প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

 এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

 

 

করোনা কালে জীবন নাকি জীবিকা!

 


অদৃশ্য যমদূত করোনা ভাইরাসের ভয়াল থাবায় বৈশ্বিক জনজীবন স্থবির হয়ে পড়েছে । মৃত্যুর মিছিল চলছে বিশ্ব জুড়ে, বিভিন্ন দেশ তাদের সামর্থ্য অনুসারে লকডাউন এবং জরুরী অবস্থাসহ বিভিন্ন ধরনের কর্মসূচী গ্রহন করে এর ভয়াবহতা নিয়ন্ত্রনের চেষ্টা করছে । অদ্যবধি করোনার ভ্যাকসিন এবং ঔষধ আবিস্কৃত না হওয়াতে এই মহামারিতে মৃত্যু আতংক বিরাজমান । মানুষ থেকে মানুষে ছড়িয়ে পড়া এই ভাইরাস নিয়ন্ত্রনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, অফিস আদালত, কলকারখানা, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এবং জনসমাগম বন্ধ রেখে সবাইকে ঘরে কোয়ারেন্টিনে থাকার নির্দেশ দিয়েছিলেন । কিন্তু এই সরকারী নির্দেশনা পুরোপুরি কার্যকর না হওয়ায় ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়েছে দেশ জুড়ে । এরই মাঝে আমরা হারিয়েছি ২৬৯ জন স্বজনকে, যা দিন দিন বেড়েই চলছে ।
আমরা আমাদের সীমিত সামর্থ্যে কীভাবে রুখবো করোনা ভাইরাস, কীভাবে বাঁচবো এবং বাঁচাবো দেশের অর্থনীতি ? এই উভয় সংকটাবস্থায় সম্প্রতি সরকার মসজিদ, গার্মেন্টস সহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানগুলি রোজা এবং ঈদ উপলক্ষে সীমিত আকারে খুলে দেয়ার সিদ্ধান্ত গ্রহন করেছে । প্রশ্ন উঠছে, লকডাউন তুলে দিয়ে সরকার জনগনকে ঈদের কাপড় নাকি কাফনের কাপড় কেনার ব্যবস্থা করেছে । জীবন বাঁচাতে জীবিকার প্রয়োজন, তেমনি ভাইরাস থেকে জীবন রক্ষায় সবার উচিত নিজেদেরকে ঘরে আবদ্ধ রেখে স্যানিটাইজেশনে অব্যস্থ জীবন যাপন । বাস্তবতা হচ্ছে, আমাদের দেশের বেশীর ভাগ মানুষের ঘরে বসে জীবন যাপনের আর্থিক সামর্থ্য নেই, তেমনি সরকারেরও দীর্ঘদিন সহযোগিতা দিয়ে এই ব্যাপক মানুষকে বাঁচিয়ে রাখার সামর্থ্য নেই । আবার গার্মেন্টস সহ নিন্ম আয়ের মানুষকে কর্মস্থলে ঠেলে দিলে এই মহামারির ব্যাপকতা রুখবার সামর্থ্যও নেই । ইতিমধ্যে বিশেষজ্ঞ ডাক্তার সহ সমাজ সচেতন মহল থেকে গভীর উদ্বেগ-উৎকন্ঠা প্রকাশ করা হয়েছে । করোনা আমাদের জীবন জীবিকাকে রীতিমত চ্যালেঞ্জে ফেলে দিয়েছে । জীবন নাকি জীবিকা ! জীবন বাঁচলে জীবিকা, আবার জীবিকার ব্যবস্থা না থাকলে জীবন রক্ষা দায় । অনেকটা শ্যাম রাখি না কূল রাখির মত অবস্থা । অর্থাৎ জীবন বাঁচাবো নাকি অর্থনীতি রক্ষা করব নাকি প্রশাসনিক দূর্বলতা এবং জনগনের অসচেতনার কারনে দুটোই হারাবো নাকি দেশ-জাতিকে হার্ড ইমিউনিটির মধ্যে ফেলে দিয়ে -মরে ধরে যা থাকে তা নিয়েই এগুবে ভবিষ্যতের বাংলাদেশ ।
