[প্রথমপাতা]

 

 

কমিউনিটিকে দেয়া সাক্ষাতকারে স্পিকারঃ দুর্যোগ থেকে হাওরবাসীকে বাঁচাতে আলাদা হাওর মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে
 

হাবিবুর রহমান, কমিউনিটি ডেস্ক ।।

জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদ এডভোকেট বলেছেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে বৃহত্তর হাওর এলাকার মানুষকে রক্ষা করতে হলে আলাদা হাওর মন্ত্রণালয় গঠন করতে হবে। নদী খনন না করে কোন অবস্থাতেই হাওরে আগাম বন্যা ও ভাঙ্গন প্রতিরোধ করা যাবে না। হাওরে এই প্রথমবারের মতো হাইওয়ে সড়ক নির্মাণসহ হাওরাঞ্চলের সামগ্রিক উন্নয়নে সরকার কয়েক হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নিচ্ছে বলেও জানান স্পিকার আব্দুল হামিদ এডভোকেট। কমিউনিটিকে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে এসব কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে অবস্থিত সিলেট, সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ ও নেত্রকোনা জেলা নিয়ে বৃহত্তর হাওর এলাকা। দেশের মোট খাদ্য চাহিদার বেশিরভাগ জোগান আসে এই হাওর থেকে। কিন্তু খাদ্যশস্যের অফুরন্ত ভান্ডার ও রুপালী মৎস্য সম্পদের খনি হিসেবে পরিচিত হাওরের জনগোষ্ঠি বরাবরই অবহেলিত। প্রতিবছর আগাম বন্যা, নদীভাঙ্গনসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিনষ্ট হচ্ছে হাজার হাজার কোটি টাকার সম্পদ। এবারও তার ব্যতিক্রম হয়নি। বোরা ধান কাটার আগ মূহুর্তে উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ভাসিয়ে নিয়ে গেছে বিস্তীর্ণ বোরো ফসলের মাঠ। হাওরের কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে বিপন্ন বিলাপ। স্বাধীনতার পর কোন সরকারই হাওরের উন্নয়নে নেয়নি কার্যকর কোন পদক্ষেপ।

এ বাস্তবতায় জাতীয় সংসদের স্পিকার আব্দুল হামিদ এডভোকেট রোববার কিশোরগঞ্জে বন্যাদুর্গত বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখেন। এরই ফাঁকে কথা বলেন কমিউনিটির প্রতিবেদকের সঙ্গে। স্পিকার আব্দুল হামিদ বলেন, বার বার হাওর উন্নয়ন বোর্ড হয়েছে। কিন্তু এটি কার্যকর কোন ভূমিকা রাখতে পারেনি। তাই হাওরের জন্য দরকার আলাদা হাওর মন্ত্রণালয় গঠন করা।

এবার পাহাড়ি ঢলে তলিয়ে গেছে কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা ও সুনামগঞ্জসহ বিভিন্ন হাওর এলাকার হাজার হাজার হেক্টর জমির বোরো ধান। হাওরে চলছে শোকের মাতম। কিশোরগঞ্জের প্রায় ৭০ ভাগ এলাকাই হাওর অধ্যুষিত। গত তিন দিনে কৃষকদের দুর্দশা নিজের চোখে দেখেন স্পিকার। তিনি ইটনা উপজেলার ধনপুর ইউনিয়নে নদীর তীরে দাড়িয়ে কথা বলছিলেন এ প্রতিবেদকের সাথে। তার পেছনেই দেখা যাচ্ছিল বিশাল এলাকার ডুবে যাওয়া বোরো জমি। এ সময় পাশেই কাঁচা ধান বুকে জড়িয়ে রোদন করছিলেন দু’জন কিষাণী। স্পিকার বলেন, হাওরের মানুষের দুঃখ্য-দুর্দশা নিজের চোখে না দেখলে বোঝা যায় না। তাই হাওরের জন্য আলাদা মন্ত্রনালয় হলে এ মন্ত্রনালয় হাওরবাসীর দু:খ-দুর্দশা লাঘবে কাজ করতে পারবে। এ মন্ত্রনালয় হাওরের বাস্তবতা বুঝে বিভিন্ন প্রকল্প গ্রহণ করবে।

