প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

ওইখানে যেওনাকো তুমি
 
 

- মেহেরুন নেছা রুমা -

 
২৪ পর্ব

রুপা কর্তব্যের খাতিরে সবকিছু মানিয়ে নিচ্ছে। অভিকে রুপারও ভাল লেগেছে। মনের মধ্যে কথাটা চাপা রেখে অভির সাথে মন খুলে যেন মিশতেও পারছে না। নীরার কাছে জিজ্ঞাসা করেছিল অভিকে সেসব কথা খুলে বলবে কিনা। নীরা বলেছে,কখনোই না। ভুল করেও আবেগের বশবতী হয়ে এমন ভুল করিস না। ওই ঘটনা ভুলে যা। অভি ভাল ছেলে। তাকে নিয়ে সুন্দর জীবন যাপনে মনোযোগি হও।
হোস্টেল ছেড়ে রুপা অভির ভাড়া করা বাসায় উঠল। বিয়ের আগেই অভি মোটাটুটি ছোটখাট সুন্দর একটা বাসা সাজিয়ে ছিল। রুপার আগমনে সেই ছোট্ট নীড়ে যেন প্রান ফিরে এসেছে। ধীরে ধীরে রূপা আগের জায়গায় ফিরে যাচ্ছে। সংসার এবং পড়াশুনায় ব্যস্ত হয়ে উঠছে আবার আগের মত করে।
সংসারের কাজকর্ম কখনো তেমন করে করা হয়নি বলে প্রথম প্রথম সবকিছু নিয়ে কেমন বেসামাল হয়ে পড়ত রুপা। ভোর বেলা উঠেই হুলস্থুল লেগে যেত। সকালের নাস্তা,অভির অফিসে যাওয়া,রুপার ক্লাস এসব ঠিকঠাক রাখতে বিরাট রকম ধকল যেত তার উপর দিয়ে। তবে অভি তাকে সবকিছুতেই সহযোগিতা করে। রান্নাঘর থেকে শুরু করে পড়াশুনা পর্যন্ত অভি একজন নির্ভরযোগ্য বন্ধুর ভূমিকায় অবতীর্ণ হল রুপার জীবনে। ধীরে ধীরে রুপা বিগত দুর্ঘটনাকে ভুলে প্রানবন্ত হয়ে উঠল।
সপ্তাহের পাঁচদিন দু’জনেই ব্যস্ত থাকে। দ’ুদিন তারা নিজেদের জন্য দিনটাকে অন্যরকম করে সাজায়। প্রায় প্রতি ছুটির দিনেই অভি রুপাকে নিয়ে বাইরে যায়। রুপা অনুভব করে আসলে ভালবাসার চেয়ে মূল্যবান জগতে আর কিছু নেই। এত সুখ এত আনন্দ এতদিন রুপার জীবনে ছিল না। অভি তার জীবনটা কানায় কানায় পূর্ন করে দিয়েছে। একজন স্বামী যে এমন করে বন্ধু এবং প্রেমিক হতে পারে তা অভিকে না পেলে হয়তো রুপা বুঝতেই পারত না।
প্রতিটি দিনই ওদের এখন ভালবাসা দিবস আর প্রতি রাত হয় মধু চন্দ্রিমা । ভালবাসলে যে শরীরও কথা বলে রুপা তা বুঝতে পারে,তবে কাজগুলো ঠিক সে করতে পারে না ,যতটা সুচারু রূপে পারে অভি। অভি বলে,আসো তোমাকে আমি শিখিয়ে দিচ্ছি। রুপা লজ্জায় রাঙা হয়ে বলে,আমি এভাবে পারব না। আমাকে মাফ কর অভি। অভি রুপাকে জড়িয়ে ধরে উলট পালট করে দেয়। দুটি মন দুটি অন্তর দুটি শরীর একাকার হয় যায়। দাম্পত্য সুখের সম্পর্কটাকে রুপা ধীরে ধীরে চিনতে পারে এবং এক একটি সুক্ষè সময়টাকে হ্্রদয় দিয়ে অনুভব করে। অভির একটু খানি ছোঁয়ায় রুপার শরীর ও মনে সুখের বৃষ্টি ঝড়ে। রিনরিন করে ছন্দ জাগে মনে।
