[প্রথমপাতা]

 

 

 

ওইখানে যেওনাকো তুমি (১৯ পর্ব)
 
 

- মেহেরুন নেছা রুমা -

 
মনটা কেমন অস্থির লাগছে রুপার। ভয়ও করছে। জেসিকা মেয়েটি রোবটের মত আচরণ করছে। মনে হচ্ছে সে তার ডিউটির বাইরে কিছু জানে না। তার কথাবার্তা কেমন অস্পষ্ট মনে হয়। সাথে কোম্পানির যে দু’জন লোক আসছে তারা কোথায় আছে জিজ্ঞাসা করেও মেয়েটির কাছ থেকে কোন উত্তর পায়নি রূপা। ভয়ে কেমন গা ছমছম করছে।
রুপা বলল,আমি কি বাংলাদেশে একটা ফোন করতে পারি ?
পারেন,তবে এখন না। আপনার স্যার আসুক, সে ই আপনার সাথে দেশের যোগাযোগ করিয়ে দিবেন।
মেয়েটির সাথে কথা শেষ করে রূপা ওয়াশ রুমে ঢুকল। গরম পানিতে আরাম করে গোসল করল। গোসলের আগে উপরে নিচে আশে পাশে খুটে খুটে দেখল কোথাও কোন লুকানো ক্যামেরা ট্যামেরা ফিট করা আছে কিনা। রেহানা আপু একদিন এমন একটা গল্প করেছিল , øানাগারে লুকানো ক্যামেরা দিয়ে øানরত মেয়েদের ভিডিও করে অসুস্থ্য মস্তিস্কধারী নরপশুরা সেসব ইন্টারনেটে ছড়িয়ে দেয়। যারা এসব ঘৃণ্য কাজ করে তারাতো অসুস্থ্য এবং বিকৃত মস্তিস্কের অধিকারী ছাড়া কিছু না। তবে এখানে সেরকম কোন কিছু নজরে পড়ল না রুপার।
ভয়টা ক্রমেই বেড়ে উঠছে। কোন বিপদ হবে না তো ? কেন জানি বারবার মাকে খুব মনে পড়ছে।
রুপা যখনি কোন সংকটে পড়ে চোখ বন্ধ করে মা-বাবাকে মনে করে। এখনো সে তাই করল আর মনে মনে বলল,মা আমার জন্য দোয়া কর। বাবার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করছে। কখন আসবে অফিসের লোকজন ,আর কখন কথা বলতে পারবে।
একটু শান্ত্বনা আছে মনে। এখন পর্যন্ত যা যা হচ্ছে ঢাকা থেকেই এরমকম হবে বলে বলা ছিল। বাকিটাও যেন ঠিকঠাক হয়। কেমন মন সায় দিচ্ছে না। কথা বলারও একটা মানুষ নেই। মনে হচ্ছে না এসেই ভাল হত।
øান সেরে বাইরে আসতেই টেবিলে খাবার সাজানো দেখে রূপার খিদে লেগে গেল।
জেসিকা বলল ,খেয়ে নিন রুপা।
খেতে বসে সব কিছুই মজা পাচ্ছে রুপা। রান্নাটা খারাপ লাগেনি। ইন্ডিয়ার খাবারের সাথে বাংলাদেশের খাবারের খুব একটা পার্থক্য মনে হয়নি তার। নাকি তার জন্য বাংলা খাবারের ব্যবস্থা করা হয়েছে। সেটাও হতে পারে ।
খাওয়া শেষে মাথাটা কেমন ঝিমঝিম করছে। ক্লান্তি অবসাদে চোখের পাতা গুটিয়ে আসতে চাইছে। এখনি শুয়ে একটা লম্বা ঘুম দিতে পারলে ভাল লাগত।
বিছানার সাথে হেলান দিতেই রূপার চোখে ঘুম এসে ভর করল।
চোখের উপর লাইটের আলোতে ঘুম ভাঙল রূপার। এ কোথায় আছে সে ! এরা কারা ? ঘরে এত আলো কেন ?
চোখ খুলে বুঝতে চেষ্টা করল, সে কি স্বপ্ন দেখছে নাকি সত্যি !
ঘরে অচেনা চার পাঁচজন পুরুষ লোক দেখে ভয়ে লাফিয়ে উঠে সে। এক লাফে বিছানা থেকে নেমে বলল, আপনারা কারা ? এখানে কি করে আসলেন ? জেসিকা ম্যাম কোথায় ?
কথাগুলো কেমন জড়িয়ে যাচ্ছে তার । চোখে কেমন নেশা নেশা ভাব। দুনিয়াটা নিয়ে রুপা যেন উলট পালট খাচেছ।
