[প্রথমপাতা]

 

 

 

ওইখানে যেওনাকো তুমি(১১ পর্ব)
 
 

- মেহেরুন নেছা রুমা -

 

 
তুলি আপু মরে গেছে ! তুলি আপু মরে গেছে ! বাক্যটা রূপার মনের দেয়ালে ধাক্কা খাচ্ছে বারবার। নিজের কানে শুনা কথাটি কিছুতেই বিশ্বাসযোগ্য মনে হচ্ছে না। ছেলেটাকে পাশ কাটিয়ে রুপা যখন তুলিদের ঘরের সামনে উপস্থিত হল ,তখন সেখানে মানুষের গম্ভীর গম্ভীর মুখ আর হিসপিস কথোপকথন চলছিল। ঘরের মধ্যে চিৎকার।
রূপা ঘরে ঢুকে দেখতে পেল তার প্রাণপ্রিয় বান্ধবীটি মাটিতে নিম্প্রান হয়ে পড়ে আছে। পাশেই মায়ের আহাজারি। একটু পরপর অচেতন হয়ে যাচ্ছে মা। রূপাকে এক নজর দেখেই তুলির মা এসে জড়িয়ে ধরলেন।
মা তুমি তো জান আমার তুলিকে। কিসের দু:খে সে আমাদের ছেড়ে চলে গেল। রূপা তুমি কি কিছু জানতে ? কিসের কষ্টে মা আমার চলে গেল ? কেন সে নিজের জীবন দিতে গেল ? কখনো তো কিছু বুঝতে পারিনি আমরা।
তুলির মায়ের শোক কে সান্ত্বনা দেবার মত সাধ্য এই মুহুর্তে রূপার নেই। সে নিজেই স্তব্ধ হয়ে গেছে। চিঠির কথাগুলো ভাসছে মনে।
তুলির বাবা এশার নামাজ পড়তে মসজিদে গিয়েছিলেন। সেখানে খবর পেয়ে ছুটে এসেছেন। সবাই রূপাকে জিজ্ঞাসা করছে রূপা কিছু জানে কিনা। তুলির এই আত্মহত্যার কোন কারন কেউ খুঁজে পাচ্ছে না।
তুলির মা বারবারই রূপাকে জড়িয়ে ধরে জানতে চাইছে তার তুলি কেন বিষপান করল।
রূপাকে তুলি বারবার বলে গেছে সে কথা যেন কোনদিন কাউকে না বলে। রূপা ভাবছে এখন অন্যকিছু। আত্মহত্যার খবর পেয়ে যদি পুলিশ চলে আসে তো অনেক প্রশ্ন এসে যাবে। যদি তুলির লাশের ময়না তদন্ত করতে চায় তো আসল ঘটনা বেরিয়ে পড়বে। তুলি, কেন যে এমন কাজটা করতে গেলি ? সমস্যাতো সমাধান হবেই না,বরং পরিস্থিতি এখন নানান দিকে গড়াবে।
রূপা মাথায় কিছু ঢুকছে না। ওই চিঠিটা যদি কারো হাতে পড়ে তো ? চিঠিটা রূপা কি করেছিল তাই তো এখন মনে পড়ছে না।
সত্যি সত্যি পুলিশ এসে পড়ল। পরিবারের কাছে ঘটনার বিবরণ জানতে চাচ্ছে তারা। তুলি নীরার নারী কল্যানমুখি সংগঠনের একজন সদস্য ছিল বলে এলাকার কাছে মোটামুটি পরিচিত ছিল। পুলিশ সাংবাদিক সব এসে জড়ো হতে থাকল।
রূপাকে ঘরে না পেয়ে রূপার মা যখন সারা বাড়ি খুঁজছিল, রাসেল তখন বাড়িতে ঢুকে খবরটা দিল । রূপার বান্ধবী তুলি আত্মহত্যা করছে। মা তখন ধরে নিলেন যে রূপা সেখানেই ছুটে গেছে। রাসেলকে নিয়ে মাও এসে হাজির হল তুলিদের বাড়িতে।
