[প্রথমপাতা]

 

 

 

বাংলাদেশে মৌলবাদীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারঃ কবীর চৌধুরী

 


বিশিষ্ঠ শিক্ষাবিদ, সুখ্যাত লেখক, ব্যতিক্রমী অনুবাদক ও জাতীয় অধ্যাপক কবীর চৌধুরী গেল ১৩ ডিসেম্বর'১১, ৮৮ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। তিনি ছিলেন বাংলাদেশের সমস্ত অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার, বিস্ময়কর এক সৃষ্টিশীল মানুষ। ১৯৯৪ সালের মার্চ মাসে (আজ থেকে প্রায় আঠারো বছর আগে) জাপান সফরের সময়, মাসিক মানচিত্র'র জন্য তাঁর এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলেন -টোকিওর লেখক-সাংবাদিক সজল বড়ুয়া। আমরা কৌতূহলি পাঠকদের জানানোর উদ্দেশ্যে, আবারও সেই বিশেষ সাক্ষাৎকারটি উপস্থাপন করছি। -সম্পাদক, কমিউনিটি।
 

 

'ফেব্রুয়ারির শেষের দিকে টোকিও এসেছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের প্রবীণ অধ্যাপক, সুখ্যাত প্রাবন্ধিক ও বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী প্রফেসর কবীর চৌধুরী। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ, বাঙালী জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী ও মৌলবাদী রাজনীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রায় ৮০টি গ্রন্থের লেখক প্রফেসর কবীর চৌধুরীকে ১লা মার্চ '৯৪ এশিয়া বুনকা কাইকানের ৭০৭ নম্বর কক্ষে স্বাধীনতাত্তোর ও সমকালীন বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয়ে বেশ কিছু প্রশ্ন রেখেছিলাম। একই সময়ে আমার সাথে উপস্থিত ছিলেন জাপানের জনপ্রিয় একটি সাপ্তাহিকীর সম্পাদিকা মায়ুমি মুনাকাতাও। টেপ-রেকর্ডারে ধারণকৃত প্রফেসর কবীর চৌধুরীর সাক্ষাৎকারের সারাংশ নিম্নরূপঃ

* ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন অধ্যাপনার আলোকে বাংলাদেশের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর বর্তমান করুণ অবস্থা যেমনঃ সন্ত্রাস, সেশন জট, পড়াশুনার প্রতিকূল পরিবেশ ও তার প্রতিকার সম্বন্ধে আপনার অভিমত কি?

কবীর চৌধুরীঃ সন্ত্রাস, মারপিট গোলাগুলি প্রায়ই হয়ে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ে। আর এ ব্যাপারে নিরপেক্ষভাবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা উচিত -সরকার, অধ্যাপক ও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকে। এই অপ্রত্যাশিত অস্বাভাবিক পরিস্থিতির পেছনে অধ্যাপক মহলেরও যে ত্রুটি নেই -এমন কথা বলা যায় না। আগের দিনে অনেক অধ্যাপক ছিলেন, যাঁদেরকে অকৃত্তিমভাবে শ্রদ্ধা করা যেত। সে রকম শিক্ষকের সংখ্যাও আজকাল কমে এসেছে। তবে একটি কথা আমি বলবো -দোষ অনেকের থাকলেও, এর দায়-দায়িত্ব সরকারের। সরকার আন্তরিকভাবে যে কোন দলের সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করলেই, বিশ্ববিদ্যালয়ে সুষ্ঠু, সুন্দর ও সন্ত্রাসমুক্ত পরিবেশ নিশ্চয়ই অতি অল্প সময়েই ফিরে আসবে।

* বাংলাদেশের সামগ্রিক পরিস্থিতির সঙ্গে বর্তমান শিক্ষা নীতি কতটুকু সামঞ্জস্যপূর্ণ বলে আপনি মনে করেন?

