[প্রথমপাতা]

 

 

 

পাহাড়-ঝরণা-ছড়া-মেঘ-কুয়াশা-নদী আর রহস্যময় পাহাড়
 
 

- শাশ্বত স্বপন -

 

প্রকৃতির পাহাড়-ঝরণা-ছড়া-মেঘ-কুয়াশা-নদী আর রহস্যময় পাহাড় ঘেরা দীঘির অপার সৌন্দর্যের টানে পুরান ঢাকার বন্ধুরা মিলে এ বছরের শুরুতে বেড়াতে গিয়েছিলাম বান্দরবানের বগালেক, কেওকারাডং আর জাদিপাই ঝরণায়। আর সেই সাথে বোনাস হিসাবে পেয়ে যাই বান্দরবনের রাজবাড়ী মাঠের ঐতিহ্যবাহী রাজস্ব আদায়ী অনুষ্ঠান বোমাং রাজপূণ্যাহ্ উৎসবের মেলার শেষ বিকাল ও রাতটি। প্রায় ছয় মাস ধরে নানা পরিকল্পনার মধ্য দিয়ে গত ১৯ শে জানুয়ারী বৃহস্পতিবার রাতে বাস যোগে বন্ধুরা সদলবলে যাত্রা করি মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্যে ঘেরা রহস্যময় পাহাড় কন্যার দেশ বান্দরবনের উদ্দেশ্যে। এ যাত্রার প্রধান লক্ষ্য ছিল কেওক্রাডং এর সর্বোচ্চ চূঁড়ায় উঠে পুরান ঢাকার পরিবেশ রক্ষার শপথ স্মরণ করে চূঁড়ার ময়লা-আবর্জনা পরিষ্কার করা। সেই সাথে বান্দরবন শহর, বগালেক আর যাদিপাই ঝরণায় বেড়ানোর বিষয়গুলো পরিকল্পনার মধ্যে ছিল। অপেশাদার এ যাত্রী দলের প্রায় সকলেই অভিযানের পূর্বে পুরো এক মাস ভোর বেলা উঠে ব্যায়াম করতাম। তারপরও বগালেক থেকে যাদিপাই ঝরণা পর্যন্ত একদিনে ১৩ ঘন্টায় আসা-যাওয়া প্রায় ৫২ কি:মি: উচুঁ-নিচু-আঁকা-বাঁকা পাহাড়ী পথ অতিক্রম করতে সবারই ভয়ানক কষ্ট হয়েছিল। আমাদের ১০ সদস্যের ২ জন বগালেকের ২৭০০ ফুট উঠেই অভিযানের সমাপ্তি টেনে লেকের আশেপাশেই বেড়ানো শুরু করে। আরো ৩ জন কেওক্রাডং এর পথ থেকেই ফিরে আসে বগালেকে। গাইডসহ বাকী ৬ জনের টিম শেষ পর্যন্ত অভিযান সফলভাবে সম্পন্ন করি।

রাত ১১টায় সায়দাবাদ থেকে ইউনিক পরিবহনে চড়ে আমরা শুক্রবার সকাল ৮:৩০-এ বান্দরবান শহরে এলাম। দলনেতা মেহেদীর বন্ধু আবুল হোসেন এ শহরের বাসিন্দা, তার পরিচিত এক হোটেলে সকালের প্রাত:ক্রিয়া শেষ করি। পরিকল্পনা মত আবুল হোসেন পর্যাপ্ত শুকনো বিস্কুট নিয়ে সিএনজি করে রুমা বাস স্টেশন, হাফেজঘোনায় আমাদের পৌঁছে দেয়। এখানে এক রেস্টুরেন্টে হালকা নাস্তা করি। রুমা বাস স্টেশন থেকে যেতে হবে কৈক্ষ্যংঝিরি। ঠিক ৯:৩০-এ সিটিং গাড়ীতে করে আঁকা-বাঁকা-উঁচু-নিচু পিচ ঢালা ১০-১২ ফুটের প্রশস্ত রাস্তা দিয়ে মাঝে মাঝে কাত হয়ে পড়ি পড়ি করে দু’পাশে পাহাড় আর গিরিখাদ দেখতে দেখতে ১১:৩০-এ কৈক্ষ্যংঝিরিতে এলাম। পা পথে পাহাড়ী যাত্রা শুরু হল। এখান থেকে হেঁটে দক্ষিণের ঢালু পাহাড়ী পথ বেয়ে প্রায় শুকিয়ে যাওয়া সাঙ্গু নদীতে এসে ট্রলারে উঠে দেড় ঘন্টায় রুমা বাজারে এসে পৌঁছলাম। আবুল হোসেনের মাধ্যমে ঠিক করা গাইড সুমন দত্ত আমাদের ট্রলারের সামনে এসে হাজির।

