|
মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সঃ) এর উর্ধ্বলোকে পরিভ্রমণের ঐতিহাসিক ও অলৌকিক
ঘটনার মহামান্বিত রজনী পবিত্র শবে মিরাজ আজ
@
নূর মোহাম্মদ নূরু
আজ ২৬ রজব ১৪৩৬ হিজরি, ১৬ জৈষ্ঠ্য ১৪২২ বঙ্গাব্দ, ১৬ মে ২০১৫ খৃষ্টাব্দ
শনিবার দিবাগত রাতে পবিত্র শবে মেরাজ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) এর
ঊর্ধ্বেলোকে পরিভ্রমণের ঐতিহাসিক ঘাটনার স্মারক দিবস। শবে মেরাজ বা মেরাজের
রজনী ইসলাম ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে পালিত এমন একটি রাত, যে রাতে ইসলাম ধর্মের
শেষ বাণী বাহক হযরত মুহাম্মদ (সঃ) ৬২০ খ্রিস্টাব্দের রজব মাসের ২৬ তারিখে
বিশেষ ব্যবস্থায় উর্ধ্বাকাশে আরোহণ করেন এবং মহান আল্লাহ'র সাথে সাক্ষাৎ
করেন। রাসূল (সাঃ) পথহারা মানুষকে সঠিক পথের সন্ধান দিতে একটানা ১২ বছর
দাওয়াত দেন মক্কায়। কিন্তু তাঁর দাওয়াতে কিছু সংখ্যক মানুষ ইসলাম কবুল
করলেও অধিকাংশ লেগে যায় বিরোধিতায়। ধীরে ধীরে বিরোধিতা তীব্র থেকে তীব্রতর
আকার ধারণ করে। নানা রকম অমানবিক নির্যাতন শুরু হয় রাসূলের (সঃ) উপরে।
আল্লাহ রাববুল আলামীন সান্ত্বনা দেয়ার জন্য এ সময়ই রাসূল (সাঃ)-কে তাঁর
সান্নিধ্যে নিয়ে যান। নিজের প্রিয় হাবিবকে তাঁর সান্নিধ্যে নিয়ে যেতে
আল্লাহ নিজ কুদরতে মিরাজের আঞ্জাম দেন। বিভিন্ন তথ্যের মাধ্যমে তারই প্রমাণ
ঘটে। এক মুহূর্তে ঘটে যায় মিরাজের ঘটনা। তাফসীরকারকগণ বলেন, এতে চোখের এক
পলক সময় ব্যয়িত হয়। বর্ণিত আছে, মিরাজ থেকে ফেরার পর দরজার কড়া নড়তে এবং
অযুর পানি গড়াতে দেখেছেন রাসূল (সাঃ)। ইসলামী চিন্তাবিদদের মতে, মহানবীর
(স.) মেরাজ দৈহিক নয়, বরং ছিল আত্মিক আরোহণ। পবিত্র কুরআনের সূরা বনী
ইসরাইলের প্রথম আয়াতে রাসূল (সাঃ)-এর মিরাজ গমনের বর্ণনা এসেছে এভাবে, তিনি
সেই পরম পবিত্র মহিমাময় সত্তা যিনি তাঁর স্বীয় বান্দাহকে এক রাতে ভ্রমণ
করিয়েছেন মসজিদুল হারাম থেকে মসজিদুল আকসা পর্যন্ত। যার পরিবেশকে করেছেন
তিনি বরকতময়। যাতে তাঁকে নিজের কিছু কুদরত দেখান। নিশ্চয়ই তিনি সর্ব শ্রোতা
ও সর্বজ্ঞ।
২৬ রজব রাসূল (সাঃ) উম্মে হানী বিনতে আবু তালিবের ঘরে ঘুমিয়েছিলেন। হঠাৎ
জিব্রাইল (আঃ) এসে রাসূল (সাঃ)-কে মসজিদুল হারামে নিয়ে যান। যেখানে তাঁর
বুক বিদীর্ণ করে জমজম কূপের পানি দিয়ে সীনা মোবারক ধৌত করে শক্তিশালী করেন।
তারপর সেখান থেকে তিনি বোরাক নামক এক ঐশী বাহনে চড়ে বায়তুল মোকাদ্দাসে এসে
সকল নবীর ইমাম হয়ে দুই রাকাত নামায আদায় করেন। তারপর তিনি বোরাকে চড়ে
ঊর্ধ্বে গমন করতে থাকেন। মহানবী (সঃ) এ রাতে প্রথমে কাবা শরিফ থেকে বোরাক
নামের বাহনে যাত্রা করে ফিলিস্তিনের বায়তুল মোকাদ্দাস মসজিদে যান। সেখানে
