[প্রথমপাতা]

 

 

 

তোমরা এবং আমি, একই দেশের – আমরা বাংলাদেশের……

 

 

কাজী ইনসানুল হক


মনজু ভাই এর কাছে (মনজুরুল হক, প্রথমআলো, জাপান) আগেই জেনেছিলাম পেইন্টিংস ও ফটো প্রদর্শনীর কথা । আরো কৌ্তুহলী হলাম যখন জানলাম এই তরূনী শিল্পী বাংলাদেশী বংশোদ্ভুত ফ্রান্সে
র নাগরিক । মা বাংলাদেশের বাবা ফ্রান্সের । একজন চিত্রশিল্পী , ফটোগ্রাফার ,মডেল ও পারফর্মার । প্রাচ্য ধারার রীতিনীতিতে শিল্পমেধা ও দক্ষতার সমন্বয়ে তৈ্রী তার শিল্পকর্ম নাকি ইতিমধ্যেই আন্তর্জাতিক পর্যায়ে একটা জায়গা করে নিয়েছে –আগামী সময়টা নাকি বেশ সম্ভাবনাময় ।

নামটা নিয়ে বেশ খটকা । জাসনাবোদার্দ । জাসনা , সেটা কি মূল নাম জোৎস্না ? কিন্তু ছবিতে তাকে মোটেও বাঙ্গালী বলে মনে হচ্ছেনা । তবুও বাংলার মেয়ে জোৎস্না ভেবেই তার প্রদর্শনী দেখতে কাজ শেষে রওয়ানা হলাম । প্রদর্শনী ভেন্যু টোকিওর ইউরাকচোর ফরেন প্রেস ক্লাব । জাপানের মর্যাদাবান FCCJ (Foreign Correspondence Club Of Japan ) – এর বিশাল বার রুম ও মাছুকোমি সুশি বারের সারা দেয়াল জুড়ে সারিবদ্ধ ভাবে সাজানো হয়েছে জাসনার আঁকা ছবি, লাইট প্রিন্টিং ,নিজের তোলা ছবি , নিজের মডেলকৃ্ত ছবি । PRISM শিরোনামের এই প্রদর্শনীটিতে জাসনা বিশেষভাবে আমন্ত্রিত । আনুষ্ঠানিক ভাবে ক্লাবের প্রেসিডেন্ট Luchy Birmington জাসনাবোদার্দকে পরিচয় করিয়ে দিলেন । বিশেষ সম্মান জানিয়ে তার হাতে এই ক্লাবের সম্মান সূচক লাইফ মেম্বার শিপ কার্ড দেয়া হলো । পরিচয় পর্বে বাংলাদেশি – ফরাসী শিল্পীর প্রথম জাপানের এই প্রদর্শনী আয়োজনে ফরেন প্রেস ক্লাবের সাবেক প্রধান বাংলাদেশের মনজুরুল হকের সহযোগিতার জন্য কৃতজ্ঞতাও জানানো হলো । বাংলাদেশের রাস্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন বাঙ্গালী এই শিল্পীকে অভিনন্দন ও আয়োজক FCCJ –এর প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান । জাসনাবোদার্দও তার টোকিওতে এই প্রদর্শনীর জন্য সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান ।
জন্ম ,বেড়ে উঠা , ঘুরে বেড়ানো ও থিতু হওয়া বিশ্বময় ৪টি মহাদেশ জুড়ে ।এখন স্থায়ী নিবাস বার্সেলোনায় । থেকেছেন প্যারিস , নিউইর্য়ক , টেক্সাস, মরক্কো , বাংলাদেশে । ২০০৯ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অসংখ্যবার আর্ট ও ফটো প্রদর্শনী হয়েছে । মার্কিন যুক্ত্ররাষ্ট্রের ডালাস ও নিউইর্য়কের পর এ বছর বার্সেলোনায় সেপ্টেম্বর মাসে “Scatlerbrain” শিরোনামের  প্রদর্শনীর পর এই প্রথম জাপানে ।
সৃজনের বিষয় মূলত নারী ,বিশেষ করে ইউরোপিয়ান নারী চলে আসে তার চিত্রপটে । তার শৈল্পিক মেধা ও দক্ষতার সমন্বয়ে যে শিল্প কর্ম তা যেন বিশেষ কোন ঘরানায় স্থায়ী নয় । বেশ ভাসা ভাসা । রাজনীতি বোধ হয় তিনি ইচ্ছে করেই পরিহার করেন ।


