[প্রথমপাতা]

 

 

 

ওইখানে যেওনাকো তুমি (২১তম পর্ব)
 
 

- মেহেরুন নেছা রুমা -

 
তারপর কি হয়েছিল স্পষ্ট মনে করতে পারছে না রূপা। কুয়াশার মত কিছুটা অস্পষ্ট মনে ভেসে উঠছে ঘরে কয়েকজন অচেনা পুরুষ মানুষ দেখতে পেয়েছিল ।
অচেনা পুরুষের কথা মনে পড়তেই রূপার শরীর শিউরে উঠল ভয়ে।
ক্যালেন্ডারে তারিখ দেখল। পঁিচশ তারিখ আজ। তার মানে একুশ থেকে পঁিচশ এই পাঁচ দিনের স্মৃতি তার মাথায় নাই ! সে ইন্ডিয়া গিয়েছিল একুশ তারিখ। আজ পঁচিশ। এই ক’দিন তার সাথে কি হয়েছিল ? সর্বনাশ ! এ আমি কি করেছি ! নিজের শরীর অনুভব করতেই রূপা নিজের সর্বনাশের স্পষ্ট প্রমান পেল। সারা শরীর কাঁপিয়ে জ্বর আসল তার। হাউ মাউ করে কাঁদতে থাকল রূপা।
রুমে এখন রূপা ছাড়া কেউ নেই। যা বুঝার বুঝে গেছে সে। সব শেষ হয়ে গেছে তার । মডেলিং ফডেলিং আসলে কিছু না। পুরো বিষয়টাই ছিল পাতানো খেলা। এখন তার কি হবে ! কাকে বলবে এই সর্বনাশের কথা ! কী করে সে এই কলঙ্ক নিয়ে বেঁচে থাকবে !
রুপা জেনেছে যে তার জীবনের সবচেয়ে বড় সর্বনাশটি হয়ে গেছে। তবে এখনো এটা জানেনি যে সর্বনাশ শুধু ওই পর্যন্তই সীমাবদ্ধ ছিল না। সবকিছু রেকর্ড করে যে দলিল স্বরুপ সিডি বানানো হয়েছে এবং এগুলি এখন মার্কেটে বেরিয়েও পড়েছে সে খবর তার জানা নেই।
সারা হোস্টেলে কনিকাকে পাগলের মত খুেঁজ বেড়াল। কোথাও পেল না। অন্য মেয়েদের জিজ্ঞাসা করতেই তারা বলল,কনিকাকে গত তিন দিন ধরে কেউ দেখেনি। কথাটা শুনেই তার সন্দেহ হল। খাটের নিচে কনিকার ব্যাগটি খুঁজতে গিয়ে দেখে সেটি খালি পড়ে আছে। ভিতরে কিছু নেই। অফিস কক্ষে গিয়ে কনিকার কথা জিজ্ঞাসা করতেই তারা কেউ খোঁজ দিতে পারল না। কনিকার যে মোবাইল নম্বরটা রূপা জানত সেটাতে ফোন দিতেই বন্ধ পাওয়া গেল। কেন যে এত বোকা হয়ে গিয়েছিল সে । কেন বলি বলি করেও রেহানা আপুকে বিষয়টা বলতে পারল না। ওখানে যাওয়ার আগে রেহানা আপুকে বলতে চেয়েছিল। তাও কনিকা বলতে দেয়নি। কেন যে তখন কনিকার কথা এমন করে শুনেছিল। এখন কোন কিছু ভাবার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে রুপা। মাথা নষ্ট হবার পালা।
কনিকা বাংলা বিভাগের ছাত্রী ছিল। রুপা সেখানে যেয়ে কনিকাকে পেল না। আসলে কনিকাতো কখনোই ক্লাসের ধারে কাছেও যায়নি। তা না যাক,তার নাম ধাম তো থাকবে ওই বিভাগের খাতা পত্রে।
কিন্তু না,কোথাও কনিকার কোন হদিস মিলল না।
আসলে কনিকার হদিস মিলবেও না। সে তো এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীই না । সে কোন বিশ্ববিদ্যালয়েরই ছাত্রী না।