অন্যান্য নবী-রাসুলের সঙ্গে দুই রাকাত নফল নামাজ আদায় করেন। এরপর ঊর্ধ্বলোকে
সফর শুরু করেন। এ সময় তিনি নভোমণ্ডল, বেহেশত-দোজখ ও সৃষ্টির বিভিন্ন রহস্য
প্রত্যক্ষ করেন এবং পূর্ববর্তী নবীদের সাক্ষাৎ লাভ করেন। সপ্ত আসমান পেরিয়ে
তিনি আরশে আজিমে ধনুক পরিমাণ দূরত্বে থেকে মহান আল্লাহ পাকের দিদার লাভ
করেন। সরাসরি আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের সঙ্গে তাঁর কথোপকথন হয়। ইসলামী
চিন্তাবিদদের মতে, এটা ছিল দৈহিক ও আত্মিক আরোহণ। মহানবী হজরত মুহাম্মদ
(সঃ) এর উর্ধ্বলোকে পরিভ্রমণের ঐতিহাসিক ও অলৌকিক ঘটনার মহামান্বিত রজনী
পবিত্র শবে মিরাজে উপলক্ষে সকল ব্লগারবৃন্দ ও মুসলিম ভাই ও বোনদের জন্য
আন্তরিক শুভেচ্ছা।
মিরাজ শব্দ এসেছে আরবী eউরুযুন' শব্দ থেকে। উরুযুন অর্থ সিঁড়ি আর মিরাজ
অর্থ ঊর্ধ্বগমন। যেহেতু সিঁড়ি বেয়ে উপরে ওঠা হয় সেজন্য রাসূলের ঊর্ধ্বগমনকে
মিরাজ বলা হয়। শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ পাক তাঁহার হাবীব, সাইয়্যিদুল
মুরসালীন, ইমামুল মুরসালীন, খাতামুন নাবিইয়ীন হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি
ওয়া সাল্লাম এর সাথে আল্লাহ পাক যে সাক্ষাৎ বা দীদার হয়েছে আনুষ্ঠানিকভাবে
সেটাই মিfরাজ শরীফ। মেরাজ ঘটেছিল মুহাম্মদ (সঃ) এর নবুয়্যত বা ঐশ্বিক বাণী
প্রাপ্তির দশম বছরে। তবে এব্যাপারে সাহাবাদের মধ্যেই মতভেদ ছিল। শুধুমাত্র
এতটুকু সঠিক করে বলা যায়: নবুয়্যতের দশম থেকে ত্রয়োদশ বছরের মধ্যে কোনো
এক রাতে ঘটেছে মেরাজের ঘটনা। মেরাজের ঘটনায় দুটো অংশ ছিলঃ ১) আল-ইসরা বা
জেরুজালেমে রাত্রভ্রমণ, এবং ২) মেরাজ বা উর্ধ্বারোহণ বা স্বর্গারোহণ। আরবি
মেরাজ শব্দটি আরাজা থেকে গৃহীত, যার অর্থ সে আরোহণ করেছিল। এপ্রসঙ্গে
পবিত্র ক্বোরআনের বলা হয়েছে, gএমন একদিন ফেরেশতা এবং রুহ আল্লাহর দিকে
উর্ধ্বগামী হয় যা পার্থিব পঞ্চাশ হাজার বছরের সমান।h তাই ক্বোরআন কর্তৃক
হজরত মুহাম্মদের "আত্মিক আরোহণ" প্রমাণিত। সুতরাং মিরাজ শরীফ সত্য এবং তা
কুরআন শরীফ ও সুন্নাহ শরীফ-এর অসংখ্য দলীল দ্বারা প্রমাণিত। মিরাজ শরীফ কখন
হয়েছিল এ নিয়ে কিছু মতপার্থক্য থাকলেও মশহুর বা প্রসিদ্ধ মতে মিরাজ শরীফ
সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের ২৭ তারিখ রাতে সোমাবার শরীফ-এ অর্থাৎ ২৬শে রজব
দিবাগত রাতে। যেমন, এ সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে বিশ্ববিখ্যাত সর্বজনমান্য
মুহাদ্দিছ আরিফ বিল্লাহ আল্লামা হযরত শায়েখ আব্দুল হক মুহাদ্দিছ দেহলভী
হানাফী রহমতুল্লাহি আলাইহি উনার নিজ হাতে লিখা eমা ছাবাতা বিস সুন্নাহ
কিতাবের ৭৩ পৃষ্ঠায় বলেন,
