সাম্প্রতিক সংবাদ

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

পেছনে ফেলে আসি -০৩: গুডবাই সাঈদ ভাই

 

-লুৎফর রহমান রিটন- 

 

 

চলে গেলেন আবু আল সাঈদ। আমার খুবই প্রিয় একজন মানুষ। সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। ইন্টারনেটে তাঁর প্রয়ানের খবরটি পাঠ করে বিষণ্ণ হয়ে পড়েছি। বিস্ময়কর ঘটনা, মাত্র চব্বিশ ঘন্টা আগে, ঠিক এই সময়টাতেই অটোয়ার লিংকনফিল্ড মল-এ বন্ধু ফারুক হোসেনের সঙ্গে এই সাঈদ ভাইয়ের কথাই বলেছিলাম আমি। মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নানান আলাপের এক পর্যায়ে প্রসঙ্গক্রমে এসেছিলো তাঁর সাহসের গল্পটি। ১৯৭১-এ বরিশালে সুইসাইড স্কোয়াড গঠনের জন্যে প্রকাশ্য জনসভায় ভলান্টিয়ার আহবান করা হলে প্রথম হাতটি তুলেছিলেন দুঃসাহসী দেশপ্রেমিক এক তরুণ, যার নামটি আবু আল সাঈদ। তবে বরিশালের মানুষজন তাঁকে চিনতো নান্টু নামে। রাজপথে উন্মুক্ত মঞ্চে দরাজ গলায় গাইতেন গণসঙ্গীত। পরবর্তীতে দৈনিক সংবাদের মেধাবী রিপোর্টার। ‘আওয়ামী লীগের ইতিহাস’ নামের গ্রন্থের লেখক। তাঁর লেখা আরেকটি বই ‘দেশবন্ধু থেকে বঙ্গবন্ধু’। কুচক্রি খন্দকার মোশতাকের ওপর অসামান্য একটি প্রামান্য গ্রন্থ রচনা করেছিলেন— নাম ছিলো সম্ভবত ‘বঙ্গভবনে মোশতাকের ৮১দিন’। কাইয়ুম চৌধুরীর প্রচ্ছদ। বইটা আমার কাছে ছিলো। কেউ একজন পড়তে নিয়ে আর ফেরত দেননি। টেলিভিশনের জন্যে নাটক লিখতেন। নিজে অভিনয়ও করতেন কখনো কখনো। আফজাল হোসেন নির্মিত ‘আলো আলো বেশি আলো/শব্দে শব্দে মন মাতালো/অলিম্পিক অলিম্পিক অলিম্পিক ব্যাটারি’তে, মিতা নূর নামের মডেল যেটায় চমৎকার নেচেছিলো, অভিনয় করেছিলেন আবু আল সাঈদ, ডিরেকটরের ভূমিকায়। সেই বিজ্ঞাপনে, যথাযথ আলোর অভাবে চলমান শুটিং কাট করার পর সেটে বসা ডিরেকটর মহা বিরক্তিতে একটি সংলাপ উচ্চারণ করেছিলেন। আর সংলাপটি ছিলো—আমি আগেই বলেছি—উজ্জ্বল আলো চাই, চাই জোরালো শব্দ। ......

আহারে সাঈদ ভাই! পৃথিবীর সমস্ত আলো আর শব্দের ভুবন থেকে আপনিও যাত্রা করলেন অনন্ত অভিমুখে! জানিনা সেখানে পর্যাপ্ত আলো আর শব্দের সিম্ফনি আছে কী না!

আপনার সঙ্গে আমার কতো স্মৃতি! সমস্ত স্মৃতি ছাপিয়ে একটা স্মৃতিই এই মুহূর্তে আমার ঝাপসা হয়ে ওঠা চোখের সামনে হাজির হচ্ছে বারবার। একই গাড়িতে ঢাকা থেকে আমরা যাচ্ছি ভালুকা। আমাদের বন্ধু চয়ন ইসলামের বিশাল স্পট—তেপান্তরে। পার্টি পার্টি পার্টি। বিপুল খানাখাদ্য-পান আর গানের দুর্দান্ত সেই রাতে বর্ণিল ঝিকিমিকি আলোর ফোয়ারার নিচে ডান্সফ্লোরে আপনার সংগে নৃত্যে শামিল হয়েছিলাম আমিও। কান ফাটানো জোরালো শব্দে তখন বাজছিলো আইউব বাচ্চুর বলিষ্ঠ কণ্ঠের গান—আমি কষ্ট পেতে ভালোবাসি/তাই তোমার কাছে ছুটে আসি...। আপনার স্টেপিং-এ সামান্য হেরফের হচ্ছিলো, সেটা নিয়ে আমার তীর্যক হাস্য আর ভাষ্যের জ্বালাতন থেকে রেহাই পেতে কী কাণ্ডটাই না করছিলেন আপনি! এলোমেলো স্টেপিংগুলোকে আপনি কাভার দিচ্ছিলেন তাৎক্ষণিক অসামান্য অভিনয় দক্ষতায়।

আহারে! সাঈদ ভাই! আমাদের সেই স্মৃতিময় মায়াবী রাতের উচ্ছ্বলতায় উজ্জ্বল আলো আর জোরালো শব্দের যোগানটি ছিলো পর্যাপ্ত! এখন, যেখানে গেছেন সেখানে যেনো আপনার প্রার্থিত উজ্জ্বল আলো আর জোরালো শব্দের যোগানটি থাকে। এইটুকু শুভ কামনা ছাড়া আপনাকে আর কিছুই যে দেবার নেই সাঈদ ভাই!

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