প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

@

@

@

@

@

অসমাপ্ত গোলামের আত্মকথার সমাপ্তি এবং গোলামের খাদ্য তালিকা

@

@

লুৎফর রহমান রিটন

পিজিতে, মানে শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে ঘাতক গোলামের স্বাস্থের অবনতি ঘটেছে। জনাবকে এখন সিসিইউতে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রাখা হয়েছে। তবে শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত মহামহিম এখনো এখনও টিকে আছে। ২০১৩ সালে শাহবাগে অভাবনীয় গণজাগরণের সময় সরকারের বিশেষ জামাই আদরে পিজির শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কেবিনে চিকিৎসার অজুহাতে আরাম আয়েশে দিন যাপন করছিলো গোলাম। একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী গোলাম ও তার যুদ্ধাপরাধী সতীর্থদের অপকীর্তি বিষয়ে সোচ্চার প্রজন্ম চত্বরে সমবেত লাখো তরুণের উত্তাল জোয়ারের ঊর্মিমালার গর্জন, উচ্চারিত শ্লোগান ও ঘৃণাসমূহ ওর কানেও পৌঁছে যাচ্ছিলো। ওর শান্তি বিনষ্ট করছিলো তরুণরা। ওর ঘুমের ব্যাঘাত ঘটাচ্ছিলো ওরা মুহুর্মুহু। দিনরাত্রি চব্বিশ ঘন্টা শাহবাগের মাটি কামড়ে পড়ে থাকা তরুণদের কান্ডকীর্তিতে কতোটা বিচলিত হয়ে পড়েছিলো এই ঘাতক সেটার কিছুটা আঁচ পাওয়া যাবে পত্রিকায় প্রকাশিত একটি ছোট্ট রিপোর্টে। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারির ০৯ তারিখের দৈনিক কালের কণ্ঠ থেকে একটা সংবাদ উদ্ধৃত করি—

['জনতার গর্জন' শুনে স্তব্ধ গোলাম আযম শিরোনামে তৌহিদুল ইসলাম মিন্টু ও পাভেল হায়দার চৌধুরী জানাচ্ছেন—eলাখো মানুষের কণ্ঠে 'যুদ্ধাপরাধীদের' ফাঁসির দাবি উচ্চারণ কানে গেছে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের। শাহবাগ প্রজন্ম চত্বরসংলগ্ন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজন সেলে চিকিৎসাধীন তিনি। গতকাল শুক্রবার দুপুরের পর লাখো কণ্ঠের স্লোগান শুনে পরিচর্যাকারী ওয়ার্ড বয়ের কাছে তিনি জানতে চান, 'কী হচ্ছে ওখানে?' ওয়ার্ড বয় বলেন, 'যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লার ফাঁসির দাবিতে জনতার গর্জন উঠেছে। এ গর্জন লাখো মানুষের।' শুনেই চুপসে যান গোলাম আযম। কিছুক্ষণ পর জানতে চান, 'কারা করছে?' ওয়ার্ড বয় বলেন, 'স্যার, তরুণ প্রজন্ম।' শুনে দীর্ঘশ্বাস ফেলে শুয়ে পড়েন অভিযুক্ত এ শীর্ষস্থানীয় মানবতাবিরোধী অপরাধী।
প্রিজন সেলে গোলাম আযমের পরিচর্যাকারী ওই ওয়ার্ড বয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য জানিয়ে গতকাল কালের কণ্ঠকে বলেন, 'কিছুক্ষণ পরই স্যারের (গোলাম আযম) রক্তচাপ বেড়ে যায়।' তিনি জানান, পরে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক গিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এরপর ঘুমিয়ে যান গোলাম আযম।
ওয়ার্ড বয় আরো বলেন, 'প্রতিবারই ট্রাইব্যুনালে নেওয়ার তারিখে গোলাম আযম স্যার একটু অসুস্থ হয়ে যান। প্রেশার ওঠানামা করে। তবে ট্রাইব্যুনাল থেকে ফিরে আবার সুস্থ বোধ করেন।'
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে গোলাম আযমের চিকিৎসক বঙ্গবন্ধু মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের ডা. এম আবদুল্লাহ খানিকটা হেসে বলেন, 'হাসপাতালের তৃতীয় তলায় প্রিজন সেলের প্রথম কক্ষটিতে চিকিৎসাধীন রয়েছেন গোলাম আযম। যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের দাবিতে শাহবাগে লাখো মানুষের গর্জন তাঁর কানেও পৌঁছে। তবে তাঁর অনুভূতি কী, তা নিয়ে আমার সঙ্গে কথা হয়নি। শুক্রবার হাসপাতাল বন্ধ ছিল, আমি যাইনি। গোলাম আযম গতকাল খানিকটা অসুস্থ হয়ে পড়েন, পরে ঠিক হয়ে যান শুনেছি। এখন তিনি সুস্থ আছেন। মাঝেমধ্যে রক্তচাপ ওঠানামা করে।f ]