اعلم انه قد اشتهر فيما بين الناس بديار العرب ان معراجه صلى الله عليه
وسلم كان لسبع وعشرين من رجب
জেনে রাখুন! নিশ্চয়ই আরব জাহানের দেশগুলোর লোকদের মধ্যে মাশহূর বা প্রসিদ্ধ
ছিলো যে, নিশ্চয়ই সাইয়্যিদুনা হযরত নূরে মুজাসসাম, হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক
ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার মিরাজ শরীফ সংঘটিত হয়েছিলো রজব মাসের
২৭ তারিখ রাতেই। একটি বর্ণনায় পাওয়া যায়: নবুয়্যতের দশম বছর, সাত মাস;
২৭ রজব তারিখে মুহাম্মদ, আবু তালিবের মেয়ে হিন্দার বাড়িতে ছিলেন। আবার
অন্য হাদিসে বর্ণিত হয়েছে, ঐ রাতে মুহাম্মদ কাবাতে ঘুমান, এবং তিনি কাবা'র
ঐ অংশে ঘুমান, যেখানে কোনো ছাদ ছিল না (হাতিম)।
হিন্দার বিবরণ থেকে জানা যায়, ঐ রাতে, মুহাম্মদ, রাতের প্রার্থণা সেরে
ঘুমাতে যান। খুব ভোরে মুহাম্মদ উঠে সবাইকে জাগালেন এবং প্রার্থণা সারলেন।
হিন্দাও তাঁর সাথে প্রার্থণা সারলেন। প্রার্থণা শেষে মুহাম্মদ (সঃ) জানালেন,
gও উম্মুহানি (হিন্দার ডাক নাম), এই ঘরে আমি তোমাদের সাথে প্রার্থণা করেছি।
যেমন তোমরা দেখেছ। তারপর আমি পবিত্র স্থানে গিয়েছি এবং সেখানে প্রার্থণা
সেরেছি। এবং তারপর তোমাদের সাথে ভোরের প্রার্থণা সারলাম, যেমন তোমরা দেখছো।h
সুবহানাল্লাহ!
আনাছ (রাঃ) মালেক ইবনে সাfসাআfহ (রাঃ) হইতে বর্ণনা করিয়াছেনঃ নবী
ছাল্লাল্লাহু আলাইহি অসাল্লামকে যেই রাত্রে আল্লাহ তাআলা পরিভ্রমণে নিয়া
গিয়াছিলেন সেই রাত্রের ঘটনা বর্ণনায় ছাহাবীগণের সম্মুখে তিনি বলিয়াছেন,
যখন আমি কাfবা গৃহে উন্মুক্ত অংশ হাতীমে (উপণীত হইলাম এবং তখনও আমি ভাঙ্গা
ঘুমে ভারাক্রান্ত) ঊর্ধ্বমুখী শায়িত ছিলাম, হঠাৎ এক আগন্তক (জিব্রাঈল
ফেরেশতা) আমার নিকট আসিলেন (এবং আমাকে নিকটবতী/ জমজম কূপের সন্নিকটে নিয়া
আসিলেন)। অত:পর আমার বক্ষে ঊধর্ব র্সীমা হইতে পেটের নিম্ন সীমা পর্যন্ত
চিরিয়া ফেলিলেন এবং আমার হদয় বা কল্বটাকে বাহির করিলেন। অত:পর একটি
স্বর্ণপাত্র উপস্থিত করা হইল, যাহা ঈমান (পরিপক্ব সত্যিকার জ্ঞান বর্ধক)
বস্তুতে পরিপূর্ণ ছিল । আমার কল্বটাকে (জমজমের পানিতে) ধৌত করিয়া তাহার
ভিতরে ঐ বস্তু ভরিয়া দেওয়া হইল এবং কল্বটাকে নির্ধারিত স্থানে রাখিয়া
আমার বক্ষকে ঠিকঠাক করিয়া দেওয়া হইল। অতপর আমার জন্য খচ্চর হইতে একটু
ছোট, গাধা হইতে একটু বড় শ্বেত বর্ণের একটি বাহন উপস্থিত করা হইল তাহার নাম
gবোরাকh, যাহার প্রতি পদক্ষেপ দৃষ্টির শেষ সীমায়। সেই বাহনের উপর আমাকে
সওয়ার করা হল। ঘটনা প্রবাহের ভিতর দিয়া জিব্রাঈল (আঃ) আমাকে লইয়া
নিকটবর্তী তথা প্রথম আসমানের দ্বারে পৌছিলেন এবং দরজা খুলিতে বলিলেন। ভিতর
