নন্দিত জাপান:নিন্দিত জাপান
কাজী ইনসানুল হক
জাপানকে নিয়ে অনেক ভাল ভাল কিছু আমরা নিয়মিত পড়ি। এত কিছু ভালোর মধ্যেও কিছু
কিছু মন্দ দিক যা আলোচনার বাইরে থেকে যায়। অভিবাসন আইন সংস্কারের ক্ষেত্রে
জাপানের আইন ভীষন সেকেলে।
প্রশান্ত মহাসাগর থেকে ভেসে আসা শীল মাছের জন্য জাপান ঘটা করে “নাগরিকত্ব”
দেয় আবার দশ-বিশ বছর জাপানে শ্রম দিয়ে কেবলমাত্র ভিসা না থাকার অপরাধে তাকে
ধরে দেশে পাঠিয়ে দেয়। কিছু সুযোগ ও সামান্য আইনী সংস্কারের মাধ্যমে
অভিবাসীদের সুযোগ দিয়ে বিশ্বের অন্যান্য দেশ যে মানবিকতা দেখায় জাপান সেখানে
বিন্দুমাত্র ভূমিকা রাখেনা।
ছবিটি দেখূন:
জাপানে অভিবাসন প্রত্যাশী বাংলাদেশী মারুফ আব্দুল্লাহকে কোমরে দড়ি ও হাতে
হাতকড়া পরিয়ে (গত অক্টোবরে) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। মারুফ জাপান
ইমিগ্রেশন ডিটেনশন সেন্টারে আটকাধীন একজন অভিবাসন প্রত্যাশী,একজন
undocumented allian.তিনি চোর নন,খুনী নন,দুর্ধষ্য সন্ত্রাসী নন।তার আপরাধ
,তার বৈধ ডকূমেন্টস নেই,হয়তো বৈধ এসেছিলেন,নির্দিষ্ট সময়ের পর অবৈধ হয়ে
গেছেন। তিনি বৈধ হবার আবেদন জানিয়েছেন,আবেদন গৃহীত না হলে তাকে ফেরত পাঠানো
হবে এটাই রীতি। বিশ্বব্যাপী অভিবাসন প্রক্রিয়ায় এটিই রূটিন পদ্ধতি।
প্রশ্ন হচ্ছে কোমরে দড়ি বেঁধে,হাত করা পড়িয়ে তাকে কেন হাসপাতালে নিতে হবে?
বিশ্ব মানবতা নিয়ে জাপানের বিভিন্ন আন্তজার্তিক ফেরামে যথেষ্ঠ উদার পরিচিতি
আছে অথচ নিজ দেশে একজন অভিবাসীর প্রতি চরম অমানবিকতার কি জবাব?
আসাহি ওডা নামের একজন মানবতা কর্মী জাপানে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আটকের
বিরুদ্ধে সোচ্চার ভূমিকা পালন করে থাকেন। তিনি ভিকটিমের অনুমতি নিয়ে তার
ছবিটি তোলেন ও সোশাল মিডিয়ায় প্রকাশ করেন। জাপান টাইমস সহ বিভিন্ন পত্রিকা
ফলোআপ প্রতিবেদন প্রকাশ করে।
মারুফ চান, আটক অভিবাসীদের সঙ্গে কী অন্যায় আচরণ করা হয় তা জনগণ জানুক। তার
ভাষায়....বিচার না হওয়া পর্যন্ত আমি অপরাধী নই।’ হাতকড়া ও দড়ি পরানোকে চরম
অপমানজনক বলে মনে করি....।
ছবি প্রকাশের পর এ নিয়ে অনলাইনে তীব্র বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। দেশটির
অভিবাসন কেন্দ্রগুলোতে আটক ব্যক্তিদের সঙ্গে এমন দুর্ধর্ষ অপরাধীর মতো আচরণ
মেনে নিতে পারছেন না অনেকে।
বাংলাদেশ দূতাবাস কি একজন প্রবাসীর প্রতি অপমানকর এই অমানবিক আচরনের জন্য
প্রতিবাদ
জানাবে? দূতাবাসের লেবার অফিসার তার সাথে দেখা করে নিরেট সহানুভূতিটুকু
জানাতে পারে?
উল্লেখ্য, এর আগে ১৯৯৫ সালে এক আসামিকে হাতকড়া পরিয়ে হাসপাতালে নেওয়ায় ওই
বিবাদীকে ক্ষতিপূরণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছিল ওসাকা ডিস্ট্রিক্ট কোর্ট। বলা
হয়েছিল, ওইভাবে বেঁধে নিয়ে যাওয়ায় আসামির ব্যক্তিগত অধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।
পরে আদালতের ওই রুলটি বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট। এই আইনের আওতায় দূতাবাস অথবা
কোন মানবিক সংস্থা মারূফের জন্য ক্ষতিপূরণের ব্যাবস্থা করতে পারে।
kaziensan@gmail.com
|