লোকগুলি রূপার কথার উত্তর না দিয়ে একজন আর একজনের দিকে তাকিয়ে হাসছে। ওদের হাসি দেখে রুপার হৃদয়টা ধুকধুক করে উঠল। কিন্তু সে এমন র্দ্বুল হয়ে পড়ছে কেন ?
মধ্য বয়স্ক একজন স্বাস্থ্যবতী মহিলা রূপাকে একটা চেয়ার এগিয়ে দিয়ে বসতে বলল । অনর্গল পান চিবাচ্ছে সে মহিলা। পান চিবাতে চিবাতে রুপার পোশাক পরিবর্তন করে একটা চাদরের মত কাপড় গায়ে জড়িয়ে নিতে বলল । রুপা কিছুতেই পোশাক খুলবে না এবং ওই চাদর পড়বে না বলে নিজের পোশাক ধরে রাখল শক্ত করে।
মহিলা হঠাং করে ঠাস করে রুপার গালে এক থাপ্পর বসিয়ে দিল। তারপর নিজেই জোর করে পোশাক খুলে উপরে কোন রকম চাদরটা জড়িয়ে রাখল ।
মাথা ভনভন করে ঘুরছে রূপার। ভয় আতংক সহ শরীরের এই নেশা নেশা দূর্বল ভাবের উপদ্রবে সে কি করবে না করবে কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না।
মহিলাটিকে বলল,আপনি কে ? ওরা কারা? আমাদের স্যার কোথায় ? আমাকে সাজাচ্ছেন কেন ? আমি বাবার সাথে কথা বলব।
হবে হবে সব হবে। এখনি হবে। চুপ করে আগে বস। শুটিং এর আগে সাজাতে হবে না ?
নেশা করা মানুষের মত রূপা চেয়ারে বসে টলতে থাকল। মহিলাটি বলছে, মেকআপের সময় এসব না খুললে সারা শরীরে মেকআপ করব কিভাবে ?
রুপা কিছু একটা করতে চাচ্ছে,মহিলাকে একবার বাঁধা দিয়ে মার খেয়ে চুপসে গিয়ে বসে আছে শিশুদের মত। শরীরে কোন শক্তি কাজ করছে না। মনটাও কাজ করছে না। কেমন বমি বমি লাগছে।
কোথাকার রুপা কোথায় এসে কিসের মধ্যে পড়েছে তা ভাবতে গেলে পাঠকদের হায় হায় করা ছাড়া বলার কিছু নাই। এখান থেকে উদ্ধারের কোন ব্যবস্থাও নাই। আর সে এখন যে অবস্থায় আছে তো উদ্ধার তো দূরের কথা,সে যে গর্তের মধ্যে পড়ে গেছে তাইতো তার জানা নাই।
এখন সে যেখানে আছে সেটা না কোন মডেলিং বানানোর কারখানা,না কোন বিজ্ঞাপন সংস্থ্যা,না কোন শুটিং স্পট। যে ফাঁদে রূপা পা দিয়েছে তার গভীরতা যে কতখানি তার সীমা পরিমাপের সাধ্য রূপার পুরো পরিবারেরও নাই। এরা আসলে কোন মিডিয়ার সাথে সংযুক্ত কোন প্রতিষ্ঠান নয়। ঢাকাতে যে প্রতিষ্ঠানের বিজ্ঞাপন দেখে রুপা এবং কনিকা মডেল হওয়ার স্বপ্নে দেখেছিল ,সে প্রতিষ্ঠান আসলে অন্য জিনিস। মেয়েদের মডেল বানানোর সুযোগ দেয়ার নাম করে এরা বছরের পর বছর ধরে এক ধরনের ঘৃন্য ব্যবসায় মেতে আছে। কামিয়ে নিচ্ছে লাখ লাখ টাকা। ধ্বংশ করে দিচ্ছে এক একটা নারীর জীবনের সব স্বপ্ন, আশা, ভরসা, প্রতিষ্ঠা,মান সম্মান সবকিছু। এমনকি কেউ কেউ মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে পাগল প্রায় হয়ে পথে পথে ঘুরে বেড়ায়। কেউ আবার যে পথে তাদের জীবনে সর্বনাশ এসেছিল বাধ্য হয়ে সেপথে নিজেকে সমর্পন করে দেয়।

 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