এক বরষার সন্ধ্যায় অভি অফিস থেকে বের হওয়ার আগে ফোন দিয়ে বলে, রুপা তুমি আধা ঘণ্টার মধ্যে তৈরি হও। আজ দ’ুজনে বাইরে খাব।
রুপা বলে,বৃষ্টির মধ্যে বাইরে যাবে ?
আরে বৃষ্টি বলেই তো যাব। বৃষ্টির দিনে ঘরে বসে থেকে কোন মজা নাই। আর মজা তো করব রাতে ঘুরে ফিরে এসে নতুন বৌ নিয়ে।
রুপা লজ্জায় রাঙা হয়ে ওঠে। বলে,ঠিক আছে আমি সেজু গজে তোমার অপেক্ষা করছি।
টেলিফোন রাখার আগে আর একবার বলে,এই শোন,
বল,
তুমি শাড়ী পড়বে কিন্তু। আর কপালে দিবে লাল টিপ। চুলগুলো ছেড়ে রেখ সোনা। খোলা চুলে তোমাকে দেখলে আমার নেশা ধরে যায়।
আর ?
আর। থাক আর কিছু না। বাকিটা রাতে বিছানায় হলেই হবে।
আবারো ফাজলামো কথা।
ঠিক আছে,লক্ষèী সোনা। এবার তুমি তোমার বরের জন্য বৌ সাজো। আর শোন..
আবার কি ?
তখন অভি টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে আদরের ঝড় তুলে দিল রুপার জন্য। তারপর বলে,পেয়েছ সোনা ?
হুম । এবার আমাকে ফোন রাখতে দেও। না হলে তোমার জন্য শাড়ি পড়ব কিভাবে, আর কপালে লাল টিপ পড়বই বা কিভাবে ? তোমার তো আসতে লাগবে মাত্র পনের মিনিট।
কথা শেষ করে রুপা ড্রেসিং টেবিলে বসে অভির মনের মত করে সাজতে শুরু করল। রুপা কখনোই নিজেকে নিয়ে নাজ গোজের ব্যাপারে আগ্রহী ছিল না। অতি সাদামাটা জীবন যাপন করা রুপা এখন অভির মনের মত করে নিজেকে সাজাতে চায় সব সময়।
আসলে পুরুষরা নারীকে যেভাবে দেখতে চায় নারী সেভবেই নিজেকে উপ¯থাপন করতে পছন্দ করে। সৃষ্টিকর্তার দেয়া চেহারাটাকে ঘষেমেজে নতুন রুপ দিতে ঘরে ঘরে নারী ব্যস্ত সময় পার করে শুধু মাত্র পুরুষের মনোরঞ্জনের জন্য। রুপচর্চায় একজন মেয়ে যে সময় এবং অর্থ ব্যায় করে তা যদি না করে কোন সৃজনশীল কর্মে ব্যায় করত, তাহলে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেত বহু গুনে। কিন্তু না করে উপায় নাই। বধুকে সুশ্রী না দেখলে স্বামীদের মন তৃপ্ত হয় না। কর্মক্ষেত্রে নারীরা সুশ্রী না হলে উর্ধ্বতন কর্তপক্ষের দৃষ্টি পড়ে না,দৃষ্টি না পড়লে নারীর পদোন্নতি হয় না। নারী নিজের রূপটাকে যতœ না করলে বিশ্বে এত রুপচর্চার প্রসাধনী উৎপন্ন হত না। রমরমা ব্যবসা করার মত এমন একটা বিষয় পেত না ব্যবসায়ীরা। কোন কর্মজীবি নারী সারা মাসে যা উপার্জন করে তার সিংহভাগ সে ব্যায় করে বিউটি পারলারে যাতায়াত এবং পোশাকে আশাকে। এটা সে করতে যেন বাধ্য হয়ে গেছে। কারন সময়টাই এখন সেদিকে চলছে । সবাই যেদিকে চলবে তাকে তো সেদিকেই চলতে হবে।


