প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

আশিকাগা ৩য় পিঠা উৎসব,জাপান ২০১৯

 

 

কমিউনিটি রিপোর্ট ।। ফেব্রুয়ারি ১৩, ২০১৯ ।।

শীত আসে। সেই সঙ্গে হাজির হয় পিঠা উৎসব। এ সময় টাটকা চালে তৈরি করা হয় বাহারি পিঠা পুলি। পিঠার সেই মৌ মৌ গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে মূলত ঋতুর প্রথম ভাগ থেকে।আমাদের গ্রাম বাংলায় একটি প্রবাদ আছে এরকম- ‘পরের হাতের পিঠা, গালে লাগে মিঠা। এ গেল দেশ–প্রাণের কথা। প্রবাসের মা-বোন ও বধুরা কিন্তু পিঠা তৈরিতে একটু পিছিয়ে নেই । পিঠা কে না খেতে চায়। পিঠার নাম শুনলেই জিভে পানি এসে যায়। সে জন্য জাপান বসবাসরত প্রবাসীদের নিয়ে ১০ই ফেব্রুয়ারি রোববার জাপানের আশিকাগা সিটিতে বাংলাদেশ কমিউনিটি কিতা কানতোর পক্ষ থেকে সুইয়ামা লুবনার উদ্যোগে সবার সহযোগিতাই আয়োজন করা হয় বর্ণাঢ্য ৩য় আশিকাগা পিঠা উৎসবের।

প্রবাসীদের পিঠা খাওয়ার অতৃপ্তি কিছুটা দূর করার পাশাপাশি আমাদের পরবর্তী প্রজন্মকে বাঙালির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য তুলে ধরাও একটু এই আয়োজনের উদ্দেশ।
জাপানের বিভিন্ন শহরের ৭০টি পরিবারের ছোট বড় মিলিয়ে প্রায় ২৬০ জন এই পিঠা উৎসবে অংশগ্রহণ করেন। পিঠা উৎসবটি জাপানের কানতো অঞ্চলের বাঙালির এক মিলনমেলায় পরিণত হয়। নারীদের সবার পরনে ছিল একই রঙ ও ডিজাইনের বসন্তের শাড়ি ও পুরুষদের পরনে ছিল বাঙালির প্রিয় পোশাক পায়জমা পাঞ্জাবি। মধ্যাহ্ন ভোজনে ছিলো মা-বোন ও বধুদের হাতে তৈরি মজাদার ভর্তার সমাহার। উল্লেখযোগ্য ভর্তার মধ্যে ছিল বেগুন ভর্তা, বরবটি ভর্তা, আলু ভর্তা, ডাল ভর্তা,চিংড়ী ভর্তা,ধনিয়া পাতার ভর্তা,লইট্টা শুটকি ভর্তা,টমেটো চাটনি,আচারি বেগুন, চাঁপা শুটকির ভর্তা, আলু শুটকির ভর্তা, মাছ ভর্তা, ব্রকলি ভর্তা,মিষ্টি কুমড়া ভর্তা, খুরী ভর্তা, চিকেন ভর্তা, শুটকি ভুনা ও গরুর মাংসের ভুনা।বাচ্চাদের জন্য ছিল চিকেন ফ্রাই ও টুনা মাছের চপ।

বিভিন্ন পর্ব দিয়ে সাজানো হয় এবারের পিঠা উৎসব। ছোট্ট সোনামণি মিমনুনের কোরআন তিলাওয়াতের মাধ্যমে শুরু হয় আশিকাগা ৩য় পিঠা উৎসবের। প্রথম পর্বে ছিল ছোট সোনামণিদের আরবি সূরা পাঠ, যেমন খুশি তেমন সাজো ও মহান ২১ শে ফেব্রুয়ারি চিত্র অংকন প্রতিযোগিতা । এই পর্বটি পরিচালনা করেন গোলাম মোস্তফা ও সুমনা রহমান । এর পর ২য় পর্বে ছোট সোনামণিরা হাজির হয় নাচ, গান ও আবৃতি নিয়ে। এই পর্বটি আরম্ভ হয় আমি বাংলার গান গায় গানের সাথে নাপিজার নেতৃতে দলীয় নিত্য দিয়ে। সোনামণিদের পারফরম্যান্স মধ্যে দর্শকদের মন জয় করে নেয় আজরিন করিম নাবা , নাপিজা ও তিহানের নাচ, মাইমুনার গান ও রাইনার আবৃতি। অংশগ্রহণকারী সাবাইকে মেডেল পড়িয়ে বই কিনার গিফট কার্ড হাতে তুলে দেন ফাতেমা বেগম কাজল ও শেলি তাহের ।
২য় পর্বে ছিল বড়দের অংশগ্রহণে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। দর্শকদের মন জয় করে নেয় জাহেদি ভাই, নাঈম ভাই, জাহেদি ভাই, শাম্মি আপু, মোস্তফা ভাই, সোহাগ ভাই, মিন্টু ভাই , তরিকুল ভাই, আঁখি ভাবি , সাবরিনা ভাবি ও সুমনার একক সঙ্গীত। জাহেদি ভাইয়ের সাথে শাম্মি আপু, আঁখি ভাবি ও সেবু ভাবির দ্বৈত সঙ্গীত সবার মন ছুয়ে যায়। আয়েশা মিতু ভাবির আবৃতির সময় পিন পতন নিরবতা নেমে আসে হলের মধ্যে। অনুস্টানে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন টোকিও বৈশাখী মেলার সমন্বয়কারী মো. আসলাম খন্দকার হিরা, লেখক-সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক ও স্বরলিপি কালচারাল একাডেমীর প্রেসিডেন্ট নাসিরুল হাকিম। উৎসবে ছিল ভালোবাসা দিবস উপলক্ষে ৩টি নাটিকা। নাটিকা তিনটিতে আভিনয় করেন চম্পপা ও শোভন দম্পতি, বন্যা ও মোস্তফা দম্পতি এবং সুমনা ও সোহাগ দম্পতি। তিন দম্পতির সাবলিল ও অসাধারন আভিনয় প্রতিটি দর্শকের মন জয় করে নেয়। চমৎকার এই ২য় পর্বটি পরিচালনা করেন গোলাম মোস্তফা ও সুইয়ামা লুবনা।