এখন রুপার কাছে একটু একটু করে সব পরিস্কার হচ্ছে। কি ভুলটাই সে করেছে ! কনিকাকে সে চিনতেই পারেনি। অনেকবার কনিকার চলা ফেরা সন্দেহ জনক মনে হলেও রূপা কেন তাকে বুঝল না। নিজের মাথার চুল ছিড়ে ফেলতে ইচ্ছা করছে এখন।
কনিকা ছিল ওই মিডিয়ারই সহযোগী। তার কাজই ছিল কোন একটা সুন্দরী মেয়েকে টার্গেট করে তার সাথে যে করে হোক সম্পর্ক সৃষ্টি করা। রূপাকে টার্গেট করার পর কনিকা বাংলা বিভাগের ছাত্রী সেজে রুপার রুমে আশ্রয় নেয়। এ কাজে যেখানে যেরকম কাগজ পত্র দরকার কনিকা সবই ঠিক করেছিল । এ লাইনে সে দু বছর পর্যন্ত কাজ করে। কোথায় কি করতে হবে তার সব জানা আছে । তাকে তো ওনারাই সবকিছু গুছিয়ে দেয়। বিনিময়ে কনিকা মোটা অংকের টাকা উপার্জন করে। একটা মেয়ে ধরিয়ে দিতে পারলে কনিকার ছয় মাস বসে খাওয়ার মত টাকা উপার্জন হয়ে যায়। এবারের শিকার সবচেয়ে দামী। রুপার জন্য সে তার রেট আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। আর তারাও দিতে রাজি ছিল। কারন রূপাকে দিয়েই তারা উপার্জন করবে প্রচুর টাকা। যে সিডি তারা বানিয়েছে তা দিয়ে কয়েক লাখ টাকা উপার্জন হবে তাদের।
কনিকার সাথে ব্যাগ ব্যাাগেজ, বই পুস্তক,কাপড় চোপড় বা অন্যান্য প্রয়োজনীয় তেমন কিছুই ছিল না। পড়াশুনা করত না , ক্লাস করত না। সারাক্ষণ ফোনে কাদের সাথে চুপি চুপি কথা বলত। রূপা ভাবত তার প্রেমিকের সাথে কথা বলে। কনিকা বিজ্ঞাপনটি নিয়ে এসে সবাইকে রেখে রূপাকেই ধরল। এত আগ্রহ করে যে বিজ্ঞাপন আনল,সেখানে গেল,তার সুযোগ হল না তাতে সে মোটেই অনুশোচনা করল না। বরং যেন মহা খুশিই হয়েছিল রুপাকে চান্স পেতে দেখে। আসলে তো এসবই তার পাতানো খেলা ছিল। তার টার্গেটই ছিল রুপাকে সেই প্রতিষ্ঠানের দরজা পর্যন্ত যে কোন মূল্যে পৌঁছানো। এরপর যা করার ওনারা করবেন। আর তাই তো হয়েছে। রুপা সেই দরজা পর্যন্ত পৌঁছানোর পর আর ফিরে আসতে পারেনি।
রুপা যেদিন ইন্ডিয়া গেল তার পরদিনই নীরা ঢাকা এসেছিল একদিনের জন্য। তার বদলির সবকিছু ঠিক হয়ে গেছে। ওই দিন ঢাকা অফিসে যোগদান করে রেহানাকে ফোন করে শুনতে পায় বাবার মৃত্যুর খবর শুনে রেহানা বাড়ি চলে গেছে।
রুপার হোস্টেলে এসে জানতে পারে রুপা একটা চাকরী পেয়েছে এবং সে উপলক্ষ্যে দেশের বাইরে গেছে। খবরটা শুনেই কেমন অঘটনের গন্ধ পেয়েছিল নীরা। কিন্তু এ ব্যাপারে কারো সাথে কথা বলে যে রুপার বিষয়টা জানবে তার কোন সুযোগ ছিল না।

 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