হইতে পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হইল, জিব্রাঈল স্বীয় পরিচয় প্রদান করিলেন। অতপর
জিজ্ঞাসা করা হইল, আপনার সঙ্গে কে আছেন? জিব্রাঈল বলিলেন, মুহাম্মদ (সঃ)
আছেন। বলা হইল, (তাঁহাকে নিয়া আসিবার জন্যই ত আপনাকে) তাঁহার নিকট পাঠান
হইয়াছিল? জিব্রাঈল বলিলেন হাঁ। তারপর আমাদের প্রতি মোবারকবাদ জানাইয়া
দরজা খোলা হইল। গেটের ভিতরে প্রবেশ করিয়া তথায় আদম (আঃ)-কে দেখিতে পাইলাম
। জিব্রাঈল আমাকে তাঁহার পরিচয় করাইয়া বলিলেন,তিনি আপনার আদি পিতা আদম
(আঃ), তাঁহাকে সালাম করুন। আমি তাঁহাকে সালাম করিলাম। আমার সলামের
উত্তরদানে আমাকে gসুযোগ্য পুত্র ও সুযোগ্য নবীh আখ্যায়িত করিলেন এবং খোশ
আমদেদ জানাইলেন ।
অতঃপর জিব্রাঈল আমাকে লইয়া দ্বিতীয় আসমানের দ্বারে পৌছিলেন এবং দরজা
খুলিতে বলিলেন। এখানেও পূর্বের ন্যায় কথোপকথন হইল এবং শুভেচ্ছ মোবারকবাদ
জনাইয়া দরজা খোলা হইল। ভিতরে প্রবেশ করিয়া তথায় ইয়াহইয়া (আঃ) ও ঈসা
(আঃ)-এর সাক্ষাত পাইলাম; তাঁহাদের উভয়ের নানী পরস্পর ভগ্নী ছিলেন।
জিব্রাঈল আমাকে তাঁহাদের পরিচয় দানে সালাম করিতে বলিলেন, আমি তাঁহাদিগকে
সালাম করিলাম। তাঁহারা আমার সালামের উত্তর প্রদান করত: gসুযোগ্য ভ্রাতা
সুযোগ্য নবীh বলিয়া আমাকে খোশ আমদেদ জানাইলেন। অতপর জিব্রাঈল (আঃ) আমাকে
লইয়া তৃতীয় আসমানের দ্বারে পৌছিলেন এবং দরজা খুলিতে বলিলেন। তথায়ও
পূর্বের ন্যায় কথোপকথনের পর শুভেচ্ছা স্বাগত জানাইয়া দরজা খোলা হইল।
ভিতরে প্রবেশ করিয়া ইউসুফ (আঃ)-এর সাক্ষাত পাইলাম । জিব্রাঈল (আঃ) আমাকে
তাঁহার সহিত পরিচয় করাইয়া সালাম করিতে বলিলেন; আমি তাঁহাকে সালাম করিলামা
তিনি সালামের উত্তর দান করতঃ আমাকে gসুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবীh বলিয়া
মোবারকবাদ জানাইলেন । অত:পর আমাকে লইয়া জিব্রাঈল চতূর্থ আসমানের নিকটে
পৌছিলেন এবং দরজা খুলিতে বলিলেন। সেখানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তরের পর
শুভেচ্ছা স্বাগত জানাইয়া দরজা খোলা হইল । ভিতরে প্রবেশ করিয়া আমরা তথায়
ইদ্রীস (আঃ)-এর সাক্ষাত পাইলাম । জিব্রাঈল আমাকে তাঁহার পরিচয় করাইয়া
সালাম করিতে বলিলেন। আমি তাঁহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের উত্তর দিলেন
এবং gসুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবীh বলিয়া আমাকে মারহাবা জানাইলেন। অত:পর
জিব্রাঈল আমাকে লইয়া পঞ্চম আসমানে পৌছিলেন এবং দরজা খুলিতে বলিলেন। এই
স্থানেও পূর্বের ন্যায় প্রশ্নোত্তর চলার পর শুভেচ্ছ ও মোবারকবাদ দানের
সহিত দরজা খোলা হইল। আমি ভিতরে পৌছিয়া হারুন (আঃ)-এর সাক্ষাত পাইলাম
