[প্রথমপাতা] |
তন্ময়ের ঘরে ফেরা
কাজী ইনসানুল হক
প্রতিভাবান,মেধাবী,আশাবাদী ও অসম্ভব অলস আমাদের
প্রিয় তন্ময়ের বিদায়
বেলার কথামালা
আমাদের প্রিয় তন্ময়
, খুরশিদ মেহের তন্ময় জাপানের দীর্ঘ প্রবাস জীবনের ইতি
টেনে স্বদেশে ফিরে যাচ্ছেন সপরিবারে। এরকম একজন পরম সুহৃদের বিদায়ে মন
বিষন্ন হয়ে যায়। কিন্তু তন্ময়ের বিদায়ে আমি খুশি
, কারণ অসম্ভব মেধাবী এই
লোকটির প্রয়োজন এখন বাংলাদেশে। তার শিক্ষা, জাপান থেকে অর্জিত অভিজ্ঞতা আর
নিজের মেধা আর মনন মিশিয়ে নতুন কিছু সৃষ্টি
করার সুযোগ এসেছে এবার।
বাংলাদেশে যে প্রতিষ্ঠান তাকে বিশেষ সম্মান দিয়ে তাদের প্রজেক্টের দায়িত্ব
দিচ্ছে তারাও জানেন তারা সঠিক বাক্তিকেই নির্বাচিত করেছেন। একদা খুলনা বি
আই টির শিক্ষক। স্থাপত্য
, বিষয়ে জাপানি স্কলারশিপ নিয়ে সর্বোচ্চ ডিগ্রী
অর্জন। তারপর জাপানের মর্যাদাপূর্ণ প্রতিষ্ঠানে কাজ করেও কি যেন একটা না
পাওয়ার বেদনা তাই চাকরি বদল আর শেষে নাড়ির টানে ঘরে ফেরা । তন্ময় নিজেই
বললেন ...না না আমি জাফর স্যারের মত মহৎ কেউ নই ...অতটা দেশপ্রেমের দাবি
করার ধৃষ্টতা আমার নেই ....তবে দেশে ফিরে যাচ্ছি অনেকটা চ্যালেঞ্জ নিয়েই
.....এখানে জন্ম নেয়া, এখানেই বেড়ে ওঠা আমার দু'সন্তানের জন্য একটু চিন্তা
হয় ......কিছুটা ছন্দপতন হয়ত হবে তবে আমি আশাবাদী। তন্ময়কে যারা চেনেন তারা
জানেন উনি ও ভাবেই কথা বলেন।
তন্ময়ের কাছে আমরা জাপান প্রবাসীরা বিশেষভাবে কৃতজ্ঞ। ক্রিকেট পাগল তন্ময়
, শাহেদ সহ বন্ধুরা অনেকটা
হেলাফেলা করে তৈরী করেছিল
www.bangladeshtigers.com
পোর্টালটি , সময়ের হাত ধরে এই
পোর্টালটিতে হয়ে গেল জাপান প্রবাসীদের প্রিয়
কমিউনিটি পোর্টাল। ভিন্ন আউটলুক, গেটআপ আর পজিটিভ বাংলাদেশের প্রতিকৃতি
মূর্ত হয়ে ওঠে এই পোর্টালটি। আমাদের সাথে তথ্য প্রযুক্তির যোগাযোগের
সেতুবন্ধন যেন তন্ময় আর অন্য পোর্টাল
www.deshbideshweb.com
র মাধমে। প্রবাসে গড়ে ওঠা নানান সামাজিক
, রাজনৈতিক , ধর্মীয় সংগঠনের সংবাদ, মানবিক আবেদন, দেশের যেকোনো দুর্যোগে
প্রবাসীদের কাছে সকল তথ্য সহযোগিতায় তন্ময় কে আমরা সবসময় কাছে পেয়েছি। প্রকাশনা , পোস্টার
, জাপান সফরে আসা দুই প্রধানমন্ত্রী কিংবা নোবেল বিজয়ী
আমাদের ইউনুস
স্যারের মানপত্র
, দুতাবাসের নানা প্রয়োজনে সবখানেই তন্ময়। এত
ব্যাস্ততার
মাঝেও তিনি দীর্ঘদিন ধরে এন এইচ কে বাংলা বিভাগে খবর ও অনুষ্ঠান
উপস্থাপনা করে আসছেন।
জাপানের বাংলা কাগজ "পরবাস" র সূচনা হয়েছিল তন্ময়ের হাত ধরেই। আমার এখনো মনে
আছে , ২০০২ সালে ইতাবাশির একটি ফ্যামিলি রেস্টুরেন্টে আমরা কজন বন্ধু
-বদরুল, বাকের
, মনি, সজল, প্রিন্স
, শাহীন, মিলে পরবাস পত্রিকা প্রকাশের সিদ্ধান্ত
নি এবং
