@
[প্রথমপাতা] @ |
@ @
বিটিভির eনতুন কুঁড়িf, জিয়ার নামে
কৃতিত্ব ছিনতাই!
@
লুৎফর রহমান রিটন
বাংলাদেশ টেলিভিশনের বিখ্যাত অনুষ্ঠান eনতুন কুঁড়িরf স্বপ্নদ্রষ্টার নাম
কী? আলোড়ন সৃষ্টিকারী এ অনুষ্ঠানটির পরিকল্পক কে ছিলেন? কবে এবং কখন থেকে
প্রতিযোগিতামূলক এ অনুষ্ঠানটির সম্প্রচার শুরু হয়েছিল?
জোট সরকারের শাসনামলে পাঁচটি বছর ধরে বিভিন্ন মিডিয়ার মাধ্যমে বিএনপি
অবিরাম মিথ্যা প্রচারণা চালিয়ে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে টিভির নতুন কুঁড়ি
ও শিশু একাডেমীর স্বপ্নদ্রষ্টা এবং পরিকল্পক হিসেবে প্রতিষ্ঠার প্রচেষ্টা
চালিয়েছে। কিন্তু প্রকৃত সত্য হচ্ছে নতুন কুঁড়ি এবং শিশু একাডেমী, দুটোর
কোনোটারই স্বপ্নদ্রষ্টা কিংবা পরিকল্পক ছিলেন না জিয়াউর রহমান। শিশু
একাডেমীর বিষয়ে আরেকটি রচনায় বিস্তারিত লিখব। আজ বলি শুধু নতুন কুঁড়ির কথা।
একটি উদ্ধৃতি দিয়ে শুরু করা যাক
eপ্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া শিশুদের স্মরণ করিয়ে দেন, শহীদ রাষ্ট্রপতি
জিয়াউর রহমান শিশুদের মেধা ও প্রতিভা বিকাশের লক্ষ্যে নতুন কুঁড়ি চালু
করেছিলেন।f (দৈনিক যুগান্তর, ২০ জানুয়ারি ২০০৩)
জোট সরকার রাষ্ট্রক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার পর থেকে প্রতিবছর ১৯ জানুয়ারি
বাংলাদেশ টেলিভিশনের নতুন কুঁড়ির পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে এ মিথ্যাচারটি
করা হচ্ছে। বিএনপিপন্থি লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবীরাও জিয়াউর রহমানের জন্ম
কিংবা মৃত্যু দিবসে প্রকাশিত তাদের রচনায় একই কাণ্ড করেছেন প্রতি বছর।
দেশের প্রথমসারির একাধিক দৈনিকে প্রকৃত সত্য উল্লেখ করে আমি নিজে এ বিষয়ে
লেখালেখি করেছি তখন। আমার কোনো লেখাকেই বিএনপিপন্থি কোনো
লেখক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবী চ্যালেঞ্জ করেননি এবং আমি নিশ্চিত এ লেখা এবং
আমাকে চ্যালেঞ্জ করবেন না তারা বরাবরের মতো এবারো, বোধগম্য কারণেই।
সাংবাদিক বোরহান আহমেদ (বর্তমানে প্রয়াত) eশহীদ জিয়াকে ঘিরে বেদনার্ত কিছু
স্মৃতিf শিরোনামে দৈনিক জনকণ্ঠে পরপর তিন বছর (৩০ মে, ২০০২-২০০৩-২০০৪)
লিখেছেন gটিভিতে শিশুশিল্পীদের জন্য চালু করেছিলেন নতুন কুঁড়ি। তাদের জন্য
শিশু একাডেমী করেছিলেন। তাদের বিনোদনের জন্য করেছিলেন শিশুপার্ক।h (দৈনিক
জনকণ্ঠ, ৩০ মে, ২০০৪)
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের অধ্যাপক, জোট সরকারের আমলে সাহিত্যে
বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত ডক্টর সাঈদ-উর-রহমান gজিয়াউর রহমানের
শিশুপ্রীতিh শিরোনামে লিখেছেনÑ gশিশুদের মানসিক বিকাশের জন্য তিনি বেশী কাজ
করার সুযোগ পাননি। শিশু একাডেমী, শিশুপার্ক, টিভিতে নতুন কুঁড়ি কর্মসূচী,
শিশুমন্ত্রণালয় প্রভৃতির নামই আমরা শুধু জানি।h (দৈনিক আজকের কাগজ, ৩০ মে,
২০০৩)
জোট সরকারের মহিলা ও শিশুবিষয়কমন্ত্রী (বর্তমানে প্রয়াত) বেগম খুরশিদ জাহান
হক নিউইয়র্ক থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ঠিকানাকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে (২৪ মে,
২০০২) বলেছিলেন gপ্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান সর্বপ্রথম শিশুদের প্রতিভা ও