বিভিন্ন পত্রিকায় সে সময় গোলামের ওপর বহু ইন্টারেস্টিং ছোট ছোট খবর ছাপা হতো। গোলাম বিষণ্ণ থাকে। ডাক্তার নার্সদের কাছে শাহবাগে কতো লোক সমবেত হয়েছে জানতে চায়। পত্রিকায় ছাপা বিশাল জনস্রোতের ছবি দেখে জানতে চায় আসলেই এতো লোক হয়েছিলো কীনা। মাঝে মাঝে কেবিনের পর্দা সরিয়ে উঁকি মারে শাহবাগের সমাবেশে। ওর রক্তচাপ বেড়ে যায়। তারপর সে আবারো শুয়ে পরে আরামদায়ক চকচকে শুভ্র বিছানায়।

খবরের এইসব পাশ কাটিয়ে আমাকে টানতো গোলামের খাদ্য তালিকা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে গোলামকে গোলামের বাড়ি থেকে পাঠানো খাবারই দেয়া হতো। কিন্তু এক পর্যায়ে অস্বীকৃতি জানিয়েছিলো কর্তৃপক্ষ। বলেছিলো—ওই খাবারে গোলামের শারীরিক সমস্যা দেখা দিলে সেই দায়ভার হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ গ্রহণ করবে না। এরপর গোলামের স্ত্রীর পাঠানো তালিকা অনুসারে গোলামকে খাবার সরবরাহ করতে আরম্ভ করে সরকার। হাসপাতালের বাদবাকি রোগীদের তুলনায় সরকারি খরচে অনেক উন্নতমানের খাবার তাকে দেয়া হতো।

গোলামের স্ত্রীর পাঠানো তালিকাটায় একটু চোখ বুলানো যাক-- সকালের নাশতা-- লাল আটার চার-পাঁচটি রুটি, সঙ্গে ডিম ভাজি, আলু ছাড়া সবজি ভাজি, মুরগির মাংসের কারি কিংবা ভুনা, মিষ্টি, দুধ ও কলা।
দুপুরের খাবার-- চিকন চালের ভাত, করলা ভাজি, টাকি বা চিংড়ি মাছ ভর্তা, বেগুন ভাজি বা ভর্তা, ছোট মাছ বা চিংড়ি মাছ ভুনা, সালাদ ও লেবু। ফল--মাল্টা বা বরই বা নাশপাতি। বিকেলের খাবার-- তালিকায় লাড্ডু, নিমকি-বিস্কুট, হরলিকস কিংবা স্যুপ।
রাতের খাবার-- চিকন চালের ভাত, করলা ভাজি, বেগুন ভাজি বা ভর্তা, ঢ্যাঁড়শ বা মিষ্টি কুমড়া বা পেঁপে ভাজি, গরু বা খাসির মাংস ভুনা , সালাদ ও লেবু। ফল-- কমলা, মাল্টা, নাশপাতি, আঙুর বা বরই।
২০১৩ সালের ফেব্রয়ারি পর্যন্ত গোলামের স্ত্রীর দেয়া তালিকা অনুযায়ীই খাবার সরবরাহ করে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। এরপর খাদ্য তালিকায় কিঞ্চিৎ পরিবর্তন আসে।