স্পিকার আব্দুল হামিদ বলেন, সরকার মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় করায় মুক্তিযোদ্ধারা কিছু না কিছু উপকৃত হচ্ছেন। তিনি বলেন, কিশোরগঞ্জসহ বৃহত্তর হাওরাঞ্চল দেশের খাদ্য চাহিদার একটা বড় অংশের জোগান দিচ্ছে। তাই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পন্ন করা কিংবা উদ্বৃত্ত দেশে পরিণত করতে সরকারকে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। তবে আশার কথা সরকার ইতোমধ্যে হাওরের উন্নয়নে কয়েক হাজার কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প গ্রহণ করতে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে এ ব্যাপারে তাকে কথা দিয়েছেন বলে জানান স্পিকার।

হাওরের সীমাহীন দুর্গতির কথা উল্লেখ করে জাতীয় সংসদের স্পিকার ও বর্ষীয়ান রাজনীতিক আব্দুল হামিদ বলেন, দীর্ঘদিন হাওরের বড় বড় নদীগুলো খনন না করায় এগুলো ভরাট হয়ে গেছে। স্থানে স্থানে জেগে উঠেছে অসংখ্য চর। তাই সামান্য বন্যা হলেই নদীর দু’কুল ছাপিয়ে পানি চলে যায় ফসলের জমিতে। এ জন্য নদীগুলো খনন করে এর নব্যতা ফিরিয়ে আনতে হবে। সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহন না করলে একসময় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায় হাওরের অসংখ্য গ্রাম। হাওরে বর্ষাকালে যে দিক দিয়ে পানি আসে সেখানে বাধ নির্মাণ করতে হবে। তবে মাটির বাধঁ দিয়ে কোন কাজ হবে না। বৈশাখ মাসে এ বাঁধ নষ্ট হয়ে যাবে। বাঁধের মাটি পড়ে ইতোমধ্যে ভরাট হয়ে গেছে নদীর তলদেশ। এ ক্ষেত্রে কংক্রিটের উঁচু বাঁধ তৈরি করে এর দুই পাশে জিওটেক্সটাইল ও ব্লক দিয়ে বাঁধ নির্মাণ করতে হবে। তাহলে আগাম বন্যার হাত থেকে হাওরের ফসল রক্ষা করা যাবে।

এক প্রশ্নের জবাবে স্পিকার আব্দুল হামিদ এডভোকেট বলেন, আমি মনে করি সরকার হাওর এলাকার জন্য বিশেষ প্রকল্প গ্রহনের মাধ্যমে অবিলম্বে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবে। গঠন করা হবে হাওর মন্ত্রনালয়। আমি না সরকারি দল না বিরোধী দল। আমি মাঝামাঝি। তবে হাওরের মানুষ হিসাবে এবং জাতীয় সংসদের স্পিকার হিসাবে আমি সরকারের কাছে প্রস্তাব করতে পারি। সরকার কিভাবে তা বাস্তবায়ন করবে তা আমি জানি না।

বর্ষিয়ান পার্লামেন্টারিয়ান স্পিকার আব্দুল হামিদ বলেন, আমি হাওরে সীমিত পরিসরে সাব-মার্সেবল সড়ক নির্মাণ করেছি। এর একটাই কারণ, হাওরে উত্তরের পানি দক্ষিনে যায়। যার ফলে পূর্ব-পশ্চিমে রাস্তা হলে পানি প্রবাহে বাধা সৃষ্টি হবে। তাই হাওরের বুক চিড়ে প্রথমবারের মতো ইটনা, মিঠামইন ও অষ্টগ্রামের সাথে হাইওয়ে সড়ক নির্মাণ করা হবে। সেটি উত্তর থেকে দক্ষিনে যাবে। এতে করে পানি বাধাপ্রাপ্ত হবে না। এটি হবে হাওরের জন্য পরীক্ষামূলক হাইওয়ে সড়ক।

[প্রথমপাতা]