মানসিক বিকাশের কথা চিন্তা করেছিলেন। তিনি তৈরি করেছিলেন শিশু একাডেমী, চালু
করেছিলেন নতুন কুঁড়ি। আমি দৃঢ়তার সঙ্গে বলতে চাই যে, আজকের শিশুদের সার্বিক
উন্নয়নের যে চিন্তা-ভাবনা সারাবিশ্বে করা হচ্ছে, সে চিন্তা-ভাবনা করেছিলেন
আমাদের নেতা জিয়াউর রহমান বহু আগেই। এবং আমি মনে করি জাতিসংঘ ১৯৯০ সালে যে
চিন্তা করেছে, ১৯৭৬ সালে সেই চিন্তা শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান
করেছিলেন।h
পাঠক লক্ষ করুন, আমাদের দেশে (সারাবিশ্বের কথা বাদ দিন) শিশুদের প্রতিভা ও
মানসিক বিকাশের বিষয়টি প্রথম চিন্তা করেছিলেন প্রেসিডেন্ট জিয়া! শিশুসংগঠন
মুকুল ফৌজ নয়, খেলাঘর নয়, কচি-কাঁচার মেলাও নয়! রোকনুজ্জামান খান দাদাভাই
নন, হাবীবুর রহমান ভাইয়া নন, বাগবান ভাই মোহাম্মদ মোদাব্বেরও নন! ওঁরা কেউ
নন কেবলই প্রেসিডেন্ট জিয়া!
ফিরে আসি নতুন কুঁড়িতে। টিভির যে মেধাবী প্রযোজকের অসামান্য সাংগঠনিক
তৎপরতায় নতুন কুঁড়ি অনুষ্ঠানটি দেশব্যাপী তুমুল আলোড়ন তুলেছিল তার নাম কাজী
কাইয়ূম। কাজী কাইয়ূম গত হয়েছেন ২০০২ সালে। এ রচনাটি লেখার সময় কাইয়ূম ভাইকে
স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধায়। f৮০-র দশকে এবং f৯০-র দশকের শুরুর কয়েক বছর নতুন
কুঁড়ি টিম-এ আমিও কাজ করেছি কাইয়ূম ভাইয়ের সঙ্গে। নতুন কুঁড়ি যে
প্রেসিডেন্ট জিয়ার পরিকল্পনার ফসল একথা কাইয়ূম ভাইও কোনোদিন বলেননি। যেমন
বলেননি আমাদের মন্টু ভাই অর্থাৎ অনন্যসাধারণ মেধাবী পুরুষ প্রখ্যাত শিল্পী
মুস্তাফা মনোয়ারও। আমার জানামতে, নতুন কুঁড়ির স্বপ্নদ্রষ্টা বা পরিকল্পক
একজনই আর তিনি হচ্ছেন মুস্তাফা মনোয়ার। ১৯৯৬ সালের ফেব্রgয়ারিতে প্রকাশিত
gতোমাদের প্রিয়জনh (তুষার আবদুল্লাহ ও জাবির মাহমুদ সম্পাদিত) নামের সংকলন
গ্রন্থে প্রশ্নোত্তরে শিল্পী মুস্তাফা মনোয়ার বলছেন gনতুন কুঁড়ির কথাতো
তোমরা সবাই জান। সবাইকে তোমাদের প্রতিভার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে e৬৯ (ঊনসত্তর)
সালে টেলিভিশনে আমি তোমাদের জন্য এই প্রতিযোগিতার আয়োজন করি। প্রথমবার শুধু
ঢাকার বন্ধুদের নিয়ে ৮/৯টি বিষয়ের ওপর প্রতিযোগিতা হয়। প্রথমবার অনুষ্ঠান
প্রচারিত হয় সরাসরি। রেকর্ডিং-এর কোনো ব্যবস্থা ছিল না। আমার বাবা কবি
গোলাম মুস্তাফার eনতুন কুঁড়িf কবিতার নামে অনুষ্ঠানের নাম রাখা হয়। নতুন
কুঁড়ির শুরুতে যে গানটি শোন, সেটিই নতুন কুঁড়ি কবিতা। পরে f৭৪ (চুয়াত্তর)-এ
১২টি বিষয় নিয়ে সারা বাংলাদেশের বন্ধুদের একত্রিত করে নতুন কুঁড়ির আয়োজন করা
হয়।h (তোমাদের প্রিয়জন, সময় প্রকাশন, পৃষ্ঠা ৩১)
পাঠক লক্ষ করুন, মুস্তাফা মনোয়ারের হাত ধরে নতুন কুঁড়ি ১৯৬৯-এ যাত্রা শুরু
করা থেকে ১৯৭৪-এ বিস্তার লাভ করা পর্যন্ত জিয়াউর রহমান রাষ্ট্রক্ষমতায়
অনুপস্থিত। তিনি তো এলেন ১৯৭৫-এর পট পরিবর্তনের পর, খন্দকার মুশতাককে সামনে
রেখে, ধিরে ধিরে।
জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঘোষণাকে ছিনতাই করা হয়েছে।
বিএনপিপন্থিরা জিয়াউর রহমানকে বলেন- gস্বাধীনতার ঘোষকh। এদিকে আবার মুস্তাফা
মনোয়ারের ব্রেন চাইল্ড নতুন কুঁড়িকে ছিনতাই করে বলা হচ্ছে gজিয়াউর রহমান
নতুন কুঁড়ি চালু করেছিলেনh!
