প্রথমপাতা  

সাম্প্রতিক সংবাদ 

 স্বদেশ

আন্তর্জাতিক

বাংলাদেশ কমিউনিটি

লাইফ স্টাইল

এক্সক্লুসিভ

বিনোদন

স্বাস্থ্য

বর্তমানের কথামালা

 শিল্প-সাহিত্য

 প্রবাসপঞ্জী 

আর্কাইভ

যোগাযোগ

 

 

 

 

ধারাবাহিক প্রেমের গল্পঃ

শ্যাওলা-কাঁটা-বেড়া (পর্বঃ৮)

 

 

 

শাশ্বত স্বপন

 

পর্বঃ৮

চারদিকে অন্ধকার। ঝি ঝি পোকার ডাকে রাত যেন আরো গভীর হচ্ছে, মাঝে মাঝে শিয়ালের হুাক্কাহুয়া ডাক ইন্দ্রানীর কম্পমান হৃদয়ে বিদ্যুৎ চমকের মত ঝিলিক দিয়ে উঠে। বাদুর পাখি কলাগাছের পাতায় পাতায় উড়ে বেড়াচ্ছে। সে শুভকে শক্ত করে ধরে আছে। খুবই ক্লান্ত দু’জনে। দূরে কোন বাজার কিংবা বাড়ি থেকে গ্রামোফোনে পুরানো দিনের ভারতীয় বাংলা গান ভেসে আছে--‘তুমি আর আমি শুধু জীবনের এই খেলাঘর...।’ একটা বাড়ীর সামনে এসে শুভ থামল। এটাই বীথিদের বাড়ি। রাতের বেলা ভালভাবে বুঝাও যাচ্ছে না। সে যখন ৫ম শ্রেণির ছাত্র. তখন সে শেষবার এসেছিল। ভালভাবে পর্যবেক্ষণ করল বাড়িটা। দু’টি তাল গাছ দেখে সে নিশ্চিন্ত হল। কাছে একটা পুকুর। দু’জনে হাত-মুখ ধুয়ে নিল। বাহ্যিক ক্লান্তি কিছুটা প্রশমিত হলেও আভ্যন্তরিন ক্লান্তি আরো বেড়ে গেল। বাড়ির উঠানে গিয়ে দাঁড়াতেই একটা বাচ্চাকে দরজায় দেখতে পেল। বাচ্চাটি উঠানে কিছু একটা দেখে দরজা থেকে ঘরে চলে গেল। মনে হয়, দরজায় দাঁড়িয়ে প্রশ্রাব করতে চেয়েছিল। এখন কয়টা বাজে? কারো হাতেই ঘড়ি নেই। এক মহিলা বাচ্চাটিকে কোলে নিয়ে বাইরে এল। উঠানে দু’টি মুর্তিকে দেখে থমকে দাঁড়াল। হারিকেনটা উঁচু করে ধরতেই চিনতে পারল।

--শুভ, তুই! এই রাতে! মেয়েটি কে? আরে ইন্দ্রানী! সর্বনাশ আমি বুঝেছি। বাড়িতে শুনেছিলাম...। আয়, ঘরে আয়--

--আপা, দুলাভাই কোথায়?

-- বাড়িতে নেই, গতকাল ঢাকা চলে গেছে।

-- তোর শ্বশুর-শ্বাশুড়ী কোথায়?

-- ঐ ঘরে, এতক্ষণে ঘুমিয়ে গেছে।

বাচ্চাটি শুভকে চিনতে পেরেছে। সে ইন্দ্রানীর দিকে তাকাচ্ছে। ইন্দ্রানী বাচ্চাটির দিকে তাকালেই সে লজ্জা পায়।

-- জিতু, কেমন আছ?

জিতু লজ্জা পাচ্ছে। মাকে জড়িয়ে ধরে মিটিমিটি হাসছে। মনে হয়, সে সব বুঝতে পেরেছে।

-- তোরা কখন পালিয়েছিস?

-- বিকালের দিকে।

-- কেউ দেখেছে? কেউ জানে?

--সুজন ছাড়া কেউ দেখেনি, কেউ জানেও না। অবশ্য এতক্ষণে কারো জানতে বাকী নাই।

--এখানে আসতে এত রাত হল কেন? অন্য কোথাও গিয়েছিলি?

-- বাড়ি থেকে দক্ষিণের ক্ষেত বরাবর হেঁটে সমাসপুর আসি। তারপর মাওয়া হয়ে ঘোড়দৌড়। দেখি, পদ্মার ভয়াবহ অবস্থা। ভেবেছিলাম তোরাও বোধহয় ভাঙ্গনে মাটি ছাড়া হয়েছিস।

--হতে আর বাকী নেই। এ বাড়ী থেকে পদ্মা ২০ গজ দূরে হবে। তোর দুলাভাই বলেছে, পদ্মায় ভিটা চলে গেলে স্বপরিবারে ঢাকায় চলে যাব।

--মালির অংক রিক্সায় নেমে এতদূর হেঁটে এসেছি। খুব টায়ার্ড আপা।

-- কি সর্বনাশের কাজ করেছিস। শ্বশুর বড় পাজী ধরনের মানুষ। সমাজের মাতবর। এবার হজ্ব করে এসেছে। তোদের কথা শুনলে, রাগে কিনা, কে জানে? শ্বাশুরী শুনলে বলবে, আল্লারে তোমার ভাই মাইয়া ভাগাইয়া আনছে!