জিব্রাঈল আমাকে তাঁহার পরিচয় দানে সালাম করিতে বলিলেন। আমি সালাম করিলাম।
তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন এবং gসুযোগ্য ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবীh বলিয়া
আমাকে খোশ আমদেদ জানাইলেন। তারপর জিব্রাঈল আমাকে লইয়া ষষ্ঠ আসমানের দরজায়
পৌছিলেন এবং দরজা খূলিতে বলিলেন । এস্থানেও পরিচয় জিজ্ঞাসা করা হইলে
জিব্রাঈল স্বীয় পরিচয় দান করিলেন, অত:পর সঙ্গে কে আছে জিজ্ঞাস করা হইল।
তিনি বলিলেন, মূহাম্মদ (সঃ); বলা হইল, তাঁহাকে ত নিয়া আসিবার জন্য অপনাকে
পাঠান হইয়াছিল? জিব্রাঈল বলিলেন, হাঁ। তৎক্ষণাত শুভেচ্ছা ও মোবারকবাদ
জানাইয়া দরজা খোলা হইল। তথায় প্রবেশ করিয়া মূসা (আঃ)-এর সাক্ষাত পাইলাম
। জিব্রাঈল আমাকে তাঁহার পরিচয় জ্ঞাত করিয়া সালাম করিতে বলিলেন। আমি
তাঁহাকে সালাম করিলাম। তিনি সালামের উত্তর প্রদান করিলেন এবং gসুযোগ্য
ভ্রাতা ও সুযোগ্য নবীh বলিয়া আমাকে মোবারকবাদ জানাইলেন। যখন আমি এই এলাকা
ত্যাগ করিয়া যাইতে লাগিলাম তখন মূসা (আঃ) কাঁদিতেছিলেন । তাঁহাকে কাঁদিবার
কারণ জিজ্ঞাসা করা হইলে তিনি বলিলেন, আমি কাঁদিতেছি এই কারণে যে, আমার
উম্মতে বেহেশত লাভকারীর সংখ্যা এই নবীর উম্মতের বেহেশত লাভকারীর সংখ্যা
অপেক্ষা কম হইবে অথচ তিনি বয়সের দিক দিয়া যুবক এবং দুনিয়াতে প্রেরিত
হইয়াছেন আমার পরে। তারপর জিব্রাঈল আমাকে লইয়া সপ্তম আসমানের প্রতি আরোহণ
করিলেন এবং তাহার দ্বারে পৌছিয়া দরজা খুলিতে বলিলেন । এস্থনেও পূর্বের
ন্যায় সকল প্রশ্নোত্তরই হইল এবং দরজা খুলিয়া শুভেচ্ছা ও স্বাগত জনান হইল।
আমি ভিতরে প্রবেশ করিলাম। তথায় ইব্রাহীম (আঃ)-এর সাক্ষাত লাভ হইল।
জিব্রাঈল আমাকে বলিলেন, তিনি আপনার (বংশের আদি) পিতা, তাঁহাকে সালাম করুন।
আমি তাঁহাকে সালাম করিলাম। তিনি আমার সালামের উত্তর দিলেন এবং gসুযোগ্য
পূত্র, সুযোগ্য নবীh বলিয়া মারহাবা ও মোবারকবাদ জানাইলেন।
অতঃপর আমি সিদরাতূল মোনতাহার নিকট উপনীত হইলাম। ওই পর্যন্ত তার সফরসঙ্গী
ছিলেন আল্লাহর ফেরেশতা হজরত জিবরাইল (আ.)। জিব্রাঈল আমাকে বলিলেন, এই
বৃক্ষটির নাম gসিদরাতূল মোনতাহাh। সিদরাতূল মোনতাহার র্ধ্বালোকের শেষ সীমার
বরইগাছ, (সিদরাতূল মোনতাহা এক বড় প্রকাণ্ড কূল বৃক্ষবিশেষ, যাহার এক একটা
কুল হজর অঞ্চলে তৈয়ারী বড় বড় মটকার ন্যায় এবং তাহার পাতা হাতীর কানের
মতো। ফেরেশতারা এরপর আর যেতে পারেন না। তথায় চারটি প্রবাহমান নদী দেখিতে
পাইলাম- দুইটি ভিতরের দিকে প্রবাহিত এবং দুইটি বাইরের দিকে। নদীগুলির নাম
সম্পর্কে আমি জিব্রাঈলকে জিজ্ঞাসা করিলাম। তিনি বলিলেন, ভিতরের দুইটি
বেহেশতে প্রবাহমান (সালসাবিল ও কাওসার নামক) দুইটি নদী। আর বাহিরের দিকে