আশে পাশের লোকজন এসে বাড়িটা ঘিরে আছে। নানা জনে নানা কথা বলছে। শ্বশুর বাড়ি থেকে ছুটে আসছে শিলা। নীরাকে খবর দেয়া হয়েছে। তার আসতে আসতে সকাল হবে।
পুলিশ এবং সাংবাদিকদের এই আত্মহত্যার কারন সম্পর্কে কেউ কিছুই বলতে পারল না। যে কারনটা একমাত্র রূপা জানে তা কাউকে বলা সম্ভব না। কিন্তু রুপার ইচ্ছা করছে পুলিশের কাছে আসল ঘটনাটা বলে দেয়। নাদিমকে ধরিয়ে দেয়। প্রেমের জালে তুলিকে আটকে নাদিম তার সাথে যে প্রতারনা করেছে এবং তুলি সেটা সহ্য করতে না পেরেই আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়েছে। এখন নাদিম তো দিব্যি ঘুরে বেড়াচ্ছে। সে তার ভবিষ্যৎ উজ্জল করার প্রচেষ্টায় পরীক্ষার পাঠে মনোনিবেশ করে বসে আছে। একটি মেয়ের বিশ্বাসের সাথে খেলা করে সে নিজের জীবনকে সাজাতে ব্যস্ত। তাকে তো ক্ষমা করা মোটেই উচিৎ না। কিন্তু তুলি যে কাউকে সেকথা বলতে নিষেধ করে গেছে। এখন রূপা কি করতে পারে।
নারীর সাথে এই প্রতারনা আর কতকাল সহ্য করবে নারীরা। এমন করেই তো তারা সামজের মান রক্ষার্তে,পরিবারের মান রক্ষার্তে নিজের জীবন শেষ করে দেয়,অপরাধীর শাস্তি পর্যন্ত দেয়া সম্ভব হয় না। শুধুমাত্র মান সম্মানের কথা চিন্তা করে। এখন যদি তুলির ঘটনাটি প্রকাশ হয়ে যায়,সবার আগে তুলির চরিত্রেই কলঙ্ক জড়াবে। তারপর তুলির বাবা মাকে সমাজের নানা গঞ্জনা সহ্য করতে হবে, এমন মেয়ের পিতা মাতা বলে। নাদিমকে কেউ দোষারোপ করবে না। পুরুষের কোন দোষ থাকে না ,কলঙ্কও থাকে না। আর নারীদের এই চুপে থাকার ফলে,যুগ যুগ ধরে নারীদের আত্মহত্যার কারনেই এ সামজে পুরুষ চিরকালই পার পেয়ে যাচ্ছে। তাদের বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াতে হয় না। তাদের গায়ে কোন কালিমা লেপন হয় না। যদিও কিছু কিছু ক্ষেত্রে তাদের অপরাধ সমাজে প্রমানিত হয় তো তারা শরীর ঝাড়া দিলেই সেটা ঝড়ে পড়ে যায়। তারা আবার নতুন করে প্রেমে পড়ে , নতুন কাউকে ভালোবাসার কথা শুনায় , নতুন কারো শরীরের ভেতর বীজ বপন করে। তাদের কাছে নারী তো কেবল শস্যক্ষেত্র । যে শস্যক্ষেত্রে তারা তাদের ইচ্ছামত বীজ বপন করে ফসল ফলাতে চায়।
এসব ভেবে রূপার মন চাচ্ছে নাদিমকে তার অপকর্মের উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হোক। কিন্তু এ মুহুর্তে কিছুই বলা যাবে না। রূপা ভোর হবার অপেক্ষা করছে। নীরা আপু এসে পৌছঁলেই তাকে সব খুলে বলবে রূপা।
