|
শ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ
নূর মোহাম্মদ নূরু
বীরশ্রেষ্ঠ ল্যান্স
নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী একজন
শহীদ মুক্তিযোদ্ধা। তাঁর অপরিসীম বীরত্ব, সাহসীকতা ও দেশপ্রেমের জন্য
বাংলাদেশ সরকার তাঁকে সর্ব্বোচ সম্মান বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত করে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্য বাংলাদেশের সর্বোচ্চ
সামরিক পদক প্রাপ্ত বীর শ্রেষ্ঠদের মধ্যে ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ
অন্যতম। ৮ তারিখ মুন্সি আব্দুর রউফের জীবনে অনেক ঘটনাবহুল দিনের একটি
গুরুত্বপূর্ণ দিন। ১৯৪৩ সালের এই দিনে তাঁর জন্ম হলেও ১৯৭১ সালের ৮ তারিখ
তাঁর ৪৪তম শাহাদৎবরণের দিন। এই দিনেই তিনি যোগদান করেন ইস্ট পাকিস্তান
রাইফেলস-এ। স্বাধীনতা যুদ্ধে বীর শ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ ল্যান্স নায়েক
মুন্সি আব্দুর রউফের শাহাদাৎ বার্ষিকী ছিলো ৮ এপ্রিল। শাহাদৎ দিবসে তাঁকে
স্মরণ করছি গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বীরত্বসূচক অবদানের জন্য ১ম ও সর্বোচ্চ
রাষ্ট্রীয় পুরস্কার বীর শ্রেষ্ঠ পদক। গুরুত্বের ক্রমানুসারে বীরত্বের জন্য
প্রদত্ত বাংলাদেশের অন্যান্য সামরিক পদক হল - বীর উত্তম, বীর বিক্রম ও বীর
প্রতীক। যুদ্ধক্ষেত্রে অতুলনীয় সাহস ও আত্মত্যাগের নিদর্শন স্থাপনকারী
যোদ্ধার স্বীকৃতিস্বরূপ এই পদক দেয়া হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে
শহীদ সাতজন মুক্তিযোদ্ধাকে বীর শ্রেষ্ঠ পদক দেয়া হয়েছে। ১৯৭৩ সালের ১৫
ডিসেম্বর বাংলাদেশ গেজেটের একটি অতিরিক্ত সংখ্যায় প্রকাশিত বিজ্ঞপ্তির
মাধ্যমে এই পদকপ্রাপ্তদের নাম ঘোষণা করা হয়।
বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধে বীর শ্রেষ্ঠ পদক প্রাপ্ত সাতজন বীরশ্রেষ্ঠের
তালিকাঃ
০১। ইঞ্জিনরুম আর্টিফিসার মোহাম্মদ রুহুল আমিন, বাংলাদেশ নৌ বাহিনী,
০২। ফ্লাইট লেফটেন্যান্ট মতিউর রহমান, বাংলাদেশ বিমান বাহিনী,
০৩। ক্যাপ্টেন মহিউদ্দীন জাহাঙ্গীর, বাংলাদেশ সেনা বাহিনী,
০৪। সিপাহী, মোস্তফা কামাল, বাংলাদেশ সেনা বাহিনী,
০৫। ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ, বাংলাদেশ রাইফেলস,
০৬। ল্যান্স নায়েক নূর মোহাম্মদ শেখ, বাংলাদেশ রাইফেলস,
০৭। সিপাহী মোঃ হামিদুর রহমান, বাংলাদেশ সেনা বাহিনী,
মুন্সি আব্দুর রউফ ১৯৪৩ সালের ৮ মে ফরিদপুর জেলার মধুখালী উপজেলার (পূর্বে
বোয়ালমারী উপজেলার অন্তর্গত) সালামতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার
নাম মুন্সি মেহেদী হোসেন এবং মাতার নাম মকিদুন্নেসা। কিশোর বয়সে আব্দুর
রউফ-এর পিতা মারা যান। ফলে উচ্চশিক্ষা লাভের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হন আব্দুর
রউফ। তিনি অষ্টম শ্রেনী পর্যন্ত অধ্যয়ন করেন। আব্দুর রউফ ১৯৬৩-র ৮ মে ইস্ট