গোলামের সাম্প্রতিক খাদ্য তালিকাটা কী রকম? এই যে এরকম--সকাল নfটায় তাকে খেতে দেয়া হয় এক চামচ মধু, এক চামচ অলিভ অয়েল, দুটো বিস্কুট, চিড়ে ভাজা বা মুড়ির মোয়া, দুধ, হরলিকস ও দুটো ডিম। বেলা ১১টায় দেয়া হয় খিচুড়ি, সবজি, স্যুপ, আচার ও ফল। দুপুর দুটোয় দেয়া হয় দুfটুকরো মাছ, সবজি, ডাল ও আচার। বিকেলে নাশতায় সরবরাহ করা হয় স্যুপ ও ফল। রাত আটটায় দেয়া হয় ভাত, মুরগির মাংস, সবজি, ডাল, আচার ও ফল।

শাহবাগের গণজাগরণের ঘটনার সময় আমি ঢাকাতেই ছিলাম। ০৫ ফেব্রুয়ারি ট্রাইব্যুনাল কুখ্যাত ঘাতক কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় ঘোষণার পরপরই আমি একটি ছড়া আপলোড করেছিলাম ফেসবুকে। eশাবাশ ট্রাইব্যুনাল শাবাশ বিচারপতিf শিরোনামে তাৎক্ষণিক রচিত সেই ছড়াটা বাংলানিউজ২৪ ডটকম দীর্ঘ সময় ধরে স্টিকি করে রেখেছিলো। মুহূর্তেই প্রায় আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়া আমার সেই ছড়াটা ছড়িয়ে পড়েছিলো সারাদেশে এবং পৃথিবীর নানা দেশের বাঙালিদের কাছে। এরপর প্রতিদিন একটা করে নতুন ছড়া আপলোড করেছি। ছড়াগুলো গণজাগরণ মঞ্চে কাজী আরিফসহ অনেকেই আবৃত্তি করেছেন। কোনো কোনোটা ছাপা হয়েছে পত্রিকায়। কোনো কোনোটা বিভিন্ন স্মরণিকা ও ফোল্ডারে। সেবছর বইমেলায় প্রকাশিত আমার রাজনৈতিক ছড়াগ্রন্থ eভোলামন পিড়িংপিড়িংf-এ কিছু ছড়া মুদ্রিত হয়েছে। বাকিগুলো এবছর প্রকাশিত eজাগরণের ছড়াf নামের বইটিতে আছে। ২০১৩-র মধ্যফেব্রুয়ারিতে eগোলামের আত্মকথাf নামের একটা ছড়া লিখতে শুরু করেছিলাম। কিন্তু তাকে নিয়ে কিছু রহস্যময় নাটুকেপনার শেষ হচ্ছিলো না দেখে ছড়াটা অসমাপ্তই থেকে গিয়েছিলো। যে কারণে ছড়াটা eভোলামন পিড়িংপিড়িংf-এ দিতে পারিনি। পরে, ১৬ জুলাই ২০১৩ তে ছড়াটা শেষ করতে পেরেছিলাম বলে ওটা ২০১৪-র বইমেলায় প্রকাশিত eজাগরণের ছড়াf-য় দিয়েছি।

 

ee[ গোলামের আত্মকথা
লুৎফর রহমান রিটন

কথায় কথায় একাত্তরের কল্পিতসব গল্প—
আরে ব্যাটা তখন আমার বয়েস ছিলো অল্প!
রক্তে ছিলো পাকিস্তানী জোস
যা করেছি ঠিক করেছি নেই কোনো আফসোস।
কণ্ঠে ছিলো আল্লা-খোদার নাম
ইসলামেরই বরাত দিয়ে সবকিছু করলাম।