রূপা আগেও নীরা কে বলতে চেয়েছিল । কিন্তু তুলি বারবার না করাতে সে বলতে পারেনি।
স্বাভাবিক মৃত্যুতে মানুষের সহানুভূতি থাকলেও আত্মহত্যার বেলায় মানুষের মনে সহানুভূতির স্থলে কিছুটা চাপা সমালোচনা জড়িত থাকে। তার উপর যদি এই বয়সের কোন মেয়ে আত্মহত্যা করে তো সেখানে প্রথমেই মানুষের মনে একটা ধারনা আসে যে ,এটা প্রেম সংক্রান্ত বিষয়ই হবে। প্রেম করে নিশ্চয়ই কোন ছেলের সাথে অপকর্ম করেছে । এখন সেটা ঘুচাতেই আত্মহত্যা।
অপকর্ম তো সব সময় মেয়েরাই করে। ছেলেদের তো আর কোন অপকর্ম নেই। তাদের বেলায় সবই ‘কমর্’। একটি মেয়ে কারো প্রেমে পড়লে সেটা হবে মেয়েটার দুশ্চরিত্রতার প্রতিক। কোন ছেলে প্রেমের উছিলায় কোন মেয়ের শরীর স্পর্শ করলে সেখানে ছেলের কোন দোষ নেই। মেয়ের চরিত্র খারাপ। ছেলেটা প্রতারনা করলে মেয়ে যদি আত্মহত্যা করে সেখানেও মেয়ের অপরাধ। আর আত্মহত্যা না করে যদি প্রতিবাদ করে তাহলেও মেয়েটার বেহায়াপনা ।
একটি খবর প্রায়ই খবরের কাগজে আসে, প্রেমের স্বীকৃতি বা বিয়ের স্বীকৃতি পেতে প্রেমিকের বাড়িতে প্রেমিকার অবস্থান । কোন দিন ছেলেরা তা করে না। কারন ছেলেরা তো আসলে প্রেম করেই না। তারা তো সময় কাটায় ,নারী নিয়ে খেলা করে। যখন বিয়ের কথা আসে তারা গা ঢাকা দেয়। প্রেম করলেই যে বিয়ে করতে হবে এমন তো কোন কথা নেই। এটা তাদের বক্তব্য। মেয়েদের বুক ফাটা কান্নাকে তারা ‘ঘ্যানর ঘ্যানর’ বলে বিবেচিত করে।
একটা সময় তারা একটি মেয়ের কাছে একটু আবেগের জন্য পা থেকে মাথা পর্যন্ত তোষামোদ করে। যখন মেয়েটার আবেগ বেরিয়ে আসে তারা ধন্য হয়। নিজেদেরকে স্বার্থক বলে মনে করে। তারপর সেই আবেগে নিজেরা ভাসতে থাকে । অত:পর যখন মন ভিজে যায় তখন তারা ভিজা মন আর শরীর নিয়ে হাঁসের মত করে গা ঝাড়া দিয়ে ওঠে । কিন্তু মেয়েটার মনে যে আবেগ তারা সৃষ্টি করে তা কিন্তু আর কমে না।
তখন মেয়েদের এমন আবেগ আর ভালোবাসার কথা শুনলে ছেলেগুলি বলে,আবেগ দিয়ে জীবন চলে না। কন্ট্রোল ইওর ইমোশনস্,কন্ট্রোল ইওরসেলভ্। চাইলেই সব কিছু পাওয়া যায় না। আবেগ টাকে কমাও। না হলে কষ্টটা বাড়বে। অথচ তারাই এক সময় নারীর আবেগ প্রকাশে মরিয়া হয়ে ওঠে। প্রেমিকের প্রয়োজনেই প্রেমকিাকে আবেগি হতে হয়, আবার প্রেমিকের প্েরয়াজনেই প্রেমিককাকে আবেগ সংবরণ করে পাথর হতে হয়। আসলে মেয়েরা কাউকে ভালোবেসে যে কষ্ট পায় তার চেয়ে অধিক কষ্ট জীবনে আর কিছুতে পায় না। এসব জেনে শুনেও নারী বারবার পুরুষকেই ভালোবাসে। অথচ সেই পুরুষ কখনো তার ভালোবাসার মুল্যায়নই করল না। নারী চিরকালই উলুবনে মুক্তা ছড়ালো।
