|
খালেদা জিয়ার মুক্তি এবং নিন্দুকদের ভাবনা
দেশ-জাতি যখন করোনা ভাইরাসকে নিয়ে মূখর, তখন হঠাৎ করে খালেদা জিয়াকে শর্ত
সাপেক্ষে ছয় মাসের মুক্তির বিষয়টা সবাইকে বিস্মিত করেছে । বিশেষতঃ এই
মুহূর্তে খালেদা জিয়ার মুক্তি বা জামিন নিয়ে বিএনপির আদালত বা রাজপথ
কেন্দ্রিক কোন কার্য্ক্রম ছিল না । তবে বিষয়টা আইনমন্ত্রী আনিসুল হক
মিডিয়াকে স্পষ্ট করেছেন খালেদা জিয়ার ভাই শামীম ইস্কান্দার সরকারের নির্বাহী
বিভাগে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য মানবিক আবেদন করেছিলেন, তাছাড়া শামীম
ইস্কান্দার, খালেদা জিয়ার বোন সেলিমা ইসলাম এবং ভগ্নিপতি রফিকুল ইসলাম
প্রধানমন্ত্রীর সাথে সাক্ষাত করে খালেদা জিয়ার মুক্তির জন্য অনুরোধ করেন ।
এরই প্রেক্ষিতে প্রধানমন্ত্রী ওনাকে আইনানুগ ভাবে মুক্তির ব্যবস্থা গ্রহনের
জন্য নির্দেশ দিয়েছিলেন, যার পরিণতিতে দীর্ঘ দুই বছর প্রায় দুই মাস
কারাভোগের পর খালেদা জিয়ার ছয় মাসের শর্ত সাপেক্ষ মুক্তি মিলেছে ।
একটু পিছনে ফিরলে দেখা যাবে খালেদা জিয়ার মুক্তির বিষয়ে সরকারীদল সর্বদা
বলতেন এইটা আদালতের এখতিয়ার, তবে কেউ কেউ বলতেন খালেদা জিয়া প্যারোল বা দোষ
স্বীকার করে জামিন বা মুক্তি চাইলে সরকার বিষয়টা বিবেচনা করবেন । অন্যদিকে
বিএনপির আইনজীবি এবং নেতারা বলতেন সরকারই আদালতকে ব্যবহার করে খালেদা জিয়াকে
আটকে রেখেছে, রাজপথই পারে খালেদা জিয়াকে মুক্ত করতে । বাস্তবতা হচ্ছে
বিএনপির নেতা-কর্মীদের ক্রমাগত ব্যর্থতা এবং ভবিষ্যত আন্দোলনের কোন ন্যূনতম
আলামত দেখতে না পেয়ে শেষোবধি খালেদা জিয়ার নিকটাত্মীয়রা প্রধানমন্ত্রীর সাথে
সাক্ষাত করে শর্ত সাপেক্ষে ছাড়িয়ে আনেন । খালেদা জিয়ার কারামুক্তির বিষয়ে
খালেদা জিয়ার পরিবার প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন, দলের সিনিয়র যুগ্ন
মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, এমনকি তারেক জিয়াও তার ভিডিও বার্তায় তার মায়ের
মুক্তিতে ধন্যবাদ জানিয়ে স্বস্তি প্রকাশ করেছেন । তারেক জিয়া, খালেদা জিয়ার
বোন সেলিমা ইসলাম এবং দলের সিনিয়র যুগ্ন মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সরকারকে
ধন্যবাদ জানালেও দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বস্তি প্রকাশ
করলেও সরকারকে ধন্যবাদ জানানোর আগে তারেক জিয়ার সাথে স্কাইপে কথা বলে
অভিব্যক্তি দিবেন বলেছিলেন অথচ এরই আগে তারেক জিয়া তার ইউটিউবের ভিডিও
বার্তায় সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে ফেলেছেন । নিন্দুকরা প্রশ্ন তুলছেন দলের
মহাসচিব মির্জা ফখরুল এবং সংশ্লিষ্ট আইনজীবিরা না জানলেও দলের সিনিয়র যুগ্ন
মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ঠিকই জানতেন কখন কীভাবে তারেক জিয়ার সম্মতিতে
খালেদা জিয়ার পরিবারের সদস্যরা সরকারের সাথে আপোষ বা সমঝোতা করছেন । আর
তারেক জিয়ার ভিডিও বার্তাটি যারা শুনেছেন, তারা এক নতুন তারেক জিয়াকে
দেখেছেন, মায়ের মুক্তিতে স্বস্তি প্রকাশ ও শুকরিয়া প্রকাশ পূর্বক সরকারকে
নিন্দা বা সমালোচনা না করে বরং সরকার, দল এবং দেশ-জাতিকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে
