প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

 

ভয়াবহ মধ্যপন্থা, আমরা কে কোথায়?

 


অজয় দাশ গুপ্ত
 

মধ্যপন্থার এখন আর কোনো সুযোগ নেই। দেশের যা অবস্থা বিশেষত রাজনীতির সেখানে চুপ থাকা নীরব থাকা কিংবা ধরি মাছ না ছুঁই মানে এক ধরনের পক্ষপাত। ভেবেছিলাম আমার অজানা অচেনা মৃত্যু-পরবর্তী নায়ক অভিজিৎ নিয়ে বলব, লিখব, সে ইচ্ছে দমন করতে হলো অভিজিতের রক্তের ওপর নর্দন কুর্দন করা মানুষদের চেহারা দেখে। একটা কথা কিছুতেই মাথায় ঢোকে না, কিভাবে এত পরিবর্তন বা বদলে যাওয়া সম্ভব। আগে আমরা ধরে নিতাম অমুসলিম মানেই আওয়ামী লীগ বা নৌকার, নয়তো কমিউনিস্ট পার্টির সমর্থক। গয়েশ্বর, সুনীল বাবুরা সে বদনাম ভেঙে হিন্দুদের জাতীয়তাবাদী চরিত্র উজ্জ্বল করেছিলেন। স্বগোত্রীয় বা সম্প্রদায় বলে যে ব্যাপার তার প্রতি বিন্দুমাত্র ভালোবাসা বা সহানুভূতি ব্যতিরেকে গৌতম, গয়েশ্বরদের পাল্টি খাওয়া ছিল রাজনৈতিক ভোজবাজি। যতদূর জানা যায়, পরিবহন খাতে মুজিব কোটধারীদের বাদে চাঁদাবাজি ও দৌরাত্ম্যে হার মানার কারণেই নাকি গয়েশ্বর রায়ের জন্ম। আওয়ামী বিএনপি কাইজা বা গদি দখলের বাইরে এদের কোনো ভূমিকা ছিল না। মাঝেমধ্যে দুর্গার সঙ্গে খালেদা জিয়ার তুলনা করতেন যদিও। এখন আমরা বদলে যাওয়ার নামে আমূল পরিবর্তিত দেশ ও সমাজে নতুন ‘রায়’দের দেখতে পাচ্ছি। যারা অভিজিৎ হত্যার পর রক্তের দাগ শুকানোর আগেই বিতর্কে নেমে পড়েছে। অনেকে বলেন, এসব কথা বা লেখায় কিছু যায় আসে না। ফলে এড়িয়ে যাওয়াই উচিত। আমি তা মনে করি না। মনে করি না এই কারণে, দেশে কোনো ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী বা ডাকাত চাপাতির আঘাতে খুন হয় না। কোনোদিন শুনেছেন, ব্যাংক লুটেরা কিংবা নারী ধর্ষণকারী কাউকে কুপিয়ে মেরেছে দুর্বৃত্ত বা সুবৃত্ত নামের কেউ? কারা খুন হচ্ছেন? প্রচলিতভাবে যাদের আমরা বলি অকাজের লোক, সাধারণ মানুষ বা আমজনতা যাদের ভাবে ভাবুক, আকামা বা কাগুজে পোকা, এরা কেন টার্গেট তবে? হুমায়ুন আজাদের জীবনে কাগজ কলম ছাড়া আর কি সম্পদ ছিল? কি ছিল রাজীবের পকেটে? ঘরে খুন হয়ে যাওয়া মৌলভী ফারুক বা সাগর-রুনিদের ঐশ্বর্য ছিল কথা। কাগজ আর কালির আখর। এরাই এখন জঙ্গিদের টার্গেট। এদের কলম কথার শক্তি আর বদলে দেয়ার ক্ষমতা না থাকলে অভিজিৎ কেন খুন হতে যাবে? ফলে প্রগতি ও প্রতিক্রিয়া উভয় দিকে তৎপর লেখক, সাংবাদিক বা বুদ্ধিবৃত্তির ওপর এখন কড়া নজর রাখা ফরজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরা কেবল ব্যক্তিস্বার্থে এমনটি করছেন, আমি তা মানি না।
আমার ঘনিষ্ঠ এক বন্ধু বলছিলেন কেউ কেউ নাকি জানের ভয়ে এখন অভিজিতের বিপক্ষে অথবা ধর্মের পক্ষে লিখছেন। এই খোঁড়া যুক্তিও অগ্রাহ্য। ফারাবীরা এত সহজে ভোলার পাত্র নয়। সেই কবে থেকে আমরা দেখছি তারা যাদের টার্গেট করে, মরার বিকল্প থাকে না তাদের। জাতির জনক, তাজউদ্দীন আহমেদ থেকে হুমায়ুন আজাদ বা অভিজিৎ, মরতেই হবে। অন্যদিকে ওদের জীবন তো বটেই গাদ্দারীও নিরাপদ। যে মাটি ও জাতির প্রতি চিরজীবন বিদ্বেষ আর ঘৃণা পুষে গোলাম আযম বিদায় নিলেন, সে মাটিতেই শায়িত আছেন তিনি। বহাল তবিয়তে বড় জানাজায়। এটা কেবল সংখ্যাগুরুদের বেলায় না। উপজাতি রাজাকার