প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

ইন্টার্নী ভিসায় জাপানে আসা স্বপ্নভংগ তিন তরুনের নির্মম মানবেতর জীবনকথা

 

 

 

কাজী ইনসানুল হক

ভাগ্যান্বশনে বাংলাদেশের তরুন-যুবকদের অভিবাসী হবার আকাংখায় নদী-সাগর-মহাসাগর-দূর্গম জংগল পাড়ী দেবার কথা কারও অজানা নয়। দালালদের প্রতারনার ফাঁদে আটকে পড়ে সহায় সম্বল সব হারিয়ে বছরের পর বছর ঘূড়ে অবশেষে কারও কারও ভাগ্যে কদাচিত নতুন দেশে ঢোকা সম্ভব হয়।শত প্রতিকূলতা কাটিয়ে বছরের পর বছর অপেক্ষা করে ভিসাহীন জীবনের সমাপ্তি ঘটে,পরিবারের জীবন যাত্রার মান পরিবর্তনের লক্ষে শুরু হয় উপার্জন।অথচ দীর্ঘ পথ যাত্রায় বনে -জংগলে পরিশ্রম আর রোগ -শোক-অনাহারে কতজনের মৃত্যু হয়,প্রশান্ত মহাসাগরের অতলে হারিয়ে যায় কতজন তার খবর আমরা কেউ রাখিনা।

আলো ঝলমল টেকিও শহরের অভিজাত ইতাবাসী ওয়ার্ডের ষোল বর্গমিটার একটা পূরোনো জরাজীর্ন বসবাস অযোগ্য ঘড়ে ওদের তিনজনের আস্তানা।তিনজন সেখানেই গাদাগাদি করে থাকে। আসবাবপত্রের বালাই নেই।এক চিলতে রান্নার জায়গায় কোনরকম বেঁচে থাকার জন্য খাবার আয়েজন।

Lইন্টার্নী ভিসায় সরকারী ভাবে প্রাথমিকভাবে তিন বছরের কর্মভিসায় ওরা তিনজন জাপানে এসেছে ছমাস হয়ে গেছে।কাজ করতে এসেছে অথচ কাজ নেই,গত ছ মাসে ওরা কোন মাসে কাজ পেয়েছে ৫-৭ দিন করে।যা বেতন তাতে ঘড় ভাড়া ও গ্যাস,বিদ্যুত,পানি বিল দেয়ার পর মাসভর খাওয়ার জন্য কিছূ থাকেনা।দেশে টাকা পাঠানো দূরে থাক দেশ থেকে টাকা না আনলে না খেয়ে মরার জোগার। অথচ চুক্তিপত্রে আছে সপ্তাহে কমপক্ষে প্রতিঘন্টা ৯৩২ ইয়েনে চল্লিশ ঘন্টা কাজ দিতে হবে, প্রতিজনকে একরুমের আলাদা আলাদা থাকার ব্যাবস্হা করতে হবে।ওরা নতুন এসেছে,ভাষা জানেনা তাই কোথাও যোগাযোগ করতে পারেনা।স্বাস্হ্য বীমা থাকলেও হাসপাতাল চেনা নাই,দূতাবাসে যোগাযোগ করতে পারেনি।জাপানের মত শ্রমবান্ধব দেশে ওরা হয়রানীর শিকার।প্রতিবাদ করার সুযোগ নেই অথচ জাপানী আইনে কোম্পানী মালিক শ্রমিকদের বেশী খাটানো,বেতন কম দেয়া সহ কোন অন্যায় করার সুযোগ নেই।প্রয়োজনে ক্ষতিপুরন দিতে বাধ্য।দূই একজন বদ মালিককে পুলিশ কতৃক আটক হবার খবর মাঝে মধ্যে ফলাও করে টিভাি রেডিওতে প্রচার হয়।