ক.চৌ.: খুব একটা সামঞ্জস্য আছে বলে, আমার মনে হয়না। দীর্ঘকাল ধরেই আমরা অনেকে শুধুমাত্র মুখে বলে যাচ্ছি 'জীবিকার সাথে সংযুক্ত করতে না পারলে, শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নতি হবেনা।' কিন্তু কার্যক্ষেত্রে এর কোন উদ্যোগ বা প্রয়োগ নেই। ড. কুদরত-ই-খুদার শিক্ষা নীতি বিভিন্ন কারণে অবহেলিত হয়েছে বাংলাদেশে। চালু হয়েছে নতুন নতুন আজগুবি সব শিক্ষা পদ্ধত। সম্প্রতি প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়, 'A' লেভেল, 'O' লেভেল, বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ক্রমান্বয়ে বেড়ে চলেছে। আমার নিজের বিবেচনায়, এগুলোর খুব একটা শুভ দিক নেই।

* একজন বিশিষ্ট বুদ্ধিজীবী হিসেবে, দেশের বর্তমান আর্থ-সামাজিক অবস্থার প্রেক্ষাপটে বুদ্ধিজীবীদের 'মুক্তবুদ্ধি চর্চা'র ক্ষেত্রে কী প্রতিবন্ধকতা আছে বলে আপনার মনে হয়?

ক.চৌ.: খুব একটা অসুবিধে আর নেই। কারণ, আজকাল বিভিন্ন সভা-সমিতিতে বুদ্ধিজীবীরা কথা বলতে পারছেন। লিখতেও পারছেন নানান বিষয়ে। তবে মৌলবাদীদের যদি সরকার আরো কঠোর ভাবে প্রতিহত করেন তাহলে তাঁদের জন্য ব্যাপারটা আরো সহজ হয়ে ওঠে। আর যেটুকু প্রতিবন্ধকতা আছে, আমি বলবো, অনেকের ক্ষেত্রে তা স্ব-আরোপিত। নাম সর্বস্ব সুবিধাবাদী অনেক বুদ্ধিজীবী আছেন, যারা ব্যক্তি-স্বার্থের কারণে মাঝেমাঝে দল পরিবর্তন করেন। নিজেদেরকে অনেক সময় তারা বিতর্কিত করে তোলেন - অস্বাভাবিক পরিবেশ সৃষ্টি করেন। তারপরও কিছু বুদ্ধিজীবী তো আছেন, যাঁরা আমাদের সমাজে মুক্তবুদ্ধি চর্চার পথকে প্রশস্ত করেছেন। তাঁদের অনেকে জীবনের ঝুঁকি নিয়েও মৌলবাদীদের বিরুদ্ধে কথা বলছেন। প্রতিকূল পরিবেশে নির্ভয়ে লিখে যাচ্ছেন -ধর্মান্ধতা, নারী নির্যাতন ও ফতোয়াবাজদের বিরুদ্ধে। দেশ ও সমাজকে এগিয়ে নেয়ার অনুকূলে তাদের ভূমিকা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়।

* প্রায়ই বলা হয়ে থাকে, স্বাধীনতার ২৩ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের সঠিক মূল্যায়ন বাংলাদেশে হয়নি। এ প্রসঙ্গে আপনার নিজস্ব মন্তব্য জানতে চাই।

ক.চৌ.:মুক্তিযুদ্ধের সামগ্রিক মূল্যায়ন দীর্ঘকাল বাংলাদেশে হয়নি এটা ঠিক। '৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট শেখ মুজিবকে হত্যা করার পর থেকে, বিভিন্ন প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে সুপরিকল্পিতভাবে মলিন করে তোলার চেষ্টা চালিয়েছে। এমনকি তারা বিভেদও সৃষ্টি করেছে মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার একটা বড় আদর্শ ছিলো 'ধর্মনিরপেক্ষতা'। কিন্তু, 'ধর্মনিরপেক্ষতাকে লালন করলে ইসলাম বিপন্ন হবে' এই ভাওতাবাজি দিয়ে '৭৫ পরবর্তী সময়ে 'ইসলাম ধর্ম'কে ক্রমান্বয়ে রাষ্ট্রীয় ধর্মরূপ দেয়া হলো। ধ্বংস করা হলো মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম আদর্শ 'গণতান্ত্রিক চেতনা'কে। আমরা মুখে শ্লোগানের মত বলছি বটে, 'গণতন্ত্রের কথা'। কিন্তু প্রশাসনকে দলীয়করণ করে, গণতান্ত্রিক চেতনার তো বিকাশ হয় না। অথচ বর্তমানে প্রশাসনকে নিষ্ঠুরভাবে দলীয় করণ করা হচ্ছে -এটা বি.এন.পি.র অনেক প্রভাবশালী নেতারাও অগোচরে বলছেন। এসবই তো মুক্তিযুদ্ধের অবমূল্যায়ন। তবে আশার কথা এই যে, গত পাঁচ সাত বছরে মুক্তিযুদ্ধের ওপর প্রচুর লেখা হয়েছে। 'প্রজন্ম ৭১' নামে একটি সংগঠনও সৃষ্টি হয়েছে কয়েক বছর আগে। এসবকে মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ফসল বলা যায়। তাই সব মিলিয়ে বলবো -ব্যাপকভাবে না হলেও একেবারেই যে মুক্তিযুদ্ধের মূল্যায়ন বাংলাদেশে হয়নি, তা ঠিক নয়।