প্রবাহমান দুইটি হইল (ভূ-পৃষ্ঠের মিসরে প্রবাহিত) নীল ও (ইরাকে প্রবাহিত)
ফোরাত (নদী বা তাহাদের নামের মূল উৎস)। তারপর আমাকে gবায়তুল মাfমুরh
পরিদর্শন করান হইল। তথায় প্রতিদিন (এবাদতের জন্য) সত্তর হাজার ফেরেশতা
উপস্থিত হইয়া থাকেন (যে দল একদিন সুযোগ পায় সেই দল চিরকালের জন্য
দ্বিতীয় দিন সুযোগ গ্রাপ্ত হয় না)। অতঃপর (আমার সৃষ্টিগত স্বভাবের
স্বচ্ছতা ও নির্মলতা প্রকাশ করিয়া দেখাইবার উদ্দেশে পরীক্ষার জন্য) আমার
সম্মুখে তিনটি পাত্র উপস্থিত করা হইল। একটিতে ছিল সুরা বা মদ,অপরটিতে ছিল
দুগ্ধ, আরেকটিতে মধু আমি দূগ্ধের পাত্রটি গ্রহণ করিলামা। জিব্রাঈল
বলিলেন,দুগ্ধ সত্য ও খাঁটি স্বভাগত ধর্ম ইসলামের স্বরুপ; (সুতরাং, আপনি
দূগ্ধের পাত্র গ্রহন করিয়া ইহাই প্রমাণ করিয়াছেন যে,) আপনি সত্যও
স্বভাবগত ধর্ম ইসলামের উপর প্রতিষ্ঠিত আছেন এবং আপনার উসিলায় আপনার উম্মতও
তাহার উপর থাকিবে।
তারপর আমার শরীয়তে প্রত্যেক দিন পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামায ফরয হওয়ার বিধান
করা হইল। আমি ফিরিবার পথে মূসা (আঃ) এর নিকটবতী পথ অতিক্রম করা কালে তিনি
আমাকে জিজ্ঞাসা করিলেন, বিশেষ আদেশ কি লাভ করিয়াছেন? আমি বলিলাম, পঞ্চাম
ওয়াক্ত নামায। মুসা (আঃ) বলিলেন, আপনার উম্মত প্রতিদ্ন পঞ্চাশ ওয়াক্ত
নমায আদায় করিয়া যাইতে সক্ষম হইবেনা। আমি,সাধারণ মানুষের স্বভাব সম্পর্কে
অনেক অভিজ্ঞতা অর্জন করিয়াছি এবং বণী ইস্রাঈল গণকে বিশেষভাবে পরীক্ষা
করিয়েছি; সুতরাং আপনি পরওয়ারদেগারের দরবারে আপনার উম্মতের জন্য এই আদেশ
আরও সহজ করার আবেদন করুন। হযরত (সঃ) বলেন, আমি পরওয়ারদেগারের খাস দরবারে
ফিরিয়া গেলাম। পরওয়ারদেগার (দুইবারে পাঁচ পাঁচ করিয়া)দশ ওয়াক্ত কম
করিয়া দিলেন। অত:পর আমি আবার মূসার নিকট পৌছালাম,তিনি পূর্বের ন্যায়
পরামর্শই আমাকে দিলেন। আমি,পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরিয়া গেলাম এইবারও
(ঐরূপ)দশ ওয়াক্ত কম করিয়া দিলেন। পুনরায় মূসার নিকট পৌছিলে তিনি আমাকে
এইবারও সেই পরামর্শই দিলেন। আমি পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরিয়া গেলাম এবং
(পূর্বের ন্যায়) দশ ওয়াক্ত কম করিয়া দিলেন । এইবারও মূসা (আঃ)-র নিকট
পৌছিলে পর তিনি আমাকে পূর্বের ন্যায় পরামর্শ দিলেন। আমি পরওয়ারদেগারের
দরবারে ফিরিয়া গেলাম, এইবার আমার জন্য প্রতি দিন পাঁচ ওয়াক্ত নির্দিষ্ট
করিয়া দেওয়া হইল । এইবারও মূসার নিকট পৌছিলে পর আমাকে তিনি জিজ্ঞাসা
করিলেন, কি আদেশ লাভ করিয়াছেন? আমি বলিলাম, প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাযের
আদেশ প্রদান করা হইয়াছে। মূসা (আঃ) বলিলেন, আপনার উম্মত প্রতিদিন পাঁচ