এই ভয় ভীতি এবং আতংক আশংকার মধ্যেও করোনা যুদ্ধে টিকে থাকতে বিশ্ব অভিজ্ঞতার বিকল্প নেই । এই ক্ষেত্রে করোনা চ্যালেঞ্জ মোকাবেলার জন্য জাপাননের গৃহিত কর্মসূচী গুলো থেকে আমরা কিছুটা শিক্ষা নিতে পারি । পুরো জাপান লকডাউনে যায়নি, টৌকিওসহ করোনায় আক্রান্ত সাতটি প্রিফেকচারে জরুরী অবস্থা ঘোষনা করেছে । এই জরুরী অবস্থার আওতাধীন এলাকা সমূহে বিশেষ সতর্কতা অবলম্বন করে সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বিনোদন কেন্দ্র, স্পোর্টসের আয়োজন, বড় সুপার মার্কেটে বিলাসী পন্যের প্লোর গুলো এবং ট্র্যাডিশনাল উৎসব সমূহ বন্ধ রেখে সবই চলছে স্বাভাবিক গতিতে । জাপানিজরা বরাবরই স্বাস্থ্য সচেতন, সুশৃঙ্খল, আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল এবং সংকট মোকাবেলায় সরকারী উদ্যোগে সহযোগিতা মূলক মানসিকতায় উদ্ভূদ্ধ এক জাতি । তাই সবাই নিজ ঘর, কলকারখানা, বিপণন কেন্দ্র সমূহে সবাই হ্যান্ড স্যানিটাইজার, সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখা সহ মাস্ক ব্যবহার করছেন । বিপণী কেন্দ্র সমূহে ক্রেতাদের লাইনে দাঁড়ানোর জন্য দূরত্ব বজায় রাখার জন্য মার্কিং করা আছে । মূল্য পরিশোধের সময় ক্রেতা বিক্রেতার মধ্যে স্বচ্ছ রেকসিনের দেয়াল টানা আছে, যাতে ক্রেতা বিক্রেতা পারষ্পরিক শ্বাস-প্রশ্বাসের সংস্পর্শ থেকে রক্ষা পায় এবং মূল্য পরিশোধের সময় হাতের স্পর্শ থেকে রক্ষার জন্য নির্দিৃষ্ট পাত্রে টাকা-পয়সা রেখে লেনদেন করছে ।
জাপানের সাথে তুলনা করাটা ঠিক নয় । আমরা সামাজিক এবং ধর্মীয় রীতি নীতির কারনে বন্ধু-বান্ধব সাক্ষাতে হ্যান্ডশেক এবং কোলাকুলি করে থাকি, তাছাড়া আমরা হরহামেশা যত্রতত্র থুথু, পলিব্যাগ, খাবারের উচ্ছিষ্ট এবং ব্যবহার্য্য কাগজপত্র ধুমড়ে-মুচড়ে রাস্তা ঘাটে ছুঁড়ে ফেলি । যা জাপানিজদের জীবনাচরনে দেখা যায় না । তাই বলছি তুলনা নয় । আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রের উচিত ত্রাণ সহযোগিতা অব্যাহত রেখে সমাজ সচেতনা কার্যক্রম প্রচার এবং আইন বা নিয়ম ভঙ্গকারীদের বিরুদ্ধে শাস্তি এবং জরিমানা আদায় নিশ্চিত করা । এই রাষ্ট্রযন্ত্র বিশেষ অভিযান সমূহে আইন বহির্ভূত ক্রসফায়ার বেমালুম হজম করতে পারলে এখন কেন বৃহৎ জনগোষ্টিকে বাঁচাতে করোনা কালে শৃঙ্খলা অমান্যকারীদের ন্যূনতম মৃদু বেত্রাঘাত করতে পারবেনা । তাই এই করোনার মহামারিতে জনগনের উচিত আন্তরিক সচেতনতা এবং আইন অমান্যকারীদের জন্য প্রয়োজন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার লাঠির কঠোরতা । এর ব্যতিক্রম হলে দেশ জাতিকে মুখোমুখি হতে হবে এক ভয়ংকর অনিশ্চিয়তার ।
 


মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
ওয়ারাবি,সাইতামা,জাপান।

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