[প্রথমপাতা]

 

 

 

জলবসন্ত টিকাই সমাধান

 

- ডা. স্বপন কুমার মন্ডল -

 

 

ঋতুপরিবর্তনে কোন না কোন রোগ আসবেই।সেই হিসাবে বসন্তকালও নিয়ে আসে কিছু রোগবালাই। এর মধ্যে অন্যতম হলো জলবসন্ত বা চিকেন পক্স। এই সময়েই এর প্রাদুর্ভাব যাবে বেড়ে। দীর্ঘদিন থেকে ধারনা করা হত, জলবসন্তের কোন চিকিৎসা নেই। শুধু উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা দিতে হয়। বর্তমানে নতুন নতুন অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ আবিষ্কারের ফলে আধুনিক বিশ্বে এমনকি বাংলাদেশেও অনেক চিকিৎসক সাফল্যের সঙ্গে এই রোগের চিকিৎসা করে আসছেন।


জলবসন্ত কী


এটি ভয়াবহ রকমের ছোঁয়াচে। অসুখটি সাধারণভাবে নিরীহ মেজাজের। কিন্তু নবজাতক ও বয়স্ক মানুষের জীবনসংহারক হয়ে উঠতে পারে। ভ্যারিসেলা জোস্টার নামক ভাইরাসের সংক্রমণ থেকে রোগের সৃষ্টি। কেউ একবার এ রোগে আক্রান্ত হলে প্রায় সারা জীবনের জন্য প্রাকৃতিকভাবে রোগ-প্রতিরোধ শক্তি লাভ করে।

উপসর্গ


সাধারণত আক্রান্ত কোনো ব্যক্তির সংষ্পর্শে এলে ২-৩ সপ্তাহ পরে এই রোগের লক্ষন দেখা দেয়। প্রথম দিকে হঠাৎ করেই জ্বর আসে, পিঠের পিছনের দিকে ব্যথা হয় এবং গা ম্যাজ ম্যাজ করে। জর আসার ১ অথবা ২ দিন পর প্রথমে শরীরের উপরের অংশে এবং পরে মুখ ও হাতে পায়ে প্রথমে ছোট ঘামাচির মতো ফুসকুড়ি দেখা যায়। এরপর সারা শরীরে ছোট ছোট পানি যুক্ত লালচে গোটা উঠে। সাথে সাথে জ্বর, মাথা ব্যথা, দূর্বলতা ও শরীরে ব্যথা দেখা দেয়। এই জ্বর ও গায়ে ব্যথা শিশুদের চেয়ে বড়দের বেলায় আরো বেশি হয়। তবে এটির সঙ্গে থাকা চুলকানিই মূলত অস্বস্তির কারণ হয়ে দাড়ায়। চুলকাতে গিয়ে গোটা ফেটে গিয়ে এর অভ্যন্তরীন লিকুইড চারিদিকে ছড়িয়ে পরে সংক্রমন বাড়ায়। ফুসকুড়ি ২- ১ দিনের মধ্যেই পেকে যায় বা এতে পুঁজ জমে। অল্প কিছু দিনেই এটা শুকিয়ে চল্টা পড়ে। এই রোগ হলে শরীর ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ে। খাওয়ার রুচি একেবারে কমে যায়। সাধারণত টীকা দেয়া হয়েনি এরকম বাচ্চাদের এই রোগ হয়।


চিকিৎসা

 

এই রোগের প্রাথমিক চিকিৎসা হলো, ফুসকুড়ি না শুকানো পর্যন্ত রোগিকে আলাদা করে রাখা এবং উপসর্গ ভিত্তিক চিকিৎসা দেওয়া, যেমন জ্ব, চুলকানি, ও ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের প্রতিরোধ করা। পাশাপাশি অ্যান্টিভাইরাল এজেন্ট অ্যাসাইক্লোভির জাতীয় ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা যায়।জলবসরন্তর কার্যকর টিকা রয়েছে। দামি হলেও এটি নিরাপদ। ১২ থেকে ১৮ মাস বয়সের মধ্যে জলবসন্ত ভ্যাকসিন শিশুকে দেওয়া হয়। ১২ বছর বয়স পর্যন্ত এক ডোজ, তার বেশি বয়সে দুই মাস অন্তর পরপর দুই ডোজ ভ্যাকসিন। সংস্পর্শ ঘটার ৭২ ঘণ্টার মধ্যে ভ্যাকসিন দেওয়া হলে ৮০ শতাংশ ক্ষেত্রে সুফল মেলে।


জটিলতা


এ রোগে আক্রান্ত হলে জটিলতা হিসাবে ত্বকের ইনফেকশন, স্কারলেট জ্বর, নিউমোনিয়া, হাড়ের সঙক্রমণ, এনকেফেলাইটিস, গ্লুমেরুলোনেফ্রাইটিস সহ ইত্যাদি রোগ হতে পারে। সবচেয়ে বড় কথা হল, চিকেন পক্স ভালো হয়ে গেলেও তা মেরুদণ্ডের স্নায়ু উৎপত্তিস্থলে রয়ে যায়, যা পরবর্তীকালে হার্পিস জোস্টার নামক বেদনা দায়ক ফুসকুড়ি হয়ে দেখা দিতে পারে।

দাগ মোচন কীভাবে করবেন

 

নিয়মিত ভিটামিন ই ওয়েল এবং এলোভেরা জেল (ঘৃতকুমারি) লাগাতে পারেন। সিলিকন যুক্ত যে কোন ক্রীম দাগে লাগাতে পারেন। ওট এর পেস্ট (গরম পানিতে ওট ভিজিয়ে রেখে ডলে নিন) লাগাতে পারেন। ডাবের পানি , মধুও দাগ নির্মূলে সহায়তা করে।

 

প্রতিরোধঃ

 

প্রথম ডোজটি বাচ্চারাদেরকে ১২-১৮ মাসের মধ্যে দিন। ২য় ডোজটি ৫-৬ বছরে দিতে হয়। কারো যদি টীকা দেওয়া না থাকে এবং চিকেন পক্স হয়, লক্ষন প্রকাশের ৩ দিনের মধ্যে টীকা দিয়ে দিতে পারেন, রোগের প্রকোপ কমে যাবে। কারো একবার জলবসন্ত হয়ে গেলে আর টীকার প্রয়োজন নেই।

 

সতর্কতাঃ

গর্ভাবস্থার প্রথম ছয় মাসে জলবসন্ত বা চিকেন পক্স হলে গর্ভপাতের আশঙ্কা থাকে। তাছাড়া বাচ্চার জন্মগত ত্রুটি ও দেখা দিতে পারে। তাছাড়া এই সময়ে ওষুধও খাওয়া যায় না। সুতরাং ডাক্তার এর নিবির তত্ত্বাবধানে থাকা উচিত। বাচ্চাদের জলবসস্ত হলে কখনোই এসপিরিন খাওয়াবেন না। এটি থেকে অন্য একটি রোগ Reye's Syndrome এর উদ্ভব হতে পারে। এই রোগ থেকে শিশুর লিভার, ব্রেন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