--আপা, ইন্দ্রানীর বাবাও সাংঘাতিক। ওর ভাই ম্যাজিস্ট্রেট--তা তো তুই জানিস। বুঝতেই পারছিস, পুলিশের চেষ্টার কোন ত্রুটি হবে না। আমরা ভোরে ঢাকা রওনা দেব, তারপর কোথায় যাব, তোকে বলা যাবে না। আজ রাতটা কোন মতে কাটাতে দে--।

-- সত্যি করে বলতো, তোরা কি বিয়ে করেছিস?

-- বিয়ে তো করেছি সেই কবে। যখন দু’জন দু’জনকে মন দিযেছি, তখনি বিয়ে করেছি।

--আহা! কাজী অফিসে গিয়ে বিয়ে-রেজিস্ট্রেশন করেছিস কিনা?

-- মাথা খারাপ, বিয়ে-রেজিস্ট্রেশন করার সময় পেলাম কোথায়?

-- তোরা কি একসাথে ঘুমাবি?

-- না, ও ঘরে থাকবে, আমি বাইরে থাকব।

-- রাগ করছিস কেন? কবুল না করে একসাথে এক বিছানায় ঘুমানো মহাপাপ।

--ধার্মিক হয়ে গেছিস মনে হচ্ছে। দেড় তলায় কামাল ভাইকে নিয়ে কি করেছিলি , মনে আছে? এখন হাজী হয়ে গেছ। কামাল ভাই রাজা কনডম কিনতে আমাকে দোকানে পাঠিয়েছিল। আমি সেই বয়সে বুঝিনি। পাঁচটা পুটকা কিনে এনেছিলাম। চারটা সে আমাকে দিয়েছিল। আমি কি খুশী হয়েছিলাম পুটকা পেয়ে। বেলুন বানিয়ে সারাদিন খেলেছি। বলি, আরেকটা পুটকা কামাল ভাই দেড় তলায় নিয়ে কি করেছিল?

--চুপ কর।

--থাকতে দিলে দিবি, নইলে অন্ধকারে যে দিকে দু’চোখ যায়, চলে যাব।

-- আর যেতে হবে না। পাতিলে যা আছে, খেয়ে নে। আমি পাশের রুমে তোদের জন্য বিছানা ঠিক করে আসি।

পাতিলে যা ছিল--তা দুজনে খেয়ে নিল। একজন আরেক জনকে খাইয়ে দিয়েছে। জিতু এ দৃশ্য দেখে হাসতে লাগল। দৌড়ে সে মার কাছে চলে গেল।

--মা, মা, মামা আর উনি খোকা-খুকী।

--উনি নয় মামী। কিরে ইন্দ্রানী কেমন লাগছে?

--আপা ভয় করছে খুব।

--পালিয়ে আসার সময় করেনি?

--করেছে কিন্তু ওকে ছাড়া আমি ...

-- থাক, আর প্রেম চর্চা করতে হবে না। এবার বাসর চর্চা ও স্বর্গচর্চা করগে। যাও-

দোতলা ঘর। সম্মূখে বারান্দা। দু’পাশে দু’টি কক্ষ। এক পাশের একটি বিছানা সাজানো-গোছানো। খাট সংলগ্ন টেবিলের উপর হারিকেন জ্বলছে। শুভ দরজার খিল আটকে দিয়ে ইন্দ্রানীকে জড়িয়ে ধরল। কোন বাঁধা দিল না ইন্দ্রানী। এ রকম মুহুর্ত নিয়েই তারা সারা জীবন বেঁচে থাকতে চায়।

--শুভ, আমার কেমন জানি ভয় করছে।

--কি আর ভয় করবে? হয় বাঁচব, নয়ত মরব, তবুও তোমাকে-

--কাল কোথায় যাবে?

--আপতত ঢাকা। তারপর সোজা খাগড়াছড়ি মোহন অথবা সানুর বাসায়।

--মোহন, সানু কে?

--আমার peb-friend

--আগে ওকে জানিয়েছ?

--সব জানে ওরা। এখন ঘুমাওতো। আমি তোমার বুকে মাথা রাখি।

মাথার কাছে হারিকেন জ্বলছে। শুভ হারিকেনের আলোটা আরো বাড়াল। তাকিয়ে রইল ইন্দ্রানীর মুখের দিকে। শুভ দেখল, এ যেন সমুদ্রে ভাসমান এক দ্বীপ কন্যা। কখনও জাগে, আবার কখনও তলিয়ে যায়। যখন জাগে, তখন ময়লা-আবর্জনা দ্বীপটিতে ভরে থাকে। নানা জাতের পাখিরা বুকে এসে বসে। শুভ সব কিছু পরিস্কার করার জন্য ইন্দ্রানীর বুকে হঠাৎ হাত দিয়ে বসে। ইন্দ্রানী হাত দু’টি নিজের মুষ্টিতে আটকে ফেলে। শুভর ঘোর কাটে। হাত দিয়ে মুখে আর মাথায় হাত বুলাতে থাকে…।

 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