২৫ পর্ব

রূপার সাজ শেষ হওয়ার আগেই দরজায় বেল বাজল। অভি ঘরে ঢুকে বৌ কে দেখে তৃপ্তির হাসি হেসে জড়িয়ে ধরে কপালে চুমু খেল। বলল,পূর্বজন্মের কোন পূন্যের বলেই তোমাকে পেয়েছিলাম। যতই দেখছি ততই মুগ্ধ হচ্ছি । সৃষ্টিকর্তা তোমাকে নিজের হাতে বানিয়েছেন রুপা। অফিসের পোশাক ছেড়ে অভি রুপার শাড়ির সাথে মিলিয়ে জলপাই রং এর একটি টি শার্ট এবং জিন্স পড়ে নিল। এই কাজটা অভি সব সময়ই করে। বাইরে যাবার সময় রুপার সাথে মিলিয়ে পোশাক পড়বে সে।
বাইরে থেকে ঘুরে ফিরে এসে অভি রুপাকে বলল ,আমার ল্যাপটপটা নিয়ে আসোতো রুপা। রুপা ব্যাগ এনে দিয়ে ঘুমানোর আয়োজন করছে। বাইরে তখনো তুমুল বৃষ্টি হয়ে যাচ্ছে। অভি বলে ,আজকের আবহাওয়াটা হল রোমান্টিক আবহাওয়া। শুধু বলেই না সে। সুযোগ পেলেই বৌ কে নিয়ে রোমান্স শুরু করে দেয়।
অভি বলে ,সব কাজ গুছিয়ে তাড়াতাড়ি আসো। তোমার জন্য সারপ্রাইজ আছে।
কি সারপ্রাইজ ?
আরে আগে বলে দিলে সেটা আবার কেমন সারপ্রাইজ ? শুয়ে শুয়ে সারপ্রাইজ দিব।
রূপা রাতের পোশাক পড়ে লাইট নিভিয়ে অভির পাশে এসে বসল। অভি ল্যাপটপ পায়ের উপর রেখে বলে ,দারুন একটা ফিল্ম এনেছি। আসো দ’ুুজনে দেখি।
রুপা বলে,কি ফিল্ম ?
দেখই না আগে। এটা হল তোমার জন্য বিশেষ প্রশিক্ষনের ব্যবস্থা। বলেই অভি সিডি প্লে করল। প্লে করে রুপাকে জড়িয়ে কোলের মধ্যে নিয়ে আসল। বলল, তুমি নাকি এই ফিল্ম কখনো দেখনি। তাই আজ এই বৃষ্টির রাতে দুজনে মিলে দেখব। দেখে তুমি আমাকে সেভাবে আদর করবে। পারবে না ? বলেই রুপার গালে,কপালে,ঁেঠাটে আদর করল অভি।
রুপা বলে,না প্লিজ,এটা বন্ধ কর। আমি দেখব না। আমি এসব দেখতে চাই না।
কেন,দেখলে কি সমস্যা ? আচ্ছা বাবা,তোমাকে ওরকম করতে হবে না। আমি তো মজা করে বলছিলাম। দেখই না আগে।
অভিনেত্রীর নামের স্থানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী রূপা’র নাম চোখে পড়তেই রুপা কেঁপে উঠল । অভির কোলের উপর থেকে সরে সোজা হয়ে বসল। অভি বলে ,কি ব্যাপার ,নাম দেখে তুমি এমন চমকে উঠলে কেন ? আরে বোকা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কি তুমি একাই রুপা নাকি ?
নাম ধাম দেখানো হচ্ছে। রুপার শরীর ঘেমে উঠছে। কাঁপা কাঁপা কণ্ঠে অভিকে বলে ,প্লিজ ওটা বন্ধ কর। আমি দেখতে চাই না। ল্যাপটপ ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টা করল। অভি কিছু বুঝতে পারছে না। শুধুমাত্র নাম দেখে রুপা এমন করছে কেন। বলল,শান্ত হয়ে বসতো তুমি। কি হয়েছে তোমার ?