* স্বাধীনতার পর রাষ্ট্রপরিচালনা ও বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে শেখ মুজিবুর রহমানের কোন ভুল কি আপনার চোখে পড়েছে?

ক.চৌ.: বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব যে সবদিক দিয়ে সঠিক ছিলেন, তা নয়। সাধারণতঃ স্বাধীনতার পর তাঁর সাধারণ ক্ষমার ভুল ব্যাখ্যা দিয়ে অনেকে তাঁকে দোষারোপ করে থাকেন। কিন্তু প্রকৃত্পক্ষে ঐ সময় সকলকে তিনি নির্বিচারে ক্ষমা করেননি। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে, যাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট অভিযোগ আছে (যেমন লুটপাট, হত্যা, ধর্ষণ, হত্যার পেছনে চক্রান্ত) তারা এই সাধারণ ক্ষমার আওতায় পড়বেনা। অন্যদিকে এটাও সত্য যে, বাংলাদেশের জন্মলগ্নে শেখ মুজিব যদি সব অপরাধীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতেন, তখন হয়তো তাঁকে একটা আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়ার মুখোমুখিও দাঁড়াতে হতো। আমার মনে হয়, সাধারণ ক্ষমা ঘোষণার আগে এই দিকটাও তিনি ভেবে দেখেছিলেন। তারপরও তিনি যদি সে সময় সারা দেশের চিহ্নিত কিছু ঘৃণ্য অপরাধীদের বিরুদ্ধে তড়িৎ গতিতে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহন করতেন, তাহলে হয়তো আজ এই ভুল ব্যাখ্যার অবকাশ আর থাকতো না। এটা তার একটি ভুল সিদ্ধান্ত ছিল বলে আমি বলবো। বঙ্গবন্ধুর আরেকটা ভুল দিক হলো, তিনি 'বাকশাল' গঠন করেছিলেন বটে, কিন্তু বাকশালের নীতি-আদর্শকে সফল করে তোলার লক্ষ্যে কোন ক্যাডার তৈরী করলেননা। প্রশাসনের ক্ষেত্রেও তাঁর উচিত ছিল প্রকৃত দেশপ্রেমিক ও মুক্তিযোদ্ধাদের প্রতিষ্ঠিত করা। এসবই শেখ মুজিবের ভুল হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। তবে যেহেতু ভুলের কথা উঠেছে, পাশাপাশি তার অসংখ্য গুণের কথাও আংশিকভাবে না বল্লে নয়। বঙ্গবন্ধুর প্রচেষ্টায় বাংলাদেশ এক চমৎকার ও পূর্ণাঙ্গ সংবিধান পেয়েছিল। তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীকে মুক্তিযুদ্ধের পর অতি দ্রুত ভারতে ফেরত পাঠিয়েছিলেন। মুক্তিযোদ্ধাদের আদেশ দিয়েছিলেন অবিলম্বে অস্ত্র জমা দেয়ার জন্য। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে, সাড়ে তিন বছরের রাষ্ট্র পরিচালনার ক্ষেত্রে তাঁর অসাধারণ কর্মতৎপরতায় যুদ্ধ-বিধ্বস্ত বাংলাদেশকে তিনি মোটামুটিভাবে দাঁড়ানোর মত একটা জায়গায় নিয়ে এসেছিলেন। বাঙালী জাতির ইতিহাসে বঙ্গবন্ধুর সেই আত্মত্যাগ ও অবিস্মরণীয় অবদান চিরকাল কী উজ্জ্বল হয়ে থাকবেনা?

* '৭৫ এর ১৫ আগষ্টের জননিন্দিত ও ঘৃণ্যতম হত্যাকান্ডের ইতিহাস সম্পর্কে দয়া করে কিছু বলবেন কি?