লাশের পাশে সারা রাত বসে থেকে রূপার মনে এমন হাজারো কথা আসছে যাচ্ছে । বাড়িটাকে ঘিরে নানা শ্রেনীর নানা বয়সের মানুষ। আত্মহত্যা নিয়ে আলোচনা সমালোচনা। হাজীর মেয়ের বিষপান। এটা যেন তুমুল সমালোচনার একটা বিষয়।
তুলির বাবা একদিকে কন্যা হারানোর শোকে পাথর ,অন্যদিকে মানুষের বহুমাত্রিক আলোচনায় জর্জরিত। লজ্জা অপমানে এই মুখ কাকে দেখায় আর কার কাছে লুকায় সে।
তুলির বাবা পুলিশকে বলেছে যে তার মেয়েকে নিয়ে কাটাছেড়া করুক সেটা তারা চায় না। আর আত্মহত্যার জন্য যেহেতু তারা কারো বিরুদ্ধে কোন মামলা করছে না ,তো কি দরকার লাশের ময়না তদন্ত করার। সকাল হলেই তারা মেয়ের দাফন কাজ সম্পন্ন করতে চায়।
নীরা যেহেতু পুলিশ বিভাগে চাকরী করছে তাই পুলিশ নীরার বাবার কথার প্রতি সম্মান দেখিয়ে সেখান থেকে চলে গেল। নীরাও ফোন করে বলছে ,আমি না আসা পর্যন্ত পুলিশ যেন কোন সিদ্ধান্ত না নেয় ।
নীরা বাড়িতে পৌঁছলে আর একবার সবার শোকের মাতম জেগে উঠল। মা বোনদের আহাজারিতে যে কারো চোখের অশ্র“ ধরে রাখা দায় । সে সাথে আছে ছোট্ট বেলার বন্ধু রূপা। সকলের আহাজারিতে আশে পাশের বাতাসও ভারি হয়ে উঠল।
সকাল সকালই দাফন কাজ সম্পন্ন হয়ে গেলে বাড়িটাতে যেন ঝিম পড়ে গেল। খানিক পর পর মায়ের আচমকা চিৎকার শুনা যায় । রূপা বাড়ি যায় আবার এখানে চলে আসে। চিঠিটা রূপার পড়ার টেবিলেই ছিল। ভাগ্যিস কারো হাতে পড়েনি। সেটা সে এখন হেফাজতে রেখেছে ।
পরদিন দুপুর বেলা নীরা রূপাকে ডেকে পাশে বসায়। রূপার মনটা দুরু দুরু করছে । সে নিশ্চিৎ যে নীরা আপু তুলির কথা জানতেই তাকে ডেকেছেন। নীরা আপু ভাল করেই জানে যে তুলির ব্যাপারে যদি কেউ কিছু জানে তো সেটা একমাত্র আমি ।
রূপার হাতটি ধরে উলটে পালটে নাড়ছে নীরা। চোখে পানি টলমল। রূপাও কেঁদে দিল । ভরাট কণ্ঠে নীরা বলছে ,রূপা এবার সত্যি ঘটনাটা আমাকে বল। আমি জানি তুই কিছু লুকাচ্ছিস। তোকেও আমি তুলি শিলার মতই ছোট বোন বলে জানি। আমাদের একটি বোন কার উপর অভিমান করে চলে গেল রুপা ? আমাকে বলবি না ?
