[প্রথমপাতা]
|
‘বিকেলের বিরুদ্ধে বিকেল উদ্যানের বিরুদ্ধে
উদ্যান’...
-লুৎফর রহমান রিটন-
গণ-জাগরণ মঞ্চের অতিপরিচিত কয়েকজনকে বেধড়ক পেটাচ্ছে পুলিশ—ফেসবুক এবং
টেলিভিশনের কল্যাণে দৃশ্যগুলো দেখে খুব মন খারাপ হলো। ওদের সবাইকে
চিনিও না, নামও জানি না। চিনি শুধু ইমরানকে। ছবিতে ইমরানের ঘাড় যেভাবে
ধরেছে একজন পুলিশ সেটা কেবল সন্ত্রাসী-ছিনতাইকারীদের বেলাতেই মানানসই
হয়। ২০১৩ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে এই পুলিশই ইমরানকে আন অফিসিয়াল প্রটোকল
দিয়েছে, তার নিরাপত্তায় সদা জাগ্রত থেকেছে। দেশের মানুষের আস্থা ও
ভালোবাসা অর্জনকারী ইমরান এবং ওর সহযোদ্ধাদের এই পরিণতি দেখতে আমার
মোটেও ভালো লাগছে না।
২০১৩-র পুরো ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে আমি শাহবাগ চত্বরে ছিলাম, প্রতিদিন।
খুব কাছ থেকে ওদের কর্মকাণ্ড দেখেছি। যদিও আমি মঞ্চে ওঠার ব্যাপারে
আগ্রহী ছিলাম না। কিন্তু মধ্য ফেব্রুয়ারির এক বিকেলে আমি দাঁড়িয়ে ছিলাম
জনতার সঙ্গে। আসাদুজ্জামান নূর অনেকটা জোর করেই আমাকে টেনে ভিড় ঠেলে
তাঁর সঙ্গে নিয়েগিয়েছিলেন সড়কের মাঝখানে। ওখানে আগেই ছিলেন নাসিরউদ্দিন
ইউসুফ বাচ্চু আর ফকির আলমগীর। বাচ্চু ভাই চাইলেন আমি যেনো ছড়া পড়ি
স্বকণ্ঠে। এমনিতে নিয়মিত আমার ছড়া ওখানে পাঠ করতেন কেউ না কেউ। কাজী
আরিফ তো ০৫ ফেব্রুয়ারি ঘাতক কাদের মোল্লা বিষয়ে ট্রাইব্যুনালের রায়ের
বিরুদ্ধে লেখা আমার তাৎক্ষণিক রচিত ছড়াটা ফেসবুক থেকে উদ্ধার করে সেইটা
পড়েছিলেন তার পরের দিনই। প্রায় আদালত অবমাননার পর্যায়ে পড়া আমার সেই
ছড়াটা বাংলানিউজ২৪ডটকম লম্বা সময় ধরে স্টিকি করে রেখেছিলো। মুহূর্তেই
ছড়াটা ছড়িয়ে পড়েছিলো সারাদেশে এবং পৃথিবীর নানা দেশের বাঙালিদের কাছে।
আমার ওই ছড়াটা ট্রাইব্যুনালে পেশও করা হয়েছিলো আমার বিরুদ্ধে আদালত
অবমাননার অভিযোগ তুলে। কিন্তু মাননীয় বিচারক আমার লেখাটিকে একজন নাগরিক
ও লেখকের মত প্রকাশ ও প্রতিবাদ হিশেবেই বিবেচনা করেছিলেন। তখন
প্রতিদিনই আমি একটি করে নতুন ছড়া লিখতাম আর সেটা আপলোড করতাম ফেসবুকে।
শাহবাগে সেই বিকেলে আমি যে ছড়াটা পাঠ করেছিলাম সেটার সঙ্গে কোরাসে অংশ
নিয়েছিলেন আসাদুজ্জামান নূর। ছড়ার পরে ফকির আলমগীরের সঙ্গে কোরাস
গণসঙ্গীতেও অংশ নিয়েছিলাম আমরা সবাই।
ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে প্রতিদিন বিকেলে আমি শাহবাগে অবস্থান শেষে বইমেলায়
যেতাম চ্যানেল আইয়ের লাইভ ‘বইমেলা সরাসরি’ অনুষ্ঠানটি উপস্থাপনার
জন্যে। সন্ধ্যার পর আবারো ফিরে আসতাম শাহবাগে। খুব কাছে থেকে আমি
অবলোকন করেছি তরুণদের বিস্ময়কর জাগরণের টুকরো এবং সামগ্রিক চিত্রসমূহ।
