প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

রোহিঙ্গাঃ নিজ দেশে পরবাসী

 

 

শাশ্বত স্বপন

 

 

পর্ব-২

সভ্যতার শুরু থেকে এ পৃথিবীতে যত যুদ্ধ-বিগ্রহ ঘটেছে, তার অধিকাংশই ছিল ধর্ম যুদ্ধ । অন্য কোন বিষয় নিয়ে দ্বন্ধ শুরু হলেও, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা ধর্ম যুদ্ধের রূপ নিত। আদিতে ধর্মীয় যুদ্ধ এমনি নৃসংশ রূপ নিত যা বাঘ-হায়েনা-শকুন এর শিকারকালীন সময়ে কিছুটা বুঝা যায়। সভ্যতার উন্নতির কারণে বর্তমান আগ্রাসনের যুদ্ধ, দেশ দখলের যুদ্ধ ধর্ম যুদ্ধের মত এতটা নৃসংশ হয়তো হয় না, এত মানুষও মারা যায় না, তবে যুদ্ধের উপকরণ (বিশেষ করে গোলাবারুদ) বেড়ে যাওয়ায় সম্পদের ক্ষতি, আহতের সংখ্যা পূর্বতন ধর্মীয় যুদ্ধের চেয়ে বেশী হয়। ধর্ম যুদ্ধ হোক, আগ্রাসনের যুদ্ধ হোক অথবা অন্য কোন যুদ্ধ হোক--কোন যুদ্ধই মানুষ চায় না। তবে হিসাব করে দেখা গেছে, সব ধর্মীয় যুদ্ধে নিহতের সংখ্যা অন্য সব যুদ্ধে নিহতের সংখ্যার চেয়ে অনেক বেশী এবং প্রায় সব যুদ্ধের সূত্রপাত তুচ্ছ বিষয় নিয়ে।

বার্মা ও আরাকানের প্রাচীন ইতিহাসঃ

বৌদ্ব ধর্মের পৃষ্ঠপোষক, বাংগালী ও বাংলাদেশের গোড়া পত্তনকারী পাল রাজাগণ সুদীর্ঘ ৪০০ বছর বাংলাদেশ শাসন করেন। তারপর হিন্দু ধর্মের পৃষ্ঠপোষক সেন রাজাদের এবং মুসলিম তুর্কী, পাঠান, মোগল রাজা-নবাবদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ অত্যাচার বা নিগৃহের কারণে বৌদ্ধরা মাইগ্রেশন করে বা পালাতে থাকে। কিছু নেপালে (সূত্র: চর্যাপদ), কিছু তিব্বতে, অধিকাংশ পূর্বদিকে চলে আসে । মুসলমান আমলেও বহু বছর চট্রগ্রাম, পার্বত্য চট্রগ্রাম আরাকানের অধীনে ছিল।

রাউজান এলাকার প্রাচীন ইতিহাসের সাথে বৌদ্ধ সভ্যতার সম্পর্ক গভীরভাবে জড়িত। প্রাচীন ইতিহাস বলে, রাউজানে আদি বসতি স্থাপনকারী হলো বৌদ্ধরা। বিনাজুরীতে প্রায় ৪ শত বছরের প্রাচীন বৌদ্ধবিহার রয়েছে। ইতিহাসবিদগণ মনে করেন, রাউজান এলাকার নামকরণের সাথেও বৌদ্ধ ঐতিহ্য জড়িত । কারন মোগল সুবেদার শায়েস্তা খান কর্তৃক ১৬৬৬ খৃষ্টাব্দে চট্টগ্রাম বিজয়ের প্রায় ১০০০ বছর পূর্ব থেকে সারা চট্টগ্রাম অঞ্চলই বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী মগ বা আরাকানীদের অধিকারে ছিল। সে অনুযায়ী ধারণা করা হয় যে, রাউজানও একসময় আরাকান রাজ্যের অন্তর্গত ছিল। আরাকানী ভাষায় এটিকে বলা হতো 'রজোওয়াং'বা রাজ পরিবারের মাটি বা জমিন। আর এ নামের অপভ্রংশ থেকেই রাউজান নামের উৎপত্তি হয়েছে বলে মনে করা হয়।

