[প্রথমপাতা] |
বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রেমী অধাপক
কাযুও আজুমার মহাপ্রয়ান:
আমরা শোকাহত, লজ্জিতও....
কাজী ইনসানুল হক ।।
চলে গেলেন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি প্রেমী অধাপক
কাযুও আজুমা।
তার মহাপ্রয়ানে আমরা শোকাহত, লজ্জিতও।
শোকাহত
বৃহস্পতিবার ভোর ৪-১০ মিনিটে জাপানের চিবা কেণের ইচিকাওয়াস্থ কা কে ন
হাসপাতালে পার্থিব জীবনের ইতি টানলেন বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতিঅন্ত প্রাণ
বিশিষ্ট জাপানি অধাপক কাযুও আজুমা(৭৯)। তিনি দীর্ঘদিন ধরে কিডনি সহ নানান
জটিল রোগে ভুগছিলেন। ৮-১০ বছর ধরেই তিনি হাসপাতালেই চিকিত্সাদিন ছিলেন, আমরা
শোকাহত.,তার আত্মার শান্তি কামনা করি..
কাযুও আজুমা ছাত্র জীবনে জাপানি ভাষায় রবীন্দ্রনাথের লেখা পড়ে বাংলাভাষা ও
প্রতি আকৃষ্ট হন ও অনেক কষ্ট করে বাংলা শেখেন। টোকিও বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনা
করেন সাহিত্য ও দর্শন নিয়ে। নোবেল বিজয়ী জার্মান লেখক হের্মেন হেসের
shidhartho উপন্যাসে ভারতীয় দর্শনের প্রভাব তার গবেষনার বিষয়বস্তু ছিল..একই
সময় তিনি জার্মানি ও বিশ্বভারতী থেকে আমন্ত্রণ পান, তার ভাষায় ....বাংলা
ভাষায় যারা কথা বলে তার প্রতি আমার টান বেশি তাই জার্মানি না যেয়ে আমি
বিশ্ব ভারতিতেই যায়...আমি বাঙালিপন্থী তো তাই....ডিলিট উপাধিধারী এই
রবীন্দ্রনাথের অসংখ বই জাপানিতে অনুবাদ করেছেন,নজরুলের "কান্ডারী হুশিয়ার"
প্রথম তিনি জাপানিতে অনুবাদ করে নজরুলের প্রেমেও পড়েন.,এছাড়া তিনি দীনবন্ধু
মিত্রের "নীলদর্পণ " জাপানি ভাষায় অনুবাদ করেছেন। পাশাপাশি জাপানি লেখক
ইয়াসুনারি কওয়া বাতার উপন্যাস "ইন্দ্রধনু" বাংলা ভাষায় অনুবাদ করেন। বাংলা
ভাষা নিয়ে তার অনেক কিছু করার শখ, কৌতুক করে বলেন জাপানে জন্মেছি বলে বাংলা
ভাষাটা ভালোভাবে শেখা হইনা, তাই বাংলার গভীরতা তা টের পাই কিন্তু ,ধরতে
পারিনা, বাংলাভাষায় অনেক ভালো সাহিত্য আছে যা অনুবাদের মাধমে সারা পৃথিবীতে
চড়িয়ে দিতে হবে, দীর্ঘ দিন ধরেই তিনি অসুস্থ ,নিজেই বলেন ..."আমার জীবনটা
আস্ত আস্তে শেষ হয়ে যাচ্ছে। তবুও আমি মরতে চায়না এই সুন্দর পৃথিবী ছেড়ে।
পরের জন্মে আমি বাঙালি হয়ে জন্মাব।"(সাক্ষাত্কার বিচিত্রা ২৩ আগস্ট,
১৯৯১ )
আমরা লজ্জিত
এই অসুস্থ শরীর নিয়েই তিনি বারবার কলকাতা ও বাংলাদেশ এ বেশ ক'বার যাতায়াত
করেছেন। উদ্দেশ্য পশ্চিম বঙ্গ ও বাংলাদেশে একটি করে জাপান বাংলাদেশ
সাংস্কৃতিক কেন্দ্র নির্মান করা। নিজের সর্বশ্ব ও বাংলাপ্রেমী জাপানিদের
কাছে তিনি অর্থ সাহায্য নেন এবং তা দিয়ে দু দেশে দুটো কেন্দ্র নির্মানের
স্বপ্ন দেখেন। কলকাতার কেন্দ্রটি যথাযথ নির্মিত হয় এবং বাংলাদেশের কেন্দ্র
নির্মানে তিনি তার পুত্রসম এক প্রবাসী বাংলাদেশী কে প্রায় ৬ কোটি টাকা দেন,
তার সরলতার সুযোগ নিয়ে এই প্রতারক পুরো টাকাটাই মেরে দেন,পত্রিকায় এটি
প্রকাশ হলে সারা পৃথিবী জুড়ে হইচই পড়ে যায়, জাপানের বাংলাদেশ লেখক সাংবাদিক
ফোরাম অনুষ্ঠান করে নিন্দা জানান, সকল জাপান প্রবাসীরা সেখানে ধিক্কার
জানান, দুতাবাস ও জতপযুক্ত বেবস্থা নেয়া হস্ছে বলে অনুষ্ঠানে উপস্থিত অধাপক
আজুমা'র সহধর্মিনী ,বাংলা ভাষার আর এক মহীয়সী অধাপক কে ইকো আজুমাকে আস্বস্থ
করেন, অনুষ্ঠানে কেইকো আজুমা বলেন..."আমি এই অনুষ্ঠানে এসে সকল প্রবাসীদের
কথা শুনে মনে হলে ..ওই প্রতারক একজন,কিন্তু আপনারা সবাই ওই প্রতারক কে ঘৃনা
করেন...আপনারা সবাই আমার পাশে দাঁড়ন ও আমার অসুস্থ স্বামীর শেষ স্বপ্ন "জাপান
বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র" নির্মানে আপনার সরকারকে অনুরোধ করেন"
আমরা লজ্জিত এই জন্য যে জীবদ্দশায় অধাপক কাযুও আজুমার স্বপ্নটি পূরণ হলনা
একজন প্রতারকের জন্য। সেই প্রতারকের জন্য আমাদের ঘৃনা .......
কাজী ইনসানুল হক
২৮ জুলাই ,2011
kaziensan@gmail.com
[প্রথমপাতা] |
|