মানবেন্দ্র লারমাদের বেলায় সত্য। ত্রিদিব রায় বা এ জাতীয় বাঙালি বিদ্বেষীরা তাদের স্বপ্নের দেশ পাকিস্তানে দিব্যি আরামের জীবন কাটিয়ে আখেরে বাংলা মুলুকে ঠাঁই পেয়েছেন বা পেতে চেয়েছেন। অন্যদিকে সেই কবে কি এক কবিতা লেখার অপরাধে দেশান্তরী দাউদ হায়দার আর ফিরতে পারেন না। কত পানি গড়ালো, কত সরকার এল, গেল, স্বৈরতন্ত্র, সেনাতন্ত্র, গণতন্ত্র কত পরিবর্তন তারপরও দাউদ হায়দারের ফেরা হলো না। হলো না তসলিমারও। তসলিমা বা দাউদ হায়দার উভয়েই এখন বিস্মৃতপ্রায় বাংলাদেশি। উত্তেজনা বা মেরে ফেলা, কেটে ফেলার বাইরে তাদের কথা কেউ মনে রাখে? এ কোন দেশ আমাদের? ধর্ম বিরোধিতা ও ধর্ম নিয়ে কথা বলা একাকার হয়ে উঠল কেন? আলোচনা-সমালোচনা বা নিন্দা কি এক বিষয়? ওই যে বলছিলাম সুশীল নামের কুপুত্র কুকন্যারা, এদের অবদানে এই জগাখিচুড়ি আরো প্রকট হচ্ছে। প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক গেলেন বিলেতে। বিলেত এখন পানিভাত। সকালের ফ্লাইটে ঢাকা থেকে পত্রিকা, আনাজ, চিংড়ি মাছ যায় তো বিকেলের ফ্লাইটে আসে লন্ডনের কফি কিংবা প্রিয়জনের উপহার। আবুল ফজলের আমলে বিলেত ছিল অনেক দূরের দেশ। তথ্যপ্রযুক্তি টিভি মোবাইলহীন যুগে আবুল ফজল বিলেত ঘুরে এসে লিখেছিলেন বিলেত দেশটা মাটির। কী আশ্চর্য; সুন্দর অনুভূতি। মাটির দেশ বলে চিনিয়ে দেয়ার চেষ্টা, আর এই লোক আজকের উন্নত বিশ্বে লন্ডন ঘুরে এসে লেখেন ওখানকার মুসলমানদের নাকি থাকাই দায়। যদি দায় হয়ে থাকেও তার দায়িত্ব বা প্রতিকারের জন্য সে দেশে বাঙালির অভাব আছে? না বাঙালি সে দেশে দুর্বল?
বিলেতে সামাজিক অসন্তোষ আর দাঙ্গা-হাঙ্গামার খবরে দেখি পাকিদের ভয়ে সাদারা তটস্থ। বাঙালিও কম যায় না। এক হপ্তার শপিং আর সফরের নামে মিডিয়ার বদৌলতে ঘুরে আসা মানুষের কাণ্ড দেখুন, উসকে দেয়ার পরিবর্তে কিছুই জানে না এরা।
প্রসঙ্গে ফিরে আসি। অভিজিৎ রায়ের মর্মান্তিক মৃত্যুর পর যেসব অমুসলিম লেখক বা কথাজীবী লিখে-বলে ধর্মের নামে ফায়দা লোটার চেষ্টা করছে তাদের বিরুদ্ধে সচেতন হতে হবে। এটাও এক ধরনের উসকানি। অন্যদিকে অভিজিৎ ও তার আত্মদানের গৌরবকে সন্দেহযুক্ত করে তোলার ঘৃণ্য প্রয়াস। আমাদের অভয়টা অন্যত্র। যিনি নিজের কমিউনিস্ট পরিবারের নাম ভাঙিয়ে ধর্মের নামে অভিজিৎ হত্যার নেপথ্যচারীদের ক্ষোভ জায়েজের চেষ্টা করেছিলেন, জবাবটা তার বোনের কাছ থেকেই পাওয়া গেছে। এই বোনটি পিতার আদর্শের পক্ষে দাঁড়িয়ে সুবিধাভোগী ভ্রাতার বিরুদ্ধে লিখতে সময় নেয়নি। তারপরও বঙ্গদেশে কন্যার বদল পুত্র সন্তানের কদর আর আকাক্সক্ষার শেষ নেই।
মধ্যপন্থার দিন গড়ায়। যে যেখানে যেভাবে আছেন এক পক্ষে অবস্থান নিতে হবে। এবার আমরা হেরে গেলে বাংলাদেশ, মুক্তিযুদ্ধ, সন্তানদের ভবিষ্যৎ কিছুই থাকবে না। পাকিস্তানের মত সকালে বোমা বিকেলে গ্রেনেড রাতে লুণ্ঠনের দেশ হবে আমাদের। সেটা না চাইলে এখনই নিজের মত ও পথ বেছে নেয়া প্রয়োজন। একেই বলে ডু অর ডাই সিচুয়েশন। এখন যারা মধ্যপন্থী তারাও দেশ-জাতির শত্রু। কোন দিকে দাঁড়াব আমরা তার পরই নির্ভর করছে সামনের দিনগুলো।


সিডনি থেকে

 

 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action। 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