পাকিস্তান রাইফেলস-এ ভর্তি হন। তাঁর রেজিষ্ট্রেশন নম্বর ১৩১৮৭। ১৯৭১ এর ২৫
মার্চ স্বাধীনতা যুদ্ধের শুরুতে চট্টগ্রামে ১১ নম্বর উইং এ কর্মরত ছিলেন।
সে সময় তিনি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সঙ্গে স্বাধীনতা যুদ্ধে যোগদান করেন।
১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের একটি কোম্পনীর সাথে
মুন্সি আব্দুর রউফ পার্বত্য চট্টগ্রামে রাঙ্গামাটি-মহালছড়ি জলপথ প্রতিরোধ
করার জন্য বুড়িঘাটে অবস্থান নেন। ৮ এপ্রিল পাকিস্তান সেনাবাহিনীর কমান্ডো
ব্যাটেলিয়নের দুই কোম্পানী সৈন্য, সাতটি স্পীড বোট এবং দুটি লঞ্চে করে
বুড়িঘাট দখলের জন্য অগ্রসর হয়। তারা প্রতিরক্ষি বূহ্যের সামনে এসে ৩"
মর্টার এবং অন্যান্য ভারী অস্ত্র দিয়ে হঠাৎ অবিরাম গোলা বর্ষন শুরু করে।
গোলাবৃষ্টির তীব্রতায় প্রতিরক্ষার সৈন্যরা পেছনে সরে বাধ্য হয়। কিন্তু
ল্যান্সনায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ পেছনে হটতে অস্বীকৃতি জানান। নিজ পরিখা
থেকে মেশিনগানের গুলিবর্ষণ শুরু করেন। মেশিনগানের এই পাল্টা আক্রমণের ফলে
শত্রুদের স্পীড বোট গুলো ডুবে যায়। হতাহত হয় এর আরোহীরা। পেছনের দুটো
লঞ্চ দ্রুত পেছনে গিয়ে নিরাপদ দুরত্বে অবস্থান নেয়। সেখান থেকে শুরু করে
দুরপাল্লার ভারী গোলাবর্ষণ। এক পর্যায়ে মর্টারের ভারী গোলা এসে পরে আব্দুর
রউফের উপর। লুটিয়ে পড়েন তিনি, নীরব হয়ে যায় তাঁর মেশিনগান। শহীদ হলেন
ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফ। বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ তার
জীবনের বিনিময়ে রক্ষা করে গেছেন তার প্রায় ১৫০ জন সহযোদ্ধার জীবন এবং
পাকিস্তানী বাহিনীর বহু সৈন্যকে হতাহত করেছেন।
চির রুদ্রের প্রতীক এই বীরকে সমাহিত করা হয়েছিলো রাঙামাটি শহরের রিজার্ভ
বাজারে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের পাশে। ১৯৯৬ সালে রাঙামাটিবাসী প্রথম জানতে
পারে, এ চিরসবুজ পাহাড়ের মাঝেই ঘুমিয়ে আছেন বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ।
ঐ সময় দয়ালন চন্দ্র চাকমা নামে এক আদিবাসী বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের
সমাধিস্থল শনাক্ত করেন। শনাক্ত করার পর তাঁর সমাধিস্থলটি সরকার নতুনভাবে
সংরক্ষণের ব্যবস্থা নিয়েছে।
রাঙামাটি শহরের প্রবেশ মুখ মানিকছড়ি এলাকায় রাস্তার সংলগ্ন জায়গায় নির্মিত
হয়েছে বীর শ্রেষ্ঠ ল্যান্স নায়েক মুন্সি আব্দুর রউফের স্মৃতি ভাস্কর্য।
মুক্তিযুদ্ধে তার অবদান বিবেচনা করে বাংলাদেশ সরকার তাকে বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে
ভূষিত করে। বাংলাদেশ রাইফেলস ১৯৭৩ সালে সিপাহী মুন্সি আব্দুর রউফকে অনারারি
ল্যান্স নায়েক পদে মরোণোত্তর পদোন্নতি প্রদান করে। ' ল্যান্স নায়েক মুন্সি
আব্দুর রউফের জন্মস্থান ফরিদপুরের সালামতপুর গ্রামের নাম পরিবর্তন করে রাখা