আমি দেখেছি শতো মানুষকে সহস্রে পরিণত হতে। আমি দেখেছি সহস্র মানুষকে
লক্ষে পরিণত হবার অভুতপূর্ব দৃশ্য। আমি দেখেছি আওয়ামী লীগের বাকোয়াজ
হানিফ থেকে শুরু করে তোফায়েল আহমেদ, মতিয়া চৌধুরী কিংবা অন্যান্য প্রথম
সারির নেতাদের নাকাল হবার দৃশ্যও। ওদের দিকে পানির প্লাস্টিক বোতল
(শূন্য)ছুঁড়ে মেরেছে বিক্ষুব্ধ তরুণরা। সীমাহীন অপমান হজম করে ফিরে
গেছেন আওয়ামী নেতারা। পরিস্থিতি তখনও আওয়ামী লীগের পুরো অনুকুলে ছিলো
না। নেপথ্যে ছাত্রলীগের সহায়তার বিষয়টা সাধারণ মানুষের কাছে প্রকট হয়ে
ওঠে মঞ্চে(মূল জটলায়) ছাত্রলীগের বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীক একজন নেতার
জবরদস্তি এবং অপ্রয়োজনীয় উপস্থিতির কারণে। নেতৃত্বে বাম ঠেকাতে
ছাত্রলীগের প্রাণান্ত প্রচেষ্টা ছিলো।
এই আন্দোলন কয়েকজন ব্লগারকে লাইমলাইটে নিয়ে আসে। ইমরান এইচ সরকার তাদের
একজন। ব্লগার হিশেবে ইমরানের খুব ব্যাপক পরিচিতি না থাকলেও
যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসি দাবির এই আন্দোলন অচেনা তরুণ ইমরানকে রীতিমতো
তারকা খ্যাতি দিয়েছিলো। তাঁকে বসিয়েছিলো নেতার আসনে। মুক্তিযুদ্ধের
স্বপক্ষশক্তির বিখ্যাত তরুণ ব্লগার অমি রহমান পিয়াল কিংবা আরিফ
জেবতিকের মতো খ্যাতি বা পরিচিতি না থাকলেও ইমরান হয়ে উঠেছিলেন নতুন
প্রজন্মের ব্লাগারদেরও প্রতীক। এই আন্দোলন দানা বেঁধেছে ব্লগারদের
কারণে। আর তাই বাংলাদেশের রাজনীতিতে ইন্টারনেট ব্লগ এবং ব্লগাররা পেলো
নতুন এক মাত্রা। যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁকামস্তিষ্ক ধর্মান্ধ জামাত-শিবির
সমর্থকরা ‘আমার দেশ’ পত্রিকার মাধ্যমে ব্লাগারদের নাস্তিক আখ্যা দিতে
তৎপর হয়ে উঠলো। তরুণদের এই আন্দোলনে রাজিব হায়দার ওরফে থাবা বাবা ওদের
নৃশংসতার প্রথম বলী হলো। দ্বিতীয় মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহিদের স্বীকৃতি
পেলো রাজিব হায়দার ওরফে থাবা বাবা। সংসদে তাঁর নামে শোক প্রস্তাব নেয়া
হলো। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজিব হায়দারদের বাড়িতে গিয়ে ওর
পরিবারের প্রতি সহমর্মিতা জানালেন। সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী
শাহবাগের তরুণদের আন্দোলনকে সমর্থন জানালেন এবং সুযোগ থাকলে তিনিও
শাহবাগে চলে আসতেন বলে অভিমত ব্যক্ত করলেন। শাহবাগের তরুণদের দাবি
ছিলো—ঘাতক কাদের মোল্লার যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের রায় বাতিল ঘোষণা করতে
হবে এবং তিন শতাধিক বাঙালি হত্যার (প্রমাণিত) দায়ে তাকে মৃত্যুদণ্ডে
দণ্ডিত করতে হবে। তরুণদের এই দাবি মেনে নেয়া সহজ ছিলো না। আর তাই সংসদে
