[প্রথমপাতা]
|
নিপাহ ভাইরাস: প্রয়োজন সতর্কতা ও সচেতনতা
ডা. স্বপন কুমার মন্ডল
ইতিহাসঃ
মালয়েশিয়ার একটি শুকরের ফার্মে ১৯৯৯ সালে নিপাহ ভাইরাস প্রথম আবিস্কৃত হয়।
সে সময় মালয়েশিয়ার আচেহ প্রদেশের নিপাহ গ্রামে শুকর পালকদের মধ্যে এ
ভাইরাসজনিত রোগ মহামারি আকারে দেখা দেয় এবং ১০৫ জন মারা যায়।
Kampung Nipah নামক স্হানে এ ভাইরাসের প্রথম
সংক্রমন ঘটে, তাই এ জায়গার নাম অনুসারে ভাইরাসটির নাম রাখা হয় নিপাহ ভাইরাস
(Nipah Virus). মূলত বাদুড় এবং শুয়োর এ রোগের
উৎস।
কিভাবে ছড়ায়:
বাদুরে খাওয়া ফলমূল খেলে কিংবা বাদুরের লালা বা প্রস্রাব দিয়ে সংক্রমিত
খেজুরের রস খেলে এসব ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। বিশেষজ্ঞরা জানান,
জীবাণুবাহী বাদুড় খেজুরের রসের হাঁড়িতে মুখ দিলে লালার সঙ্গে জীবাণু মিশে
যায়। সেই কাঁচা খেজুর রস পান করার ৭ থেকে ৮ দিনের মধ্যে এ রোগের উপসর্গ
দেখা দেয়। নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত রোগীর লালার মাধ্যমেও অন্য মানুষ
সংক্রমিত হতে পারে।
মহামারীঃ
এ পর্যন্ত বেশ কয়েকটি মহামারি সংঘটিত হয়েছে। ২০০১ সাল থেকে ২০১০ সাল
পর্যন্ত ৯টি মহামারি হয়েছে বাংলাদেশে। রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা
ইনস্টিটিউটের আইইডিসিআর এর তথ্যমতে,দেশে ২০০১ সালে প্রথম আক্রমণ শনাক্তের
পর থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত দেশের ২১টি জেলায় নিপাহ ভাইরাসে আক্রান্ত ১৭৬
জনের মধ্যে ১৩৬ জনই প্রাণ হারিয়েছেন। এ রোগে মৃত্যুহার খুব বেশি।
আক্রান্তদের প্রায় ৭৫ ভাগ মারা যায়। বাংলাদেশের একটি পরিসংখ্যানঃ ২০০১-
এপ্রিল, মেহেরপুর: আক্রান্ত হয় ১৩ জন, মারা যায় ৯ জন(৬৯% মৃত্যুহার)। ২০০৩-
জানুয়ারি, নঁওগা: আক্রান্ত হয় ১২ জন, মারা যায় ৮ জন (৬৭% মৃত্যুহার)। ২০০৪-
ফেব্রুয়ারি-এপ্রিল,ফরিদপুর: আক্রান্ত ৩৬ জন, মারা যায় ২৭ জন(৭৫%
মৃত্যুহার)। ২০০৫- জানুয়ারি, টাঙ্গাইল: আক্রান্ত হয় ১২ জন, মারা যায় ১১
জন(৯২% মৃত্যুহার)। ২০০৭- কুষ্টিয়ায় ৮ জনের ৫ জন এবং ঠাকুরগাঁয়ে ৭ জনের ৩
জন মারা যায়। ২০০৮ – মানিকগঞ্জ, রাজবাড়ি: ৯ জন আক্রান্ত হয়ে মারা যায় ৮ জন।
ঝুকিপূর্ণ এলাকাঃ
সাধারণত নওগাঁসহ উত্তর ও মধ্যাঞ্চলের এলাকায় নিপা ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি
বেশি। এছাড়াও লালমনিরহাটের হাতিবান্ধা, রাজবাড়ী, ঝিনাইদহ, নাটোর ও
গাইবান্ধা , রাজশাহী এবং রংপুর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, টাঙ্গাইল, ফরিদপুর,
মানিকগঞ্জ, কুষ্টিয়া, দিনাজপুর এবং ঠাকুরগাঁ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা।
উপসর্গঃ
নিপাহ ভাইরাস মানুষের শরীরে প্রবেশ করে মস্তিষ্কের প্রদাহ বা এনকেফালাইটিস
ও শ্বাসতন্ত্রের রোগ সৃষ্টি করে। ভাইরাসগুলো শরীরে ঢোকার ৫ থেকে ৪৫
দিনের মধ্যে রোগের লক্ষণসমূহ প্রকাশ পায়। তীব্র জ্বর, মাথা ব্যথা, পেশিতে
ব্যথা, বমি, ইত্যাদি থেকে শুরু করে মাথা ঘোরা, শ্বাস কষ্ট, অজ্ঞান হয়ে
যাওয়া, ঘার ও পিঠ শক্ত হয়ে যাওয়া, বমি বমি লাগা সহ। আক্রান্তরা আলো সহ্য
করতে পারে না। রোগের তীব্রতা বাড়লে হটাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে যেতে
পারে। নিপাহ ভাইরাস রোগে আক্রান্ত ৪০ থেকে ৭৫ শতাংশ রোগীর মৃত্যুও হতে
পারে। বেঁচে যাওয়া রোগীদের প্রায় ১৫-২০ শতাংশ ক্ষেত্রে পক্ষঘাতগ্রস্হ হয়ে
পরে।
নিপাহ ভাইরাসের চিকিৎসা:
এ ভাইরাস প্রতিরোধে বা আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্য কোন সরাসরি টিকা বা ঔষধ
এখনও আবিষ্কার হয়নি। তবে উপসর্গ অনুযায়ী আক্রান্তদের চিকিৎসা করা হয়।
উপসর্গগুলি দেখা গেলে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী
চিকিৎসা করালে অনেক সময় রোগী সুস্হ হয়ে উঠেন।
সতর্কতা ও প্রতিরোধ :
খেজুরের কাঁচা রস খাওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে। ফলমুল না ধুঁয়ে খাওয়া যাবে
না। পাখি ঠোকরানোর চিহ্নযুক্ত বা অর্ধ খাওয়া ফল খাওয়া যাবে না। নিপাহ
ভাইরাস আক্রান্ত ব্যক্তিদের হাঁচি কাশি থেকে এ রোগ ছড়ায়। সুতরাং আক্রান্ত
রোগীর সামনে গেলে মুখে রুমাল বেঁধে নিতে হবে। একই প্লেটের খাবার বা একই
গ্লাসের পানি খাওয়া যাবে না। বাড়ির আশেপাশে বাদুড় থাকলে সম্ভব হলে দুরে
রাখার ব্যবস্হা করতে হবে। খেজুরের রস ভাল করে ফুটিয়ে নিলে নিপাহ ভাইরাস মরে
যায়। তাই খেজুরের রস ভাল করে ফুটিয়ে খেতে হবে। আতঙ্কিত না হয়ে বরং সবাই
মিলে সতর্ক থাকলে এবং মানুষের মাঝে সচেতনতা তৈরি করলে নিপাহ ভাইরাসের
সংক্রমন রোধ করা সম্ভব।
ARNING:
Any unauthorized use or reproduction of 'Community' content
is strictly prohibited and constitutes copyright infringement liable to
legal action.
[প্রথমপাতা] |
লেখকের আগের লেখাঃ
|