেবে বলি।
রূপার কথা শুনে তারা বলল,ভাবেন ,তবে বেশি সময় নিবেন না। কারন আপনি না হলে
আমাদের অন্য মডেল নির্বাচন করতে হবে। সিদ্ধান্তের জন্য আপনাকে দু’দিন সময়
দেয়া যেতে পারে। এর মধ্যে হ্যাঁ/না প্লিজ জানিয়ে দিবেন।
রূপা রুমে আসতেই কনিকা ধরল। কি হয়েছে সেখানে তাকে সবকিছু বলতে হবে। রূপা
বেশ চিন্তিত মুখে কনিকাকে সব বলল। সব কথা শুনে কনিকা বলে ,এত ভাবাভাবির কি
আছে ? তুমি আজই জানিয়ে দাও , রাজি।
আজই জানিয়ে দিব কিভাবে ? বাড়িতে বলতে হবে ,রেহানা আপু নীরা আপুকে না জানিয়ে
আমি তাদেরকে বলি কি করে।
ARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|