হয়েছে রউফনগর। এ গ্রামেই ১৭ নভেম্বর ২০০৭ ইং তারিখে স্থাপন করা হয়েছে
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফ গ্রন্থাগার ও স্মৃতি জাদুঘর প্রকল্পের
ভিত্তিপ্রস্তর। বীরশ্রেষ্ঠর পরিবারের দেওয়া ৫২ শতাংশ এবং বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি
আব্দুর রউফ স্মৃতি পরিষদের মাধ্যমে এলাকাবাসীর দেওয়া ৪৮ শতাংশ, মোট এক একর
জায়গায় ওপর এই গ্রন্থাগার ও জাদুঘর।
স্বাধীন বাংলাদেশের মানুষ আজীবন শ্রদ্ধার সাথে স্মরণ করবে বীর শ্রেষ্ঠ
ল্যান্সনায়েক মু্ন্সি আব্দুর রউফের অবদানের কথা। শহীদ ল্যান্স নায়েক
বীরশ্রেষ্ঠ মুন্সি আব্দুর রউফের ৪৪তম শাহাদাৎবার্ষিকীতে তাঁকে স্মরণ করছি
গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসায়।
নূর মোহাম্মদ নূরু
গণমাধ্যম কর্মী
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
-
ভোটরঙ্গ
-
ব্লগিয়ানা
-
বিশ্ব
ভোক্তা অধিকার দিবসের ভাবনা
-
কেন
এ পৈশাচিকতা
-
৩
ডিসেম্বর, বিশ্ব প্রতিবন্ধী দিবস আজঃ সুন্দর পৃথিবী গড়তে প্রতিবন্ধী
ব্যক্তিদের সম্পৃক্ত করার বিকল্প নাই
-
বাংলার
বুলবুল গায়ক ভাওয়াইয়া সম্রাট আব্বাস উদ্দীন আহমদের ১১৩তম জন্মবার্ষিকীতে
ফুলেল শুভেচ্ছা
-
বাংলাদেশের বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ,
সাহিত্যিক ও সমাজকর্মী নীলিমা ইব্রাহিমের ৯৩তম মৃত্যুদিনে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
কুরবানীর
ঈদঃ মনের পশুকে করহে জবাই, সবাইকে পবিত্র ঈদুল আযহার শুভেচ্ছা
-
বাংলা
সাহিত্যের দিকপাল, পুঁথি সম্রাট মুন্সি আবদুল করিম ৬১তম
-
একজন
রাজনীতিবীদের মূর্তির খোঁজে!!
-
বাংলাদেশের
অগ্রগণ্য আধুনিক কবি, সাহিত্যিক, গবেষক ও সাহিত্য-সম্পাদক আব্দুল মান্নান
সৈয়দের ৪র্থ মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
কবি,
গল্পকার, প্রবন্ধকার এবং বাংলা সাহিত্যে চলিতভাষার প্রতিষ্ঠাতা প্রমথ
চৌধুরীর ৬৮তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
অব্যবস্থাপনার
বলি
-
চিত্রশিল্পী,
এশিয়ার কণ্ঠস্বর এস এম সুলতানের ৯১তম জন্মবার্ষিকীতে ফুলেল শুভেচ্ছা
-
উপমহাদেশের
প্রখ্যাত সঙ্গীত শিল্পী মোহাম্মদ রফির ৩৪তম মৃত্যুবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি
-
"উপমহাদেশের
কালজয়ী লোক সঙ্গীত শিল্পী আবদুল আলীমের ৮৩তম জন্মবার্ষিকী"
-
মুক্তিযুদ্ধের
সফল রূপকার আইনজীবী, রাজনীতিবিদ এবং বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী
তাজউদ্দিন আহমদের ৮৯তম জন্মবার্ষিকীতে শুভেচ্ছা
-
আত্মশুদ্ধির
সর্বোত্তম মাস পবিত্র রমজানে আমাদের করনীয় ও বর্জনীয়
-
পুরুষ
নির্যাতন একটি
উদ্বেগজনক সামাজিক
সমস্যাঃ নিয়ন্ত্রণ জরুরী
-
ভেজাল
ও রাসায়নিক মিশ্রিত খাদ্যঃ দীর্ঘমেয়াদি স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে বাংলাদেশ
-
ক্ষতিকর
প্লাস্টিক বোতলজাত পানীয় থেকে সাবধান!!
-
মেয়েটি
কী জানে ফেয়ারনেস ক্রিম কতটা ক্ষতিকর?
|