সামনা সামনি জাসনা একেবারেই আমাদেরই মেয়ে । বাঙ্গালী চেহারা, চমকে উঠি। ক’জন বাংলাদেশী দেখে স্বপ্রনোদিত হয়েই এগিয়ে আসেন । হাসতে হাসতে বলেন, আমার কিন্ত একটা বাংলা নাম আছে – আমার নাম “আশা” । ভাঙ্গা বাংলায় বলেন, বাংলা বলতে চেষ্টা করি। তবে মা'র সাথে ছাড়া তো সুযোগ নেই ।
ফটোসেশন চলছে । বিশ্ব মিডিয়ার জাপান ব্যূারো প্রধান ডাকসাইটে বিদেশী সাংবাদিকরা, জাপানী সাংবাদিকরা ও আমন্ত্রিত অতিথিরা । এরই মধ্যে কেমন করে যেন অনুষ্ঠানে উপস্থিত সবেধন ৫ জন বাংলাদেশীর গ্রুপ ছবি তোলা হলো । শিল্পী জাসনা , সাংবাদিক মনজুরুল হক , বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন , আমি ও চলচ্চিত্রকার এবং ফিল্ম স্কলার মঈনুল শাওন।

 


নেদারল্যান্ডের সাংবাদিক Kent Dahl যিনি এমাসেই বাংলাদেশে যাবেন একটি ডকুমেন্টারি বানানোর কাজে আমাদেরকে জোড় করে বসালেন একটা টেবিলে । বেশ আড্ডা চলছে । জাসনা
কে জিজ্ঞেস করলাম, কাজ – --এত কাজ কিন্ত বাংলাদেশকে খুঁজে পাচ্ছি না কেন ? জাসনা জবাব দিলেন – কিছু কাজ করেছি – আরও করতে হবে, তারপর অবশ্যই একটা বড় প্রদর্শনী হবে- এবং তা বাংলাদেশে ।
জাসনার সাথে বাংলাদেশের সম্পর্ক নাড়ির, বাংলা সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যও ধারন করেন । মা রিতা শবনম নিজামী এক সময়ে নাম করা নৃ্ত্য শিল্পী ছিলেন, রেডিও, মঞ্চ ও টিভিতেও অভিনয় করতেন । জাসনার নানা তৎকালীন পুর্ব পাকিস্তানের সর্ববৃহৎ প্রকাশনা সংস্থা স্ট্যান্ডার্ড পাবলিশার্স- এর রূহুল আমিন নিজামী, যিনি ৫০ সালে প্রথম নতুন ধারার পত্রিকা “সন্ধ্যানী” প্রকাশ করেছিলেন। (পরবর্তিতে তা ভিন্ন মালিকানায় গাজী সাহাবুদ্দিনের হাতে যায়)।

   


বিদায়বেলা । জাসনা তার নেম কার্ডের উল্টো দিকে চট করে লিখলেন , ইংরেজীতে … প্রিয় বাংলাদেশের সবাই – আমি খুবই গর্বিত । তুমি ও আমি , আমরা একই দেশের – বাংলাদেশের ……। নীচে বেশ কস্ট করে বাংলায় লিখলেন “আশা” ।


প্রিয় পাঠক www.jasna-boudard.com  - এ খুঁজে পাবেন জাসনাবোদার্দ – কে ।

 

 

কাজী ইনসানুল হক
টোকিও
kaziensan@gmail.com

 

 

WARNING: /font> Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action.  

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