[প্রথমপাতা]

 

 

উকুন বিনাশের ডাক

 

সাইন.জুবায়ের
 

 

যখন আমি সাত বা আট

দ্বিতীয় শ্রেণী, হাফপ্যান্ট পড়ার বয়স

না, হাফপ্যান্ট কবে পড়েছিলাম মনে পড়ছেনা।

কারন, কোমরে যাই আটকাও হাঁটুর নিচে আর

টাকনুর উপরে হওয়া চাই, এটাই ছিল আমার অভিবাবকের নির্দেশ।

না, তাদের সব নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে মেনে নিতাম না

উদাহরণ স্বরূপ, মাথার চুলগুলো বেশ বড় হয়ে গেলেও

ছাঁটিয়ে-কাঁটিয়ে আনতে আমার আপত্তি ছিল।

অগত্যা, তারা মেনে নিয়েছিলেন

আমার অযৌক্তিক এই দাবিটা।

মা বলতেন, মাথা গরম থাকবে এতে করে

আমি বলতাম, গরম থাকে বলেই মাথায় কাজ হয় বেশি

আর আমি ক্লাশে ফাস্ট হতে পারি!

মাথায় উকুন হবে,

হোক, এতে মাথায় উর্বরতা বাড়বে

যেমনি বাড়ায় কৃষিজমিতে কেঁচু!

মা রেগে বলতেন, আচ্ছা চুল থাক

আয়, উকুনগুলো বেছে দেই।

এ কথা শোনলেই আমি নেচে গেয়ে চেচাঁমেচিঁতে কেঁদে দেই!

কিন্তু, রাতে যখন আমি ঘুমিয়ে যেতাম, আমার শিয়রের কাছে মা

একটু সময় খুঁজে এসে চুলে বিলি কেটে দিতেন এবং ঘন্টার পর ঘন্টা দিতেন!

আসলে উনি তখন, বিলি কাটার মতন উকুন বেছে দিতেন।

হঠাত চুলে একটু টান লাগলে আমি ঘুমের ঘোরেই ঝনঝন করে বেজে উঠতাম

আপনি উকুন মারেন কেন?

মা আমায় আশ্বস্থ করার চেষ্ঠা করতেন, উকুন মারছিনাতো!

চুলে বিলি কেটে দিলে অমন একটু একটু টান লাগেই! তুই ঘুমা।

আর কয়েকটা উকুন কমে গেলে তোর জন্যই ভালো।

মাথায় উকুন আর কৃষিজমির কেঁচু দুটা একরকম উপকারী না

এই উকুন তোর আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থেকে তোরই রক্ত চুষে খাচ্ছে,

যে রক্তে তুই বেঁচে আছিস।

অনর্থ ছাড়া এদের বেঁচে থাকার কোন অর্থ নেই।

এক লাফে আমি উঠে বসে যেতাম, শোয়া থেকে

আমি বুঝে যেতাম, মা কি করছে আর কি করতে আমায় বুঝাচ্ছে।

ঘাড় টেরা করে মাকে তাই ধমকে দিতামঃ

আমি কিন্তু এখনি নেমে যাব খাট থেকে, ঘুমাবোনা রাতে আর

দেখি আপনি উকুন মারেন কেমনে!

মা অসহায়ের মতন বুঝানোর চেষ্ঠা করতেন, একবার শুধু মাথার চুলগুলো ন্যাড়া কর বাবা

বুঝবি তখন, কত আরাম আর শান্তি লাগে।

খাওয়ার সময়, পড়া-লিখা, স্কুলে, অবসর বা খেলার সময় এমনকি ঘুমাতেও আরাম পাবি।

আমি আবার রেগে উঠেছি দেখে মা চুপ হয়ে যেতেন।

আচ্ছা তুই থাক, তোর উকুনের সাম্রাজ্য নিয়ে মাথায়!


কোন একদিন বনিবনা হয়ে গিয়েছিলো মায়ের সাথে আমার

আমি ন্যাড়া করেছিলাম মাথার উকুনের সাম্রাজ্য, সমস্ত চুল।

হ্যাঁ, এর পরের অনুভূতি অন্যরকম

আগের মাথা ভরা চুল, উকুনের সাম্রাজ্য বানিয়ে বাঁচা সত্যি ছিল ভুল।



কয়েক যুগ পরে আজ আমি ভাবছি-

দেশের মাথায় ঠিক কত পরিমাণ উকুনের বসবাস?

