|
বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবসের ভাবনা
নূর মোহাম্মদ নূরু
১৫ মার্চ ছিলো বিশ্ব ভোক্তা
অধিকার দিবস। ভোক্তা অধিকার সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো দিবসটির লক্ষ্য। একজন
ক্রেতার মৌলিক অধিকারের উন্নতি সাধন, বাজার ব্যবস্থার অপব্যবহার দূর করা ও
সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা দিবসটির উদ্দেশ্য। ১৯৬০ সালে সুইজারল্যান্ডের
রাজধানী হেগে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ভোক্তা সংগঠনের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে
গঠিত হয় ইন্টারন্যাশনাল অর্গানাইজেশন অব কনজিউমার্স ইউনিয়ন। যার বর্তমান
নাম হচ্ছে কনজিউমারস ইন্টারন্যাশনাল। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট জন এফ
কেনেডি প্রথমবারের মতো ভোক্তা অধিকারকে সংজ্ঞায়িত করেন এবং ভোক্তা
আন্দোলনের আনুষ্ঠানিক ঘোষনা দেন। মিঃ কেনেডি ভোক্তাদের স্বার্থ রক্ষার
বিষয়ে ১৯৬২ সালের ১৫ মার্চ কংগ্রেসে তার বক্তৃতায় নিরাপত্তার অধিকার,
তথ্যপ্রাপ্তির অধিকার, পছন্দের অধিকার এবং অভিযোগ প্রদানের অধিকার -
ভোক্তাদের এ চারটি মৌলিক অধিকার সম্পর্কে তিনি আলোকপাত করেন যা পরবর্তীতে
ভোক্তা অধিকার আইন নামে পরিচিতি পায়। পরবর্তীতে ১৯৮৩ সালের ১৫ মার্চ
তারিখে বিশিষ্ট পরিবেশবাদী ও ভোক্তাদের অধিকার বিষয়ে আন্দোলনে সোচ্চার
কর্মী মালয়েশিয়ার আনোয়ার ফজল ভোক্তা সংগঠনগুলোর মাধ্যমে ভোক্তাদের মৌলিক
অধিকার সম্বন্ধে সচেতনতার উদ্দেশ্য বৈশ্বিকভাবে উদযাপনের আহ্বান জানান। এ
দিবস পালনের রূপকার হিসেবে তিনি পরিচিতি হয়েছেন। ১৯৮৫ সালে জাতিসংঘের
মাধ্যমে জাতিসংঘ ভোক্তা অধিকার রক্ষার নীতিমালায় কেনেডি বর্ণিত চারটি
মৌলিক অধিকারকে আরো বিস্তৃত করে অতিরিক্ত আরো আটটি মৌলিক অধিকার সংযুক্ত
করা হয়। এরপর থেকেই কনজুমার্স ইন্টারন্যাশনাল এ সকল অধিকারকে সনদে
অন্তর্ভূক্ত করে। কেনেডি'র ভাষণের দিনকে স্মরণীয় করে রাখতে ১৫ মার্চকে
বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস হিসেবে বৈশ্বিকভাবে উদযাপন করে আসছে। ১৫ মার্চকে
উপজীব্য করে আজ বৈশ্বিকভাবে উদযাপিত হয়ে থাকে বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস।
ভোক্তা অধিকার দিবসের এবাররে প্রতিপাদ্য " “Consumer’s right to health
food” “স্বাস্থ্যকর খাদ্য ভোক্তার অধিকার”।
কেনেডির “সংজ্ঞা অনুযায়ী আমরা সকলেই ভোক্তা। অর্থনীতিতে ভোক্তাগণই সবচেয়ে
বড় জনগোষ্ঠী যারা একই সাথে প্রভাবক এবং প্রভাবিত। সকল ব্যয়ের দুই-তৃতীয়াংশ
সংঘটিত হয় ভোক্তাদের দ্বারা। কিন্তু তা সত্ত্বেও এই ভোক্তারা অসংগঠিত এবং
প্রায়শঃই তাঁদের কথায় কেউ পাত্তা দেয় না। ভোক্তা হিসেবে পণ্যের গুণাগুণ
সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানাটা আমাদের অধিকার। কিন্তু বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই
আমাদেরকে অসত্য তথ্য দিয়ে বিভ্রান্ত করা হয়।.. ভোক্তাদের পছন্দ এখন
নিয়ন্ত্রিত হচ্ছে অতি উন্নত বিজ্ঞাপনের দ্বারা। ভোক্তারা বিজ্ঞাপনের