বরাবরের মতন আশিকাগা পিঠা উৎসবের মুল আকর্ষণ ছিল পিঠা প্রতিযোগিতা। নিজ হাতের তৈরি পিঠা নিয়ে এই প্রতিযোগিতাই অংশগ্রহন করে ২৫ জন প্রতিযোগি। পিঠা প্রতিযোগিতায় ছিল চারটি বিভাগ। প্রতিটি বিভাগের জন্য ছিল আলাদা আলাদা নম্বর। পিঠা প্রতিযোগিতার বিচারকের দায়িত্ব পালন করেন টোকিও বৈশাখী মেলার সমন্বয়কারী মো. আসলাম খন্দকার হিরা, লেখক-সাংবাদিক কাজী ইনসানুল হক, শান্তিনিকেতনের কৃতী রবীন্দ্র সংগীতের শিল্পী শাম্মি বাবলি ও সঙ্গীত শিল্পী রওনক জাহান। প্রতিযোগিতায় বিচারকদের রায়ে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করেন খোদেজা আক্তার মুক্তা।তিনি তৈরি করেন ক্ষীর নারিকেলি পিঠা। কিডস পিঠা তৈরি প্রথম রানার আপ নির্বাচিত হন সালমা ইসলাম ও নকশী পিঠা তৈরি দ্বিতীয় রানার আপ নির্বাচিত হন ফাতেমা লুৎফুর চম্পা। ৪র্থ ও ৫ম নির্বাচিত হন আস্মাউল হুসনা লিজা ও সুমনা রহমান। বিচারকদের পক্ষ থেকে বিশেষ তিনটি পুরুস্কার জয় করেন নেন আয়েশা সিদ্দিকি মিতু, শাহেলা সুলতানা রেণু ও আদ্রিনা সুমি। বিজয়ীদের মধ্যে মুকুট ও ট্রফি তুলে দেন আসলাম খন্দকার হিরা, কাজী ইনসানুল হক, শাম্মি বাবলি , রওনক জাহান ও নাসিরুল হাকিম।সব সময়ের মত এবারও চমক দিয়ে চমৎকার কিছু উপহার নিয়ে হাজির হন কাজী ইনসানুল হক। ২য় পিঠা উৎসবের ছবি দিয়ে তৈরি এ্যালবাম উপহার পেয়ে আয়োজকরা খুশিতে আত্মহারা। এর পর ছিল আধির আগ্রহে অপেক্ষায় থাকা পিঠা ভোজন। মা-বোন ও বধুদের হাতে তৈরি মজাদার প্রায় ৫০ রকমের পিঠা দিয়ে সাজানো হয় এই পর্বটি। উল্লেখযোগ্য পিঠার মধ্যে ছিল ভাপা পিঠা, নকশি পিঠা, বিবিখানা পিঠা, পাটিসাপটা পিঠা, মুগপাকন পিঠা, দুধ চিতই পিঠা, ফুলঝুড়ি পিঠা, কিডস পিঠা , বিস্কিটের ক্ষীর পিঠা, নারিকেলের পুলি পিঠা, ক্ষীর রস মঞ্জুরি পিঠা, নকশী পিঠা, পোয়া পিঠা,গোলাপ পিঠা কালারফুল পাটি সাপটা , কিমা ফুলি পিঠা, নারিকেলের পাকন পিঠা, সুজির রস মজ্ঞুরী পিঠা। মিষ্টান্নর মধ্যে ছিল রসগোল্লা, পুডিং ও চকলেট কেক । ঝাল আইটেমের মধ্যে ছিল সিঙ্গারা ও চটপটি। রাফেল ড্রর সময় সময় সবার মধ্যে জেতার চরম উত্তেজনা। রাফেল ড্র তে তিনটি আকর্ষণীয় শাড়ি ও গয়নার সেট জিতে নেন ইমু, বন্যা, শামিমা, সাথী ও লিজা । এই আকর্ষণীয় পর্বটি পরিচালনা করেন নোমান সৈয়দ। নোমান সৈয়দকে সহযোগিতা করে ৫ টি ছোট সোনামনি । অনুষ্ঠানে সবার আগে উপস্থিত হওয়ার জন্য PUNCTUAL FAMILY প্রাইজ পান নাসরিন লতা এবং সব চাইতে মনোযোগ দিয়ে অনুষ্ঠান উপভোগ করার জন্য ATTENTIVE FAMILY প্রাইজ পান সুলতানা ইসলাম। অনুষ্ঠানের সাউন্ড সিস্টেম ও মিউজিকের দায়িত্ব পালন করেন জাহেদি সোহেল। আয়োজকদের পক্ষ থেকে সাংবাদিক ফখরুল ইসলামকে বিশেষ ভাবে ধন্যবাদ জানান নোমান সৈয়দ। এত চমৎকার একটি আয়োজনের জন্য আয়োজক সুইয়ামা লুবনা এবং এই অনুষ্ঠান সফল করতে যারা সার্বিক সহযোগিতা করেছেন সকলকে সবার পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন শাহাজাহান সাজু।


এস, এম নোমান
আশিকাগা সিটি, তোচিগি কেন
 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.

[প্রথমপাতা]