করোনার মহামারী থেকে মুক্তির জন্য কয়েক পৃষ্টার সুলিখিত বক্তব্য দেখে-দেখেই
পাঠ করেছেন । নিন্দুকরা প্রশ্ন তুলছেন এই বক্তব্যে স্বভাবসূলভ তারেক জিয়া
অনুপস্থিত, অতীতের সব বক্তব্যে ছিলো বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, আওয়ামীলীগ এবং
আওয়ামী সরকারের বিষোদগার অর্থাৎ তুচ্ছ-তাচ্ছিল্যে ভরপুর । নিন্দুকরা আলামত
খুঁজে পাচ্ছেন শেখ হাসিনার ভাইরাল হওয়া লন্ডন আওয়ামীলীগ নেতার সাথে কথোপকথনে,
যেখানে উল্লেখিত ছিল তারেককে বলবেন মায়ের মুক্তি চাইলে যেন বেশী বাড়াবাড়ি
না করে । চিন্তা করাটা অমূলক হবে কিনা জানিনা আপোষহীন নেত্রীর ছেলে তারেক
জিয়াও মায়ের মুক্তির জন্য বাড়াবাড়ি না করে সরকার নির্দেশিত লিখিত বক্তব্যটি
পাঠ করে আপোষ করেছেন । নিন্দুকরা প্রশ্ন তুলছেন খালেদা জিয়ার পরিবার যেহেতু
খালেদা জিয়ার জ্ঞাতসারেই সরকারের নির্বাহী বিভাগের অনুকম্পায় শর্তসাপেক্ষ
মুক্তির ব্যবস্থা করেছেন, এতে আপোষকামীতাকে স্পষ্ট করে, এতে খালেদা জিয়ার
আপোষহীন নেত্রীর তকমা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্য হয় । তাছাড়া জামিন পাওয়ার পর
তারেক জিয়া যেন লন্ডনে বসে উল্টা-পাল্টা বক্তব্য- বিবৃতি দিয়ে হুজুগী
পরিবেশ তৈরী করতে না পারেন, এজন্য সরকার নির্ধারিত আপোষরফার শর্ত সাপেক্ষ
বক্তব্য দিতে তারেক জিয়াকেও বাধ্য করেছিলেন । নিন্দুকরা বলছেন শেখ হাসিনার
রাজনৈনিক কারেন্ট জালে আঁটকা পড়ে মা-ছেলে বাধ্য হয়েছেন শর্ত সাপেক্ষ মুক্তি
এবং লিখিত বক্তব্য পাঠ করতে ।
যাহোক, খালেদা জিয়া একদিন জেল মুক্ত হবেন এই ধারনা রাজনীতি সম্পর্কে
ন্যূনতম ওয়াকেবহাল মাত্রই জানতেন । কারন বিএনপি আন্দোলন করে খালেদা জিয়াকে
মুক্ত করতে পারুক না পারুক আওয়ামীলীগ কখনই খালেদা জিয়াকে জেলখানায় মরতে
দিবেন না অথবা বিকলাঙ্গ হয়ে কুৎসিত অবয়বে জাতির সামনে আসুক, তাও চাইবেন না
। এতে তাদের প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপির প্রতি জনগনের সহানুভূতি বৃদ্ধি
পাবে, যা আওয়ামীলীগের জন্য ক্ষতিকর । এখন নিন্দুকরা প্রশ্ন তুলছেন, খালেদা
জিয়া কি উনার অতীত রোগসহ বিভিন্ন বার্ধক্যজনিত রোগে মৃত্যু ঝুঁকিতে ছিলেন !
নাকি বিএনপির সাবেক সংরক্ষিত আসনের এমপি নিলুফার চৌধুরী মনির টকশো বক্তব্যটি
সত্য ! নিলুফা চৌধুরী মনি আশংকা প্রকাশ করে বলেছিলেন, বিএনপির উচিত ছিল
নেত্রীর মুক্তির পূর্বে নেত্রীর শরীরে স্লো পয়েজিং বা করোনার কোন আলামত আছে
কিনা তা নিশ্চিত হওয়া । নিন্দুকদের মতামত হচ্ছে, করোনা পরিস্থিতিতে খালেদা
জিয়ার মুক্তি হচ্ছে সাপও মরলো লাঠিও ভাঙ্গলো না, এমনটার সদৃশ । অর্থাৎ করোনা
পরিস্থিতিতে খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সরকার রাজনীতির মাঠ এবং টিভি টকশোর
আলোচনা থেকে খালেদা জিয়াকে সহজেই দূরে রাখতে সক্ষম হয়েছেন ।
অপ্রাসঙ্গিক হলেও বলছি, ধরুন ৭৫ এর ১৫ই আগষ্ট জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ
মুজিবুর রহমান যদি তৎকলিন সেনা প্রধান কে এম শফিউল্লার পরামর্শ মতে
বঙ্গবন্ধু বাড়ির সিমানা প্রাচীর টপকে পালাতে চাইতেন অথবা ভীতসন্ত্রস্ত হয়ে
জীবন বাঁচাতে খাটের নীচে লুকাতেন, তাহলে কি উনি নিজকে রক্ষা করতে পারতেন !
