[প্রথমপাতা]

 

 

 

আজম খান:পথিক ওগো পাগল ওগো ধরায় আসো

 

।। অজয় দাশগুপ্ত ।।

 

 

 

রবীন্দ্রনাথ, নজরুল এবং চল্লিশ দশকের গানের পর বাংলা গানে নতুন কিছুর সংযোজন? পাগল প্রতিভা ছাড়া অসম্ভব। ষাট দশক পর্যন্ত আধুনিক নামের যে ধারা সেও গীতি কবিতা অনুগামী। তারপর শহুরে বাঙ্গালির জন্য নতুন করে গান লেখার নামে শুরু হল পশ্চিমা গানের কথা ও সুরের অনুকরণ। জীবনমুখি নামে যে গান সে ও এক অলীক ধাঁধা। উচ্চগ্রামে বাঁধা এককথার বারংবার উচ্চারণে কি গান জীবনমুখি হয়ে যায়? তার চেয়ে তো ঢের ভালো মুকুন্দ দাস লালন শাহ কিংবা ভূপেন হাজারিকা। তারপর ও সময় আর যুগের হাত ধরে সব কিছুর মত গান ও চাইলো বাঁক ঘুরতে। এই ঘুরে দাঁড়ানোর ও সময় কাল থাকে। নির্ভর করে দেশ ও সমাজের বাস্তবতার ওপর । ভর করে মানুষের বদলে যাওয়া মনের গতিতে। আমাদের যৌবনে অর্থাৎ দেশ স্বাধীনের পর বাংলাদেশের গান যখন নতুন স্পন্দনের আশাব উন্মুখ ঠিক তখন ই মঞে আর্বিভূত হয়েছিলেন আধা পাগলা গোছের এক বোহিমিয়ান গায়ক। পোশাকী অর্থে না তিনি গায়ক না তাঁর ছিল তেমন কোন পরিচয়।

মুক্ত বাংলাদেশে তখন কত সমস্যা। কত ধরণের টানা পোড়েন। এই ঝন্জার ভেতর ও তিনি নব জীবনের স্বপ্নে নতুন ধরণের গান নিয়ে হাজির হলেন। না ছিল মিডিয়া না খোলা ছিল জানালা। যেন নিজ হাতেই খুলে দিলেন গানের এক উদার খিড়কি। টেবিল চাপড়ে বই খাতা বাজিয়ে তরুন তরুনীদের মুখে মুখে উঠে এলো ওরে সালেকা ওরে মালেকা। কেউ বললো হিপি কারো মতে পশ্চিমের ব্যর্থ অনুকরণ কারো মনে হল সাময়িক। কিন্তু সমালোচনা আর সন্দেহ জাল ছিন্ন করে একের পর এক গান ছুটতে লাগলো গোলার মত। আলাল ও দুলালের মত সাধারন কথার গান পরিবেশনা আর গায়কীর জন্য মানুষের মনে মনে ছড়িয়ে পড়ল। যিনি গাইছেন তাঁর না আছে চাল না চুলো। গাইতে গাইতে মঞের কোথায় চলে যাচ্ছেন কোথায় থাকছেন নিজে ও জানেন না। কিন্তু অজান্তে তৈরী হয়ে যাচ্ছে আরেক ঘরানা। গলায় অর্থাৎ কন্ঠে কিছু একটা ছিল। আমি যাকে বলি ঘোর লাগানো। আমার তখন চাকরী খোঁজার বয়স। কিছু ভালো না লাগার সে বয়সে আসি আসি বলে তুমি আর এলে না এমন একটি গানের প্রভাব ছিল প্রয়োজনীয়। মন খারাপ করা একদল যুবক রাস্তা ধরে যেতে যেতে গাইছি' পূর্নিমায় চাঁদের আলো নীল গগনে... আহা আজম খান কখন যে আপনি আমাদের সন্দিগ্ধ মনের ভেতর বাসা বাঁধলেন আপনি নিজে ও টের পান নি।

আমাদের পড়াশুনো বা গানের জগত অবিস্তৃত কিছু নয়। গোল হয়ে বসে ওয়াহিদুল হকের কথা শুনি। জাতীয় রবীন্দ্রসঙ্গীত সম্মেলনের প্রস্তুতি পর্বে কাজ করি কিন্তু একা হয়ে গেলে আজম খানের গান শুনতে ভালোবাসি। মুক্তিযোদ্ধা গায়কের দেশাত্মবোধ না থাকলে রেল লাইনের ধারে গানটি অমন করে গাওয়া যায় না। সব মিলিয়ে আজম খান পর্ব আমাদের জীবন ও যৌবনের এক অপূর্ব জগত। যা ছাড়া অতীত অসম্পুর্ন। প্রথা বিরোধী প্রতিষ্ঠান বিরোধী সব মিলিয়ে প্রচার বিমুখ এই মানুষটি আমাদের দেশের নাড়ীর স্পন্দন বুঝতেন। তাঁর গানে টের পাওয়া যাতো মানুষ কি জন্য কি চায়।

আমার রুচি বা গান বিষয়ক ভাবনায় কারো সন্দেহ থাকলে কিছু করার নেই। এটা মানতেই হবে চাইলেই আজম খান হয় না বা হ ওয়া যায় না। কবীর সুমন বলছেন তাঁকে নিয়ে গবেষণা হওয়া প্রয়োজন। আমরা ও তাই চাই। বাংলাদেশের গানে অনন্য আসাধারণ পাগল প্রতিভা আজম খানের জন্মদিনে তাঁর রেখে যাওয়া র্কীতির বিস্তার আর সহজলভ্যতা চাই। আসলেই চাই। মুক্তিযুদ্ধের সমার্থক এই গায়কের প্রতি শ্রদ্ধা আর ভালোবাসায় প্রমান হোক আমরা কাউকে ভুলি না । আমাদের নিজস্বতা আর আপন ভূবন নির্মানের কারিগর খুব কম। অন্যের গান নিজের করে গাওয়া আর নিজের গান নিজের করে তোলার তফাৎ অনেক বড়। তিনি নিজেই নিজের পরিচয়। ক' জনার সে স্পর্ধা বা সাহস আছে?

আজম খান আপনাকে প্রনাম। 


 

 

WARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

 

 

[প্রথমপাতা]

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