ক.চৌ.: মুজিব হত্যার ১৯ বছর পর আমি মনে করি এই নৃশংস হত্যাকান্ডের পটভূমিকা আজ আর কারো অজানা নেই। স্বাধীনতার পর জামায়াতীরা বলতে গেলে, প্রায় ইঁদুরের মত গর্তে ঢুকে গিয়েছিলো। কিন্তু পঁচাত্তর পরবর্তী সময়ে মুক্তিযুদ্ধ বিরোধী মৌলবাদী শক্তিকে প্রশাসন ও দেশের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পরিকল্পিতভাবে পুনর্বাসন করা হয়। শাহ্ আজিজের মত স্বাধীনতা-বিরোধী একজন জঘন্য পাপিষ্ঠকে বানানো হয় 'প্রধানমন্ত্রী'। সত্যিকারভাবে এর সূত্রপাত ঘটে ৭৫ এর পরে সরকার ও প্রশাসনের বলিষ্ঠ সহযোগিতায়। উল্লেখ্য, কয়েক বছর ধরে আমরা নরঘাতক গোলাম আযমের বিচার দাবী করছি। অথচ তার জন্য দেশদ্রোহী হিসেবে মামলা দায়ের করা হলো আমাদের বিরুদ্ধে। এমন কি এখনো একজন বিতর্কিত ব্যক্তি দেশের প্রেসিডেন্ট হিসেবে ক্ষমতায় বসে আছেন। স্বাধীনতা বিরোধী শক্তি ও জামায়াতীদের দৌরাত্ম্য এবং বর্তমান কালের এই ধরনের অপকর্মের পরিকল্পনা তো শুরু হয়েছিলো শেখ মুজিব হত্যার পর থেকেই।

*স্বদেশে ও বিদেশে বঙ্গবন্ধুর নীতি আদর্শ ও রাজনৈতিক চিন্তাধারা সর্বসমক্ষে সামগ্রিকভাবে তুলে ধরার প্রয়াসে, বঙ্গবন্ধু পরিষদ এ পর্যন্ত কি কি উদ্যোগ নিয়েছে?

ক.চৌ.: বঙ্গবন্ধুর ওপর আমরা ইংরেজি ও বাংলায় বেশ কিছু বই প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছি। ইতিমধ্যে অডিও ও ভিডিও ক্যাসেটও বের করা হয়েছে। চেষ্টা করছি, একটি যাদুঘরও নির্মাণ করার জন্য। তবে
as a symbol of liberty অর্থাৎ স্বাধীনতা যুদ্ধের একটা প্রতীকী চরিত্র হিসেবে আমরা শেখ মুজিবের ওপর কাজ করে যাচ্ছি। তারই পাশাপাশি বাঙ্গালী জাতীয়তাবাদ, মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশের শিল্প সংস্কৃতির অগ্রগতির লক্ষ্যেও বঙ্গবন্ধু পরিষদের ম্যালা পরিকল্পনা রয়েছে।

* বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালের প্রতিক্রিয়াশীল ও মৌলবাদী রাজনীতির উর্ধ্বগতির প্রেক্ষিতে, দেশের ভবিষ্যত সম্পর্কে আপনি কী ভাবছেন?

ক.চৌ.: আপাতঃ দৃষ্টিতে মৌলবাদী রাজনীতির উর্ধ্বগতি মনে হলেও, আমার মনে হয়, বাংলাদেশ মৌলবাদীদের ভবিষ্যত প্রায় অন্ধকার। মৌলবাদীরা বিশ্ববিদ্যালয়ে সন্ত্রাস, রগকাটা, নরহত্যা, বিভিন্ন ধ্বংসাত্মক প্রক্রিয়া পর্যায়ক্রমে চালিয়ে গেলেও, প্রকৃতক্ষে দিন দিন প্রবল প্রতিরোধ গড়ে উঠেছে -তাদের বিরুদ্ধে। তারা মুখে যতটুকু লাফালাফি করে, কার্যক্ষেত্রে তাদের দৌড় তত নয়। বরং বলা যায়, বিপরীত দিকে মৌলবাদ- বিরোধী চেতনাই ক্রমাগত বৃদ্ধি পাচ্ছে। তবে মৌলবাদীদের ফ্যাসিস্ট চিন্তাধারা ও নিষ্ঠুর কর্মকান্ড বিশেষ করে, সাধারণ মানুষের ওপর নির্যাতন, মধ্যরাতে ছাত্রাবাসে হামলা ও নারকীয় হত্যাকান্ড, অশিক্ষিত অসহায় মানুষের ওপর তথাকথিত ইসলামী আইন কানুন আরোপ ইত্যকার অমানবিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে সরকার ও আইন কর্তৃপক্ষকে আরো কঠোর হওয়া উচিত। আর ইচ্ছাকৃতভাবে যদি সরকার এ ব্যাপারে কোন কঠোর পদক্ষেপ না নেয় বা গ্রহন করতে ব্যর্থ হয়, তবে নিঃসন্দেহে বর্তমান ক্ষমতাসীন বি.এন.পি. ও বাংলাদেশের বিপর্যয় অচিরেই দ্রুত গতিতে এগিয়ে আসবে বলে আমি মনে করি।