নতুন আইন পাশ করতে হলো। এবং নতুন আইনের আওতায় কুখ্যাত কসাই কাদেরের
ফাঁসি কার্যকর হলো। এবং চার দশক পর কলঙ্কমুক্ত হলো বাংলাদেশ। শুধু এই
একটি কারণেই গণ-জাগরণ মঞ্চের তরুণরা মুক্তিযুদ্ধের চেতনাধারণকারী কোটি
বাঙালির হৃদয়ের উষ্ণ অভিবাদন অর্জন করেছেন।
দিনের পর দিন শাহবাগ থাকলো তরুণদের দখলে। রাত দিন ২৪ ঘন্টাই ওখানে
উচ্চারিত হতো অত্যাশ্চার্য শ্লোগান—জয় বাংলা। জয় বাংলা শ্লোগানটি
আওয়ামী লীগের দলীয় বলয় থেকে ষোলো কোটি মানুষের হৃদয় ও মস্তিষ্কে প্রবল
আলোড়ন তুললো দীর্ঘদিন পর। শাহবাগ থেকে সেই শ্লোগান তরঙ্গায়িত হয়ে আছড়ে
পড়লো সারাদেশে। এবং এক পর্যায়ে খুব দ্রুত সেই তরঙ্গের আগুন ছড়িয়ে পড়লো
পৃথিবীর নানা প্রান্তে। প্রজন্ম চত্বর গড়ে উঠলো পৃথিবীর গুরুত্বপূর্ণ
সব ক’টা শহরে। তখন বলা হতো—শাহবাগ ঘুমায় না। জেগে থাকে রাতদিন চব্বিশ
ঘন্টা। আমি দেখেছি শাহবাগকে জেগে থাকতে। দিনে কিংবা রাতে যখনই গেছি
ওখানে হাজার হাজার মানুষের উপস্থিতি দেখেছি। একদিন প্রচুর বৃষ্টি হলো।
একটা ছেলেমেয়েও শাহবাগ ছেড়ে যায়নি। ওরা বৃষ্টিতে ভিজেছে। রোদে পুড়েছে।
কিন্তু রাজপথ ছাড়েনি। পুলিশও তখন না ঘুমিয়ে রাতদিন পালা করে পাহারা
দিয়েছে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় শানিত নতুন প্রজন্মের বিস্ময়কর যোদ্ধাদের।
সেই পুলিশই আজ আক্রমণ করছে, নির্দয় ভাবে প্রহার করছে সেই তরুণদেরই!
আক্রমণকারী পুলিশের ওপর কোনো অভিযোগ নেই আমার। ওরা তো হুকুমের দাস বই
আর কিছু নয়! প্রশাসন আগে বলেছিলো পাহারা দিতে নিরাপত্তা দিতে ওরা
দিয়েছে। এখন বলেছে পিটিয়ে রক্তাক্ত করতে ওরা করেছে। কিন্তু কেনো এমন
হলো? গণ-জাগরণ মঞ্চের ওপর থেকে আওয়ামী লীগ তাদের সমর্থন প্রত্যাহার করে
নিলো কেনো?
গণ-জাগরণ মঞ্চের উন্মেষ ঘটেছিলো চিহ্নিত যুদ্ধাপরাধীদের ফাঁসির দাবি
নিয়ে। দাবিটি কার্যকর হয়েছে। একজন ঘাতকের ফাঁসি হয়েছে বাকিদের
বিচারপ্রক্রিয়া চলমান। কিন্তু আমরা লক্ষ্য করেছি ওরা শাহবাগ ছাড়তে
চাইছিলো না। নগরীর ব্যস্ততম একটি সড়ক মাসের পর মাস বছরের পর বছর অবরোধ
করে রাখা যায় না। দেশের প্রয়োজনে ওখানে বিভিন্ন সময়ে অবরোধকারী
ছেলেমেয়েরা জড়ো হতেই পারে কিন্তু তাই বলে অনন্তকাল ধরে তো তা চলতে পারে
না। আমরা লক্ষ্য করেছি জাগরণ মঞ্চ থেকে ‘জয় বাংলা’র পর ‘জয় বঙ্গবন্ধু’
বলা না বলা নিয়ে একটা দ্বন্দ্ব শুরু থেকেই বহমান ছিলো। এক পর্যায়ে এই
নিয়ে বিরোধ হলো ওদের মধ্যে। ফেসবুকে একদল আরেকদলকে গালাগাল করতে থাকলো।
সুইডেন থেকে কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে সাক্ষী দিতে আসা সাহসী
মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল হক অভিযোগ তুললেন কোটি টাকা চাঁদাবাজির। আমি
ইমরানকে চাঁদাবাজ বলতে বা ভাবতে রাজি নই। প্রমাণ ছাড়া এই ধরণের ঢালাও
অভিযোগের কোনো মূল্য নেই। নিজেদের দ্বন্দ্বগুলো প্রকট হতে হতে এক
পর্যায়ে সামান্য কয়েকটি চেয়ার এবং তাতে বসা নিয়ে পরস্পরকে হামলার ঘটনা
ঘটলো। থানায় মামলা পর্যন্ত গড়ালো। অভিযোগের তীর ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে।
ছাত্রলীগের ছেলেরা হামলা করেছে বললেন ইমরান স্বয়ং। একটা বিশাল
আন্দোলনের সমস্ত কৃতিত্ব গণ-জাগরণ মঞ্চের কয়েকজন তরুণের হাতে চলে গেলে
ছাত্রলীগ তো অস্থির হবেই। কিন্তু ইমরান ছাত্রলীগের সরাসরি বিরোধিতায়
গেলো কেনো বা যেতে বাধ্য হলো কেনো? ছাত্রলীগকে ছাড়া তো ফেব্রুয়ারিতে
শাহবাগকে নিরাপদ রাখা ইমরানদের পক্ষে মোটেও সম্ভব ছিলো না।
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন হল থেকে যে ছেলেমেয়েরা শাহবাগের উন্মুক্ত সড়কে
চব্বিশ ঘন্টা মাটি কামড়ে পড়েছিলো তাতে ছাত্রলীগের বিশাল অংশগ্রহণকে
অস্বীকার করার উপায় নেই, ছিলো না। শ্লোগানদাতা এবং কোরাসশ্লোগানে শামিল
হওয়া ছেলেমেয়েরা কেউ নন প্রফেশনাল ছিলো না। হ্যাঁ ওদের সঙ্গে অজস্র
অরাজনৈতিক ছেলেমেয়ে এসে কণ্ঠ মিলিয়েছে। কিন্তু মূল ফ্লো-টা তো ছাত্রলীগ
এবং বামপন্থী ছাত্র সংগঠনের ছেলেমেয়েরাই ধরে রেখেছিলো। আর এতো বড় একটা
জমায়েতকে প্রতিদিন প্রতিমুহূর্তে সচল-সজীব রাখতে টাকার তো দরকার হবেই।
যে মাইকে শ্লোগান উচ্চকিত হচ্ছে সেটার ভাড়া, সাউন্ড সিস্টেমের ভাড়া,
সন্ধ্যার পর থেকে সারারাত এলাকাটা আলোকোজ্জ্বল রাখতে লাইটের ভাড়া,
চেয়ার-টেবিল ডেকোরেটরের ভাড়া তো দিতেই হবে কোনো না কোনো উপায়ে। রাজপথে
অবস্থান নেয়া ছেলেমেয়েদের পানি পান করাতে হবে। সকালের নাস্তা, দুপুরের
খাবার, বিকেলের নাস্তা, রাতের খাবার এগুলোরও তো খরচ লাগে! পোস্টার
ব্যানার সড়কে আলপনা কিংবা ফুলের মানচিত্র আঁকতেও খরচ লাগে। বিশাল বিশাল
পতাকা বানাতেও খরচ লাগবেই। জাহানারা ইমামের বিশাল প্রতিকৃতি বানানো এবং
টানানোর খরচটা? সন্ধ্যায় চমৎকার যে মশালগুলো নিয়ে হাজির হয়েছিলো একদল
তরুণ সেগুলোর প্রতিটির নির্মাণ খরচ আছে না? এমনকি ছোট্ট একটা মোমবাতি
এবং ওটা প্রজ্জেলিত করতে দেশলাইও তো আছে! এগুলো তো এমনি এমনি আকাশ থেকে
বা মাটি ফুঁড়ে আসে নি! নানান প্রক্রিয়ায় টাকাগুলোকে আসতে হয়েছে।
ব্যক্তিপর্যায় থেকে বিভিন্ন সংগঠন-সংস্থা এই ব্যয়গুলো বহন করেছে।
আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকেও প্রচুর টাকার যোগান এসেছে। আমি নিজেই ওদের
একাধিক সোর্সকে দেখেছি ওরা এসেছেন নগদ টাকার যোগান দিতে। ইমরান কেনো
এগুলো ভুলে গেলেন?