বগালেকের পথে
রুমা বাজারে লাঞ্চ করে সেনাবাহিনীর পাহাড় ক্যাম্পে আমরা সবাই এলাম। পাহাড়ের ক্যাম্পে উঠা অভিযানের প্রথম অভিজ্ঞতা। নাম, ঠিকানা, রেজি: লিখার পর জীপে করে কিছুদূর এসে সেনাবাহিনীর আরেকটি ক্যাম্পে এসে রেজি: খাতায় স্বাক্ষর করলাম। দুই ক্যাম্পে প্রায় ঘন্টাখানেক সময় লাগল। বিদেশীদের ক্লিয়ারেন্স পেতে আরো বেশী সময় লাগে। আর্মি সদস্যরা সবাইকে পাঠ দিতে লাগলেন। মনে হল, আমাজান বা আফ্রিকার কোন জঙ্গলে যাচ্ছি অথবা যেন, পাসপোর্ট নিয়ে অন্য দেশের ভিতর দিয়ে আমাদের কোন ছিটমহলে যাচ্ছি অথবা এ যেন, আমার দেশ নয়। ৪টার দিকে আমাদের জীপ বগালেকের পাদদেশে এসে থামল। মনে হল, পাহাড়ী জঙ্গল আর ভয়ঙ্কর গিরিখাদের মধ্য দিয়ে কোন চিত্রশিল্পীর আঁকা সরু আঁকা-বঁাকা পথ দিয়ে আমরা বগালেকের পাদদেশে এলাম। গাইডের ডাকে ঘোর কাটল আমাদের। শীতের জামাকাপড় খুলে সর্ট প্যান্ট আর পাতলা গেঞ্জি পড়ে কিন্ডার গার্ডেন স্কুলের ছাত্রের মত পিঠে ব্যাগ নিয়ে গাইডের দেওয়া দেহ সমান কচি বাঁশে ভর দিয়ে শুরু হল প্রথম পাহাড় অভিযান রিহার্সেল। সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ২৭০০ ফুট উচ্চতায় উঠতে গিয়ে সবাই বিভিন্ন উচ্চতায় হারিয়ে যাই। মোবাইলের নেটওয়ার্ক আসে আর যায়। প্রায় এক ঘন্টার ক্লান্তি শেষে সবাই বগালেক পাহাড়ে উঠে। পাহাড়ের উপড়ে পাহাড় ঘেরা মনোরম লেক, আদিবাসী বম, মারমাদের বসতি আর সবুজ ঢেউ খেলানো বৃক্ষরাজি পরিবেশটাকে একেবারে স্বর্গ বানিয়ে রেখেছে।

এখানেও আর্মি ক্যাম্প আছে। গাইড আমাদের নিয়ে রিপোর্ট করে আবুল হোসেনের টেলিফোনে বুক করা লেকের দক্ষিণ পাশে ‘সিয়াম দিদি’র বাঁশের তৈরী নিসর্গ কটেজে উঠল। এক রুমে সবাই ক্লান্তি আর ভালোবাসায় মাখামাখি করে বিশ্রাম নিতে থাকি। বিকাল আর সন্ধায় লেকটা ঘুরে লেক সম্পর্কে নানা উপকথার গল্প নিয়ে রাতে আর্মি ক্যাম্পে খেয়ে ১০টার দিকে নিসর্গ কটেজে ঘুমিয়ে পড়ি ।