চাতুর্যতায় হারিয়ে যান। সাধারণভাবে একজন ভোক্তা জানেন না যে তিনি যে ওষুধ
কেনেন তা কতখানি নিরাপদ, মানসম্পন্ন এবং কার্যকর। নকল-ভেজালের স্বর্গ রাজ্য
দেশের সর্বত্রই নিরাপদ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যের সংকট প্রকট। ভোক্তাদের
গ্রহণকৃত পণ্যের মান সুরক্ষিত বা সুনিশ্চিত নয়। ভোক্তা জানে না যে খাবার সে
খাচ্ছে তা কতখানি পুষ্টিকর এবং স্বাস্থ্যসম্মত।” আমাদের দেশে সামাজিক
ন্যায়বিচার এখনও সুদৃঢ়ভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। তাই ভোক্তারা বাজারে প্রতিনিয়ত
প্রতারিত ও প্রবঞ্চিত হন। দেশে সু-সংগঠিত ভোক্তা আন্দোলন গড়ে না উঠায় এই
প্রতারণা-প্রবঞ্চনার বিরুদ্ধে কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে উঠছে না। ভোক্তাদের
নিরবতা ও নির্লিপ্ততার কারণে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী খাদ্যে পণ্যে বিষাক্ত
ক্যামিকেল দিয়ে খাবারকে বিষে পরিণত করে জনগণের পকেট কেটে টাকার পাহাড় গড়ছে।
বাংলাদেশে ‘ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ আইন, ২০০৯’ নামে একটি আইন হয়েছে। গঠিত
হয়েছে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। আইনের আওতায় সারাদেশে ভোক্তাদের
অধিকার সুরক্ষায় জেলা, উপজেলা এবং ইউনিয়ন পর্যায়ে কমিটি গঠিত হওয়ার কথা। এই
আইনে কৃত অপরাধের জন্য অনূর্ধ্ব এক থেকে তিন বৎসর কারাদন্ড বা অনধিক পঞ্চাশ
হাজার-তিন লক্ষ টাকা অর্থদন্ড, বা উভয় দন্ডে দন্ডিত করার বিধান রয়েছে। আইনে
উল্লেখিত কোন অপরাধের জন্য দন্ডিত ব্যক্তি যদি পুনরায় একই অপরাধ করেন তবে
তিনি উক্ত অপরাধের জন্য সর্বোচ্চ যে দন্ড দেয়া হয়েছে তার দ্বিগুণ দন্ডে
দন্ডিত হবেন। বলাই বাহুল্য যে, আইন থাকলেও ভোক্তারা আজও তাঁদের অধিকার
সম্পর্কে অজ্ঞ। অথবা জানলেও কোন লাভ নেই। একথা অনস্বীকার্য যে প্রতিটি
মানুষই কোন না কোন ভাবে ভোক্তা। সে হিসেবে ভোক্তারাই সংখ্যাগরিষ্ঠ। অথচ
ভোক্তারাই সবচেয়ে বঞ্চিত। বিজ্ঞাপনের বিপজ্জনক জালে পুরোপুরি বন্দি আমাদের
শিশুরা। এই বন্দিত্ব অবসানে ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনের যথাযথ প্রয়োগ
নিশ্চিত করতে হবে। স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত করতে এবং ভোক্তা হিসাবে
নিজেদের অধিকার সমুন্নত রাখতে সকল শ্রেণী, পেশার নাগরিক আমরা ক্রেতা-ভোক্তা
হিসাবে সকলকে ঐক্যবদ্ধ ভাবে সংগঠিত হয়ে নকল ভেজালমুক্ত, নিরাপদ খাদ্য
অধিকার আন্দোলন জোরদার করতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে নাগরিক সেবা ও অধিকার
সংরক্ষণে এবং সেবা সার্ভিস সমূহের অব্যবস্থাপনা নিরসন ও ভোক্তাদের কার্যকরী
সেবা প্রদান নিশ্চিত করতে হবে। ভোক্তা হিসাবে নিজেদের অধিকার সমুন্নত রাখতে
জানতে হবে ভোক্তা আইন এবং প্রয়োজনে অভিযোগ জানাতে হবে জাতীয় ভোক্তা অধিকার
সংরক্ষণ অধিদপ্তর এবং দেশের ক্রেতা-ভোক্তাদের স্বার্থ সংরক্ষণকারী
প্রতিষ্ঠান কনজুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) এর কাছে।