ফেব্রুয়ারি মাসজুড়ে ইমরান নানা কর্মসূচি ঘোষণা করতেন। সেই কর্মসূচি
সারা দেশে পালিত হতো। ইমরান যদি বলতেন আগামীকাল সারাদেশে স্কুলগুলোয়
ছাত্রছাত্রীরা জাতীয় সঙ্গীত গাইবে তো শিক্ষক এবং ছাত্রছাত্রীরা সেটা
গাইত। ইমরান যদি বলতেন আগামীকাল বিকেলে তিন মিনিট নিরবতা পালন করা হবে
তো সারাদেশের মানুষ নিরবতা পালন করতেন। ইমরান যদি বলতেন আগামীকাল
সন্ধ্যায় মোমবাতি প্রজ্জ্বলন করা হবে দেশব্যাপি। দেশের মানুষ তো বটেই
আমরা দেখেছি স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও সেই কর্মসূচিতে শামিল
হয়েছেন। ইমরান যদি ভেবে থাকেন তাঁর একক নির্দেশে স্কুলগুলো তাঁর দেয়া
কর্মসূচি পালন করেছে তাহলে সেটা চরম বোকামি হবে। প্রশাসন বা শিক্ষা
মন্ত্রণালায় গ্রীন সিগনাল দিয়েছে বলেই কর্মসূচিটি পালিত হয়েছে। বুঝতে
হবে প্রশাসন কেনো গ্রীনসিগনালটি দেয়েছে। না বুঝলে যেটা হবার সেটা এখন
হচ্ছে। ইমরানরা সরাসরি জড়িয়ে পড়েছেন ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগের
বিরোধিতায়। সুতরাং ছাত্রলীগ এবং আওয়ামী লীগ ইমরানদের টাইট দিচ্ছে। এই
প্রক্রিয়ায় ব্যবহৃত হচ্ছে পূর্বচর্চিত ঘৃণ্য পুলিশি পদ্ধতি। ইমরানদের
অসম্মান এবং আহত করার প্রতিবাদে সারাদেশের স্কুলসমূহে এক মিনিটের একটা
কর্মসূচি ইমরান ঘোষণা করুক তো। আমি জানি ইমরান তা করবেন না। কারণ ইমরান
জেনে গেছেন তাঁর মাথার ওপর থেকে হাতটা সরে গেছে। এখন, নতুন কোনো
বিশালহস্ত যদি ইমরানদের মাথায় হাত রেখে থাকেন তাহলে হয়তো আমরা আগামীতে
আরো নতুন কিছু খেলাধুলা দেখতে পাবো।
ইমরানদের একগুঁয়েমীপূর্ণ বোকামিতে আমি হতাশ এবং কিছুটা বিব্রত।
পাশাপাশি ইমরানদের ওপর ছাত্রলীগ ও পুলিশের আক্রমণে আমি লজ্জিত ও
ব্যথিত।
জামাত-শিবির এবং যুদ্ধাপরাধী বিরোধী একটা অনন্যসাধারণ প্লাটফর্মকে এক
বছর পরেই ক্রমশঃ আওয়ামী বিরোধী প্লাটফর্মে রূপান্তরিত হতে দেখে আমি
মর্মাহত।
আওয়ামী লীগের মতো অভিজ্ঞ একটি রাজনৈতিক দল ইমরানদের মতো অনভিজ্ঞ
তরুণদের দলে না টেনে বিরোধী স্রোতের দিকেই বা ঠেলে দিচ্ছে কেনো? ডেল
কার্নেগির ‘ক্ষতিকে লাভে রূপান্তরিত করণ’ থিওরি মোতাবেক আওয়ামী লীগের
পরোক্ষবিরূদ্ধশক্তি হিশেবে আত্মপ্রকাশকারী ‘একাত্তরের ঘাতক দালাল
নির্মুল কমিটি’কে আওয়ামী লীগ কৌশলে তাদের স্বপক্ষ শক্তি হিশেবে
রূপান্তরিত করেছিলো। আপদকে সম্পদে পরিণত করেছিলো।
গণ-জাগরণ মঞ্চের ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগ অতীতের মতো কৌশুলী না হয়ে এমন
মারমুখী কেনো?
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|