* বর্তমান বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অবস্থা কোন পর্যায়ে আছে বলে আপনার মনে হয়?

ক.চৌ.:অর্থনৈতিক দিক দিয়ে বাংলাদেশ ভাঙ্গনের মুখে দাঁড়িয়ে আছে বল্লে অত্যুক্তি করা হবেনা। বৈদেশিক বিনিযোগ প্রায় বন্ধ হয়ে গেছে, বলা যায়। পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে জিনিসপত্রের দাম খুব একটা না বাড়লেও, প্রকৃতপক্ষে সাধারণ মানুষের ক্রয়-ক্ষমতা কমে গেছে। যার ফলে দ্রব্যমূল্য আংশিকভাবে বৃদ্ধি পেলেও, অধিকাংশ লোকই তার সাথে পাল্লা দিয়ে উঠতে পারছেনা। কৃষিপ্রধান আমাদের দেশে গত কয়েক বছর আশাতীত ফসল উৎপাদিত হয়েছে, বলা যায়। অথচ তারপরও সেই কৃষকরাই পাচ্ছেনা তাদের উপযুক্ত মূল্য। আর বাস্তব ক্ষেত্রে কৃষকদের জীবনযাত্রার মান ক্রমাগত নেমে যাচ্ছে -দারিদ্র সীমার অনেক নীচে। আজকাল বাংলাদেশের গ্রামাঞ্চলে সত্যিকারভাবে বলতে গেলে, বেসরকারী সংস্থা অর্থাৎ N.G.O. রাই সরকারের ভূমিকা নিয়ে, নানান প্রতিকূল অবস্থায় সাফল্যজনকভাবে কাজ করে যাচ্ছে। আমি বলবো, দেশের এই সংকটময় মুহূর্তে সরকারেরও উচিত -এন.জি.ও.দের কর্মপদ্ধতি অনুসারে বিভিন্ন ফলপ্রসূ পদক্ষেপ গ্রহন করা।

* বর্তমান সরকার ও তার মন্ত্রীরা বলে বেড়াচ্ছেন 'দেশে বৈদেশিক বিনিয়োগ বাড়ছে, বৈদেশিক বানিজ্যের বিভিন্ন সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে বাংলাদেশে' -একজন অভিজ্ঞ প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে এ ব্যাপারে আপনার কাছ থেকে কিছু শুনতে চাই।

ক.চৌ.: আমি আগেও বলেছি বর্তমান সরকারের অতঃপতনের একটা বড় কারণ হচ্ছে -'ক্রমাগত নির্লজ্জ মিথ্যাচার'। এটা ফ্যাসিবাদীরও একটা লক্ষণ। সরকার ও তার মন্ত্রীবর্গ দেশ-বিদেশে বড় গলায় বলে বেড়াচ্ছেন -বাংলাদেশে সন্ত্রাস কমে গেছে ও বৈদেশিক বানিজ্যের সুযোগও সৃষ্টি হয়েছে। আর তারই সাথে বাড়ছে বৈদেশিক বিনিয়োগও। আমার জানা মতে, প্রকৃত অবস্থা তার সম্পূর্ণ বিপরীত। বর্তমান সরকার বলতে গেলে, বিশ্বব্যাংক ও আই.এম.এফ এর প্রেসক্রিপশন অনুসারেই কাজ করছে। আসলে ঐসব সংস্থাগুলোর মূল উদ্দেশ্য হলো- বাংলাদেশকে তারা সে পরিমানই ঋনদেবে যাতে সোমালিয়ার মতো একটি দুর্ভিক্ষ দেশে সৃষ্টি না হয়, আর কোন রকমে মানুষ 'নুন আনতে পান্তা ফুরায়' অবস্থায় যেনো বেঁচে থাকতে পারে। বিনিময়ে নিজেদের স্বার্থ সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে তারা ব্যবহার করবে বাংলাদেশকে। সৃষ্টি করবে নিজেদের পণ্যের অবাধ বাজার। এভাবে চলতে থাকলে, বাংলাদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন শুধুমাত্র 'আশার ফানুস' হিসেবেই মানুষের চোখে ভাসবে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এই অস্থিতিশীল ও করুণ অবস্থার কোনরূপ পরিবর্তন কোনদিনই আসবেনা বাংলাদেশে।
 