বিশিষ্ট ঐতিহাসিক ডঃ মুহাম্মদ এনামুল হক আরাকানের জাতীয় ইতিহাস বিষয়ক গ্রন্থ 'রাজোয়াং'থেকে নিম্নোক্ত বিবরণ উদ্ধৃত করেছেনঃ "খৃষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীর শেষ পাদে যখন আরাকান রাজ মহতৈং চন্দয় (Mahatoing Tsandya- 788-810 A.D.)রাজত্ব করিতেছিলেন, তখন কতকগুলি মুসলমান বনিক জাহাজ ভাঙ্গিয়া যাওয়ার ফলে আরাকানের দক্ষিন দিকস্থ 'রনবী'(আধুনিক রামরী)দ্বীপে উঠিয়া পড়েন।তাঁহারা আরাকানীগণ কর্তৃক ধৃত হইয়া রাজার সম্মুখে নীত হয়েছিলেন।রাজা তাঁহাদের দুরবস্থা দেখিয়া দয়া পরবশ হইয়া তাঁহাদিগকে স্বীয় রাজ্যে গ্রামে গিয়া বসবাস করিতে আদেশ দিয়াছিলেন।" ডঃ এনামুল হক মনে করেন যে, "রাজোয়াং–এ উল্লেখিত এ সব মুসলমান বণিক আরব দেশীয় ছিলেন এবং চাঁটগা থেকে উপকূল বেয়ে দক্ষিন মুখে যাবার পথে, কিংবা দক্ষিন উপকূল হয়ে উত্তরে চাটগাঁর দিকে এগুবার সময়ই ঝঞ্জাতাড়িত হয়ে সম্ভবতঃ তাঁরা রামরী দ্বীপে গিয়ে আশ্র্য় নিয়েছিলেন।"আরেক ইতিহাস থেকে্‌ প্রায় কাছাকাছি তথ্য জানা যায়, আর তা হলঃ ৭ম-৮ম শতাব্দীতে চন্দ্রবংশের(আরাকান রাজ মহতৈং চন্দয় ?) রাজত্বকালে বঙ্গোপসাগরে কয়েকটি আরবীয় জাহাজ সংঘর্ষে ভেঙ্গে পড়লে নাবিকরা তীরে এসে ভীড়লে রাজা তাদের ব্যবহারে সন্তষ্ট হয়ে এখানে তাদের বসবাসের অনুমতি দেন। তারা স্থানীয় রমনীদের বিয়ে করে সংসার করতে থাকেন। বঙ্গোপসাগরীয় উপকূল থেকে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া পর্যন্ত আরো পূর্ব হতেই আরব বণিকদের সাথে বার্মার জনগণের যোগাযোগ ছিল। প্রাথমিকভাবে মধ্যপ্রাচ্যের মুসলমান ও স্থানীয় আরাকানীদের সংমিশ্রণে রোহিঙ্গা জাতির উদ্ভব। পরবর্তীতে চাঁটগাইয়া, রাখাইন, আরাকানী, বার্মিজ, বাঙালী, ভারতীয়, মধ্যপ্রাচ্য, মধ্য এশিয়া ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার মানুষদের মিশ্রণে উদ্ভুত এই সংকর জাতি এয়োদশ-চর্তুদশ শতাব্দীতে পূর্ণাঙ্গ জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। পঞ্চদশ শতাব্দী হতে অষ্টাদশ শতাব্দী পর্যন্ত আরাকানে রোহিঙ্গাদের নিজেদের রাজ্য ছিল। মহাকবি আলাওল তার পদ্মাবতী কাব্যে রোসাঙ্গ (রোহিংগা) জাতি সম্পর্কে বলেছেন, 'নানা দেশী নানা লোক শুনিয়া রোসাঙ্গ ভোগ আইসন্ত নৃপ ছায়াতলে। আরবী, মিশরী, সামী, তুর্কী, হাপসী, রুমী, খোরসানী, উজবেগী সকল। লাহোরী, মুলতানী, সিন্ধি, কাশ্মীরী, দক্ষিণী, হিন্দী, কামরূপী আর বঙ্গদেশী। বহু শেখ, সৈয়দজাদা, মোগল, পাঠান যুদ্ধা, রাজপুত হিন্দু নানা জাতি...।' রোয়াং, রোঁয়াই, রোহিঙ্গা এবং রোসাঙ্গ শব্দগুলো পরিমার্জিত, পরিবর্তিত হয়ে বাঙ্গালী কবিদের কাছে রোসাঙ্গ হিসাবে, স্থানীয় জনগণের কাছে রোয়াং আর আমাদের কাছে চরম অবহেলিত নিন্দিত বস্তীবাসী এক রোহিঙ্গা জাতি হিসাবে পরিচিত। গাঙ্গু নদীর পাড়ে বাঁশখালি থানার পূর্ব দিকের পাহাড়ী এলাকায় রোহিংগারা সংখ্যাগরিষ্ঠ। এখানকার রোহিঙ্গারা প্রায় ৩০০ বছর আগে আরাকানী রিফিউজি হিসাবে বংশ পরষ্পরায় বসবাস করে আসছে।

_________________________________________
তথ্যসূত্র-
১.মায়ানমার-উইকিপিডিয়া, মুক্ত বিশ্বকোষ থেকে
২.পূর্ব পাকিস্তানে ইসলামের আলো- লেখকঃ চৌধুরী শামসুর রহমান, প্রকাশক-পাকিস্তান পাবলিকেশন্স,পুরানা পল্টন, ঢাকা, (দ্বিতীয় সংস্করণ-১৯৬৮ খ্রীঃ)।
৩.সিরিকোট থেকে রেঙ্গুন- মোছাহেব উদ্দিন বখতিয়ার ঃ চাঁটগা প্রকাশন, দিদার মার্কেট, চট্টগ্রাম,(প্রথম সংস্করণ-২০০৫ খ্রীঃ)।
৪.http://community.skynetjp.com/id887.htm 
৫.http://www.freedomnews24.com/category-list/article/134 
৬.http://www.somewhereinblog.net/blog/smismailblog/29317074

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ

 

 

..........[লেখক আর্কাইভ]