আপু আমি তে তোমাকে বলতেই চাই। কিন্তু কি করে কি বলব তাইতো ভেবে পাচ্ছি না। আমি আগেই বলতে চেয়েছিলাম। তুলি আমাকে বারবার বাঁধা দিয়েছে।
এখন বল । কি হয়েছিল তুলির ? কেন সে আত্মহত্যা করল ? খুব সহজে তো কোন মেয়ে নিজের জীবন শেষ করে দেয় না। পৃথিবী ছেড়ে তখনি যেতে চায় যখন পৃথিবীটা তার কাছে মৃত্যুর চেয়েও অসহনীয় হয়ে ওঠে। নিশ্চয়ই এর পেছনে বেড় কোন কারন আছে।
নীরার কথা শুনে রূপা এক দমে গড়গড় করে সব কথা বলে গেল । চোখ দিয়ে তার অনবরত পানি ঝড়ছে।
সব শুনে নীরা বলল,আমি আগেই সন্দেহ করেছিলাম এমন একটা কিছু হবে। এছাড়া তো আমি অন্য কোন কারন খুঁজে পাইনি।
শয়তানটাকে বাঁচিয়ে রেখে তুলি কেন মরতে গেল ? এখন তো ওর উপরই আমার রাগ হচ্ছে। মরবি তো আগে সেটাকে মেরে নিতি। যার জন্য আমার বোনকে মরতে হল তাকে তো আমি বেঁচে থাকতে দিতে পারি না। ভালয়ই সে আমার মামাতো ভাই হোক বা অন্য কিছু । তার কৃতকর্মের সাজা তাকে পেতেই হবে।
তুলির মৃত্যুর খবর শুনে আত্মীয় স্বজন সব ছুটে এসেছিল। মামাবাড়ি থেকেও সবাই এসেছে। কিন্তু একমাত্র নাদিম আসেনি। এখন সেটা নীরার কাছে স্পস্ট । দুর্বল পুরুষরাই মেয়েদের সাথে প্রতারনা করে। ওকে আমি ওর উপযুক্ত শাস্তি দিয়েই ছাড়ব রূপা।
পরীক্ষার ফল প্রকাশ হতেই রূপাদের বাড়ি আনন্দের বন্যা বয়ে যেতে লাগল। যেমনটা আশা করছিল ঠিক সেরকমই রেজাল্ট হয়েছে রূপার। মনটা খারাপ লাগছে তুলির জন্য। সে আসলেই পাস করতে পারেনি। পরীক্ষায় যে তার প্রস্তুতিই ছিল না ফলাফল দেখেই তা বোঝা যায়।
নীরা নাদিমকে শাস্তি দিতে পেরেছিল। রূপার কথা শুনেই নীরা নাদিমের বিরুদ্ধে মামলা করেছিল। তুলির হাতে লেখা রূপাকে দেয়া সেই চিঠিটা নাদিমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য প্রমানের জন্য যথেষ্ট ছিল। মামলা হবার পর লাশের ময়না তদন্তের জন্য কবর খুড়ে লাশ তুলতে হয়েছিল। এক সময় ঘটনাটি সর্বত্রই ছড়িয়ে পড়ল। নীরা তার বাবা মাকে বুঝাল , মানুষ জানলে আর কী হবে। হয় তো আমাদের নিয়ে সমালোচনা হবে,সমাজে আমাদের বদনাম হবে। কিন্তু অপরাধীকে এভাবে ছেড়ে দিলে সে আবারো এমন ঘৃণ্য কাজ করে বেড়াবে। আইনের লোক হয়ে একজন অপরাধীকে নাকের ডগা দিয়ে ঘুরে বেড়াতে দেখবে এমনটা নীরা কল্পনাও করতে পারে না। তুলি তার বোন না হয়ে যদি অন্য কোন মেয়ে হত তাহলেও সে তাই করত।
নাদিমের আর বিএ পরীক্ষা দেয়া হয়নি। তার আগেই তাকে জেলে ঢুকতে হয়েছিল এবং যাবজ্জীবন কারাদ্বন্ড ভোগ করতে হবে তাকে।
কথা ছিল নীরা এ মাসে বাড়ি আসলে তার সাথেই রূপা ঢাকা যাবে । শেষ পর্যন্ত নীরা আর আসতে পারেনি। রূপাকে চিঠি লিখে দিয়েছে এবং তাতে বিস্তারিত উল্লেখ আছে যে ঢাকা যেয়ে কোথায় কি করতে হবে। নীরা এক দিনের ছুটি নিয়ে ঢাকা আসবে এবং রূপার সব ব্যবস্থা করে দিয়ে যাবে। রূপার প্রস্তুতি ভাল । সে নিশ্চিৎ যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অবশ্যই ভর্তির সুযোগ পাবে। এই ক’মাস রূপা পড়াশুনা ছাড়া কিছুই করেনি।