শেষের কথাঃ
 

[দীর্ঘ আলাপচারিতার পর আমি বিদায় নেয়ার ঠিক অল্প আগে প্রফেসর কবীর চৌধুরী বিনীত কন্ঠে বললেন- "বাংলাদেশের সমকালীন বিভিন্ন বিষয়ে তুমি আজ আমার কাছে এই দূর প্রবাসেও অনেক কিছুই জানতে চেয়েছো। আমার স্বল্পজ্ঞানের আলোকে আমি চেষ্টা করেছি দেশের আর্থ-সামাজিক অবস্থা সচেতন বাঙালীদের কাছে তুলে ধরতে।" প্রতিত্তরে আমি তাঁকে অসংখ্য ধন্যবাদ ও ফুলেল অভিনন্দন জানালাম।

ফেরার পথে কবীর স্যারের একটা কথাই বার বার মনে আসছিল শুধু -'আমার সল্পজ্ঞানের আলোকে.....।' আমি নিজেই এ কথা ভেবে মৃদু হাসলাম মনে মনে। "সাগরের গভীরতা বিশাল। অথচ সাগর কী জানে তার সেই গভীরতার কথা"! মিনিট পাঁচেক কথা না বলায় আমার হাসি দেখে মুখের দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে নিরবতা ভাঙলো সঙ্গী মায়ুমি। 'কি ব্যাপার? হাসছো যে! বাংলাদেশের কি কোন সুসংবাদ শুনেছ?' সুসংবাদ! বাংলাদেশের!! বুকটা আমার ব্যথায় ভরে উঠলো এই বিদেশীনীর সামনে। মায়ুমিকে পাশাপাশি রেখে চুপচাপ এগিয়ে যাচ্ছিলাম সুগামো ষ্টেশনের দিকে। বাংলাদেশের সুসংবাদ!!! কী বলবো এ ব্যাপারে একজন জাপানি সাংবাদিককে?]'

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 
 

>>একক অবদানে কোনো জুটি গড়ে উঠে না: অপু বিশ্বাস

>>'নজরুল আমাদের কুড়িয়ে পাওয়া ধন'

>>বাংলাদেশে মৌলবাদীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকারঃ কবীর চৌধুরী (১৮ বছর আগে টোকিওতে সাংবাদিক সজল বড়ুয়ার নেয়া দুর্লভ এক সাক্ষাৎকার)

>>জাপান প্রবাসীদের দেশপ্রেম ও আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করেঃ খন্দোকার ইসমাইল

>>প্রবাসীদের ব্যবসায়িক বা পেশাগত প্রতিষ্ঠা আমাকে মুগ্ধ করেছেঃ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর

>>প্রবাসীরা বাংলা গান শুনুন, বাংলাকে বিশ্বের মাঝে তুলে ধরুনঃ আইয়ূব বাচ্চু

>>কমিউনিটির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে বাংলাদেশের বিদায়ী রাষ্ট্রদূত এ,কে,এম, মজিবুর রহমান ভূঁইয়াঃ জাপান প্রবাসী বাংলাদেশিরা গঠনমুলক এবং ইতিবাচক ভূমিকা পালন করছেন

>>রবীন্দ্রনাথ আমার দুর্বলতাঃ ফেরদৌসি মজুমদার

>>২৭ বছর আগের বাংলাদেশের সাথে এখনকার বাংলাদেশের অনেক পার্থক্যঃ কমিউনিটির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে অক্ষয় কুমার

