|
স্তন ক্যান্সার উজিয়ে বাঁচুন
ডা. স্বপন কুমার
মন্ডল
সহকারী অধ্যাপক, শেখ সায়েরা খাতুন মেডিক্যাল কলেজ
[ ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সারে নারীদের মৃত্যুর হার সবচেয়ে বেশি। পৃথিবীর সব
ঘাতক ব্যাধির মধ্যে স্তন ক্যান্সার বেশি মারাত্মক। ক্যান্সারজনিত মৃত্যুর
কারণ হিসেবে সারাবিশ্বে স্তন ক্যান্সারের স্থান দ্বিতীয়, শীর্ষে রয়েছে
ফুসফুসের ক্যান্সার। ...বিশ্বের মহিলারা সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হন স্তনের
ক্যান্সারে। আক্রান্তের হার বছরে প্রতি ১ লাখ মহিলার মধ্যে ৮০ জন। সাধারণত
৫০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে এই ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি।
আশ্চর্যজনক ব্যাপার হচ্ছে এতদিন এই ক্যান্সারের ব্যাপারে নারীদের সচেতন
করার জোরটা ছিল বেশি, কিন্তু এখন পুরুষদেরও সচেতন করার জোর চেষ্টা চালানো
হচ্ছে। কারণ, পুরুষদের মধ্যেও স্তন ক্যান্সার দেখা দিতে পারে ]
স্তন ক্যান্সার কী
ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার একধরনের ক্যান্সার যা ব্রেস্ট টিস্যু থেকে শুরু
হয়।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ
ব্রেস্টের আকৃতির পরিবর্তন, ব্রেস্টে এবং বগলে গোটা বা চাকা হওয়া,
ব্রেস্টের চামড়ার রঙ ও নিপলের পরিবর্তন, ব্রেস্টের উপরের চামড়া কমলালেবুর
খোসার মতো কুঁচকে যাওয়া এবং টোল পড়া, ব্রেস্টের নিপল থেকে রস নির্গত হতে
থাকা, নিপলের চারপাশে ফুসকুড়ি দেখা দেওয়া, নিপল ধীরে ধীরে ভিতরের দিকে ঢুকে
যাওয়া।
স্তন ক্যান্সারের কারণ কী
স্তন ক্যান্সার সম্পর্কে বিশেষজ্ঞরা জানান, স্তন ক্যান্সারের নির্দিষ্ট
কোনও কারণ নেই। তবে পরিবারে মা, খালা, ফুপু অথবা দাদি-নানির ব্রেস্ট
ক্যান্সার থাকলে পরবর্তী প্রজšে§র এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে।
এছাড়াও খুব অল্প বয়সে মিনিসট্রেশন হওয়া, বেশি বয়সে মেনোপজে গেলে, শিশু না
হলে অথবা শিশুকে বুকের দুধ না দিলে, ধূমপান করলে এবং শরীরে অতিরিক্ত মেদ
জমলে ব্রেস্ট ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকে বলে উল্লেখ করেন তারা।
নিজে যেভাবে পরীক্ষা করতে পারেন
হাতের চার আঙুল দিয়ে ঘড়ির কাঁটা চক্রাকারে ঘোরার মতো ব্রেস্ট পরীক্ষা করতে
পারেন যে-কোনও চাকা বা মাংসপি- অনুভূত হয় কি না। লম্বালম্বীভাবেও হাতের ৪
আঙুল দিয়ে এই পরীক্ষাটি করতে পারেন। দুই ব্রেস্টের মাঝখানেও ৪ আঙুল দিয়ে এই
পরীক্ষাগুলো করতে হবে। এরপর নিপল চেপে দেখতে হবে রক্ত বা রস জাতীয় কিছু
নির্গত হয় কি না। এ ধরনের কিছু নির্গত হলে দেরি না করে সঙ্গে সঙ্গে
ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।
ব্রেস্ট ক্যান্সারের যে-কোনও লক্ষণ দেখা মাত্রই দ্রুত পরবর্তী পরীক্ষাগুলো
করিয়ে নিতে হবে এবং উপযুক্ত ট্রিটমেন্ট শুরু করতে হবে। মনে রাখবেন,
প্রাথমিকপর্যায়ে ব্রেস্ট ক্যান্সারের চিকিৎসা শুরু করা গেলে সম্পূর্ণ ভালো
হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
স্তন ক্যান্সার হলে কী কী পরীক্ষা-নিরীক্ষা দরকার?
রোগীর লক্ষণ ও বংশগত ইতিহাস জানার সঙ্গে সঙ্গে শারীরিক পরীক্ষার মধ্যে উভয়
স্তন, বগল, ঘাড় ও বুকের আশপাশে পরীক্ষা করা। এ ছাড়া ল্যাবরেটরিতে মেমোগ্রাফি,
এমআরআই, আল্ট্রাসনোগ্রাফি, বায়োপসি, এফএনএসি, সিটিস্ক্যান, লিম্ফনোড বায়োপসি,
ক্যান্সার মারকার ইত্যাদি।
স্তন ক্যান্সার রোগীর চিকিৎসা
স্তন ক্যান্সারের চিকিৎসা নির্ভর করে রোগীর লক্ষণ, ক্যান্সারের প্রকৃতি ও
কোন পর্যায়ে আছে তার ওপর। সাধারণভাবে ক্যান্সারের চিকিৎসাগুলো হচ্ছে :
ক্যামোথেরাপি (যার মাধ্যমে ক্যান্সার কোষগুলো মেরে দেওয়া হয়), রেডিয়েশন
থেরাপি (এর মাধ্যমে ক্যান্সার টিস্যুগুলো ধ্বংস করা হয়), সার্জারি করে
লাম্ফ কেটে ফেলা হয়, মাসটেকটমি করে স্তনের কিছু অংশ অথবা সম্পূর্ণ স্তন কেটে
বাদ দেওয়া হয়, হরমোন থেরাপির মাধ্যমেও ক্যান্সার বৃদ্ধিতে সহায়ক হরমোনকে
নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
স্তন ক্যান্সার প্রতিরোধের উপায়
যদিও বংশগত বা পারিবারিক ইতিহাস বা জিনের প্রভাব থেকে রোগীকে প্রতিরোধ করা
সম্ভব নয় তবুও ভালো পুষ্টিকর খাদ্য এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তনে স্তন
ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে আনা সম্ভব। স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক অব¯ায় ধরা পড়লে
তা সহজেই চিকিৎসা করা সম্ভব। এজন্য নিয়মিত নিজে নিজে স্তন পরীক্ষা করা।
ডাক্তার দ্বারা স্তন পরীক্ষা করানো। মেমোগ্রাফি করে স্তন টিউমার শনাক্ত করা।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ মনে করেন, যেসব মহিলার বয়স ২০ থেকে ৩০ তারা প্রতিমাসে
মাসিক শেষ হওয়ার পর নিজেই তার নিজের স্তন পরীক্ষা করবেন। যাদের বয়স ৩০ থেকে
৩৯ বছর তারা প্রতি ৩ বছর পরপর চিকিৎসক দ্বারা স্তন পরীক্ষা করাবেন। ৪০ থেকে
বেশি বয়সী মহিলাদের জন্য প্রতি ১ বছর পরপর মেমোগ্রাফি করা উচিত। এছাড়া ৪০
বছরের ঊর্ধ্ব মহিলাদের ক্ষেত্রে প্রতিবছর অন্তত একবার চিকিৎসকের দ্বারা
পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা উচিত।
WARNING:
Any unauthorized use
or reproduction of
'Community' content is
strictly prohibited
and constitutes
copyright infringement
liable to legal
action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|