নিশ্চয় না । জাতি বঙ্গবন্ধুর লাশকে আবিস্কার করত পলায়নরত সীমানা প্রাচীরের
পাশে অথবা খাটের নীচে, যা একান্তই দূর্বল চিত্তের মানুষের কাজ বরং উনি জীবন
দিলেন বীরোচিত ভাবে, এতেই টিকে আছে বঙ্গবন্ধু এবং আওয়ামীলীগের রাজনীতি । এই
করুণ বিয়োগান্ত ঘটনা ছুঁয়ে গেছে কোটি কোটি বঙ্গবন্ধু ও আওয়ামী প্রেমী
নেতা-কর্মীর হৃদয়কে, যার উপর ভিত্তি করে উনার সুযোগ্য কর্ন্যা শেখ হাসিনা
আওয়ামীলগকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে সক্ষম হয়েছিলেন ।
যাহোক, বেশ কিছুদিন পূর্বে বিএনপি নেতা মেজর আখতারুজ্জামান তার ফেইসবুক
স্ট্যাটাসে লিখেছিলেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া আপোষহীন নেত্রী, জেলখানায়
মরলেও এই অগনতান্ত্রিক সরকারের সাথে কোন প্রকারের আপোষ করবেন না । উনার
আপোষহীনতার মধ্যেই বেঁচে থাকবে বিএনপির রাজনীতি । মেজর আখতারুজ্জামানের এই
বিশ্বাস বিএনপির রাজনীতির বেশীর ভাগ লোকই ধারন করেন । মেজর আখতারুজ্জামানের
বিশ্বাসটি সত্য হলে তারেক জিয়া অথবা জাইমা রহমানরা শেখ হাসিনার মত করেই
বিএনপিকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় আনতে পারতেন । কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে
বিএনপির রাজনীতি এবং ভবিষ্যত রাষ্ট্র ক্ষমতা নিয়ে অনেকেই শংকিত । কারন
করোনার বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আসলে স্বাভাবিক ভাবেই আমাদের টিভি টকশো
এবং রাজনীতি হুমড়ি খেঁয়ে পড়বে খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্যাবস্থা, মুক্তিতে কার
কি ভূমিকা ছিল এবং উন্নত চিকিৎসায় স্বদেশ-বিদেশ প্রসঙ্গসহ জামিনের মেয়াদকাল
বৃদ্ধি ইত্যাদি বিষয়াবলীকে ঘিরে । নিন্দুকদের মতে, তখন সরকার বিএনপি
নেতাদের নিয়ে এক নতুন প্রতিযোগিতার আয়োজন করবেন আর এতে কুশীলব হিসেবে
আবর্তিত হবেন প্রকৃত বিএনপি নেতা এবং দিনে বিএনপি ও রাতে আওয়ামীলীগ করা
বিএনপি নেতাদের নিয়ে, উনারা খালেদা জিয়ার স্বজনদের দৃষ্টি আকর্ষনে খালেদা
জিয়া দরদী তর্ক-বিতর্কসহ পর্দার অন্তরালে গ্রুপিংয়ে ব্যস্ত থাকবেন ।
অন্যদিকে সরকার টকশো প্লেয়ারদের ব্যস্ত রাখবেন খালেদা জিয়ার আপোষহীন,
আপোষকামীতা এবং খালেদা জিয়ার মুক্তিতে শেখ হাসিনার বিশ্ব মানবতার মায়ের
বাড়তি সংযোজন নিয়ে । নিন্দুকদের মতে, সরকার অনেকটা এরশাদের মতই খালেদা
জিয়াকে জেল-মামলা জারি রাখার পাশাপাশি শর্ত সাপেক্ষে জামিনে মুক্ত রেখে
জাতীয় পার্টি সদৃশ বিএনপিকেও কংকালসার করে রাজনীতির মাঠে জিঁইয়ে রাখবেন ।
মোঃ মহিউদ্দিন মজুমদার মাসুম
ওয়ারাবি,সাইতামা,জাপান।
WARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|