>>আমার নাচ আর হাসিটাকেই দর্শকরা বেশি পছন্দ করেন মনে হয়ঃ কমিউনিটির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে সালমান খান

>>ভালো গান গাইতে হলে শুদ্ধ করে বাংলা শব্দগুলো খেয়াল করতে হবেঃ কমিউনিটির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে সাবিনা ইয়াসমিন

>>একান্ত সাক্ষাতকারে দেবাশিষ বিশ্বাসঃ মানুষের ভালোবাসা নিয়ে বেঁচে আছি

>>ববিতার মন খারাপ

>>কমিউনিটির মুখোমুখি নায়করাজ রাজ্জাকঃ যতদিন বেঁচে থাকবো জহির রায়হান আমার মাঝে বেঁচে থাকবেন

>>কমিউনিটির মুখোমুখি চিত্রনায়িকা শাবনুরঃ বছরে দু'টির বেশি ছবি করবোনা

>>কমিউনিটির মুখোমুখি লাকি ইনামঃ মঞ্চ নাটক আর নাটক প্রশিক্ষন নিয়েই ব্যস্ত আছি

>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে সুকন্যা চৌধুরীঃ
সুপার মডেল হতে চাই

>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে তারিনঃ ঈদের নাটক

>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে বিপ্লবঃ প্রমিথিউস এখন তার নতুন প্রজেক্ট ও মঞ্চে গান গাওয়া নিয়ে ব্যস্ত

>>ভারতীয় মিডিয়ার আগ্রাসনে বাংলাদেশে ক্ষতি হচ্ছে 

>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে নায়ক সোহেল রানাঃ চলচ্চিত্র অঙ্গনের অতীত বর্তমান ও ভবিষ্যত নিয়ে ভাবনা

>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে সিনথিয়া: টাকার পেছনে ছুটছে নতুনরা

>>কমিউনিটির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে সাবেক প্রতিমন্ত্রী মোশারফ হোসেনঃ ভারত থেকে কয়লা আমদানি করে বিদ্যুত উৎপাদনের সিদ্ধান্ত আত্মঘাতী

>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মিলাঃ বাবা চাননি আমি পেশাদার কণ্ঠ শিল্পী হই

>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে পার্থ বড়ুয়াঃ সংগীত-অভিনয়কে কখনো আলাদা করে দেখিনি

>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে এটিএম শামসুজ্জামানঃ কপালে থাকলে ঠেকায় কে

>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে মোনালিসা: চলচ্চিত্র আমাকে দিয়ে হবে না

>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি’র সাথে একান্ত সাক্ষাৎকারে জয়া আহসানঃ
কিছুটা হাততালি হয়তো পাই

>>কমিউনিটির মুখোমুখিঃ অভিনয় মডেলিং ও নতুন সংসার নিয়ে প্রভা

>>কমিউনিটি স্কাইনেটজেপি নিউজের সাথে একান্ত সাক্ষাৎকার সব কাজই যত্ন নিয়ে করি : চুমকী

>>কমিউনিটির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে চলচ্চিত্র নায়ক ফেরদৌসঃ আমাদের চলচ্চিত্রের কিছু প্রযোজক পরিচালক খুব স্বার্থপর

>>কমিউনিটির সাথে একান্ত সাক্ষাতকারে আব্দুল লতিফ সিদ্দিকীঃ যে পতাকার জন্য লক্ষ মা-বোনরা ইজ্জত হারিয়েছেন, রাজাকারদের গাড়িতে সেই পতাকাই উঠেছিল

>>কমিউনিটিকে দেয়া সাক্ষাতকারে স্পিকারঃ দুর্যোগ থেকে হাওরবাসীকে বাঁচাতে আলাদা
হাওর মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে

>>কমিউনিটিকে অর্থমন্ত্রীঃ বিদ্যুৎ সংকটের কারনে বাংলাদেশে বিনিয়োগ হচ্ছে না

>>১৯৪৮ থেকেই ভাষা আন্দোলনের সূচনাঃ বিশিষ্ট ভাষা সৈনিক রওশন আলম

>>প্রবাসীদের দেশের প্রতি গভীর টান চোখে পড়ার মতঃ বিশিষ্ট চিত্রনির্মাতা তানভীর মোকাম্মেল

 

 

[প্রথমপাতা]