ওয়াক্ত নামাযেরও পাবন্দী করিতে পারিবে না। আমি আপনার পুর্বেই সাধারণ
মানুষের স্বাভাব সম্পর্কে অভিজ্ঞতা লাভ করিয়াছি এবং বনী ইস্রাঈলগণকে অনেক
পরীক্ষা করিয়াছি। আপনি আবার পরওয়ারদেগারের দরবারে ফিরিয়া আরও কম করার
আবেদন জানান। হযরত (সঃ) বলেন, আমি মুসাকে বলিলাম, পরওয়ারদেগারের দরবারে
অনেক বার আসা-যাওয়া করিয়াছি; এখন আবার যাইতে লজ্জা বোধ হয়, আর যাইব না
বরং পাঁচ ওয়াক্তের উপরই সন্তুষ্ট রহিলাম এবং তাহা বরণ করিয়া নিলাম। হযরত
(সঃ) বলেন, অতপর যখন আমি ফিরিবার পথে অগ্রসর হইলাম তখন আল্লাহ তাআলার তরফ
হইতে একটি ঘোষণা জারি করা হইল-(বান্দাদের প্রাপ্য সওয়াবের দিক দিয়া)
gআমার নির্ধারিত সংখ্যা (পঞ্চাশ) বাকী রাখিলাম, (আমার পক্ষে আমার বাক্য
অপরিবর্তিতই থাকিবে) অবশ্য কর্মক্ষেত্রে বান্দাদের পক্ষে সহজ ও কম করিয়া
দিলাম । (অর্থাৎ কর্মক্ষেত্রে পাঁচ ওয়াক্ত রহিল, কিন্তু সওয়াবের দিক
দিয়া পাঁচই পঞ্চাশ পরিগণিত হইবে।) প্রতিটি নেক আমলে দশ ণ্ডণ সওয়াব দান
করিব ।h
বিভিন্ন কারণে মুসলিমদের জীবনে শবে মেরাজ-এর গুরুত্ব ও তাৎপর্য অপরিসীম,
কারণঃ
১। মানবতার মুক্তির দূত হজরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর অলৌকিক ও তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা
এ হলো মিরাজ। মদিনায় আসার আগে মক্কায় অবস্থানের সময় ২৬ রজব দিবাগত রাতে
তিনি বুরাক নামক বাহনে চড়ে প্রথমে বায়তুল মুক্কাদ্দাস যান । তারপর পৃথিবীর
হতে মহাবিশ্বের সব স্তর ভেদ করে সিদরাতুল মুনতাহায় যান । অতপর রফরফ নামক
বাহনে ৭০ হাজার নূরের পর্দা পেরিয়ে আরশে আজিমে আল্লাহর দরবারে যান এবং
আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করেন। মেরাজের মাধ্যমেই ইসলাম ধর্মের পঞ্চস্তম্ভের
দ্বিতীয় স্তম্ভ অর্থাৎ নামায, মুসলমানদের জন্য অত্যাবশ্যক (ফরজ) হয়, এবং
এই রাতেই দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত নামায মুসলমানদের জন্য নিয়ে আসেন হজরত
মুহাম্মদ (সঃ)। এজন্য তিনি বলেছেনঃ " নামাজ হলো বিশ্বাসীদের জন্য মিরাজ"।
২। মিরাজ গমন করার মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ) অশুভ শক্তিকে দমন করার জন্য ও
বিশ্বব্যাপী ইসলামী সমাজ প্রতিষ্ঠা করার জন্য দিক নির্দেশনা লাভ করেন ।
মিরাজ গমন করার মাধ্যমে মুহাম্মদ (সাঃ) ইসলামী সমাজ পরিচালনার বিধি বিধানও
নিয়ে আসেন যা কুরআনের বনী ইসরাইল সুরায় আলোচিত হয়েছে। মেরাজকালে মহানবী
(সা.) সৃষ্টিজগতের সবকিছুর রহস্য স্বচক্ষে দেখেন।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যম কর্মী
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
@
লেখকের আগের লেখাঃ
-
