[প্রথমপাতা]

 

 

 

ধারাবাহিক উপন্যাসঃ হৃদয়ের এপিঠ-ওপিঠ (পর্ব-১৪)

  

- শাশ্বত স্বপন -

 

যেমনি তার চেহারা, তেমনি তার কথার স্বর। সবাই তাকে ভালোবাসত। সে ততক্ষণই বাসায় পড়ত যতক্ষণ শিক্ষকরা তার পাশে বসে থাকত। সেই কারণেই তার টিচার এর সংখ্যা সাবজেক্ট এর চেয়ে বেশি ছিল। টিফিন পিরিয়ডে সে টাকা খুব একটা খরচ করতে পারত না। কারণ তার প্রিয় খাবারগুলো বাসা থেকেই সরবরাহ করা হত। আব্বু, আম্মু বা আত্মীয়দের দেওয়া টাকা তার ব্যাগেই থাকত।

স্কুলে একদিন দোতলার সিঁড়ি বেয়ে উঠতে গিয়ে হঠাৎ ন্যান্সি নিচে পড়ে যাচ্ছিল। ঐ মুহূর্তে ফ্রান্সিস এসে তাকে ধরে। না ধরলে নিচে পড়ে তার মাথা ফেটে যেত। সে কিছুক্ষণ ফ্রান্সিসের দিকে তাকিয়েছিল। ন্যান্সি তার সাথে কথোপকথনবিহীন কিছু স্মৃতি মনে করতে লাগল। পিটি করার সময় সে এই ছেলেকে দেখত। সে ভালো কমান্ড করতে পারে। মাঝে মাঝে ধাক্কাও লেগে যেত ছুটোছুটি করতে গিয়ে। তবে ন্যান্সি ছেলেটাকে এড়িয়ে চলত। কেন যে এড়িয়ে চলত--তা সে নিজেও জানে না। পাশাপাশি চলমান দুইটা গাড়ি বাসা থেকে স্কুলে আসত। আবার স্কুল থেকে বাসায় যেত। গাড়ি গাড়িকে দেখত। যাত্রীরা দেখেও না দেখার ভান করত। ছাদ থেকে দু’জন দু’জনকে লক্ষ্য করত। কিন্তু কখনও কোন ইঙ্গিত করত না। তবে একদিন ফ্রান্সিসকে পলিথিনের ব্যাগ দিয়ে ঘুড়ি উড়াতে দেখে ন্যান্সি ফোঁকলা দাঁতে হেসেছিল। ফ্রান্সিস ছাদ থেকে তার দিকে তাকাতেই সে হাসি থামিয়ে মায়ের কাছ ছুটে এসে গলা জড়িয়ে ধরে। তাদের ছাদে ফুলের বাগান। মৌমাছি আর প্রজাপতি ফুলে ফুলে উড়ে বেড়াচ্ছে। ন্যান্সি দৌঁড়ে প্রজাপতি ধরতে যায়। হৈহুল্লোর আর আনন্দ নিয়েই তার জীবন।

আজ ফ্রান্সিস না ধরলে নির্ঘাত মাথা ফেটে যেত। স্কুলে একদিন ধাক্কা লেগেছিল। ন্যান্সি রাগে ব্লাইণ্ড বয় বলেছিল। পলিথিনের ঘুড়ি উড়াতে দেখে সে হেসেছিল। আজ, এখন সব তার মনে পড়ছে। সে দৌড়ে ক্লাসে চলে গেল। একটা ধন্যবাদও জানাল না। এরপর থেকে শুরু হলো দু’জনার যাত্রা। চোখাচোখি করে গাড়িতে ওঠা। ছাদ থেকে দু’জন দু’জনকে দেখে নির্বাক দর্শকের মতো। এভাবে চলতে লাগল এক বছর। দু’জনে ক্লাস নাইন-এ উঠল। গানের আসরে ফ্রান্সিস একদিন বলল, “ইউ আর ভেরী সুইট গার্ল, অ্যাই লাভ ইউ।” ন্যান্সি কেন জানি রেগে গেল। অবশ্য তার কিছু কারণও ছিল। টিফিন পিরিয়ডের পর ক্লাসে আসলে প্রায়ই ন্যান্সি তার ব্যাগের উপর একটা করে ফুল পেত। সে প্রথম দুই দিন কিছু মনে করেনি। কিন্তু বান্ধবীরা যখন তাকে নিয়ে হাসি-ঠাট্টা শুরু করল তখন সে মাইন্ড করল। আজও এমন এক ঘটনা ঘটেছে। কে ফুল দিয়ে যায়--তা সে নিজেও জানে না। বিদেশি ইংরেজ মেয়েরা তাকে আজ সরাসরি জিজ্ঞাসা করল, হোয়াট ইজ দ্যা মেটার, ন্যান্সি। হু ইজ দ্যা বয়? প্লিজ ছে এ্যাজ। ন্যান্সি রেগে বলল, আই ডন্ট নো।
--নো, ইউ আর লায়ার।
--প্লিজ, ইউ বিলিভ। আই ডন্ট নো।