একই জেলার পাশাপাশি গ্রামের ওরা,দীর্ঘদিন অপেক্ষা করে অলিখিত বিপূল নগদ অর্থ দিয়ে ওদের দেশান্তরী হতে হয়েছে।সবার গল্পটা একই ছকের।জমি জিরাত বিক্রী,চড়া সূদে ঋন, জাপানে এসে গত ছ মাসে কোন অর্থ দেশে পাঠানোর কথা ওদের কাছে স্বপ্নের মতো। আমার সাথে ওদের দেখা হওয়াটা কাকতালিও। আমার বাসার কাছেই একটা সুপার মলে কেনাকাটা করতে যেয়ে হঠাৎ ওদের দেখি।পরিচয় জিজ্ঞাস করতে বাংলাদেশী বলায় আলাপ করি ও ওদের দূর্ভাগ্যের কথা জানতে পারি।তরূন-যুবক সুগঠিত শরীর অথচ দেখলেই বোঝা যায় নানান চিন্তা ও হতাশা ওদের ।একসাথে একটা খাবার হোটেলে রাতের খাবার খেতে বসি।হৃদয় টা দূমরে ওঠে যখন দেখি ওরা খেতে পারছেনা,চোখ দিয়ে কান্না ঝরছে,মনে হয় স্বদেশ ছেড়ে,স্বজন ছেড়ে এই প্রথম
একজন স্বদেশীর সান্নিধ্যে ওদের ধৈয্যের বাধ ভেংগে গেছে।আশাবাদ শোনাই,জাপানের মতো দেশে শ্রমিকদের অনেক সুযোগ সূবিধা,একটূ কস্ট করো,সব ঠিকক হয়ে যাবে।ওদের পিড়াপিড়ীতে ওদের ঘড়ে যাই,স্বচক্ষে সব কিছূই দেখা হয় ।নিজেকে খূবই অপরাধী মনে হয়,আমার বাসা থেকে দেড় কিলোমিটার দূরত্বে তিনজন বাংলাদেশী এরকম মানবেতর জীবন যাপন করছে অথচ আমি তাদের জন্য কিছূই করতে পারছিনা।দীর্ঘ প্রবাস জীবনের অভিজ্ঞতা ,সাংবাদিকতার পরিচিতি,প্রবাস কমিউনিটির সাথে সংস্লিস্টতা,অবশ্যই ওদের জন্য কিছু করতে পারবো বলে মনে হয়।
ওখানে বসেই দূতাবাসের প্রথম সচিব (শ্রম)জনাব জাকির হোসেনকে ফোন করি,ওদের সাথে কথা বলে দেই।জাপান দুতাবাসে সদ্য আগত এই কর্মকর্তা শ্রমিক কল্যানে ভীষন আন্তরিক।জাপানে বাংলাদেশে শ্রমিক আনার ব্যাপারে জাপান সরকারকে রাজী করাতে প্রচন্ড পরিশ্রম করে যাচ্ছেন,
বিশ্ব অভিবাসী দিবসে তিনশত জাপানী কোম্পানীর উপস্থিতিতে তিনি আন্তজার্তিক মানের একটা সেমিনারে বাংলাদেশী জনশক্তি রফতানির সম্বাবনার দ্বার উদঘাটনে তৎপরতা দেখিয়েছেন।

আমার অভিযোগ শোনার পরপর তিনি বাংলাদেশে নিয়োগকারী প্রতিস্ঠানের মালিকের সাথে যোগাযোগ করেন,পরদিনই জাপানী কোম্পানীর মালিক ও জাপানে নিয়োগকারী প্রতিস্ঠান JITCO(Japan International Training Corporation Organization)-র প্রতিনিধির সাথে কথা বলেন।চুক্তি অনুযায়ী কাজ সহ সকল সূবিধা দেয়ার অনুরোধ করেন নইলে চূক্তিভংগের জন্য প্রয়োজনীয় ক্ষতিপূরনের কথা স্মরন করে দেন।ইতিমধ্যে তিনি মালিকপক্ক্ষের সাথে দেখা করেছেন এবং কোম্পানীতে কাজের শংকট থাকলে কোম্পানী পরিবর্তনের জন্য Jitco কে অনুরোধ করেছেন।গত রোববার কমিউনিটি আয়েজিত অনুস্ঠানে আমি ওই তিনজনের সাথে জাকির হোসেনের সাথে সামনা সামনি কথা বলার ব্যাবস্হা করি।অতি সত্তর ওই তিনজনের সমস্যা সমাধান হবে বলে আশ্বাস দেন।

হ্যা ওদের গত কদিন ধরে কাজ দেয়া হচ্ছে,বোঝা যায় প্রথম সচিব জনাব জাকির হোসেনের সহৃদয় সহযোগিতায় ভাগ্যহত ওই তিন যুবকের ভাগ্যের চাকা চলতে শুরু করেছে, ইতিমধ্যেই বাংলাদেশী নিয়োগকারী প্রতিষ্ঠানের প্রধান আমার সাথে কথা বলেছেন তিনি কদিনের মধ্যে টোকিও আসছেন এবং তার পক্ষে সম্ভব সব কিছু করবেন বলে জানিয়েছেন। প্রবাসী কমিউনিটিরও অনেকে ভাগ্যহত এই তিনজনের পাশে দাড়াতে আগ্রহ দেখিয়েছেন যদিও ওরা বলেছেন আমরা কাজ করতে পারলেই খুশি -সেটাই যেন হয় সেটাই চাওয়া।

(ব্যক্তিগত তথ্যর কারণে ওদের নাম, পরিচয়, ঠিকানা, বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানী প্রতিষ্ঠান ও জাপানে কর্মরত প্রতিষ্ঠানের পরিচয় প্রকাশ থেকে বিরত থাকা হলো)


কাজী ইনসানুল হক
টোকিও থেকে
kaziensan@gmail.com

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action। 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