তন্ময়কেই ঐদিনে সেটির জন্য সহযোগিতার অনুরোধ করলে তন্ময় তাতে সম্মতি দেন।
"পরবাস"নামের লোগো
, সূচনা সংখ্যার (পরবর্তিতে বহুবার) প্রচ্ছদ সবটাই তার
হাতে করা। এমনকি ৩/৪ দিন অমানুষিক পরিশ্রম করে ৩২ পাতার পুরো কম্পোজ
করেছিল তন্ময়। তারপর ফাইনাল লে আউট নিয়ে মুদ্রণ বিষয়ে নিতান্তই অজ্ঞ আমরা
দুজন জাপানের অনেক প্রেসের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরেছি
, বাংলা ফন্টের নানা সমস্যা, আর প্রিন্টিং চার্জের অগ্নিমূল্য
, শেষমেষ তন্ময় সে লে আউট ঢাকায় নিয়ে যায়
, নিজে প্রেস এ
গিয়ে ছাপার ব্যাবস্থা করে। প্রথম সংখ্যার নানান অসঙ্গতি
আমাদের চোখে পড়ে
না, কেবল মাত্র একটি পত্রিকা বেরুচ্ছে এই আনন্দটুকুই
আমাদেরকে পরবর্তিতে পত্রিকা প্রকাশের সাহস যোগায়।
অত্যন্ত বিনয়ী তন্ময়কে দেখেছি
, অন্যের করা যেকোনো ডিজাইনকে .....অদ্ভুত
...সুন্দর বলে প্রশংসা করছে। বাংলাদেশ ফেস্টিভাল তন্ময়কে দায়িত্ব দিয়েছিল
পরিবেশ বিষয়ক পোস্টার করতে... তন্ময় কিভাবে যেন একটা অন্তর্জাতিক পোস্টার
প্রতিযুগিতা করে ফেলল
, সারা বিশ্ব থেকে কত বিষয় ভাবনা নিয়ে পোস্টার এলো
,
সে এক হুলুস্থুল। নিজেকে পরিচয় দিত ...সুধু তন্ময় বলে
, তার ভিজিটিং কার্ড
এ আছে খুরশিদ মেহের তন্ময় ......ডক্টর তন্ময় দেখিনি। জাপানের অনেক
বাংলাদেশী মালিকাধীন প্রতিষ্ঠানের হোমেপেজ করার আইডিয়া তন্ময়ের, অন লাইন
কেনা কাটার সূচনা হয়েছে তার হাত ধরেই ।
শিরোনামে আমি তন্ময়কে অসম্ভব অলস বলেছি
, সেটি অন্তত ১০০ ভাগ সত্যি, আমাকে
তার অনেক পরিকল্পনার কথা বলেছে
, সেই পথে অনেকদুর এগিয়েছে
, কিন্তু অলসতার
জন্য তার শেষটুকু দেয়া হয় নি। তন্ময়কে দেয়া একটি সম্বর্ধনায় তন্ময় এসেছে
সবার শেষে? অনেক কাজ তাকে দেয়া হয়েছে
, করার সময় দিতে পারেনি
, প্রবাস
প্রজন্মর হোমপেজ করছি করছি বলেও বহুদিন। তন্ময়ের কাজটি সবসময় একটি বিশেষ
মাত্রার , সামান্য টানে ভিন্নতা ও সমুজ্জ্বল। কাজ দেখেই বলা যায় এটি
তন্ময়ের করা
- বিশেষ আদল , ভিন্ন শৈলী।
বাংলাদেশে এখন নির্মান শিল্পের জয় জয়কার
, অসংখ স্থাপনা, নতুন নতুন ধারণার
ডিজাইন। আর্কিটেক্টরা নিত্য নতুন ধারণা দিচ্ছে
, তৈরী হচ্ছে ভিন্ন আদলের
বাড়ি ঘর মার্কেট কত কী। তন্ময়কে তাই ঢাকায় দেখতে চাই। তন্ময়ের হাত ধরেই
নির্মিত হতে যাচ্ছে ঢাকায় দুটি ৫ তারা হোটেল। ঢাকা এয়ারপোর্ট সংলগ্ন এ দুটো
আন্তজার্তিক হোটেল হয়ত কোনো জাপান প্রবাসীর চোখে পরবে
, কেউ এ হোটেল এ
থাকবেনও। আমার বিশ্বাস ......হোটেলের কোনো অংশের কোনো নকশা কিংবা
বিশেষত্বই জানিয়ে দেবে তন্ময়ের উপস্থিতি। তন্ময়ের ঘরে ফেরার এই সিদ্ধান্তের
জন্য সাধুবাদ। অভিনন্দন। পরিবারের সবার সুস্থতা কামনা করি।
kaziensan@gmail.com
[প্রথমপাতা] |
|