সেই রাগ আর ফ্রান্সিসের মিষ্টি কথা এই দুয়ে মিলে সে রেগে গেল। ম্যাডামের দিকে তাকিয়ে চিৎকার করে উঠল। ম্যাডাম তার দিকে তাকাল।
--হোয়াট ইজ দ্যা মেটার, ন্যান্সি? হোয়াই আর ইউ সাউটিং?
ন্যান্সি ফ্রান্সিসের দিকে তাকাল।
--ফ্রান্সিস ডিসটার্বিং?
ন্যান্সি কোন কথা বলল না। মাথা নিচু করে রইল। সে বুঝল, চিৎকার করা তার ঠিক হয়নি। রাগত চোখে ম্যাডাম ফ্রান্সিসকে দূরে বসতে বলল। বান্ধবীরা কানাকানি করতে লাগল। ফ্রান্সিস গম্ভীর হয়ে অন্যত্র চলে গেল। সবাই চলে গেলে ফ্রান্সিস ন্যান্সির বান্ধবীকে দিয়ে তাকে ডেকে আনে। ন্যান্সি ফ্রান্সিসের নিকট এসে মাথা নিচু করে থাকে। ফ্রান্সিস উত্তেজিত হয়ে কথা বলে, ইউ আর মাইন্ডলেস। ইউ আর ফুলিস। ওয়াট ইজ ফলস অফ মাইন? আই লাভ ইউ? ইজ দি মাই ক্রাইম? আই ডন্ট টক টু ইউ! ইউ আর ক্রুয়েল গার্ল। আই হেট ইউ।

ফ্রান্সিসের চোখে জল এসে যায়। ন্যান্সি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে থাকে। জীবনে এত বড় কথা কেউ বলেনি। এত রাগ কেউ তাকে দেখায়নি কোনদিন। ফ্রান্সিস চলে গেল। ফিরে আর তাকাল না। ন্যান্সি খুবই কষ্ট পেয়েছে। ন্যান্সির হৃদয়ে শুরু হলো পরিবর্তন। এই ঘটনার পর তার ব্যাগের উপর আর কখনও ফুল জমা পড়েনি। ফ্রান্সিস ন্যান্সিকে কাছে পেলে মাইগুলেস, ক্রয়েল গার্ল--এই দুইটা শব্দ উচ্চারণ করে। ন্যান্সি রাগে ক্ষোভে ফুলে উঠে। কিছু বলতে পারে না। ন্যান্সি বাসায় এসে পুরো ঘটনা তার মাকে জানায়। রেহানা ফ্রান্সিসকে ডেকে এনে ন্যান্সির সাথে আপোষ করিয়ে দেয়। দু'’জনে খুশি হয়ে হাসতে থাকে। তারা প্রতিজ্ঞা করে আর কখনও মনোমালিন্য হবে না। শুরু হলো ন্যান্সির কথা বলা। সে এত বেশি কথা বলে যে, ফ্রান্সিস কথা বলার সুযোগও পায় না। দু’জনে দু’জনার বাসার টেলিফোন নং বিনিময় করল। শুরু হল নতুন কিছু--যা প্রেম নামে বিশেষিত। অথচ প্রেম কি জিনিস তারা দু’জনে তা বুঝেও না। বুঝার বয়সও হয়নি। শুধু বন্ধু হিসেবে দু’জন দু’জনা। ফ্রান্সিসের আব্বা ও আম্মা বেশির ভাগ সময় অফিস ও অন্যান্য কাজে বাইরে থাকত। বাসায় ফ্রান্সিস, ম্যাক্সিম ও মেরিওনা থাকত। ম্যাক্সিম ও মেরিওনা এক রুমে পাশাপাশি দু’টি সীটে, ফ্রান্সিস অন্য রুমে থাকত। তার আম্মা ও আব্বার রুমে একটা এবং তার রুমে একটা টেলিফোন ছিল।

ফ্রান্সিস কোন এক বিকাল বেলা ছাদে উঠল। দেখল ন্যান্সি আজ ছাদে নাই। অথচ প্রতিদিনই সে ছাদে উঠে। ফ্রান্সিস নিচে চলে গেল। ফোন করল। ন্যান্সিও এই আশাই করেছিল।
--হ্যালো, ন্যান্সি।
--ইয়েস, ন্যান্সি। হাউ আর ইউ? আই এ্যাম সিক। হেড পেইন করছে।
--মীনস?
--ব্রেইন ট্রাবল।
--হোয়াই?
--ডন্ট নো।
--ডক্টর?
--ইয়েস, ডক্টর কেম এণ্ড ওয়েন্ট এওয়ে।

প্রতিদিন তারা কমপক্ষে দশ বার টেলিফোন করত। রাতে ঘুমাবার আগে টেলিফোনে কথা বলতে বলতে ন্যান্সিই আগে ঘুমিয়ে যেত। যখন ফ্রান্সিস বুঝত, ন্যান্সির ঘুম ঘুম অবস্থা তখন সে টেলিফোন রেখে দিত। মিঃ ও মিসেস চৌধুরী বেড়াতে গেলে ন্যান্সিকে সঙ্গে নিত। সে আবার ফ্রান্সিসকে নেওয়ার জন্য বায়না ধরত। ফ্রান্সিসের আব্বার সাথে মিঃ চৌধুরী ও মিসেস চৌধুরীর অস্তরঙ্গ সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। মিঃ চৌধুরী জার্মানীতে ব্যবসার কারণে গেলে ফ্রান্সিসদের নিজস্ব বাড়িতে গিয়ে ওঠে। মিঃ চৌধুরী ফ্রান্সিসদের বিরাট সহায়-সম্পত্তি দেখে এসেছে। এদিকে ফ্রান্সিসের মা বাঙালি হওয়ায় রেহানার সাথে খুব ভাল সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। ফ্রান্সিসের মা দীপা হিন্দু ছিল। জার্মানী গিয়ে বিয়ে করার পরে খ্রীস্টান হয়ে যায়।

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