নারী-পুরুষ-বৃদ্ধ-যুবক-শিশু-কিশোরগুলি
নির্বিচারে এক কাতারে সবাই খেলো গুলি।
ধর্ম দিয়ে কর্ম সেরে বর্ম পড়েছিলাম
খাঁটি একটা মুসলমানের লেবাস ধরেছিলাম।
লেবাসটা খুব কার্যকরী এবং ফলপ্রসু
যতোই বলো ঘাতক-দালাল যতোই বলো পশু
তাতে কিছু যায় আসে না গায়েও মাখি না তা
নতুন করে লিখতে জানি ইতিহাসের পাতা।
একাত্তরের যুদ্ধাপরাধ আমার যতো দায়—
এক লহমায় মুছে দিলাম পুরানা অধ্যায়।
আমার আছে হরেক রকম বিচিত্র কল-কাঠি
এবং আছে ধর্ম নামের ক্ষমতাধর লাঠি
কল-কাঠি আর লাঠির চালে পুরানা দক্ষতা
ইরেজ করি মুক্তিযুদ্ধ এবং স্বাধীনতা...

ট্রাইব্যুনালের প্রিজন সেলে পিজির শীতল রুমে
আদর-যত্নে ক্লান্ত দুfচোখ জড়িয়ে আসে ঘুমে।
পিজির বেডে ইজি-ই থাকি স্লোগান শুনে হাসি—
বেকুব নাদান পোলাপানে চাইছে আমার ফাঁসি!
শাহাবাগের রাস্তা দখল করলে হবে কী?
এই দেখো না রাজনীতিকে মুঠোয় রেখেছি!
স্লোগান দিয়ে মোম জ্বালিয়ে আমার ফাঁসির তরে
তোমরা যখন রাত্রি জাগো প্রজন্ম চত্বরে
আমি তখন হিশেব কষি দুই দুগুনে পাঁচ
ট্রাইব্যুনালের রায় কি হবে সেইটা করি আঁচ।
নয়টি মাসে তিরিশ লক্ষ খুন হয়েছে মোটে
অলৌকিক এক ম্যাজিক আছে ইলেকশনের ভোটে।
শাহবাগীরা বাচ্চা নাদান অবুঝ খোকা-খুকু
ব্যাবাক বোঝে, বোঝে না এই ভোটের হিশেবটুকু।
পাকিস্তান তো আব্বু মেরা সউদি মেরা জান
পেয়ারা পাকিস্তান হামারা পেয়ারা পাকিস্তান...

সাংবাদিক আর শিল্পী-লেখক? বুদ্ধিজীবী?—থু!
ইস্লাম হ্যায় হামারা সাথ কেয়া কারেগা তু?
শাহবাগীরা নিজের খেয়ে তাড়ায় বনের মোষ
নাস্তিক আর ব্লগার তোরা এবার আঙুল চোষ!

দেখলি তোরা আদালতের কী অপরূপ রায়!
কেমন করে ডিগবাজি খায়! আমার পক্ষে যায়?
জেলখানাতে কেমন আমার কাটছে দিবস রাত?
রোজ প্রতিদিন দুই বেলা খাই চিকন চালের ভাত।
সঙ্গে থাকে মুর্গি ছানার নরম নরম গোস্‌
নাস্তিক আর ব্লগার তোরা আবার আঙুল চোষ!

প্রতিদিনের খাবার মেন্যু সবজি-স্যালাড-স্যুপ
ফাইভস্টার হোটেল যেনো! আহ্‌ কী অপরূপ!
আটার রুটি চা-কফি আর ডিম থাকে নাস্তাতে
ছোট মাছের ঝোলের সঙ্গে দৈ-ও থাকে পাতে।
রোজ প্রতিদিন নিয়মিত ফ্রেস দুধ আর কলা
কারাগারকে এক প্রকারের বেহেস্তই যায় বলা।
বাকি জীবন আমায় তোরা আদর-যত্নে পোষ
নাস্তিক আর ব্লগার তোরা আবার আঙুল চোষ!

আমেরিকা আব্বু মেরা সউদি মেরা জান
পেয়ারা পাকিস্তান হামারা পেয়ারা পাকিস্তান

@

@

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

@

[প্রথমপাতা]

@

@

লেখকের আগের লেখাঃ

@

@