নীরার এক বান্ধবী নীলক্ষেত কর্মজীবি মহিলা হোস্টেলে থেকে একটি এনজিও তে চাকরী করে। প্রথমে রূপা সেখানে উঠে বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে ভর্তি পরীক্ষা দিবে। নীরার বান্ধবীর নাম রেহানা। তাকে আগে থেকেই বলা আছে সবকিছু। সে রূপার জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থাই করবে।
বাড়ি থেকে দূরে কোনদিন কোথাও যেয়ে থাকেনি রূপা। মাকে ছেড়ে থাকতে হবে ভেবে তার ভীষণ মন খারাপ হয়েছিল। মাও মেয়েকে এতদূর একা কিভাবে যেতে দিবেন তাই নিয়ে চিন্তিত। কত রকম সমস্যা হয় মেয়েদের । পরিবার ছাড়া একটি মেয়ে কিভাবে থাকবে। তারপরেও নীরা ভাল ভাবে বুঝিয়ে দিয়ে গেছে । বড় হতে হলে এটুকু ত্যাগ স্বীকার তো করতেই হবে। মায়ের আঁচলের নিচে বসে থাকলে ছেলে হোক মেয়ে হোক কেউই জীবনে কিছু করতে পারে না। আর রূপা তো পড়াশুনার উদ্দেশ্যেই যাচ্ছে। রূপার মত লক্ষèী মেয়েকে নিয়ে এত কিছু ভাববার কোন কারন নেই।
সবকিছু গুছিয়ে নিয়েছে রূপা। প্রথমবার ঢাকা যাচ্ছে ,তাই বাবা কিছুতেই একা ছাড়ল না। সে রূপাকে হোস্টেলে পৌঁছে দিয়ে তারপর যাবে। রূপাও সেটাই ঠিক হবে বলে মনে করল।
ঢাকা পৌঁছে নীরার দেয়া ঠিকানা মত ওরা রওয়ানা হল। সহজে পৌঁছেও গেল সেখানে। আগে থেকেই রেহানা হোস্টেল কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে রেখেছিল যে তার দু’জন গেস্ট আসবে। যথা সময়ে রূপা তার বাবাকে নিয়ে পৌঁছলে রেহানা তাদের সাথে এসে দেখা করে। জিনিস পত্র সব রেহানার রূমে রেখে ওরা তিনজন বাইরে যেয়ে নাশ্তা করে। সেখানে রূপার বাবার সাথে প্রয়োজনীয় কথা শেষ করে তাকে সেখান থেকেই বিদায় দেয়া হয়। তারপর রূপাকে নিয়ে রেহানা হোস্টেলে ফিরে আসে।
সকাল দশটার দিকেই নীরা এসে হোস্টেলে পৌঁছে এবং রূপাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়ে। ভর্তি ফরম সংগ্রহ করে এক দিনেই রূপা সেসব জায়গায় ফরম জমা দিয়ে আসে। বারবার অচেনা শহরে বের হয়ে কাজ করবে ,তার চেয়ে এক দিনেই অনেক কাজ করে রাখলে অনেকটা নিশ্চিন্ত থাকা যায়। তাছাড়া নীরা আপুকে আবার আজকের পর পাওয়া যাবে না।
রূপা এখন পরীক্ষাগুলোর জন্য ঘরে বসে রাত দিন পড়ছে। রেহানা সকাল আটটায় বের হয় ,ফিরে আসে সন্ধা সাতটার পরে। রূপার কোন সমস্যা হচ্ছে না। বরং এখানে পড়াশুনা করার জন্য উপযুক্ত একটা পরিবেশ পেয়েছে । এত বড় অচেনা অজানা একটা শহরে রূপা যে এমন সুন্দর একটা থাকার জায়গা পাবে সেটা ভেবেও দেখেনি আগে। সারাদিন কেউ থাকে না বলে সে একা একা মনোযোগ দিয়ে পড়াশুনা করতে পারছে ।
প্রতি রাতে রেহানা অফিস থেকে ফিরে এলে নীরা ফোন করে রূপার খবর নেয়।
সবগুলো পরীক্ষাই শেষ হয়েছে। মোটামুটি ভালই হয়েছে পরীক্ষাগুলো। রুপার প্রথম পছন্দ হল বুয়েট। তারপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। কিন্তু সেখানে পছন্দের বিষয় না পেলে তখন অন্যটা ভাবতে হবে। মেডিকেল এবং জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়েও পরীক্ষা দিয়েছে। এখন শুধু রেজাল্টের অপক্ষো।

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