আমাদের মঞ্চ এবং টিভির দাপুটে অভিনেতা খালেদ খান ওরফে যুবরাজ চলে
গেলেন। অসুস্থতার কারণে এমনিতেই তিনি লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন
দীর্ঘদিন। সর্বশেষ বারডেম হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে থাকলেন কিছুদিন।
যুবরাজকে বিদায় জানাতে মানসিক প্রস্তুতি নিয়েই রেখেছিলাম। কিন্তু
যুবরাজের আনুষ্ঠানিক মৃত্যু ঘোষণার পর তাঁর প্রস্থানকে মেনে নিতে কষ্ট
হচ্ছে। আমার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে যুবরাজের কন্যা জয়িতার
বিপন্ন আর বিষণ্ণ মুখটা। বাবার আদর থেকে চিরদিনের জন্যে বঞ্চিত হলো
মেয়েটা। আমার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছে যুবরাজের স্ত্রী আমার
ছেলেবেলার বন্ধু মিতা হকের বিপন্ন আর বিষণ্ণ মুখটা। মিতাকে শান্তনা
দেবার ভাষা খুঁজে পাচ্ছি না। যুবরাজের অনুজ শাহীন খানের বিষণ্ণ মুখটাও
আমাকে কষ্ট দিচ্ছে।
প্রিয় যুবরাজ আপনাকে আমি খুবই ভালোবাসতাম কিন্তু সেই কথাটা আপনাকে বলা
হয়নি কখনো। কতো বর্ণাঢ্য সময় কেটেছে আমাদের! কতো আড্ডা দিয়েছি
বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে! কতো তর্ক করেছি শিল্প-সাহিত্য মঞ্চ ও টিভি নাটক
নিয়ে! আমার যাবতীয় খোঁচাখুঁচিমিশ্রিত চটুল সমালোচনা আপনাকে আহত না করে
বরং বিপুল বিনোদনে ভাসিয়ে নিতো। আপনি আমাকে থামাতে না পেরে ছুঁড়ে দিতেন
আপনার সবচে পপুলার সংলাপটি—‘ছি ছি আপনি য়্যাতো খারাপ!’
মঞ্চে ‘দেওয়ান গাজীর কিসসা’, ‘অচলায়তন’, ‘নুরুলদীনের সারা জীবন’,
‘ঈর্ষা’, ‘দর্পণ’, ‘গ্যালিলিও’ কিংবা ‘রক্তকরবী’ নাটকে আপনার প্রাণবন্ত
পারফরম্যান্স দেখেনি যারা তারা আপনাকে মনে রাখবে বিটিভির 'এইসব
দিনরাত্রি'র ম্যাজিশিয়ান আনিস কিংবা 'রূপনগর'-এর কুখ্যাত সন্ত্রাসী
হেলাল চরিত্ররূপদানকারী দুর্দান্ত অভিনেতা হিশেবে।
বিদায় যুবরাজ। যেখানেই থাকুন উচ্ছ্বল আর হাস্যোজ্জ্বল থাকুন। বিষণ্ণতা
আপনাকে মানায়নি কক্ষনোই। আপনার অন্তিমযাত্রায় আপনার অনন্য সেই
হাসিমুখটিকেই আমি ধরে রাখলাম আমার হৃদয়ের সবচে প্রিয়তম কুঠুরিতে। বিদায়
বন্ধু।
২০ ডিসেম্বর ২০১৩