[প্রথমপাতা]

 

 

 

শিশুদের নিউমোনিয়াঃ প্রয়োজন একটু বাড়তি সতর্কতা

  

ডা. স্বপন কুমার মন্ডল

 

 

বাংলাদেশে গত কয়েকদিন ধরে যে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে তার তীব্রতা এখন ঢাকার রাস্তায় নামলেই দেখা যায়। গত কয়েকদিন ধরেই দেশের বিভিন্ন জায়গায় তাপমাত্রা ৬ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে। বিশেষ করে উত্তরাঞ্চলের কয়েকটি জেলায় তাপমাত্রা তিন ডিগ্রিতে নেমে এসেছে। শীতের কারণে দিনাজপুর, গাইবান্ধা, ঠাকুরগাঁ, রংপুর, কুড়িগ্রামসহ উত্তর জনপথ, ময়মনসিংহ, খুলনা, চট্রগ্রামসহ সারা বাংলাদেশে বিভিন্ন হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু ডায়রিয়া, নিউমোনিয়া, জ্বর, মাথা ব্যথাসহ রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শীত এলে নিউমোনিয়ার প্রকোপ বেড়ে যায়। নিউমোনিয়া শিশুদের জন্য একটি আতঙ্কের নাম। বৃদ্ধ রোগিরাও এই রোগের বেশি আক্রান্ত হয়। যেসব শিশুর বয়স ৫ বছরের নীচে, তাদের মধ্যে নিউমোনিয়ায় কারণে মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশী। তবে একটু সচেতন হলেই এই বিপদজনক অসুখ থেকে শিশুকে নিরাপদ রাখা যায় । শিশুরা যাতে ঠাণ্ডায় আক্রান্ত না হয় সেদিকে পরিবারের খেয়াল রাখতে হবে, বাচ্চাদের দিকে বাড়তি নজর দিতে হবে।কারণ শিশুদের শরীরের প্রতিরোধক্ষমতা বড়দের তুলনায় কম।

নিউমোনিয়াঃ

নিউমোনিয়া হলো ফুসফুসের ইনফেকশনজনিত একটি রোগ। এটি সাধারণতঃ ভাইরাস বা ব্যাকটেরিয়া দ্বারা হয়ে থাকে। পরিবেশগত ও অন্যান্য কারণে শিশুদের নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা বেড়ে যায়।

উপসর্গঃ

এই রোগে আক্রান্ত হলে সাধারণতঃ শুরুতে কাশি ও জ্বর হয়। সর্দিকাশি, জ্বরের সঙ্গে শিশু যদি খুব দ্রুত নিঃশ্বাস নিতে শুরু করে, দুই বছরের কম বয়সের শিশু যদি প্রতি মিনিটে ৫০ বারের বেশি নিঃশ্বাস নেয়, দুই বছরের বেশি বয়সের শিশু যদি প্রতি মিনিটে ৪০ বারের বেশি নিঃশ্বাস নেয়, শান্ত থাকা অবস্থায় শিশুর যদি নিঃশ্বাস নিতে কষ্ট হয়, নিঃশ্বাস নিতে গেলে ঘড়ঘড় আওয়াজ হয় এবং সেই সাথে কাশি, বুকে ব্যথা, অল্প মাত্রা থেকে তীব্র জ্ব,অসুখের মাত্রা বেড়ে গেলে বুক দেবে যায় এবং শিশু নেতিয়ে পড়ে।

পরীক্ষাঃ

সাধারণত লক্ষণ দেখেই এই রোগ ধরা যায়। শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত কি না লক্ষণগুলো ভালো করে বুঝা উচিত। তবে বুকের এক্স-রে নিউমোনিয়া জেনে এবং রক্ত পরীক্ষার দ্বারা ব্যাকটেরিয়া নাকি ভাইরাসের অাক্রমণে হয়েছে--তা বুঝে যায়।

চিকিৎসাঃ

স্বল্প মাত্রায় আক্রান্ত শিশুদের বাড়ীতেই চিকিৎসা করা সম্ভব। এ জন্য চিকিৎসকের কাছ থেকে সঠিক পরামর্শ নিতে হবে। প্রয়োজন হলে শিশুকে স্টিম ভেপার দেওয়া যেতে পারে; কাফ মেডিসিনও নিতে হতে পারে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী। তবে রোগের মাত্রা বেশী হলে হাসপাতালে ভর্তি রেখে শিশুর চিকিৎসা করতে হবে।


প্রতিরোধঃ

একটু সতর্ক হলেই শিশুকে সারা বছর, বিশেষ করে শীতকালে নিউমোনিয়া থেকে রক্ষা করা যায়। সঠিক নিয়মে প্রয়োজন মত হাত ধোয়ার অভ্যাস করতে হবে। মনে রাখতে হবে, ময়লা হাতের মাধ্যমেও নিউমোনিয়ার জীবাণু ছড়ায়।পুষ্টি, পরিচ্ছন্নতা, পরিবেশ--সব দিকেই বিশেষ খেয়াল রাখা দরকার।

পুষ্টিঃ

মায়ের দুধের কোনো বিকল্প নেই। অপুষ্টির হাত থেকে বাঁচতে শাকসবজি, তাজা ফল, টাটকা মাছ খাওয়ার অভ্যাস করতে হবে। প্রয়োজন হলে চিকিৎসকের পরামর্শ মত ভিটামিন সিরাপও খাওয়ানো যেতে পারে। সাম্প্রতিক গবেষণায় বলা হচ্ছে, যে সব খাবারে যথেষ্ট পরিমাণে জিংক থাকে, তা খাওয়ানো উচিত। শিশুকে খাওয়ানো যেতে পারে কচি মুরগির মাংস, ডিম, পনির, মসুর ডাল, শিম ইত্যাদি।

পরিবেশঃ

অনেক মানুষের ভিড়ে, অকারণে হাসপাতালে শিশুকে না নিয়ে যাওয়াই ভালো। পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখুন শিশুদের। ধূমপান করা হয় এমন পরিবেশে নেওয়া যাবে না, এতে শিশুদের ফুসফুসে ইনফেকশন হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।

ভ্যাকসিন

শিশুর রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তুলতে প্রথম থেকেই ভালোভাবে নজর দেওয়া প্রয়োজন।বারবার নিউমোনিয়া হলে শিশুর মেনিনজাইটিস, অস্টিওম্যালাইটিস, আর্থাইটিস হওয়ার আশঙ্কা থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে, ভ্যাকসিন ব্যবহারে শিশুদের নিউমোনিয়া আগের চেয়ে বেশ কমেছে।মিজলস ভ্যাকসিন, হেমোফেলাস ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন, নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন, ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নিলে ভালো। এর মধ্যে হেমোফেলাস ও নিউমোক্কাল ভ্যাকসিন দেওয়া হয় দুই মাস বয়সে। মিজলস ও ইনফ্লুয়েঞ্জা ভ্যাকসিন নয় মাস বয়সে।নিউমোনিয়া প্রতিরোধের জন্য শিশুদের নিয়মিত ই পি আই প্রোগ্রাম-এর মাধ্যমে টিকা দেয়া হচ্ছে। মনে রাখবেন, নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নেয়ার চেয়ে প্রতিরোধ করার চেষ্টা করাই উত্তম।

 

 

 

ARNING: Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to legal action. 

[প্রথমপাতা]

 

 

 

 

লেখকের আগের লেখাঃ