বিশ্ব ভোক্তা অধিকার দিবস খুব পুরোনো কোন দিবস নয়। ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণের
সপক্ষে দেশে একাধিক সহায়ক আইন রয়েছে। নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এবং ফরমালিন
নিয়ন্ত্রণ আইনসহ অন্যান্য আইনগুলো পর্যালোচনা করে ভোক্তার নিরাপদ খাবার এবং
সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত করার জন্য সরকারকে উদ্যোগ নিতে হবে। শুধু আইন নয় এর
সঠিক বাস্তবায়ন হলেই কেবল নিশ্চিত হবে স্বাস্থ্যকর খাদ্যে ভোক্তার অধিকার।
বিশ্ব ভোক্তা দিবসে সকলের জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্য নিশ্চিত হোক এটাই আমাদের
প্রত্যাশা।
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
-
কেন
এ পৈশাচিকতা
-
৩
ডিসেম্বর, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস আজঃ সুন্দর পৃথিবী গড়তে প্রতিবন্ধী
ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করার বিকল্প নাই
-
বাংলার
বুলবুল গায়ক ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দীন আহমদের ১১৩তম জন্মবার্ষিকীতে
ফুলেল শুভেচ্ছা
-
বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,
সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী নীলিমা ইব্রাহিমের ৯৩তম মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
কুরবানীর
ঈদঃ মনের পশুকে করহে জবাই, সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা
-
বাংলা
সাহিত্যের দিকপাল, পুঁথি সম্রাট মুন্সি আবদুল করিম ৬১তম
-
একজন
রাজনীতিবীদের মূর্তির খোঁজে!!
-
বাংলাদেশের
অগ্রগণ্য আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সাহিত্য-সম্পাদক আব্দুল মান্নান
সৈয়দের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
কবি,
গল্পকার, প্রবন্ধকার এবং বাংলা সাহিত্যে চলিতভাষার প্রতিষ্ঠাতা প্রমথ
চৌধুরীর ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
অব্যবস্থাপনার
বলি
-
চিত্রশিল্পী,
এশিয়ার কণ্ঠস্বর এস এম সুলতানের ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা
-
উপমহাদেশের
প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী মোহাম্মদ রফির ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
"উপমহাদেশের
কালজয়ী লোক সঙ্গীত শিল্পী আবদুল আলীমের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী"
-
মুক্তিযুদ্ধের
সফল রূপকার আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী
তাজউদ্দিন আহমদের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
-
আত্মশুদ্ধির
সর্বোত্তম মাস পবিত্র রমজানে আমাদের করনীয় ও বর্জনীয়
-
পুরুষ
নির্যাতন একটি
উদ্বেগজনক সামাজিক
সমস্যাঃ নিয়ন্ত্রণ জরুরী
-
ভেজাল
ও রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্যঃ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
-
ক্ষতিকর
প্লাস্টিক বোতলজাত পানীয় থেকে সাবধান!!
-
মেয়েটি
কী জানে ফেয়ারনেস ক্রিম কতটা ক্ষতিকর?
|