এর মধ্যেই ল্যাপটপের স্ক্রিনে রুপার ছবি ভেসে উঠল। রুপার দৃষ্টি সেদিক আর অভি একবার রুপার দিকে একবার ল্যাপটপের স্ক্রিনে তাকাচ্ছে।
বিষ্মিত অভি রুপার দিকে চেয়ে,
এটা কি রুপা ? এ কি তুমি ?
সৃষ্টিকর্তা তুমি মাটিটা ফাঁক করে দেও,আমি ঢুকে পড়ি। এমন অবস্থা এখন রুপার। মাথা ঘুরছে ,দুনিয়া ঘুরছে। শরীর কাঁপছে,ঘামছে,হ্্রদয় ধুক ধুক করছে ।
দুই হাতে রুপার কাঁধে ঝাকুনি দিয়ে অভি জিজ্ঞাসা করছে বারবার,এ কি দেখছি রুপা ? কথা বলছ না কেন ? তুমি আমাকে এমন ঠকালে ? কেন প্রতারনা করলে আমার সাথে রুপা ? এত জঘণ্য কাজ করতে তুমি ? ছি! অথচ মুখে দেবীর প্রতিচ্ছবি নিয়ে আমার সাথে দিনের পর দিন অভিনয় করে গেছ। ন্যাকা সেজেছ। ছি রুপা ! তুমি এত নীচ আমার ভাবতেই ঘৃনা করছে।
অভির একের পর এক কথার তীরে রুপার বুকের রক্ত ফিনকি দিয়ে ঝড়ছে। অভির পায়ের উপরা পড়ে বলে,বিশ্বাস কর ওটা ছিল আমার জীবনের একটা দুর্ঘটনা। আমি তোমাকে সব বলব । আমাকে একবার সুযোগ দাও অভি। আমি কোন অন্যায় করিনি। আমি পরিস্থিতির শিকার ছিলাম। আমি জানতেই পারিনি যে আমার সাথে কি হয়েছিল। ওই ঘটনা আমার জীবনে বড় একটা দুর্ঘটনা ছিল। তুমি আমার কথাটা একটু শোন।
অভি কোন কথা শুনতে নারাজ। শুনারও যেন আর কিছু নাই। যা আছে তা এখন শুধু দেখার। সামনে যা চলছে তা দেখার। নিজের বৌ এর অভিনয় করা এমন বিশেষ ফিল্ম দেখার ভাগ্য ক’জন পুরুষের হয় ? অভি টেনে টেনে পুরো ফিল্মটা শেষ করে উঠে শার্টটা গায়ে দিয়ে ঘর থেকে বেরিয়ে গেল। হাতে করে সিডিটা নিয়ে গেছে। রুপা কেঁদে কেটে শেষ। কি হবে এখন তাই ভাবছে। অভি কিছুতেই স্বাভাবিক ভাবে মেনে নিবে না এটা। কোন স্বামীই নিতে পারে না।
যেখান থেকে সিডি কিনেছিল অভি সেখানে গেল। কেনার সময় দোকানী বলেছিল,স্যার এটা নিয়ে যান , দারুন হিট ফিল্ম। একটা নিয়ে দেখেন। এই মডেলের দশটি সিরিয়াল আছে। ভাল লাগলে আরো নিয়েন।
অভি সেখানে গিয়ে বাকী নয়টি সিরিয়ালের একটা করে নিয়ে নিল। তারপর বাইরে থেকেই রুপার বাবা মাকে ফোন দিল যেন সকাল হবার সাথে সাথেই তারা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওয়ানা দেয়। পারলে আজ রাতেই।
বাসায় গিয়ে রুপার সাথে কোন কথা না বলে একে একে সবগুলি সিডি দেখল। সবগুলিতেই রুপার ভিন্ন ভিন্ন উপস্থাপন। রুপার কান্না আহাজারি কোনকিছুই এখন অভিকে স্পর্শ করছে না

 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