দ্যা
লেডি ইউথ দ্যা ল্যাম্প
-
কাল
বৈশাখে বজ্রপাতঃ বজ্রপাতে মানুষের মৃত্যু থেকে রক্ষা পেতে সতর্কতার বিকল্প
নাই
-
তিতাস
পাড়ের কৃতি ঔপন্যাসিক অদ্বৈত মল্লবর্মণ
-
স্বাধীনতা
যুদ্ধে বীর শ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের
৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
ভোটরঙ্গ
-
ব্লগিয়ানা
-
বিশ্ব
ভোক্তা অধিকার দিবসের ভাবনা
-
কেন
এ পৈশাচিকতা
-
৩
ডিসেম্বর, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস আজঃ সুন্দর পৃথিবী গড়তে প্রতিবন্ধী
ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করার বিকল্প নাই
-
বাংলার
বুলবুল গায়ক ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দীন আহমদের ১১৩তম জন্মবার্ষিকীতে
ফুলেল শুভেচ্ছা
-
বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,
সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী নীলিমা ইব্রাহিমের ৯৩তম মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
কুরবানীর
ঈদঃ মনের পশুকে করহে জবাই, সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা
-
বাংলা
সাহিত্যের দিকপাল, পুঁথি সম্রাট মুন্সি আবদুল করিম ৬১তম
-
একজন
রাজনীতিবীদের মূর্তির খোঁজে!!
-
বাংলাদেশের
অগ্রগণ্য আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সাহিত্য-সম্পাদক আব্দুল মান্নান
সৈয়দের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
কবি,
গল্পকার, প্রবন্ধকার এবং বাংলা সাহিত্যে চলিতভাষার প্রতিষ্ঠাতা প্রমথ
চৌধুরীর ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
অব্যবস্থাপনার
বলি
-
চিত্রশিল্পী,
এশিয়ার কণ্ঠস্বর এস এম সুলতানের ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা
-
উপমহাদেশের
প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী মোহাম্মদ রফির ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
"উপমহাদেশের
কালজয়ী লোক সঙ্গীত শিল্পী আবদুল আলীমের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী"
-
মুক্তিযুদ্ধের
সফল রূপকার আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী
তাজউদ্দিন আহমদের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
-
আত্মশুদ্ধির
সর্বোত্তম মাস পবিত্র রমজানে আমাদের করনীয় ও বর্জনীয়
-
পুরুষ
নির্যাতন একটি
উদ্বেগজনক সামাজিক
সমস্যাঃ নিয়ন্ত্রণ জরুরী
-
ভেজাল
ও রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্যঃ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
-
ক্ষতিকর
প্লাস্টিক বোতলজাত পানীয় থেকে সাবধান!!
-
মেয়েটি
কী জানে ফেয়ারনেস ক্রিম কতটা ক্ষতিকর?
|