কেওক্রাডং-এর পথে
শনিবার, সকাল ৬:৪০। প্রধান লক্ষ্যে যাত্রা। বলে রাখা ভাল, আমাদের দলের ম্যানেজার কাম লিডার হল মেহেদী হাসান, সৌখিন ফটোগ্রাফার, সব ছবি তারই তোলা। যদিও তার এটা প্রথম যাত্রা কিন্তু তার কর্মকান্ডে মনে হল এর আগেও সে একাধিকবার এসেছে। তার ভাষায়, এটা তার ৩ বছরের সাধনা। যাই হোক, মেহেদী আর গাইডের নিঁখুত পরিকল্পনায় শুরু হল মহা অভিযান। কুয়াশার অন্ধকারে পূর্ব দিকের মনোমুগ্ধকর ঝিরিপথ দিয়ে চিংড়ি ঝরণা, রংতন পাড়া হয়ে রুমতুম পাহাড়ের ছাউনিতে জলাহার করে আধ ঘন্টা বিশ্রাম নিয়ে ৩ নং রেমাক্রি প্রাংসা ইউনিয়নের সাজানো গোছানো দার্জিলিংপাড়ায় চলে এলাম। পর্যটকরা চাইলে এখানকার কোন কটেজে এক রাত বিশ্রাম নিতে পারেন। দার্জিলিংপাড়ার পূর্বদিকে পাহাড় আর গিরিখাতের ফাঁকে ফাঁকে আদিবাসীদের ঘর-বাড়ি। উপত্যকার মত ঢেউ খেলোনো খাড়া ভূমিতে জুমচাষ আর জুমচাষ, হালকা কুয়াশায় ঘেরা পুরো পার্বত্য এলাকা। মাঝে মাঝে শওকতের দুষ্টামী--‘স্বপনদা, পাহাড় এত উঁচু নিচু কেন, মানি না, মানব না।’ শত ক্লান্তি সত্ত্বেও ওর কথায় সকলে হেসে উঠি। প্রকৃতির সৌন্দর্য আর শুকনো বিস্কুট খেতে খেতে মহাক্লান্তি নিয়ে কেওকাড়াডং পাহাড়ে উঠলাম। পরিচয় হল এ পাহাড়ের ভূপতি লাল মুন থন লালার সাথে। এবার চুড়ায় উঠার পালা।

ঠিক বেলা ১০:২৫এ ব্যানার, ক্যামেরা, জাতীয় পতাকা নিয়ে সমুদ্র পৃষ্ঠ হতে ৩১৭২ ফুট উচ্চতায় বিজয়ী বেসে গাইড সহ মোট ৬ জন চূঁড়ায় উঠে আনন্দ উল্লাসে ফোনে বাংলাদেশের এক সময়ের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ কেওক্রাডং বিজয়ের কথা আত্মীয়-স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবদের জানালাম। চূড়ার পূর্বদিকে পাহাড়-বন জঙ্গল-গাছপালা আর বিস্ময়কর গিরিখাদ, উপত্যকার ফাঁকে ফাঁকে ছোট ছোট আদিবাসী পাড়া, উত্তর ও পশ্চিমে পাহাড়ী পথ, আকাশ আর ঘন কুয়াশার মাঝে মেঘ, দক্ষিণে কুয়াশার চাদরে ঢাকা অতি ঢালু জাদিপাই ঝর্ণায় যাওয়ার পথ, উপরে ভেজা তুলোর মত সাদা মেঘের তুলির আঁচড়ে সীমাহীন নীল আকাশ। আমরা আছি, মেঘের দেশে। বিস্ময়ে বিহ্বল আমাদের চোখ আর মন। তবে চূঁড়ার স্তম্ভ শিলায়, গোলাকার বিশ্রাম ঘরে পোড়া কাঠ, ছাই, ছেঁড়া কাপড়, পানির বোতল ইত্যাদি ময়লা আর দেয়ালে পর্যটকদের নাম, ঠিকানা, ফোন নং-এ ভরা--এতটা ময়লা-আর্বজনা দেখে মনটা আমাদের খারাপ হয়ে গেল। পুরান ঢাকার পরিবেশ রক্ষার শপথ স্মরণ করে চূড়ার ময়লা-আর্বজনা সবাই মিলে পরিষ্কার করলাম। পাহাড় মালিকের সাথে এ বিষয়ে অনেক কথা হল। তিনি বললেন, আবেগ প্রবন পর্যটকরা এখানে উঠে নিজেদের আবেগ নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। তবে রাতের বার-বি-কিউ উৎসবই বেশী ময়লা করে ফেলে। তবে উনি আমাদের কাছে নিয়মিত পরিষ্কার রাখার অঙ্গিকার করলেন।