চল্লিশ বছরে দেশের শাসক-শোষকদের আদর আহ্লাদ আর ছত্রছায়ায়

গোটা চার বা চল্লিশ হাজার, বা চল্লিশ লাখ অথবা এর কম বেশি!

দেশের কি কোন অভিবাবক নেই?

আমার অভিবাবক আমাকে বুঝাতে সক্ষম হয়েছিলেন, আমি বুঝেছিলাম

আমি উকুনগুলোকে স্ব-মূলে ধ্বংস করেছিলাম

আমার মেধা-মনন, শরীর, মাথা এবং পরিবারের প্রত্যেকের শন্তির বিনিময়ে।

আমি জানি এবং এও জানি, সবাই একমত হবেন আমার সাথে

নিজের পরিবার থেকে সবাই আসল এবং বেশি পরিমাণে শিক্ষা গ্রহণ করে থাকে।

আমি এই মূহূর্তে সন্দিহান হতে চাইনা

দেশে যারা বিগত সময়ে শাসন-শোষন করে গেছেন এবং এখন যারা করছেন

তাদের পারিবারিক শিক্ষা নিয়ে!

শুধু মিনতি জানাতে চাই,

যদি আপনি সঠিক শিক্ষা গ্রহণ করে থাকুন, দেশের উকুনগুলোকে স্ব-মূলে ধ্বংস করুন প্লিজ!

আমরা আপামর জনগণ শান্তিতে বাঁচতে চাই, এর বিনিময়ে।

আর যদি না-ই পারুন

নতুন, কাউকে অভিবাবক হয়ে আসতে বাঁধা দিবেন না।

কারন, দেশের অনেক সন্তান দায়িত্বশীল হওয়ার যোগ্যতায়

সঠিক অভিবাবক যেমন

এখন, আপনারা তাদের সাত বা আট বয়সী বাচ্চার মতন!

বৃদ্ধ অভিবাবকগণের উচিত

দেশের রক্ত চোষা উকুনদের ইন্দন, অসভ্য আক্রমণ আর কুটনামীটুকু বন্ধ রাখুন।

নয়তো, সামনে আসছে যে নির্বাচন

পারিবারিক শিক্ষায় শিক্ষিত, আমরা যারা শত-সহস্র বা কয়েক কোটি এমন তরুণ

যাদের বজ্র কন্ঠে ছাপিয়ে আসবে ইস্রাফিলের সিঙ্গার ফুঁক

কাগজের টুকরোয় ছাপানো লাগবেনা কোন প্রতিক,

বিরম্বনা আনয়নে লাগবেনা সাইন, সীল, টিপ

অথবা ই-ভোটে জালিয়াতি প্রি-সিলেকশন

না, না, আর “না” ভোটে সব হয়ে যাবে প্রত্যাখ্যান।


 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

লেখকের অন্যান্য লেখাঃ

 

>>ভ্যাবাচেকার পাঠ

>>বঞ্চিতের উপলব্ধি

>>প্রেমের প্রতিদান, জাহান্নাম 

>>অমিমাংসিত প্রশ্ন

>>নেকাবী মশকরা

>>জৈবিক ক্ষুধা

>>প্রত্যাখ্যাত, অতঃপর

>>উকুন!

>>আমাকে খুন করেছে-মনুষ্যরূপী নরপিচাশটায়...!

>>এক কিসতি ঘুম, অতঃপর

>>ঊর্মি এবং পূজারী

>>শাফিউল অর্থ মুক্তিদাতা

>>বেগানা স্বপ্নের লাশ

>>নেভাল বীচ

>>চৈতালী কষ্ট

>>অবচেতনে রিফ্রেশম্যান্ট...! 

>>নস্টালজিকঃ এক-কুড়ি বছর ফেরৎ!

>>মহান ৮ই ফাল্গুন

>>চেতনায় একুশ...

>>পহেলা ফাল্গুন

>>হ্যালো...