[প্রথমপাতা]

 

 

 

সাধের নাগর দোলা
 
 

- মেহেরুন নেছা রুমা -

 
খাটের পাশেই লাগোয়া স্টিলের আলমারি। তাই কটকট শব্দটা বড় অসহ্য লাগছে। আলমারি খোলার শব্দ যাতে কানে প্রবেশ না করে সেই ব্যর্থ চেষ্টায় মাথার বালিশ কানে চেপে ধরছি। ওহ ! অসহ্য! গলার আওয়াজটাকে একটু বাড়িয়ে বললাম-এই হচ্ছেটা কি শুনি ? ছুটির দিনে কি একটু শান্তিতে ঘুমাতে দিবে ?
বেশ আহলাদে সুরে রেমি বলে,‘শুভ নববষর্’ মৌমাছি।
হুম, শুভ নববর্ষ। কিন্তু মৌমাছি কেন বললে তাতো বুঝলাম না।
রেমি বলল, অতো সব বুঝে কাজ নেই।
মনে মনে ভাবলাম আজ রেমির মনটা ভাল। তাই এই সাজ সকালে এমন মিষ্টি মিষ্টি কথা বলছে। যাই হোক, শব্দটা আমার মনে ধরেছে। এক ঝলক শিহরণের বাতাস বয়ে গেল মনে।
রেমি তাড়া দিয়ে বলল,তাড়াতাড়ি উঠে তৈরি হও।
তৈরি হব মানে ?
মানে আমরা বাইরে যাব না? আজ পহেলা বৈশাখ। ভুলে গেছ নাকি ?
তা ভুলিনি। কিন্তু এত্ত ভোরে ! অন্যদিন তো তুমি এ সময় পাশ ফিরেও শোও না। আর আজ কিনা সেজে গুজে তৈরি।
দেখ কথা বাড়িও না, দেরি হয়ে যাচ্ছে।
এর মধ্যেই লাল টুকটুকে পাঞ্জাবি আর সাদা পাজামা পড়ে আমার পাঁচ বছরের ছেলে এসে আমার পিঠের উপর বসল।
আরে বাবা তোমাকে তো দারুন লাগছে !
থ্যাংকস, পাপা।
ছেলেকে ধমক দিয়ে রেমি বলে উঠল, এ্যাঞ্জেল আজ না তোমাকে বলেছি পাপাকে বাবা, আর আমাকে মা বলে ডাকতে ?
সরি মম, আই মিন -দু:খিত মা, আর ভুল হবে না।
ছেলে আর রেমির কথাবার্তা শুনে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম আমি। তারপর অনিচ্ছা সত্ত্বেও বিছানা ছেড়ে নিজেকে ওদের দলে ভেড়াতে চেষ্টা করলাম। খাবার টেবিলের কাছে এসে বরাবরের মতই নাস্তার কোন আয়োজন চোখে পড়ল না। রেমিকে বললাম, আজ যেহেতু সকালবেলা উঠেছ কিছুতো একটা বানাতে পারতে ।
এ কী বলছ তুমি ? ঘরে কেন নাস্তা বানাবো । আমরা এখন রমনায় গিয়ে পান্তা ইলিশ খাবনা ? আর এখনো আমার চোখে ঘুম জড়িয়ে আছে।
তাতো থাকবেই। সারা রাত বসে হিন্দী সিরিয়াল দেখবে, সকাল দশটা পর্যন্ত ঘুমাবে, আর আমি প্রতিদিন অফিসে যেয়ে নাস্তার অর্ডার দেই। যেন কোন ব্যাচেলর অফিসার আমি।
দেখ এখন এত কথা শুনার সময় নাই। বলতে বলতে রেমি আলমারি থেকে লাল পেড়ে সাদা শাড়িটা বের করল। আয়নার সামনে গায়ের সাথে শাড়িটা ধরে মুখে ভেংচি কেটে বলে, এ শাড়িটার চেয়ে ওটাই আনলে ভাল হত। একেবারে আনকমন ডিজাইন ছিল। ওমন একটা শাড়ি খুশি পড়েছিল একদিন।
খুশি আবার কে ?
আরে ওই যে স্টার প্লাস এর সিরিয়ালের নায়িকা।
ওহ আচ্ছা। তো নিলেনা কেন খুশির শাড়িটা ?
নিব কিভাবে , ওটার দাম শুনেই তো তুমি বেরিয়ে গেলে দোকান থেকে।
তুমি তো আমার বেয়াইন নও, আমার বৌ।তুমি জানো না আমার মাসে কত টাকা উপার্জন ? এমন যেকোন উৎসবেই তোমার শাড়ি গহনা কত কি লাগে। আমার কি এত সাধ্য আছে ? এই শাড়িটা যে কিনে দিলাম তার জন্যই আমার এ মাসে দুপরে শুধু রুটি আর সবজি খেয়ে থাকতে হবে।
তা আমি কি করব ? তুমি তোমার উপার্জন বাড়াতে পারনা তার দায় কি আমার ? একটা শাড়ি কিনে দিয়েছ বলে তার খোটা দিতে থাকবে এ আমি সহ্য করব না। যাবই না আজ কোথাও।
বলেই শাড়িটা ছুড়ে মেরে বিছানায় বসে পড়ল। বুঝতে পারলাম আজ আর কি কি ঘটবে। আমার মৌনতা রেমিকে আরো উত্তেজিত করল। শোক সীমা ছাপিয়ে উপচে পড়ল। জীবনে তার সব আশাই অপূর্ণ রয়ে গেল।
আমি বললাম, দেখ রেমি তুমিতো সবই জানতে। একই কথা বারবার বলে কেন নিজে কষ্ট পাচ্ছ আর আমাকেও কষ্ট দিচ্ছ ?
আমি ? আমি তোমাকে কষ্ট দিচ্ছি ? রেগেমেগে আগুন হয়ে এবার হাতের কাছে যা যা পেল সব এদিক ওদিক ছুড়ে মারল। তারপর রান্নাঘরে যেয়ে হাড়ি পাতিল ধরল। ওগুলোতে শব্দ বেশি হয় বলে হয়তোবা রেমির রাগের বহি:প্রকাশটা বেশি ঘটাতে পারে। তার সাথে জুড়ে দিল নাকে কান্না। ছেলেটা আমাকে জড়িয়ে ধরে বলে, পাপা , (সরি বাবা)আমরা কখন যাব মেলায় ? মম (ধ্যাৎ) মা আমাকে বলছে ঢোল বাঁশি এসব কিনে দিবে। নাগর দোলায় চড়ব না পাপা? (ও্হ শীট,বাংলা বলা কত কষ্ট !)
বাবা রে, কি আর হবে মেলায় গিয়ে ! তোর মা এই যে ঘরের মধ্যে বাদ্য বাজাচ্ছে সেটাই হল ঢোল আর ডুগডুগি, অহেতুক যে কান্নাকাটি করছে সেটা তার বাঁশি, আর আমার বাঁশিটার বাঁশ ফেটে গেছে। তাই কোন আওয়াজ হয় না, শুধু বাতাসের মত দীর্ঘশ্বাস বের হয়। সাত বছর ধরে আমাকে যে আঙুলের ইশারায় ঘুরাচ্ছে এটাই হল নাগর দোলা। এখন পারিস তো আমার পিঠের উপর উঠে বস। এছাড়া আমার আর কিছু করার নাই।

 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