জাদিপাই ঝরণার পথে
আমাদের দলের কেউ বগালেক, কেউ দার্জিলিং পাড়া পর্যন্ত এসে আত্নসমর্পন করেছেন। আমরা গাইড সহ মোট ছয় জন শেষ পর্যন্ত কেওক্রাডং থেকে জাদিপাই ঝরণার দিকে যাত্রা করি। আনন্দ আর আবেগে আমার কন্ঠে বেজে চলেছে রবীন্দ্র আর লালনের গান, কবিতা, মাঝে মাঝে শওকতের দুষ্টামী, জাহাঙ্গীরের পায়ের রগ টানের বিড়ম্ভনায় বিরক্ত মেহেদীর চোখ-মুখ। কারণ সে সবার আগে হাঁটলেও মুভ (অবস করার স্প্রে) তার কাছে থাকায় এবং টিম লিডার হওয়ার কারণে তাকে শওকত আর জাহাঙ্গীরের জন্য বারবার থামতে হয়। আমাদের ভূড়িওয়ালা ছোট হাতির ছানা ইঞ্জিনিয়ার কাম ডাক্তার বেলাল আমাদেরকে বিস্মিত করে বারবার আল্লাকে ডাকতে ডাকতে পাকা অভিযাত্রীর মত সমস্ত ট্যুর শেষ করে।

দুই পাশের পাহাড়ী ঘাসের ঢেউ খেলানো সরু পথে শুধুই নামছি। শেষ আর হতে চায় না। হঠাৎ করে কোন লোকালয় দেখতে পেলে ক্লান্তি কমে আসে। প্রাসিংপাড়া। ছিমছাম, পূর্ব-পশ্চিমে খোলামেলা, সকাল-সন্ধ্যা বসে থাকলে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দুটোই দেখা যায়, তুলে আনা যায় প্রকৃতির তুলিতে আঁকা আলো-ছায়ার অসংখ্য ছবি। এই পাড়ার এক বম নারীর কাছ থেকে অল্প দামে অতি সুস্বাদু পেঁপে খেয়ে আবার চলতে থাকি। খাঁড়া রাস্তা, নামছি তো নামছি, ঘন ঘন শ্বাস-প্রশ্বাস। পা আর চলতে চায় না। জীবনের চরম পথ চলা। প্রায় ১ ঘন্টায় মনে হয়, ২০০০ ফুট নিচের পাহাড় ঘেরা সমতল ভূমিতে নামলাম। সবাই এতটাই ক্লান্ত যে, রুমাল দিয়ে ঘাম মুছতে মুছতে সবাই গেঞ্জি খুলে উদোম গায়ে বাতাস লাগিয়ে আবার হাঁটতে লাগল। জাদিপাই পাড়া পার হয়ে আরো আধা ঘন্টায় সমতল নিসর্গের সরু পথে হেঁটে হঠাৎ করে থেমে যাই। শওকতের চিৎকার,‘ওরে বাপরে, নামবো কেমনে। স্বপন দা, একটা রিকসা ডাকেন।’ ওর কৌতুক যেন, ক্লান্তির উপর শ্রান্তি বয়ে আনে।