সম্প্রতি হাতে আসা eজাতীয় টেলিভিশন শিশুশিল্পী পুরস্কার ২০০৩f (সম্পাদনা আলী
ইমাম, সহসম্পাদনা রহীম শাহ, ফারাজী আহমদ সাঈদ, প্রকাশক বাংলাদেশ টেলিভিশনের
পক্ষে পিয়ার মোহাম্মদ) নামের একটি স্মরণিকায় দেখতে পাচ্ছি বিএনপিপন্থিদের
সঙ্গে সুর মেলাচ্ছেন বিটিভির কতিপয় কর্মকর্তাও। ১৯ জানুয়ারি ২০০৪-এ নতুন
কুঁড়ির পুরস্কার বিতরণী উপলক্ষে প্রকাশিত স্মরণিকায় বিটিভির তৎকালীন
উপমহাপরিচালক মাহবুবুল আলম জানাচ্ছেন eবাংলাদেশের সব শিশুরাই যেন তাদের
প্রতিভা বিকাশের পথ খুঁজে পায় তার জন্যই নতুন কুঁড়ি নামের এই স্বাগত সুবর্ণ
তোরণ নির্মাণ করেছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্টপ্রতি জিয়াউর
রহমান।f
তৎকালীন জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ আবু তাহের জানাচ্ছেন eএই উপলব্ধিতে
শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান প্রবর্তন করেন জাতীয় টেলিভিশন শিশুশিল্পী
পুরস্কার প্রতিযোগিতা eনতুন কুঁড়িf।
তৎকালীন পরিচালক (আন্তর্জাতিক) ও বিটিভির নতুন কুঁড়ির প্রধান সমন্বয়কারী আলী
ইমাম বলছেন eশহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একটি চমৎকার উদ্যোগ হলো eনতুন
কুঁড়িf। তৎকালীন পরিচালক (ডিজাইন) আবদুল মান্নান বলছেন, eসে সময় শহীদ
রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের একান্ত ইচ্ছায় এই শিশু প্রতিযোগিতার অনুষ্ঠান
শুরু হয়।f
রাজনীতিবিদ আর জ্ঞানপাপী বুদ্ধিজীবীদের কথা না হয় বাদই দিলাম কিন্তু
বিটিভির কর্মকর্তারাও কি অস্বীকার করবেন মুস্তাফা মনোয়ারকে?
অপরের কৃতিত্ব ছিনতাই করে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে কতকাল গ্লোরিফাই করা
যাবে? ইতিহাস সাক্ষী, সমসাময়িককালের পোষমানা লেখক-বুদ্ধিজীবীদের দ্বারা
রচিত ইতিহাস- ইতিহাসের আস্তাকুঁড়েই নিক্ষিপ্ত হয়। ইতিহাস-এর গ্রহণ-বর্জন
প্রক্রিয়াটি খুবই নির্মম-নিষ্ঠুর-নির্দলীয় এবং নিরপেক্ষ। ইতিহাস কখনোই
মিথ্যাকে সত্য হিসেবে ধারণ করে না। eনতুন কুঁড়িfর ক্ষেত্রেও ইতিহাস তার
ঐতিহাসিক ভূমিকাই পালন করবে।
@
[প্রথমপাতা] |
|