সবচেয়ে ভয়ঙ্কর গিরিপথ! এই খাড়া বন্ধুর পথে কিভাবে যে নামলাম, তা মনে হলে এখনও আঁতকে উঠি। ঐ সময়ে পরিবার-পরিজনের কথা খুব মনে হয়েছিল। বাঁশ, দড়ি, পাহাড়ী লতা, গাছের শিকড়-- যা পেয়েছি তাই ধরে যাদিপাই ঝরণায় নামি। ইউরেকা! ঝরণার রূপ দেখে আমাদের কারো কোন ক্লান্তি রইল না। ইচ্ছেমত জল খেলাম,অতি সুস্বাদু জল। পা ডুবিয়ে রাখলাম, পরম শান্তি! প্রায় ৩০০ ফুট উচ্চতার এই ঝরণার উপরে সরু একটি ছড়া দিয়ে অনবরত সুমধুর সুরে পানি ঝড়ছে। শান্ত ঝরণা, ধাপে ধাপে সাজানো গ্রানাইট প্লেট, আঁকা-বাঁকা কোন প্লেট মূল ভিত্তি থেকে বাইরে বেড়িয়ে আছে। ঝরণার সমতলে গ্রানাইট আর বেলে পাথর, খালি পায়ে হাঁটা যায় না। কঠিন স্তরীভূত এত শিলা পাথর হাজার হাজার বছর ধরে এখানে পড়ে আছে মহাকালের সাক্ষী হয়ে। দক্ষিণ-পশ্চিমে তাকিয়ে দেখি কাঠের সিঁড়ির মত শিলা পাথরের প্লেট। ঝরণার গোড়ায় গোসল করার সময় মনে হল, প্লেটগুলি বুঝি এখনি মাথার উপর পড়বে। হঠাৎ করে ঝরণার গতিবেগ ভয়ানকভাবে বেড়ে গেল। সবাই ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে ছুটতে লাগলাম। চারদিকে কোন বৃষ্টি নাই অথচ রংধনু ঝরণার পাদদেশের গা ঘেঁষে। দক্ষিণে তাকিয়ে দেখি সূর্য আলো দিয়ে চলেছে ঝরণার উলম্ব গায়ে। আমার ঘোর কাটল সকলের নাচানাচি দেখে। সবাই খুশি। সম্ভবত গাছের গুড়িতে জল আটকে ছিল অথবা জল আটকে কেউ মাছ ধরছিল। গাছের গুড়ি হঠাৎ সরে যাওয়ায় অথবা মাছ ধরা শেষে পাহাড়ীরা জল হঠাৎ করে ছেড়ে দেয়। জাহাঙ্গীরের সে দিনের উদ্দাম নৃত্য আমাদের বহুদিন মনে থাকবে। ছবি তোলা, গোসল করা শেষ করে হঠাৎ তাকিয়ে দেখি জলের নিচে প্রায় ডুবন্ত বড় এক পাথরে উঠে খালি গায়ে বেলাল নামাজ পড়ছে। মনে হল, পাথরসহ সে ভাসছে।

মনটাকে ঝরণার কাছে রেখে আবার বহু কষ্টে কেওক্রাডং চলে আসি। গল্পে গল্পে দুপুরের খাবার খেয়ে খানিকটা সময় বিশ্রাম নিয়ে ঝিরি পথ দিয়ে ফিরতি পথ চলা। চিংড়ি ঝরণা পর্যন্ত আসতে রাত হয়ে গেল। ঘুটঘুটে অন্ধকার। ঝিঁ ঝিঁ পোকার ডাক আধার প্রকৃতিকে করেছে আরো ভীত সন্ত্রস্ত। যেন, স্বপ্নের হাত ধরে কৃষ্ণপক্ষের রাত্রির এই অন্ধকারে অনন্তের পথে চলেছি এই ঝিরি পথ ধরে। ঢালু পাহাড়ী পথের ফাঁকে ফাঁকে ছোট-বড় অসংখ্য গর্ত। হয়তো বনপোকা, ইঁদুর-শিয়ালের গর্ত। এ পৃথিবীর প্রাণীকুলের মধ্যে দিনের প্রাণীর চেয়ে রাতের প্রাণীর সংখ্যাই বেশী। দেহ সমান বাঁশে ভর দিয়ে ঢালু পথে চলা। হঠাৎ লাল মাটির ধুলোয় পা পিছলে পড়ে আবার ভারসাম্য ঠিক রেখে পথ চলা।

দেহের ওজন মনে হয়, দ্বিগুন হয়ে গেছে। পা ফুলে এমন অবস্থা হয়েছে যে, বিশেষ বেল্ট লাগানো সেন্ডেল খোলার পর জুতা আর কেউ পড়তে পারে নাই। তারপর গাইড আর রবার্ট বমের গাওয়া আর আমাদের তাল মেলানো বাংলা, হিন্দী আর বম গানের সুরে মধ্য রাত পর্যন্ত বার-বি-কিউ উৎসব চলে। মহাক্লান্তি নিয়ে একটানা ঘুমের পরদিন ফিরতি পথে বান্দরবানের বোমাং রাজপূণ্যাহ্ উৎসব বোনাস হিসাবে আমাদের হিসাবের খাতাটাকে পরিপূর্ণ করে দিয়েছে। এখনো চোখ বুজলে ভেসে উঠে, সেই স্মৃতি গাঁথা বান্দরবানের পাহাড়-ঝরণা-ছড়া-মেঘ-কুয়াশা-নদী- কৈক্ষ্যংঝিরি- রুমা বাজার-বগালেক-দার্জিলিংপাড়া-কেওক্রাডং- প্রাসিংপাড়া-জাদিপাই ঝরণা আর রহস্যময় পাহাড় ঘেরা সবুজ জঙ্গল।

 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